একজোড়া কিডনী, একজোড়া ইউরেটার, একটি মুত্রথলী ও একটি মুত্রনালী নিয়ে রেচনতন্ত্র গঠিত হয়। রেচনতন্ত্রের কাজ হল শরীরের দুষিত পদার্থকে দেহ থেকে বের করে দিয়ে দেহকে কুলষ মুক্ত করে। কিডনী এর পাশাপাশি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে সহায়তা করে। এছাড়াও আরোও অনেক গুরুত্বপুর্ন কাজ আছে কিডনীর। কিডনী বা রেচনতন্ত্রের কোনো রোগ দেখা দিলে জীবন হতে পারে সংকটাপন্ন।
কিন্তু কিছু নিয়ম মেনে চললেই কিন্তু এসব রোগ থেকে অনেকাংশে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়।
প্রতিরোধ করুন ইনফেকশন ঃ মুত্রনালীর দৈঘ্য ছোট, যোনী ও পায়ুপথের খুব কাছাকাছি ও এন্টিব্যাকটেরিয়াল ক্ষমতা সম্পন্ন পুরুষের মত প্রোস্টেটিক গ্রন্থির তরল পদার্থ নিঃসরন না হওয়ায় মেয়েরা খুব সহজেই কিডনী ও ইউরিনারী ট্রাক্ট ইনফেকশনে আক্রান্ত হয় বেশি। তাই নারীরা বেশি সাবধান হোন। আর ইনফেকশন প্রতিরোধে নিচের নিয়মগুলো মেনে চলুন।
প্রসাব ধরে রাখবেন না ঃ কিডনী প্রতিদিন ১৭০ লিটার করে রক্ত পরিশোধন করে।
রক্ত পরিশোধনের পর প্রায় ১.৫ লিটার মুত্র আকারে দেহ থেকে বের হয়ে আসে। নাইট্রোজেন ঘটিত ক্ষতিকারক বর্জ্য পদার্থগুলো মুত্রের মাধ্যমে দেহের বাইরে চলে আসে। তাই এ বর্জ্য পদার্থ যত দ্রুত সম্ভব দেহের বাইরে বের করে দেয়া দরকার। অনেকেই আছেন প্রসাবের প্রচন্ড বেগ থাকার পরও প্রসাব না করে ধরে রাখেন। এটা কিন্তু কিডনীর জন্য ক্ষতিকর।
তাই প্রসাব ধরে না রেখে প্রসাবের চাপ অনুভব করার সাথে সাথে তা ত্যাগের অভ্যাস করতে হবে। এতে করে কিডনী ও মুত্রথলি ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায়।
প্রচুর পানি পান করুন ঃ অনেকেরই পানি পানে অনিহা দেখা যায়। এটা কিন্তু কিডনীর জন্য ক্ষতিকর। পানি কিডনী থেকে ক্ষতিকর পদার্থ ও ব্যাকটেরিয়াকে ধুয়ে ফেলে কিডনীকে রাখে তরতাজা।
ফলে কিডনী, মুত্রথলি বা মুত্রনালির ইনফেকশনের মাত্রা কমে যায়। আবার পানি বেশি করে পান করলে ছোট আকারের পাথর শরীর থেকে আপনাআপনি বের হয়ে যেতে সাহায্য করে। তাই কিডনীকে রক্ষা করতে প্রচুর পানি পান করুন।
প্রতিদিন ৩-৪ লিটার কমপক্ষে ২ লিটার পানি পান করুন। খুব বেশি পানি পান করবেন না।
এটা কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আবার অনেক কিডনী রোগীকে চিকিৎসকরা নির্দিষ্ঠ পরিমান পানি পান করতে বলেন। সেসব রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অতিরিক্ত পানি পান করবেন না।
যৌন মিলনের পর প্রসাবের অভ্যাস করুন ঃ মেয়েদের মুত্রনালী যোনীপথের খুব কাছেই অবস্থান করে। তাই যৌন মিলনের সময় মহিলাদের মুত্রনালীতে ছোটখাটো ইনজুরী হয়।
যোনীপথে ও মলদ্বারে প্রচুর ব্যাকটেরিয়ার থাকে। ফলে খুব সহজেই মেয়েদের মুত্রনালীতে ব্যাকটেরিয়া ঢুকে পড়ে ইনফেকশন করতে পারে। হতে পারে ইউটিআই। আবার এর সঠিক চিকিৎসা না করালে কিডনীর ইনফেকশন হতে পারে যেটা কিডনীকে অকেজো করে দিতে পারে। কিন্তু যৌন মিলনের পর প্রসাব করলে প্রসাবের সাথে ব্যাকটেরিয়াগুলো শরীরের বাইরে চলে আসায় রক্ষা পায় কিডনী।
মুত্রথলির ইনফেকশন নিয়ন্ত্রন করুন ঃ দীর্ঘ দিন মুত্রথলি বা মুত্রনালীর ইনফেকশনের চিকিৎসা না করালে তা কিডনী ইনফেকশনের কারন হয়ে দাড়ায়। এটা সহজে প্রতিরোধ করা যায়। প্রসাবে জ্বালাপোড়া, তলপেট ব্যথা, প্রসাবের আগে ও পরে জ্বালাপোড়া, কোমর ব্যথা ও জ্বর থাকলে বুঝবেন আপনার মুত্রথলি বা মুত্রনালীর ইনফেকশন (ইউটিআই) হয়ে থাকতে পারে। বেশি করে পানি পানের পর যদি সমস্যা দুর না হয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
চিকিৎসকের পরামর্শমত এন্টিবায়োটিক সেবন করার প্রয়োজন হতে পারে।
তবে কোনো মতেই নিজে নিজে ্এন্টিবায়োটিক সেবন করা ঠিক হবে না। আর একটি ব্যাপার হল কোমর ব্যথা হলেই অনেকেই মনে করেন কিডনীর সমস্যা হয়েছে। তারা চিন্তায় পড়ে যান। কোমর ব্যাথা হলেই যে কিডনীর সমস্যা হয়েছে এটা ঠিক নয়।
কোমব ব্যথার সাথে যদি প্রসাবে জ্বালাপোড়া, প্রসাবের আগে ও পরে তলপেটে ব্যথা, ঘন ঘন প্রসাব হওয়া, প্রসাবের পর প্রসাব ঠিক মত হয় নি বলে মনে হওয়া, প্রসাবের সাথে রক্ত যাওয়া, প্রসাব ঠিকমত ধরে রাখতে না পারা ইত্যাদি নানান সমস্যা দেখা দেয় তাহলে কিডনীর সমস্যা হতে পারে।
চা-কফি কম পান করুন ঃ আবার কারোও কারোও চা বা কফি পান করে বেশি করে। এগুলো খুব বেশি পরিমানে খেলে কিডনীর কর্মক্ষমতা নষ্ঠ হতে পারে ও সেই সাথে বারবার কিডনীর ইনফেকশন হতে পারে। তাই চা – কফি পানের পরিমান কমিয়ে দিয়ে পানি বা ফলের জুস পান করুন।
অপরিচ্ছন্ন নেপকিন ব্যবহার করবেন না ঃ সাধারনত গ্রাম-গঞ্জে মেয়েরা মাসিকের সময় পরিচ্ছন্ন নেপকিনের পরিবর্তে নোংরা পুরান, ছেড়া কাপড়-চোপড় ব্যবহার করে। এসব নোংরা কাপড় থেকে ব্যাবটেরিয়া খুব সহজেই মুত্রনালি দিয়ে ভেতরে ঢুকে রোগ করতে পারে।
তাই সব সময় পরিচ্ছন্ন ও ব্যাকটেরিয়ামুক্ত নেপকিন ব্যবহার করুন।
পরিস্কার রাখুন গুপ্তস্থান ঃ পায়ুপথে প্রচুর পরিমান ব্যাকটেরিয়া থাকে। এসব ব্যাকটেরিয়া খুব সহজেই মুত্রনালী দিয়ে ভেতরে ঢুকে কিডনীর রোগ করতে পারে। তাই গুপ্তস্থান সব সময় পরিস্কার রাখুন। টয়লেটের পর বেশি করে পানি দিয়ে গুপ্তস্থান পরিস্কার করুন।
প্রতিরোধ করুন কিডনীর পাথর ঃ
উন্নয়নশীল দেশে মুত্রথলির পাথর আবার উন্নত দেশে হয় কিডনীর পাথর হয় বেশি। উত্তর আমেরিকায় এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৭০ বছর বয়স্ক মানুষের ১২ শতাংশ পুরুষ ও ৫ শতাংশ মহিলা কিডনীতে পাথর হয়েছে। আমাদের দেশেও কিডনীতে পাথর হওয়া লোকসংখ্যা কিন্তু কম নয়। একটু সচেতন হলে কিন্তু কিডনীতে পাথর হওয়া থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
এজন্য ২ লিটারের বেশি পানি পান করুন, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খান এটা প্রসাবের অম্লত্ব রক্ষা করে কিডনী পাথর হতে রক্ষা করে।
শাকসবজী ও ফলমুল খান বেশি করে। আমিয় জাতীয় খাবার যেমন মাংস খাওয়া কমিয়ে দিন। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান বেশি বেশি করে।
ভিটামিন বি৬ সমৃদ্ধ কলা, টমেটো, তরমুজ ইত্যাদি খান। কিন্তু সীম, বিট, কাঁচা মরিচ, স্পাইন্যাচ,চকলেট,কোকো বীজের গুড়া বা ফল, চীনাবাদাম বা এর তেল, লবন, প্রচুর মাংস, কোমল পানীয় ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিমের কুসুম, কলিজা খাওয়া বাদ দিন।
এগুলো কিডনী বা মুত্রথলিতে পাথর হতে সাহায্য করে।
অনেকেই মনে করেন ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেলে বুঝি পাথর বেশি হয় এটা একদম ঠিক নয়। স¤প্রতিক হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল ৯০ হাজার মহিলার উপর জরিপ চালিয়ে দেখতে পেয়েছে যে যেসব মহিলারা বেশি পরিমানে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেয়েছেন তাদের কিডনীতে পাথর হয় নি বললেই চলে। তাই বলে আবার ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাবেন না। কারন তারা আরোও দেখতে পেয়েছেন যে, ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেলে কিডনীতে পাথর হয় দ্রুত।
ওষুধ হতে সাবধান ঃ একটু শরীর ব্যথা হলে অনেকেই ফার্মেসী থেকে ব্যথার ট্যাবলেট যেমন ডাইক্লোফেনাক এনে খান। এটা কিন্তু কিডনীর জন্য খুবই মারাত্মক। এটা কিডনীকে অকেজো করার পাশাপাশি নানান ধরনের সমস্যা করতে পারে। ব্যথানাশক ট্যাবলেট, এসিআই ইনহিবিটর যেমন ক্যাপটোপ্রিল, এনারাপ্রিল, লিসিনোপ্রিল ইত্যাদি, কেমোথেরাপি, লেড, পেনিসিলামিন, গোল্ড, লিথিয়ামসহ আরোও অনেক ওষুধ আছে যেগুলো কিডনীর জন্য ক্ষতিকার। তাই এসব ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সেবন করবেন না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।