আমি খুব সাধারন একটা মানুষ। সাধারন হয়েই থাকতে চাই একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে কিছু কথা বলতে চাচ্ছি।
তার আগে দয়া করে এই ভিডিওটি একটু দেখুন:
গত ১০ বছর ধরে বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তির বিশাল উন্নতি সাধন হয়েছে। আমরা বর্তমান প্রজন্ম যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করছি কম বেশি গত ১০/১২ বছর ধরে। পর্ন মুভি বা পর্ন ওয়েবসাইটের কথা জানেনা এমন মানুষ বোধ করি কেউ নেই।
আর যারা জানে তাদের মধ্যে জীবনে একবারের জন্যে হলেও কেউ দেখেনি এটা খুবই দুর্লভ ব্যাপার। কম বেশি সবাই একবার/দুবার/বহুবার দেখেছে এবং দেখে। কিন্ত এখন পর্ন কালচারের যেই অবস্থা তা ১০ বছর আগেও ছিলনা। তারপরও মানুষ তখন পর্ন দেখত এবং তার সংখ্যাও খুব কম ছিলনা। কিন্তু "আমি কোনদিন পর্ন/অশ্লীল ছবি বা সিনেমা দেখিনি" এমন কথা সত্যি করে বলতে পারবে কি না তা নিঃসন্দেহে ব্যাতিক্রম।
ইন্টারনেটের ভাল খারাপ দুইদিকই আছে এবং ভাল দিক অনেক বেশি হওয়া সত্বেও দুঃখজনকভাবে আমাদের শিশুদের উপর এর খারাপ দিকটাই বেশি প্রভাব ফেলছে। এখনকার শিশু কিশোরেরা বেশ হাতের নাগালের মধ্যেই পর্ন ওয়েব সাইট গুলো পেয়ে যাচ্ছে। আর যারা ক্লাস ৫ বা ৬ এ উঠেই হাতে মোবাইল ফোন পায় তাদের তো কথাই নেই। সবধরনের সাইটে ঢোকার প্রবেশপত্র তাদের কাছে একপ্রকার আছে বলা যায়। ফোনের মেমোরি কার্ড এ পর্ন ক্লিপ বা ছবি সেভ করে রাখা খুবই সাধারন ব্যাপার।
এখন বলতে পারেন যে শিশুরা খারাপ জিনিস না দেখলেই হয়। কিন্তু এটা আমরা সবাই জানি নিষিদ্ধ বস্তু সবসময়ই আকর্ষনীয়। আর মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হল খারাপ জিনিস আগে পছন্দ করা। এই ১২/১৩ বছরের বাচ্চা গুলো এখন যদি পর্ন কালচারের পাল্লায় পড়ে বিকৃত মানসিকতা নিয়ে বেড়ে ওঠে তবে এর ফলাফলটাএকবার ভেবে দেখুন। আজ থেকে ১০ বছর পর এরাই কিন্তু দেশের নতুন প্রজন্ম হয়ে আসবে।
১০ বছর পরে এরাই দেশের ভবিষ্যত নাগরিক ও দেশকে এগিয়ে নেবার দায়িত্ব পালন করবে। এখন এদের একটা বড় অংশ যদি বিকৃত রুচি ও মনোভাব নিয়ে বড় হয় তার পরিনাম কতটুকু খারাপ হতে পারে আশাকরি সবাই কিছুটা হলেও বুঝেন। এমন অবস্থা কারই কাম্য হতে পারেনা। আর পর্ন কালচারের কবলে পড়ে তাদের কোমলমতি মনের কোমলতা কতটুকু নষ্ট হতে পারে তার বিচারের দায়ভার আপনাদের উপরেই ছেড়ে দিলাম।
আমি কিছু প্রস্তাব দিলাম এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য আমরা কি কি করতে পারি।
আপনাদের কোন প্রস্তাব থাকলে তা নির্দ্বিধায় পেশ করুন।
১. সবজায়গায় সর্বপ্রকারের ইন্টারনেট পর্ন ওয়েবসাইট সম্পুর্ন বন্ধ করতে হবে। এটা কোন অবাসতব ব্যাপার না। করলেই করা হবে। ইতিমধ্যে কিছু দেশ (আইসল্যান্ড এর নাম মনে আছে, গুগলে দেখতে পারেন) এ ব্যাপারে ব্যাবস্থা নিয়েছে।
চাইল্ড লক, প্যারেন্ট লক, পেইড চ্যানেল বা পেইড ওয়েবসাইট সিস্টেম এখানে চালু করে লাভ হবেনা। আপনার শিশুকে আপনি রক্ষা করতে পারবেন হয়ত তবে সাইবার ক্যাফে তে গ্রামের বা মফস্বলের যে কিশোর ইন্টারনেট ব্যাব্হারের ফাকে যে ঐসব সাইটে যে যাবে না তা নিশ্চিত করতে পারবেন না। কাজেই গোড়ার গলদ দুর করতে হবে।
২. যেসব দোকানে পর্নমুভি কেনা বেচা হবে তাদের একটা তালিকা তৈরি করা হোক এবং তাদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর লাইসেন্স নবায়নের ব্যাবস্থা করা হোক। এদের বাইরে অন্য কেউ যেন পর্নগ্রাফী বেচা কেনা না করতে পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখা হোক এবং এদের কঠোর ভাবে পর্যবেক্ষন করা হোক।
সর্বপরি কোন অবস্থায় কেউ যেন অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছে পর্ন বিক্রি করতে না পারে সে বিষয়ে নিষেধ আরোপ করা হোক এবং এর অন্যথা হলে যথাযথ শাস্তি/জরিমানার ব্যবস্থা করা হোক।
৩. এই নিয়মের ফাঁক গলে কিছু অপকর্ম ঘটবে তা জানি। সেজন্য নিজে নিজ পরিবার থেকে এব্যাপারে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বাইরের দেশে "সেক্স এডুকেশন" অনেক ছোট ক্লাসে পড়ানো হয়। আমাদের দেশেও শিক্ষা ব্যাবস্থায় এমন কিছু চালু করা দরকার।
যারা আপত্তির ভুরু কুঁচকাচ্ছেন তাদের বলি, পর্নমুভি আর পর্নসাইট দেখে আমাদের বাচ্চারা তাদের স্বাভাবিক কৌতুহলের যে অস্বাভাবিক উত্তর পাবে এবং তা থেকে তাদের মানসিকতায় যে বিকৃত রুচির সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা তৈরি হবে তা অপেক্ষা আমরা যদি পরিবারের সদস্যরা যথাযথ ভাবে শিশুকে বুঝিয়ে বলি, এ ব্যাপারটির ভাল খারাপ দিক সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারনা দেই তাহলে তা অবশ্যই অধিক মঙ্গলজনক হবে। অন্তত শিশু কিশোর দের মানসিক বিকলাঙ্গতা থেকে বাঁচাবার জন্য এটুক চেষ্টা আমরা করতেই পারি।
এমনিতেই দেশের বর্তমানে যে অবস্থা, ধর্ষন ও ধর্ষনের পরে হত্যা যেমন চক্রাকারে বৃদ্ধি পাচ্ছে আমি এ ব্যাপারে আতংকিত যে অতি দ্রুত যদি এ ব্যাপারে কোন ব্যাবস্থা নেয়া না হয় সামনে খুব খারাপ সময় আসবে আর এ জন্যে দায়ী থাকব আমি, আপনি, আমরা সবাই। আমাদের এই নির্বুদ্ধিতা আমাদের এমন কোন পরিস্থিতিতে যেন দাড় না করায় যা থেকে নিজেদের দোষ দেয়া ছাড়া আর কিছু করার থাকবেনা। পর্ন কালচারের কারনে আজকে এই শিশুদের আমরা যে মানসিক বিকলাঙ্গতা আমরা হতে দিচ্ছি নিজেদের অজান্তে আমরা সবাই কিন্তু প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে দায়ী।
বুঝেও, জেনেও, দেখেও আমরা না দেখার, না জানার বা না বোঝার ভান করে যাচ্ছি তাতে ভবিষ্যতে ক্ষতি কিন্তু আমাদেরই হবে। তখন কিছুই করার থাকবেনা। আজ আপনার ছোট ভাই বা বোন বা আপনার সন্তান ইন্টারনেটে কী কাজ করছে, মোবাইল ফোন কী কাজে ব্যবহার করছে তার দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখার দায়িত্ব কিন্তু অন্য কেউ নিবেনা, আপনাকেই নিতে হবে।
সময় হয়েছে সতর্ক হবার।
আপনাদের মতামত জানার ব্যাপারে আগ্রহী।
ধন্যবাদ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।