শেষ বারের মতো সতর্ক করছি...
চাকরির জন্য প্রায় দু বছর নোয়াখালীতে কাটাতে হয়েছে। সেখানের কালচার, ঐতিহ্য ইত্যাদি আমার কাছে যেমন লেগেছে। আজকের পর্ব কেবল খাবারের জন্য।
আমি যেহেতু ম্যাসে থাকতাম। প্রায়ই খেতে হতো হোটেলে।
তাদের নিজস্ব একটা হোটেল কালচার আছে। নোয়াখালীতে রেস্টুরেন্ট গুলোতে মানুষের ভীড় সব সময় লেগেই থাকে। বিকাল থেকে রাত। একটু কথা বলে বলে যে আয়েশ করে খাব তার কোন সুযোগ নাই। খাওয়া শেষ হওয়ার আগে আর একজন এসে পাশে দাঁড়িয়ে থাকে।
আগে কয়েকটা হোটেলের নাম বলে নিই। সবচেয়ে ঐতিহ্য বাহি হলো: মোহাম্মদিয়া হোটেল, সুপার মোহাম্মদীয়া,স্টার হোটেল, কিরন হোটেল, ফরিদ বেকারি, আলামিন... আর নাম মনে করতে পারছি না। কিন্তু সবহোটেলেই খাবার দাবার একেবারে কমন। প্রতিটি হোটেলে খাবার মেনু একটাই। কোন বৈচিত্র নাই।
স্বাদ গন্ধও প্রায় এক। তারা সম্ভবত বৈচিত্র পছন্দ করে না। অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া তাদের মাঝে প্রবল। ঢাকাকে তারা প্রানপনে নকল করার চেষ্টা করে। নিজস্বতায় তাদের কোন আস্থা আছে বলে মনে হয় না।
নোয়াখালীর খাবারের সাথে ডাল নিয়মিত থাকে। ভাতের সাথে ডালনিয়ে প্রথমে খেতে থাকে , খাবারের শুরুটা এমনই। তাই হোটেল গুলোতে ভাত দেবার পরেই ডাল পরিবেশন করে। আর একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে নোয়াখালীর অনেক হোটেলেই ডাল ফ্রী হিসেবে দেয়া হয়। বিনা টাকায় ডাল বিতরনে তারা বেশ উদার।
শুকনো ভাত তারা খেতে পারে না। সব কিছু তাই এটু ভেজা ভেজা হতে হয়। পুই শাক তারাও খায় কিন্তু কেবল শাক হিসেবে নয় তরকারি হিসেবে। তেলে ভাজা খাবারের প্রতি তাদের অকর্ষন মনে হয় কিছুটা কম।
বিকালের নাস্তায় তাই পুরি, সিঙ্গারা, সমাচা ইত্যাদি থাকেনা।
কখনো যদি পিয়াজো পাওয়া যায় তাও মচমচে নয় কিছুটা সিদ্ধ সিদ্ধ ভাব থাকে। সন্ধা হবার কিছু আগে থেকেই তারা রেস্টুরেন্টে লাইন ধরে। মনে হয় মাইজদী( নোয়াখালী সদর) এর সব লোকই সন্ধার দিকে এক বার রেস্টুরেন্টে খেতে আসে।
সব হোটেল গুলোতেই পরটা খাওয়ার ভীড় থাকে। চা এর সাথে তারা পরটা খায়।
এটা মনেহয় তাদের ঐতিহ্যে অংশ। পরটার সাথে অলু ভাজি( অলু কেটে সেদ্ধ) সবচেয়ে বেশি বিক্রিত খাবার। হালিম , নানরুটি, গুরুর মাংস, খাসি ইত্যাদিএ পর্যাপ্ত থাকে প্রায় সব হোটেলে।
প্রত্যেক রেস্টুরেন্ট, হোটেলের সামনেই একটা পান দোকান। এটা তাদের রেস্টুরেন্ট এর একটা অংশ।
সব রেস্টুরেন্টের আর একটা ব্যাপার কমন তা হল তাদের খাবার টেবিল গুলো। একটা টেবিলে ছয় থেকে আটটি চেয়ার থাকে। ভীর বাসে যেমন গাদাগাদি থাকতে হয় অনেকটা এমন ভাবেই বসে খাবার খেতে হয়। এভাবে বসে খেতেই সবাই অভ্যস্ত।
কখনো যদি দুপোরে কয়েক জন নিয়ে বসে চা বা কিছু খাচ্ছি , আমাদের পরেই একটা কাস্টমার ঢুকল।
সকল টেবিল ফাঁকা থাকলেও সে ভীড় টেবিলে এসে বসবে। আমাদের বলবে একটু সরেন।
হোটেল গুলোতে পর্দা ঘেরা অনেক মহিলা কেবিন থাকে। কেবিনের বাইরে কোন মহিলা কখনো চোখে পরবে না। এমনিতেও কখনো পুরুষ ছাড়া মহিলাদের কখনোই হোটেলে খেতে দেখিনি।
মহিলারা শপিং সেন্টার গুলোতে দখল দিয়ে খাবারের দোকান গুলো পুরুষের দ্বায়িত্বে ছেড়ে দিয়েছে।
নোয়াখালীর আর একটি বহুল প্রচলিত খাবার বন রুটি। সকালে বিকালে রাতে সব সময়ই এটি তাদের অলীতে গলীতে সব দোকানে পাওয়া যাবে। বন রুটির মতো ছোলাও তাদের প্রিয় খাবার।
তারা চা খেতে পছন্দ করে।
তাদের চা এর একটা বিশেষত্ব হলো সব সময়ই চা থাকবে হালকা গরম। প্রথমে ব্যাপারটা আমার কাছে বুঝতে একটু সময় লাগে। কেবল চা বিক্রর দোকান তাদের খুব কম। অন্য কসমেটিক্স, মনিহারির দ্রব্যাদির সাথেই একটি বা দুটি বড় আকারের ফ্লাক্সে থাকে গড়ম পানি আথবা তৈরি করা চা। এটাই সারাদিন বিক্রি করে থাকে।
তাই চা এর তাজা গন্ধ তাদের চা তে কখনো পাই নি।
খাবারের বেলায় আর একটা ব্যাপার বলতে হয়। তারা অতিথীপরায়ন। চা খায় এবং অন্যকে খাওয়াতে পছন্দ করে।
** নোয়াখালী ব্যাপারে তথ্য গত কোন ভুল হলে,জানাবেন ।
ঠিক করে দেব।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।