সময় বয়ে চলে তার আপন গতিতে
ইসলাম নারীদেরকে পশ্চিমাদের ১৪০০ বছর পূর্বে অর্থনৈতিক অধিকার প্রদান করেছে। একজন পূর্ণবয়স্ক মুসলিম নারী, তিনি বিবাহিত হন বা নাই হন, কারো সাথে পরামর্শ ব্যতিরেকেই সম্পদের মালিক হতে পারেন, বিলি-বন্টন করতে পারেন, মালিকানা আদান-প্রদান করতে পারেন।
১৮৭০ সালে প্রথম ইংল্যান্ডে বিবাহিত মহিলাকে কারো সঙ্গে পরামর্শ ব্যতিরেকে সম্পদ অর্জন ও বন্টন করার আইনগত অধিকার দান করা হয়।
আমি এ বিষয়ে একমত যে, ইসলাম নারীদের ১৪০০ বছর (পশ্চিমাদের তুলনায়) পূর্বে যে অর্থনৈতিক অধিকার দান করেছে এটা অনেক পুরাতন অধিকার। সেগুলো কি আধুনিক নাকি সেকেলে? ইসলামে একজন নারী যদি কাজ করতে চায় তাহলে করতে পারে, এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞামূলক কোন দলিল নেই, যতক্ষণ না তা হারাম হবে, সে বাইরেও যেতে পারবে তবে (তার মর্যাদা ও নিরাপত্তা রক্ষার্থে) শরীয়াহ সমর্থিত পোশাক পরিধান করে যেতে হবে।
কিন্তু প্রকৃতিগত কারণে তিনি তার দেহ ও সৌন্দর্যের প্রদর্শনীমূলক কোন কাজে অংশ নিতে পারবেন না। যেমন মডেলিং, অশস্নীল সিনেমা এবং এ ধরনের নানাবিধ কাজে। আরো কিছু নিষিদ্ধ কাজ আছে যা নারীর জন্য হারাম, পুরুষের জন্য হারাম। যেমন- শুরা বা মদ সরবরাহ করা, জুয়া খেলা, অন্যান্য অসৎ ব্যবসা এ সকল কাজ নারী-পুরুষ সকলের জন্যই নিষিদ্ধ। সত্যিকার মুসলিম সমাজ নারীদের ডাক্তারি পেশা গ্রহণে উৎসাহিত করে।
আমাদের মহিলা গাইনোকোলজিস্ট দরকার। আমাদের মহিলা নার্স দরকার, মহিলা শিক্ষিকা দরকার।
কিন্তু একজন মহিলার অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কোন বাধ্য-বাধকতা বা দায়-দায়িত্ব নেই। অর্থনৈতিক দায়-দায়িত্ব পরিবারের পুরুষের ওপর ন্যস্ত। অতএব, জীবিকার্জনের জন্য তার কোন দায়-দায়িত্ব নেই।
বাস্তব ক্ষেত্রে যেখানে অর্থনৈতিক সংকট আছে, সেখানে তার কাজ করার সুযোগ আছে। এখানেও তাকে কাজ করতে বাধ্য করা যাবে না, তিনি তার নিজস্ব সম্পূর্ণ স্বাধীন ইচ্ছায় কাজ করবেন।
আমি যে সকল পেশার কথা উলেস্নখ করলাম এর বাইরে তিনি ঘরে দর্জির কাজ করতে পারেন। এমব্রয়ডারী, কুমারের কাজ বা ঝুড়ি তৈরির কাজসহ তার সাধ্যানুযায়ী যে কোন বৈধ কাজ করতে পারেন। তিনি ফ্যাক্টরি বা ছোট আকারের কারখানা যেগুলো নারীদের জন্য করা হয়েছে, সেখানেও কাজ করতে পারেন।
তিনি এমন স্থানে কাজ করতে পারেন যেখানে নারীদের জন্য পৃথক সেকশন করা আছে। কেননা ইসলামে নারী-পুরুষে মেলামেশার বিধি-নিষেধ রয়েছে।
তিনি ব্যবসা করতে পারেন, যেখানে লেনদেনের প্রশ্ন আসে, বিশেষ করে বিদেশী কোন পুরুষ বা গায়রে মাহরামের সাথে লেন-দেনের প্রশ্ন আসে সেখানে তিনি পিতা, ভাই, স্বামী অথবা পুত্রের মাধ্যমে এগুলো করতে পারেন। সর্বোত্তম উদাহরণ আমি আপনাদেরকে দিতে পার বিবি খাদীজা (রা.)-এর যিনি আমাদের প্রিয়নবী করীম (স.) এর স্ত্রী ছিলেন। তিনি তার সময়ের সবচেয়ে সফল ব্যবসায়ী মহিলা ছিলেন এবং তিনি তার লেন-দেন তাঁর স্বামী নবী মুহাম্মদ (স.) এর মাধ্যমে করতেন।
একজন নারী পুরুষের তুলনায় অধিক অর্থনৈতিক নিরাপত্তা লাভ করে। যেমন পূর্বেই আমি আপনাদের বলেছি, অর্থনৈতিক দায়িত্ব নারীর ওপর বর্তায় না। এটা পরিবারের পুরুষের ওপর। এটা পিতা বা ভ্রাতার ওপর বিয়ের পূর্বে। বিয়ের পর স্বামী অথবা সন্তানের ওপর।
বিয়ের পর তার থাকা, খাওয়া, পোশাক ও অন্যান্য অর্থনৈতিক দায়িত্ব তার স্বামীর ওপর বর্তায়।
বিয়ের সময় তিনি অংশ পাচ্ছেন। তিনি একটা উপহার পাচ্ছেন, যাকে বলা হয় 'দেনমোহর'। এটাও আল-কুরআনের ৪নং সূরা আন নিসার ৪নং আয়াতের নির্দেশ:নারীদের তাদের মোহরানা স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে দিয়ে দাও। বিবাহকে ইসলাম পবিত্র করণার্থে দেনমোহর আবশ্যকীয় করেছে।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের মুসলিম সমাজে শুধু নামকা ওয়াস্তে দেনমোহর নির্ধারণ করা হয়, কুরআনের নির্দেশের নামান্তর মাত্র। যেমন-১৫১ রুপী বা কোন কোন লোক ৭৮৬ রুপী, অথচ তারাই রিসিপশন, সাজানো, ফুল, দুপুরের ও রাতের খাবারের পিছনে লাখ লাখ রুপী খরচ করছে।
ইসলামের দেনমোহর নির্ধারণের কোন সর্বোচ্চ অথবা সর্বনিম্ন পরিমাণ নির্ধারণ করেনি। কিন্তু যখন কেউ রিসিপশনেই লাখ লাখ রুপী খরচ করে তখন দেনমোহন এর তুলনায় যথেষ্ট পরিমাণ হওয়া উচিত। মুসলিম সমাজে বহু অপসংস্কৃতি অনুপ্রবেশ ঘটেছে, বিশেষ করে এই উপমহাদেশে।
তারা সামান্য দেনমোহর দিয়ে আশা করে স্ত্রীর নিকট হতে ফ্রিজ, টিভি, আসবাব, আশা করে স্ত্রী তাকে ফ্ল্যাট দিবে, গাড়ি দিবে ইত্যাদি এবং বিরাট অংকের যৌতুক স্বামীর মর্যাদার ওপর ভিত্তি করে।
একজন স্বামীর জন্য তার স্ত্রীর নিকট সরাসরি অথবা পরোক্ষভাবে যৌতুক দাবি করা ইসলামে নিষিদ্ধ। যদি কনের পিতা-মাতা সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় কোন কিছু দেয় তা গ্রহণযোগ্য। কিন্তু প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দাবি করা বা জোর করা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
যদি কোন মহিলা চাকরি করে, সে যে আয়-ই করুক, এগুলো সম্পূর্ণরূপে তার সম্পত্তি।
এক পয়সাও তার স্বামীর জন্য খরচ করতে সে বাধ্য নয়। তবে যদি স্বেচ্ছায় করতে চায়, সেটা তার ব্যাপার। স্ত্রী যত সম্পদশালীই হোক না কেন, তার থাকা-খাওয়া ও পূরণের খরচ স্বামীকেই বহন করতে হবে। যদি তালাকের মতো বা স্বামী হারানোর মতো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে 'ইদ্দত' কাল পর্যন্ত খোরপোশ পাবে। সন্তান থাকলে তাদের খরচও লাভ করবে।
ইসলাম নারীদের উত্তরাধিকার দান করেছে বহু শতাব্দী পূর্বে। যদি আপনি কুরআন অধ্যায়ন করেন তাহলে সূরা নিসা, সূরা বাকারা ও সূরা মায়িদার বহু আয়াতে আপনি পাবেন একজন নারী তিনি স্ত্রী, মা, বোন বা কন্যা যাই হন না কেন তার উত্তরাধিকার রয়েছে এবং এগুলো আলস্নাহ (সুবহানাহু ওয়াতায়ালা) কর্তৃক আল-কুরআনে নির্ধারিত।
একে চারটি উপ-বিভাগে ভাগ করা যেতে পারে। সামাজিক অধিকার যেগুলো দেয়া হয়েছে- কন্যাকে, স্ত্রীকে, মাকে ও বোনকে। কন্যাকে যে অধিকার ইসলাম দিয়েছে সেদিকে আসছি।
ইসলাম নারী শিশু হত্যা নিষেধ করেছে। এ প্রসঙ্গে সূরা তাকভীরের ৮ ও ৯নং আয়াতে মহান আলস্নাহ বলেন- "যখন জীবন্ত প্রোথিত কন্যা জিজ্ঞাসিত হবে, কি অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে? শুধু কন্যা সন্তান হত্যাকেই নিষিদ্ধ করা হয়নি? সকল প্রকারের শিশু যে পুত্র শিশু বা কন্যা শিশু যাই হোক না কেন?
৬নং সূরা আনআমের ১৫১নং আয়াতে মহান রব বলেন: "আর তোমরা খাদ্য দানের ভয়ে তোমাদের সন্তানদের হত্যা করো না, আমরাই তোমাদের ও তাদের আহার যোগাই। " একইরূপ বর্ণনা ১৭নং সূরা ইসরা -এর ৩১নং আয়াতে মহান রব বলেন: "আর খাদ্য দানের ভয়ে তোমাদের শিশুদের হত্যা করো না, আমরাই তাদের রিযিক দেই ও তোমাদেরকেও। নিশ্চয় তাদের হত্যা করা বড় ধরনের অপরাধ। ইসলাম পূর্ব আরবে যখনই কোন কন্যা শিশু জন্মলাভ করত, তাদের বেশিরভাগকেই জীবন্ত পুঁতে ফেলা হতো।
আলহামদুলিলস্নাহ! ইসলাম প্রসারের সাথে সাথে এ প্রথা চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজও আমাদের ভারতবর্ষে এ কুপ্রথা চলছে। বিবিসি রিপোর্ট অনুযায়ী, 'তাকে (কন্যা) মরতে দাও' নামক অনুষ্ঠানে এমিনি বেকমেন নামক একজন ব্রিটিশ নাগরিক যিনি ব্রিটেন থেকে ভারতে কন্যা শিশু হত্যার পরিসংখ্যান প্রদানের জন্য এসেছিলেন, তাঁর রিপোর্ট অনুযায়ী।
এ প্রোগ্রামটি এক বছরেরও বেশি পূর্বে স্টার টিভি প্রচার করেছিল, আলহামদুলিলস্নাহ এটা প্রত্যেক মাসে দেখানো হচ্ছিল এবং মাত্র কয়েকদিন পূর্বেও এর পুনঃপ্রচার করা হয়েছে। এ প্রোগ্রামে এ পরিসংখ্যান দেয়া হয়েছে যে, প্রত্যেক দিন ৩,০০০ এরও অধিক ভ্রূণ হত্যা করা হয় এটা জানার পর যে, সেগুলো কন্যা।
যদি আপনি এ সংখ্যাকে ৩৬৫ দ্বারা গুণ করেন তাহলে দেখতে পাবেন আমাদের দেশে প্রতি বছর এক মিলিয়নেরও অধিক কন্যা ভ্রূণ-এর গর্ভপাত করানো হচ্ছে। আর তামিলনাড়- ও রাজস্থানের মতো বিভিন্ন রাষ্ট্রে বড় বড় পোস্টার ও প্রচারপত্র শোভা পাচ্ছে যেগুলোতে বলা হচ্ছে: ৫০০ রুপী খরচ করুন ৫ লাখ রুপী বাঁচান। এর অর্থ কি? যে আলট্রাসনোগ্রামী বা ঐ ধরনের ডাক্তারি পরীক্ষায় ৫০০ রুপী খরচ করে দেখুন যে, মা কী শিশু বহন করছেন? যদি কন্যার ভ্রূণ হয় তাহলে গর্ভপাত করুন এবং পাঁচ লাখ রুপী বাঁচান।
লিঙ্ক
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।