জন্মোপার থেকে পৃথিবী হয়ে অনন্তে >>> ©www.fazleelahi.com
ঊনবিংশের গুঞ্জরণের সমাপ্তি ঘটিয়ে বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে পৃথিবীর দিকে দিকে ইসলামের যে নব গণজাগরণের সূচনা ঘটেছিল, তার অগ্রগামিতা পরিলক্ষণ করে কোন কোন গবেষক এই ধারণায় স্থির হন যে, "একবিংশ শতাব্দী হবে ইসলামের শতাব্দী"। ইসলামের শত্রু ফির'আউন স্বপ্নের মাধ্যমে অবগত হয় যে, বনী ইসরাঈলের সন্তানই তার প্রভূত্বের মূলোৎপাটন করবে। তাই সে বনী ইসরাঈলের সকল পুরুষ নবজাতককে হত্যা করত। কিন্তু স্রষ্টার কি অপার কৌশল যে তিনি ফির'আউনের ঘরেই মূসা 'আলাইহিস্ সালামকে প্রতিপালিত করলেন। বর্তমান শত্রুরাও তাই ইসলাম বলতেই ঘোষণা করছে সন্ত্রাসবাদ, আর কচুকাটা করে যাচ্ছে মুসলিম বিশ্বকে।
কিন্তু মূসা আর মুহাম্মাদের ('আলাইহিমাস্ সালাম) স্রষ্টার কি কৌশল দেখবে আগামীর পৃথিবী; সেটাই এখন অপেক্ষা। বিশিষ্ট জার্মান লেখক মুরাদ উইলফ্রিড হফম্যান যথার্থই বলেছেন: "বর্তমানে 'সাংস্কৃতিক একঘেয়েমি' থেকে মুক্তির পথ অবশ্যই রয়েছে এবং সেটি আর পছন্দ অপছন্দের পর্যায়ে নেই; বরং পশ্চিমা বিশ্ব বর্তমানে যে দুর্বার গতিতে সুনির্দিষ্টভাবে একটি সাংস্কৃতিক ও নৈতিক সংকটের দিকে এগিয়ে চলছে তা থেকে মুক্তির মাত্র একটিই পথ রয়েছে এবং তা হচ্ছে ইসলাম"। [ইসলাম: দি অলটারনেটিভ] এ কথা শুধু পশ্চিমা দেশগুলোর জন্যই নয়; বরং পশ্চিমের অনুকরণ প্রিয় দেশগুলো থেকে নিয়ে আমাদের স্বদেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আসুন স্বদেশের প্রেক্ষাপটেই দৃষ্টি দেই।
জ্ঞান ও শিক্ষাঃ স্বাধীনতার পূর্বে আরো অনেক ভাল ভাল ইসলামী গ্রন্থাদি রচিত হলেও এ অঞ্চলের মানুষদের নিকট একটাই ধর্মীয় বই বহুল প্রচলিত ছিল, আর তা হলো "মকসুদুল মুমীন"।
যে বইটি প্রচুর মিথ্যা হাদীস এবং ইসলামের বিধান বা বাণী নয় এমন বিষয়াদির সমাবেশ ঘটানোর কারণে বর্তমানের আলেম সমাজ ও সাধারণ সচেতন মুসলমাদের নিকট গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। এছাড়া বেনিয়াদের ষড়যন্ত্রের ফসল "বিষাদ সিন্ধু" নামক এক রূপকথার উপন্যাসকে ইসলামের ঐতিহাসিক গ্রন্থ বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছিল যাতে করে মুসলমানগণ শুধুমাত্র কারবালার মাতম নিয়েই সন্তুষ্ট থাকে; পরিপূর্ণরূপে ইসলামকে প্রতিষ্ঠার চিন্তা যাতে কোনকালেও তাদের মাথায় না আসে। তাই এই বইটিও সে যুগের সীমাহীন যোগাযোগ দূর্গমতায়ও প্রতিটি পাড়াগাঁয়ে পাওয়া যেত। তারপর স্বাধীনতার সাথে সাথে উর্দূ থেকে নিস্কৃতির পাশাপাশি অবাধ বাংলা চর্চা ও প্রকাশনার যে প্রেক্ষিত সূচিত হয়, তাতে ইসলামী গবেষণাও পিছিয়ে নেই; বরং একটি মুসলিম দেশ হিসেবে গ্রন্থাবলীর সমৃদ্ধি এখন সাফল্য ছাড়িয়ে। তদুপরি শিক্ষা ব্যবস্থায়ও সাম্প্রতিক সমতার মাধ্যমে ব্যবধান দূর হতে চলছে।
সুতরাং অগ্রসরমান যে কোন পদ্ধতিই তার চুড়ান্ত সফলতার পানেই যাবে।
সংস্কৃতিঃ একটা সময় ছিল যখন ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে বয়কট করতো ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ। কেননা, তখনো এসব গণমাধ্যমে ইসলামী সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটেনি এবং ইসলামী প্রতিভাগুলো তখনো সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নিজেদেরকে এতটা গুছিয়ে নিতে পারেনি। অবশ্য রেডিও এবং সরকারী টিভিতে আযান-কুরআন তিলাওয়াতসহ কিছু কিছু অনুষ্ঠান সবসময়ই চালু ছিল এবং এখনো আছে। তারপর ইসলামী সংস্কৃতিকে দু'একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেল নিয়ে আসলো পর্দায়।
দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ তা লুফে নিল। বর্তমানের অবস্থা তো এমন দাঁড়িয়েছে যে, চ্যানেল হবে কিন্তু ইসলামী অনুষ্ঠানাদি থাকবে না তা ভাবাই যায় না। এর দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, এদেশের অধিকাংশ মানুষের অন্তরে ইসলামী সংস্কৃতির জন্য একটা বিশেষ আসন ও মর্যাদা অনস্বীকার্য। তদুপরি বিগত দশক থেকে নারী সমাজেও পর্দা এখন চাপিয়ে দেয়া সত্যের চেয়ে কাংখিত আদর্শ ও নির্দোষ ফ্যাশনের অংশ হিসেবেই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
অর্থনীতিঃ ইসলামী অর্থ ব্যবস্থায় ব্যাংক চলতে পারে একথা একসময় কেউ কেউ বিশ্বাস করতে না চাইলেও "ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড" সে অবিশ্বাসের সৈকতে সম্পূর্ণ শরীয়াহ মোতাবেক পরিচালিত, সর্বোচ্চ মানের সুবিধা প্রদান ও সুদ নয়- লাভ এবং বিনিয়োগ সাফল্যে প্রথম পর্যায়ে নিজের অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে সক্ষম হয়েছে।
আর এর দেখাদেখি বিগত দশকগুলো থেকে নিয়ে এখনো প্রক্রিয়া চলছে শরীয়াহ্ মোতাবেক পরিচালিত আরো ব্যাংক খোলার ব্যাপারে। এছাড়া অর্থনীতিবিদগণের একটা বিরাট অংশ এখন বাংলাদেশে ইসলামের প্রতিষ্ঠা চায় এবং নিরন্তর চেষ্টা-সাধনা চালিয়ে যাচ্ছেন। সুতরাং আগামীর বাংলাদেশ যদি ইসলামের হয়, তবে ইসলামী অর্থনীতি এদেশের অর্থনীতিকে ইসলামী ব্যাংকের মতই প্রথম পর্যায়ের তুঙ্গে তুলে দিতে পারবেন বলে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা।
রাজনীতিঃ ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথা বলে ভারত বিভাজিত হলেও ধারক-বাহকরা অনৈসলামিক ব্যক্তিত্ব হবার অযোগ্যতায় তা আর সফল হয়নি। আড়ালের ষড়যন্ত্র আর প্রকাশ্য যুলুমের প্রতিক্রিয়া এবং প্রতিবাদে জন্ম নিল বাংলাদেশ।
নতুন সরকার কর্তৃক ইসলামের নামে সকল আন্দোলনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। কিন্তু বর্তমান থেকে অতীত নির্বাচনগুলোতে এই নিষিদ্ধকারী শক্তিকেও দেখা গেছে "নৌকার মালিকানা আল্লাহর হাতে সোপর্দ করতে", দেখা গেছে ইসলামী লেবাস ধারণ করতে এবং তাসবীহ সংস্কৃতিকে উচ্চকিত করতে, যদিও তা ভোট গ্রহণ পর্যন্তই। তথাপি নিষিদ্ধতার প্রতি মানুষের স্বাভাবিক আকর্ষণ কে অস্বীকার করবে? নিরবেই ইসলাম নতুন বাংলাদেশের গভীরে গেড়ে নিল তার শেকড় যদিও বীজ তো বোনা ছিল সুদূর অতীতেই, কালের কালবোশেখী বার বার উপড়ে ফেলতে চেয়েছিল, কিন্তু উড়ন্ত-উশৃংখল বাতাস কি করে জানবে যে, ইসলামের শিকড় প্রোত্থিত এদেশের অনেক গভীরে এবং "শেকড়ই শক্তি"। ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের জনপ্রিয়তার প্রকাশ্য রূপ এদেশের মানুষ প্রথম প্রকাশেই দেখেছিল। তারপর থেকে ছিল পথ চলা; যার সাম্প্রতিক ফলাফল দু'দুটো সফল মন্ত্রণালয় পরিচালনা।
যে কোন দেশেই ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য দু'টো শর্তের প্রয়োজন- এক) প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য সৎ ও যোগ্য লোক এবং দুই) দেশের অধিকাংশ মানুষের সমর্থন। ইনশাআল্লাহ্ এদেশে ইসলামকে সমুন্নত করে রাখার মত যোগ্য লোক তৈরী প্রায় সম্পন্নতার কাছাকাছি এবং উত্তরাত্তর বৃদ্ধিপ্রাপ্ত জনসমর্থনও আশার আলো দেখায়। অতএব, রাজনৈতিক পর্যায়ে তথা ইসলামের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠায় যদি আগামীর বাংলাদেশকে বিবেচনা করা হয়; তবে আকাংখার অপব্যবহার হবে না কোনভাবেই।
সর্বোপরি আমরা মানুষ, সীমাহীন দোষত্রুটিতে পরিপূর্ণ আমাদের অন্তর থেকে কর্মকাণ্ড। তথাপি চেষ্টা-সাধনাই আমাদের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন সর্বশক্তিমান।
আমরা শুধু সেটাই সাধন করতে পারি। বিজয় একচ্ছত্রভাবে পরম প্রভু আল্লাহর হাতে। আমাদের সকল প্রচেষ্টা সফল হলেও তিনি ইচ্ছে করলে বিজয় নাও দিতে পারেন, তাই বলে মুমিন ব্যর্থ নয়; যেভাবে ব্যর্থ নন আল্লার নবী নূহ্ 'আলাইহিস্ সালামও। তবুও দয়াময় আল্লাহ্ তাঁর রহমত থেকে নিরাশ হতে বারণ করেছেন, তাই আমরা আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার পাশাপাশি এ আশা করতেই পারি যে, "ধর্মনিরপেক্ষতা নয়; বরং ইসলামই বাংলাদেশের ভবিষ্যত"।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।