অলসদের দিয়ে কী আর হয়। আলসেমি ছাড়া!
আমাদের দেশে বোরো মৌসুমে সেচ কাজের জন্য প্রায় ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লাগে। এর মধ্যে অর্ধেক হলো পানিকে একস্থান থেকে অন্য স্থানে ঠেলে দেওয়ার জন্য বা কমগভীরতা থেকে পানি তোলার জন্য। যেমন খাল, নদী বা নালা থেকে পানি তোলা। আর বাকীটা লাগে মাটির নিচ থেকে পানি তোলার জন্য।
আর একটি দু:খের বিষয় হলো আমাদের দেশে মাঠে বিদ্যুৎ দেওয়া হয় রাতের বেলায়। যাদের জানা আছে তারা জানে যে, এই সময় সবাইকে মাঠে থাকতে হয় নাহলে নিজের হিস্যা ঠিকমতো পাওয়া যায় না। তারমানে, প্রকি বছর আমাদের কৃষকদের এক বড়ো অংশকে বোরো মৌসুমে রাতে মাঠে থাকতে হয়। ভাবা যায়!!!
এখন আমরা ভাবতে পারি যে, সৌর শক্তি দিয়েতো এই কাজটা করা যায়। সনাতনী চিন্তার যে সোলার পাম্প সেটা হলো প্যানেল, ইনভার্টার (ডিসিকে এসি করার জন্য), ব্যাটারি (শক্তি সঞ্চয় করার জন্য)।
তারপর মোটর আর পাম্প। সৌর বিদ্যুৎ মানেই ম্যালা খরচ। এখনও এক ওয়াট তৈরিতে এক ডলারের বেশি খরচ পড়ে। তারপর সেটাকে কনভার্ট করোরে, ব্যাটারিতে রাখোরে!!!
বছর দুয়েক আগে আমি একটি জিনিষ ভাবলাম। আমি ভাবলাম খুবই স্পেসিফিকভাবে কী সৌরবিদ্যুৎকে ব্যবহার করা যায়?
আমি দুইটি সমস্যার সমাধান করতে চাইলাম।
একটি হলো কৃষককে রাতে মাঠে থাকতে হবে না। দিনের বেলায় তার সেচের কাজ হবে। আর সোলার পাম্পটি কেবল সেচের কাজে ব্যবহার করা হবে।
যদি কেবল সেচের কাজে ব্যবহার করা হয় তাহলে ব্যাটারির দরকার লাগে না। কারণ, যদি বৃষ্টির জন্য পাম্প চালানো না যায়, তাহলে কোন সমস্যা নাই কারণ আমি তো পানিই তুলবো।
বৃষ্টি হলেতো সেটা পাবোই!
আর যদি ডিসি মোটর হয, তাহলে আমার আর ইনভার্টার লাগে না।
আমার মাথায় যতো উদ্ভট চিন্তা আসে, সেগুলো নিয়ে আমি হয় জাফর স্যারের কাছে যাই অথবা লুৎফুল কবীর স্যারের কাছে যাই। এটা নিয়ে গেলাম লুৎফুল কবীর স্যারের কাছে। স্যার বললেন এটা হতে পারে, তবে দাম খুব বেশি কমবে না যদি না অপটিমাইজ করা যায়!
তারপর স্যার শুরু করলেন তাঁর কাজ।
স্যার একটা বুদ্ধি করলেন - সিরিজ ডিসি মোটর।
মানে রোদ বেশি থাকলে সব চলবে আর কম থাকলে একটা বা দুইটা। বুয়েটের ছাদে প্রথম শুরু হলো। তবে, কয়েকদিনের মধ্যে আমরা বুঝলাম নিজেদের টাকায় এই এক্সপেরিমেন্ট সফল করা যাবে না। সবকিছুর অনেক দাম। ৫০ লাখ টাকার মতো দরকার বছরখানেকের গবেষণার জন্য।
প্রাথমিক ফাইন্ডিং নিয়ে একটা রিপোর্ট ছাপা হলো প্রথম আলোর বিজ্ঞান প্রজন্ম পাতায়। যেদিন ছাপা হল সেদিন রাতে আমি ফোন দিলাম একটি বৈজ্ঞানিক সঙস্থাকে। বললাম পেপার পড়ে এই প্রকল্পে অর্থ দেওয়া যবয় কিনা সেটা ভাবতে। পরদিন সকালে ফোন পেলাম যে, ওনারা সম্ভাবনব দেখতে চান। স্যার গেলেন তার উপস্থাপনা নিয়ে।
বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্স রাজী হলো। শুরু হলো এক মহা লম্ফযম্ফ!
ডিসি মোটর-পাম্পের এসেম্বলি করা, নানারকম সাইজের মোটর-পাম্প নিয়ে টেস্ট করা এসব শেস করে মাঠে পরীক্ষা।
কেরানীগঞ্জের বামুনশুর মৌজার এক সম্পন্ন গৃহস্ত রাজী হলেন তার ১০ বিঘা জমিতে আমাদের পাম্প দিয়ে সেচ কাজের। মার্চ মাসের ৩ তারিখে সেখানে বসানো হয়েছ এই পাম্প। গভীর নলকুপ পৌছাতে হল ১৪০ ফুট গভীরে।
পানি উঠে আসলো ২০ফুট গভীরে। শুরুতে তিনটা ২” পাম্প বসানো হল। তবে, কয়েকদিন পর স্যার ভাবলেন এগুলোকে এসিমেট্রিক করা হোক। তারপর একদিন ২” একটা রেখে বাকীদুটোর একটি ১.৫” ও আর একটিকে ৩” পাম্প দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হল। সে রাতে স্যার মাঠেই থাকলেন!
আজ সকালে স্যারের সঙ্গে সেখানে গিয়েছিলাম।
বুয়েটের আর একজন শিক্ষক জহিরউদ্দিন স্যারও সঙ্গে ছিলেন। আজকের সকালের আবহাওয়া আমরা জানি। সকালে আমরা যখন যাই তখন মাত্র ১.৫” টি চলার মতো। কিন্তু কিছুক্ষনের জন্য আমরা তিনটেকো চালাতে পারলাম। প্যানেলগুলোকে ইচ্ছেমত ঘোরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ফলে, সূর্যের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া যায়। এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি পানি উঠেছে একলাখ ২০ হাজার লিটার। তবে, দেড়লাখ লিটার তোলা সম্ভব। ২০০০ ওয়াট হলো মোট ক্যাপাসিটি, ১২টি প্যানেল।
মোটর-পাম্পের সব কাজ ঢাকাতে করা হয়েছে।
বাজার থেকে পাম্প কিনে ঠিকঠাক করা হয়েছে।
স্যারের হিসাবে ৫লাখ টাকা এককালীন খরচে এই সিস্টেম চালু করা যাবে!
মাঠে বসে আমরা ভাবছিলাম যদি এটিকে জনপ্রিয় করা যায়, তাহলে ৭০০ মেগাওয়াট মাঠ থেকে ফেরৎ আনা যাবে সহজে।
আবার বছরের যে সময়ে সেচ লাগবে না তখনও ই্প্যানেলগুলোকে ব্যবহার করা যাবে। তখনও আমরা ইনভার্টার ব্যবহার করবো না, ডিসি এপ্লায়েন্স চালাবো। তবে, ব্যাটারি লাগবে।
এমন তর একটি পরীক্ষামূলক কাজ করা হবে সহসা, বাগেরহাট জেলায়। বুয়েট এই ট্রায়ালটা দেবে। সেটি সফল হলে, এই দুই প্রকল্পকে একত্র করা যাবে।
এই সিজন শেষ হলে, প্রতিদিনকার ডেটার হিসাব করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো অবস্থায় আমরা আসবো।
তারপর সবচেয়ে কঠিন কাজ।
কে এগুলো কৃষকের কাছে নিয়ে যাবে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।