আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সৌদি আরব ডায়েরী -১০ ( খাবার দাবার প্রসঙ্গ-২, তমিজ এবং খেবসা'র রেসেপি )

...
একদিন সন্ধ্যায় কনকনে ঠান্ডায় বের হলাম। বেশ বাতাস ছিল। বিকেল থেকেই মন চাচ্ছিল বাহিরের কিছু একটা খাই। ... প্রায় ১০ মিনিট হেঁটে এক আফগান দোকানে গেলাম ... বড় একটা তন্দুরে রুটি বানাচ্ছিল- আমদের দেশের কমপক্ষে ৮ টা তন্দুর রুটির সমান। এখানে রুটিটাকে "তমিজ" বলে।

১টা রুটি ৩ রিয়াল রাখলো। সাথে ১ বাটি "ঘন মুসুর ডাল" আর ১ বাটি "ফুল" নিলাম মাত্র ২ রিয়ালে। "ফুল" হচ্ছে এক ধরনের Kidney বীন পিষে বানানো কারি। তমিজ ঠান্ডা হয়ে গেলে খাওয়া যায়না, গরম থাকতেই খেতে হয়। ফুল দিয়ে যখন তমিজে'র একটা টুকরো মুখে দিলাম... মনে হলো, আহ! একেবারে বেহেশতী খানা।

আমরা দুজনে মিলেও ১টা তমিজ শেষ করতে পারিনি। সৌদিতে খেপসা/খেবসা খুব জনপ্রিয়। কারো বাসায় দাওয়াত থাকলে খেবসা থাকবেই। খেবসা মূলত ইয়েমেনি খাবার, তবে গলফ দেশগুলুতে সবাই এটা পছন্দ করে। খেবসা হচ্ছে বাসমতি চাল ও বিশেষভাবে তৈরি মাংসের মিশ্রন।

চিকেন, বিফ, মাটন এমনকি মাছ দিয়েও খেবসা তৈরি করা হয়। কখনও ভাবিনি ব্লগে খাবারের রেসেপি দেব। কিন্তু আমার আগের লেখা খাবার দাবার প্রসঙ্গ-১ এ দেখলাম আমার মতো অনেকেই ভোজনরসিক, নতুন খাবারের স্বাদ নিতে চান। তাই খুব সাধারণভাবে ঘরে কিভাবে খেবসা বানানো যায় তা তুলে দিলাম। বলে রাখা ভালো রেসেপিটি একটু বাংলাদেশি স্টাইলে করা।

তবে আমাদের কাছে স্বাদ আসল সৌদি খেবসা'র মতোই লেগছে। আমার খাওয়া রেস্টুরেন্টের খেবসা। উপকরণঃ (৩ জনের জন্য ... খেবসা মজাদার খাবার, তাই বুঝতেও পারবেননা কখন বেশী খেয়ে ফেলেছেন। খাবার কম পড়লে দায়ী করবেননা) ১। সেদ্ধ চাল – আধা কেজি (এখানে চালটা বেশ লম্বাটে ধরনের, বাংলাদেশে লম্বাটে বাসমতি চাল খুজে দেখতে পারেন—তবে রান্না'র পর ভাত ঝরঝরে থাকতে হবে, ভাত গলে যায় এমন চালে হবেনা) ২।

মুরগীর মাংস – ৮ পিস (অবশ্যই চামড়া সহ হতে হবে,চামড়া সহ মাংসেই আসল মজা) ৩। আদা, রসুন, পেয়াজ বাটা -পরিমান মতো ৪। রসুন, পেয়াজ, কাঁচামরিচ, টমেটো কুচি করা-পরিমান মতো ৫। আস্ত জিরা এবং জিরা, ধনিয়া, গোলমরিচ গুড়ো-পরিমান মতো (হলুদ ও মরিচের গুড়ো দেওয়ার প্রয়োজন নেই, যারা ঝাল খেতে চান কাঁচামরিচ বেশী করে দিবেন) ৬। তেল, লবণ, তেজপাতা ও গরম মশলা-পরিমান মতো ছুটির দিনের সকালে আয়েশ করে বিছানায় চোখ বুঁজে ছিলাম আর চিন্তা করছিলাম দুপুরে ব্যতিক্রমি কি খাওয়া যায়।

ওয়াইফকে বলায় সে বললো খেবসা রান্না করা যায়। কয়েকজনের সাথে আলাপ করে আগেই রান্নার প্রণালী জেনে নিয়েছিলাম। ঘরে সবকিছুই ছিল, শুধু খেবসা'র চাল ছিলনা। আড়মোড়া ভেঙ্গে দোকানে গেলাম চাল আনতে। খেবসা'র চাল –"আবুকাস", লম্বাটে ধরণের মাংস কাটা হলো চামড়া সহ ... প্রথমে গরম তেলে গরম মশলা, আস্ত জিরা ও তেজপাতা ফোড়ন দিয়ে নিন।

তারপর সমস্ত গুড়ো মশলা, আদা, রসুন, পেয়াজ বাটা ও রসুন, পেয়াজ, কাঁচামরিচ, টমেটো কুচি একসাথে ভালোভাবে গরম তেলে কষান/ভাজুন। পরিমানমতো লবণ দিন। অপর একটি পাত্রে সাধারণভাবেই ভাত রান্না করতে থাকুন... মশলা কষানো হয়ে এলে তাতে মাংস ঢেলে দিন …৮/১০ মিনিট ঢেকে রাখুন। পানি দেয়া লাগবেনা। মাংস সেদ্ধ হয়ে যাবার কথা।

এবং অপর পাত্রের ভাতও হয়ে যাবে। ভাতের পানি আঠালো হয়ে আসলে মাংসের পাত্রে তা সম্পূর্ণ ঢেলে দিতে হবে। একটা জিনিষ খেয়াল রাখতে হবে যেন পানিটা পরিমান মতো হয় এবং ভাতের মাড়ে আঠালো ভাবটা চলে আসে। আঠালো একটা রস তৈরি হয়ে গেছে ... এই গ্রেভিটাই খেবসা'র মূল স্বাদ। গ্রেভি ভাবটা না থাকলে খিচুরি বা চিকেন বিরানী'র সাথে পার্থক্য থাকবেনা।

হাল্কা আঁচে রেখে দিন। পানি শুকিয়ে খেবসা তৈরি হয়ে গেল। তবে গ্রেভিভাবটা কিন্তু রয়ে গেছে। … সালাদ কাটুন … হয়ে গেল মজাদার খেবসা … আয়েশ করে খান লাবান সাথে নিয়ে। যারা বাসায় রান্না করবেন আশা করবো এখানে অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে ভুলবেননা।

নোটঃ ধন্যবাদ মেকানিক, কঠিন লজিক, পারাবত,দ্যা ডক্টর ভাইদেরকে। যারা প্রথম পর্বে নতুন নতুন অনেক খাবারের সন্ধান দিয়েছেন। আমার মতো ওনারাও জাঁদরেল ভোজনরসিক।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.