সময় বয়ে চলে তার আপন গতিতে
জাকির নায়েক
অক্সফোর্ড ডিকশনারী অনুযায়ী-নারীর অধিকার হলো ঐ সকল অধিকার, যা একজন নারীকে সামাজিক এবং আইনগত সমতার দিক দিয়ে পুরুষের পর্যায়ে উন্নীত করে। অক্সফোর্ড ডিকশনারী অনুযায়ী-সেগুলো হলো ঐ সকল অধিকার, যা নারীদের জন্য দাবি করা হয়েছে, যা পুরুষের সমান ভোট প্রয়োগ এবং সম্পত্তির অধিকার ইত্যাদি। আধুনিকায়ন অক্সফোর্ড ডিকশনারী অনুযায়ী এর অর্থ আধুনিক করা, আধুনিক প্রয়োজন বা অভ্যাসের সাথে খাপ খাওয়ানো। ওয়েবস্টার শব্দকোষ অনুযায়ী এর অর্থ আধুনিক করা, নতুন বৈশিষ্ট্য (চরিত্র) বা আকৃতি দান করা। যেমন-কারো ধারণার আধুনিকায়ন।
সংক্ষেপে আধুনিকায়ন হলো বর্তমান অবস্থার চেয়ে উন্নততর করার (হওয়ার) জন্য সমসাময়িক হওয়া বা একটি পথ বাছাই করা। আমরা কি নিজেদের আধুনিক বানাতে পারি, আমাদের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতে, আমাদের জীবনের নতুন পন্থা উপলব্ধি করতে, সমগ্র মানব জাতির জন্য? আমি আধুনিক ধারণার সাথে জড়িত নই, উলেস্নখিত বর্ণনা যেগুলো বিজ্ঞানীগণ এবং আরাম-কেদারায় বসে অনভিজ্ঞ সমাজপ্লতিগণ দিয়েছেন যে, মহিলাদের জন্য কিরূপ জীবন-যাপন করা উচিত। আমি যে বর্ণনা ও মন্তব্যগুলো পেশ করছি তার ভিত্তি সত্য এবং সেগুলো অভিজ্ঞতার দ্বারা পরীক্ষিত। অভিজ্ঞতা-নিরপেক্ষ বাস্তব স্বচ্ছ বিশ্লেষণ এবং সত্যের ও তত্ত্বের ভিত্তিতে নিশ্চিত পরীক্ষার দ্বারা প্রামাণিত। আমাদের চিন্তা-ভাবনাকে বাস্তবতার আলোকে যাচাই করা উচিত অন্যথায় অনেক সময়েই মানসিক প্রস্তুতি বৃথা হয়ে যায়।
বাস্তবেই বড় বড় মেধাবীরা এক সময় বিশ্বাস করতেন যে, পৃথিবী সমতল ছিল (গোলাকার ছিল না)যদি আমরা পশ্চিমা মিডিয়ার দ্বারা বর্ণিত রূপে ইসলামে নারীর অধিকার - এর সাথে একমত পোষণ করি তাহলে এছাড়া আর বিকল্প থাকে না যে, ইসলামই নারীর অধিকার নিশ্চিত করেছে। ইসলামের মূল সূত্রগুলো হলো, পবিত্র কুরআন-আল্লস্নাহর বাণী এবং সুন্নাহ যা আমাদের প্রিয়নবী করীম (স.) এর বাণী। কুরআন নিজের সাথে বৈপরীত্য করে না এবং ছহীহ হাদীসেও অন্য হাদীসের সাথে বৈপরীত্য নেই, এমনকি এ দুই মূল কখনো একে অপরের সাথে বৈপরীত্য করে না। অনেক সময় অনেকে মতানৈক্য করেন, এ মতানৈক্য কুরআনে সামগ্রিক বিশ্লেস্নষণের মাধ্যমে দূর করা যায়, তবে একটি আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে এটা দূর করা সম্ভব নয়। কারণ কুরআনে নির্দিষ্ট কোন আয়াত যদি জটিল হয় তাহলে অনেক সময়ই কুরআনেরই অন্য কোথাও তার সমাধান আছে।
কিছু লোক হয়তো এক সূত্র উল্লেস্নখ করে অন্যগুলোকে অবহেলা করতে পারে।
সর্বশেষ হলো, প্রত্যেক মুসলিম নারী-পুরুষের কর্তব্য হলো আলস্ন্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা এবং তার প্রতিনিধি হিসেবে এ দুনিয়ায় কাজ করা। ইসলাম নারী-পুরুষের সমতায় বিশ্বাস করে। এখানে সমতা মানে অভিন্নতা নয়। ইসলামে নর-নারীর ভূমিকা সম্পূরক, বৈপরীত্যের নয়; সম্পর্ক অংশীদারিত্বের, বিরোধিতার নয়, যা শ্রেষ্ঠত্বের স্তরে উন্নীত করে।
যেখানে "ইসলামে নারীর অধিকার" তাকে আমি ছয়টি শ্রেণীতে বিভক্ত করেছি।
১. আত্মিক অধিকার ২. অর্থনৈতিক অধিকার ৩. সামাজিক অধিকার ৪. শিক্ষার অধিকার ৫. আইনগত অধিকার ৬. রাজনৈতিক অধিকার ।
১. আত্মিক অধিকার ঃ
ইসলাম সম্পর্কে পশ্চিমাদের সবচেয়ে বড় ভুল ধারণা এই যে, তারা চিন্তা করে ইসলামের জান্নাত শুধু পুরুষদের জন্য নারীদের জন্য নয়। এ ভুল ধারণা ৪নং সূরা নিসার ১২৪ নং আয়াতের দ্বারা দূর করা যায়। মহান রব বলেন ঃ তোমাদের যে কেউ সে নারী হোক বা পুরুষ মুমিন সৎ আমল করলে জান্নাতে প্রবেশ করার এবং সামান্যতম অবিচারও তাদের প্রতি করা হবে না।
একই রূপ বর্ণনায় ১৬নং সূরা আন নাহল ৯৭ নং আয়াতে মাহন রব বলেন, যে ব্যক্তি মুমিন অবস্থায় সৎ আমল করবে সে নারী-পুরুষ যা হোক না কেন তাকে আমি পবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যে আমল করে তার চেয়ে উত্তম প্রতিদান দেব। এটা এ কারণে যে, ইসলামে জান্নাতে প্রবেশের জন্য লিঙ্গ জেন্ডার কোন মাপকাঠি নয়। আপনি কি এ ধরনের অধিকারকে আধুনিক বলবেন না কি সেকেলে বলবেন? আরেকটি ভুল ধারণা, যেটা পশ্চিমা মিডিয়ার রয়েছে তা হল- নারীর কোন আত্মা নেই। বাস্তবে এটা ছিল সপ্তদশ শতকে, যখন বিত্তবানদের কাউন্সিল রোমে সমবেত হয়েছিল এবং তারা সর্বসম্মতিক্রমে একমত হয়েছিল যে, নারীর কোন আত্মা নেই।
৪নং সূরা নিসার প্রথমে বলা হয়েছে- ওহে মানবমন্ডলী ! ভয় কর তোমাদের প্রভুর যিনি তোমাদেরকে একটি আত্মা থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে সৃষ্টি করেছেন তার সঙ্গিনীকে।
পুনরায় ৪২ নং সূরা আশ শুয়ারার ১১ নং আয়াতে আল্লস্নাহ বলেন- তিনি (আলস্ন্লাহ) আসমানসমূহ ও জমিনের স্রষ্টা, যিনি তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকেই তোমাদের জোড়া তৈরি করেছেন। শুধু এ কারণে যে, ইসলামে নর-নারীর আত্মার প্রকৃতি একই। আপনারা ইসলামে এ ধরনের অধিকারকে আধুনিক বলবেন নাকি পশ্চাৎপদ? আল-কুরআন পরিষ্কারভাবে উলেস্নখ করে যে, আল্লস্নাহতায়ালা তাঁর আত্মা মানবের মধ্যে ফুঁকে দিলেন। আপনারা যদি ১৫নং সূরা আল-হিজর-এর ২৯নং আয়াত তেলাওয়াত করেন। তাহলে সেখানে দেখবেন বলা হয়েছে- অতঃপর আমি যখন তাকে [আদমকে (আ.)] সুষম করব এবং তার মধ্যে আমার রূহ ফুঁকে দেব তখন তোমরা তার সামনে সিজদায় পড়ে যেও।
একই বিষয়ে ৩২ নং সূরা সাজদায়, ৯নং আয়াতে মহান রব পুনরায় বলেন, অত:পর তাকে তিনি সুষম করলেন এবং তার মধ্যে তার রূহ ফুঁকে দিলেন। এখানে আল্লস্নাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা যে বললেন,- তার (মানবের) মধ্যে তার রূহ ফুঁকে দিলেন এর অর্থ যীশুর রক্তমাংস দেহ বা সর্বেশ্বরবাদী তত্ত্বের রূহ ফুঁকে দেয়া অবশ্যই নয়। এর অর্থ হলো, আল্লস্নাহর প্রত্যেক মানবকে তার থেকে আত্মিক প্রকৃতি দান করেছেন, আরো দান করেছেন সর্বশক্তিমান আল্লস্নাহর জ্ঞান, যাতে মানবতা তার নিকটবতর্ী হতে পারে। আরো কথা হলো, এখানে আদম ও হাওয়া (আ.) উভয়ের কথাই বলা হয়েছে, উভয়কেই আল্লস্নাহর রূহ থেকে ফুঁক দেয়া হয়েছিল। পুনরায় আমরা আল কুরআনে পড়ছি যে, আল্লস্নাহ মানবকে তার প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছেন।
যেন মানুষ তার ফরমান দুনিয়ায় জারি করতে পারে। ১৭নং সূরা ইসরায় ৭০ নং আয়াতে উলেস্ন্লখ করা হয়েছে।
মহান আল্লস্নাহ ইরশাদ করেন :আমরা আদম সন্তানকে সম্মানিত করেছি; স্থলে ও সমুদ্রে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি। তাদেরকে উত্তম রিযিক দান করেছি এবং আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের ওপর তাদেরকেই বিশেষ মর্যাদা দান করেছি। এখানে সকল আদম সন্তানকে সম্মানিত করা হয়েছে, পুরুষ এবং নারীকে।
কিন্তু ধর্মশাস্ত্রে রয়েছে, যেমন বাইবেল, যা মানবতার পতনের জন্য হাওয়াকে (আ.) দায়ী করে। বাস্তবে যদি আপনি আল-কুরআনের ৭নং সূরা আরাফ ১৯ থেকে ২৭ নং আয়াতগুলো তেলাওয়াত করেন, দেখবেন সেখানে আদম ও হাওয়াকে এক ডজনের অধিকবার সম্বোধন করা হয়েছে। উভয়েই আলস্নাহর আদেশ অমান্য করেছিলেন, উভয়ে ক্ষমা প্রার্থনা ও তাওবা করেছিলেন এবং উভয়কে ক্ষমা করা হয়েছিল। বাইবেলের জেনেসিস ৩য় অধ্যায় পড়লে দেখবেন মানবতার পতনের জন্য শুধু হাওয়াকে (আ.) দায়ী করা হয়েছে। অর্থাৎ গর্ভধারণ ও শিশু জন্মদানকে বাইবেলে নারীদের জন্য অসম্মানজনক এবং প্রসববেদনা এক ধরনের শাস্তি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
বাস্তবে যদি আপনি আল-কুরআন তেলাওয়াত করেন, দেখবেন গর্ভধারণ এবং শিশু জন্মদান নারীদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে।
৩১ নং সূরা লুকমান, আয়াত নং ১৪-তে আলস্নাহ তায়ালা বলেন : আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে এবং তার দুধ ছাড়াতে দুবছর লেগেছে। তাই আমি নির্দেশ দিলাম আমার ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। আমার নিকটই ফিরে আসতে হবে।
৪৬নং সূরা আহকাফ, আয়াত নং ১৫- এ একই নির্দেশ আমি মানুষকে তাদের পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা কষ্ট সহ্য করে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে। কষ্ট সহ্য করে তাকে দুগ্ধ দান করেছে। আল-কুরআনে গর্ভধারণ নারীদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে, মর্যাদাকে ক্ষ-ণ্ন করেনি। এই যে গর্ভধারণে ইসলামে নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি করল এ ধরনের অধিকার দানকে আপনি আধুনিক নাকি সেকেলে বলবেন?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।