আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে আছেন, সুনামি তাকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল সমুদ্রের ১০ মাইল ভিতরে।

সকালের মিষ্টি রোদ পেরিয়ে আমি এখন মধ্যগগনে,
অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে আছেন হিরোমিৎসু শিনকাওয়া (৬০)। সুনামি তাকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল সমুদ্রের ১০ মাইল ভিতরে। শুধু তাকেই নয়। অন্য সবার মতো তার বাড়িঘরও ভেসে গেছে। নিজের বাড়ির ভাসমান ছাদ কোনমতে আঁকড়ে ধরে তিনি বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিলেন।

অবশেষে তার আশা পূরণ হয়েছে। তাকে দু’ দিন পরে উদ্ধার করা হয়েছে সমুদ্র থেকে। নৌবাহিনীর একটি নৌযান তাকে সাগরে ভাসতে দেখতে পায়। দেখতে পায় তিনি এক হাতে কোনমতে খড়কুটোর মতো কিছু একটা ধরে বাঁচার চেষ্টা করছেন। আরেক হাতে তার লাল পতাকা।

তা দেখে তাকে উদ্ধারে অভিযান চালানো হয়। যখন তার কাছে উদ্ধারকারী বোট পৌঁছে তিনি আনন্দে, আবেগে কেঁদে ফেলেন। গভীর সমুদ্রে এ সময় উপস্থিতদের মধ্যে সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিস্থিতি। হিরোমিৎসুর কান্না আরও বেড়ে যায় যখন তার মনে পড়ে নিজের স্ত্রীর কথা। তার স্ত্রীকে গিলে খেয়েছে রাক্ষসি সমুদ্র, আর সেই সমুদ্রেই তিনি বেঁচে আছেন- এ কথা বলেই ৬০ বছর বয়সী এই ব্যক্তির কান্না আরও বেড়ে যায়।

তিনি বলেন, দু’টি দিন আমি কোন হেলিকপ্টার বা উদ্ধারকারী জাহাজ দেখতে পাইনি। যদ্দূর দৃষ্টি গিয়েছে দেখতে পেয়েছি শুধুই দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি। প্রতিটি দিন সেখানে মনে হয়েছে আমার জীবনের শেষ দিন। অবশেষে যেন দ্বিতীয় বার জীবন ফিরে পেলাম। এমনতরো অনেক কষ্টগাথা জাপানের পূর্ব উপকূলে।

অনেক মানুষ আছেন যারা তাদের স্বজনকে চিরদিনের জন্য হারিয়েছেন। তাদের হাত থেকে সুনামির ঢেউ আঘাত দিয়ে কেড়ে নিয়েছে আপনজনকে। এমনই একজন হারুমি ওয়াতানাবে। তিনি হারিয়েছেন তার বয়োবৃদ্ধ পিতামাতাকে। সুনামির পানি যখন তাদের বাড়িতে আঘাত হানে তখন তিনি শক্ত করে ধরে রেখেছিলেন পিতামাতার হাত।

এ কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন হারুমি। বলেন, একপর্যায়ে মা-বাবাকে আমার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে যায় পানির তোড়। জানালা দিয়ে তারা হারিয়ে যান চিরদিনের জন্য। তিনি সুনামির পূর্বাভাস পেয়ে বাড়ি ছুটে গিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও তাদের রক্ষা করতে পারেননি।

ভূমিকম্পের উৎসস্থলের কাছেই শিনতোনা শহরে বসবাস তাদের। মা-বাবাকে হারিয়ে এখন তিনি পাগলপ্রায়। ওদিকে এখন যারা বেঁচে আছেন তাদের খাদ্য, পানি ও বিদ্যুৎ সঙ্কটে দিশাহারা অবস্থা। লাখ লাখ মানুষ অনাহারে রয়েছেন। তাদের খাওয়ার পানিটুকু পর্যন্ত নেই।

এমন অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী নাওতো কান সবাইকে একত্রিত হয়ে সমস্যা মোকাবিলার আহ্বান জানিয়েছেন। উদ্ধার তৎপরতায় যোগ দিয়েছে ১ লাখ জাপানি সেনা। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের ত্রাণকর্মীরা। এরই মধ্যে ফের সতর্কতা জারি করা হয়েছে জাপানে। বলা হয়েছে, যে কোন সময় সেখানে ফের বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে।

একদিকে যখন লাখ লাখ মানুষ জীবন বাঁচাতে জীবনমরণ সংগ্রাম করছে তখন এমন হুঁশিয়ারিতে তাদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ভূমিকম্প বিষয়ক পূর্বাভাসদাতা প্রতিষ্ঠান বলেছে, তিন দিনের মধ্যে জাপানে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকি ১০-এর মধ্যে ৭ ভাগ। এতে আরেকটি সুনামি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে শুক্রবারের ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ওদিকে ফুকুশিমার পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩ নম্বর চুল্লিতে গতকাল বিস্ফোরণ হয়েছে।

টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোমপানি বলেছে, এতে আহত হয়েছে ১১ জন। এ ঘটনায় ৭ জন নিখোঁজ রয়েছে। জাপানের মন্ত্রিপরিষদের সচিব ইউকিও ইদানো বলেছেন, চুল্লিতে বিস্ফোরণ ঘটলেও এতে ব্যবহৃত মূল কন্টেইনার রয়েছে অক্ষত। ফলে ব্যাপক আকারে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। শুক্রবার ৮ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে জাপানের পূর্ব উপকূলে।

তবে রোববার জানানো হয়, ওই ভূমিকম্পের মাত্রা আরও বেশি ছিল। তা হলো রিকটার স্কেলে ৯ মাত্রার। এতে মিনামি সানরিকু বন্দর, যার সঙ্গে এখনও হিরোশিমার সেই বিভীষিকার ইতিহাস জড়িয়ে আছে, সেখানে ১০ হাজার মানুষ এখনও নিখোঁজ। তারা নিহত হয়েছেন বলেই ধরে নেয়া হচ্ছে। যারা এখনও বেঁচে ও আটকা পড়ে আছেন তাদের উদ্ধারে অভিযান চালানো হচ্ছে।

অনেক মানুষ এখনও নিঃসঙ্গ কোন বিধ্বস্ত ভবনের ভিতর আটকা পড়ে আছেন। তাদের কাছে খাওয়ার পানি নেই। খাবার নেই। আছে চারদিকে ধ্বংসলীলা। তার মধ্যে ঘর থেকে বের হওয়ার উপায় নেই।

তাদের কেউ কেউ বাসার ছাদে এসওএস (সেভ আওয়ার সোল) অর্থাৎ ‘আমাদেরকে বাঁচান’ লিখে হাত নাড়ছেন। তাদের উদ্ধারে তৎপরতা চলছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানে এটাই সবচেয়ে বড় আঘাত। এতে সেখানকার অর্থনীতি থমকে গেছে। মানব জমিন/১৫/০৩/১১
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।