আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস – ডায়াবেটিস রোগের হঠাৎ করে দেখা দেয়া সমস্যা



“ব্যাপারী সাহেবের ছোট ছেলেটাই সবচেয়ে আদরের, দিনে দুই বেলা ঔষধ নিতে হয়, তাতেই তার কত কষ্ট হয়, আর এই জ্বর বমি সব মিলিয়ে সময়টা মোটেও ভাল যাচ্ছেনা তার। ছোট ছেলেটার ডায়াবেটিস – প্রথম দিকে চিকিৎসকের কাছে সাধারন চেকআপ করাতে গিয়ে ধরা পড়ে, সেই থেকেই দিনে ২ বেলা ইন্সুলিন নেয়া তার জীবনের স্বাভাবিক ব্যপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাপারী সাহেব যথেষ্টই সচেতন মানুষ – ডায়াবেটিস রোগের নাম তার আগেই জানা, তিনি এটাও জানেন এর চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন মুখে খাওয়া ঔষধ পাওয়া যায় – শুধু বুঝেননা কেন ডাক্তার ঐ ঔষধ না দিয়ে সরাসরি ইনসুলিন ইনজেকশান দিয়ে দিলো!!! ছোট ছেলেটার দিন দুই হয় জ্বর – বেশ জ্বর, ব্যপারি সাহেব তাই ইনসুলিনটা বন্ধ করে দিতে বললেন, তার কথা মতই কাজ হলো, আর পাড়ার ঔষধের দোকানদার একটা এন্টিবায়োটিক দিয়ে দিছে, সেইভাবেই এখন চিকিৎসা চলছে - এক দিন হলো জ্বর ও কিছুটা কম বলে মনে হচ্ছে। সবই ভালোই ছিলো, ব্যপারি সাহেব তার বদ্ধমূল ধারনার সফলতা দেখে কিছুটা পুলকিতও বলতে গেলে, কেননা ডাক্তার বলেছিলো এই রোগ সারার নয়, চির জীবন ইনসুলিন নিতে হবে, উনি এইটা বিশ্বাস করেননা আর এই বার দি ৩ ৪ ইনসুলিন বন্ধ আর জ্বরটাও আগের মতো আসছেনা বলে মনে হচ্ছে... এতদ কিছুর মাঝে রাতে ঘুমাতে গেলেন- কিন্তু সকালের ফজরের আযানের পূর্বেই তার বড় ছেলের ডাকে ঘুম ভেঙ্গে যায়, হঠাৎ নাকি তার ছোট ছেলের বেশ কবার বমি হয়, আর এখন কেমন যেন নিস্তেজ হয়ে গেছে, কথা বার্তাও বলছে না!!!! তিনি দ্রুত ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে রওনা হন, হাসপাতালে পৌছোতেই ডাক্তাররা তার ছেলেকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠে তার হাতে ঔষধের লিষ্ট ধরিয়ে দেয়া হয় – তাতে বেশীর ভাগ ঔষধের নাম না বুঝলেও স্যালাইন আর এর নিচের ইনসুলিনের নামটা ঠিক ই বুঝতে পারেন!! দ্রুত ঔষধ নিয়ে ফিরতেই সেই ইনসুলিন দিয়েই চিকিৎসা শুরু হয় তার ছোট ছেলের … তিনি বাইরে দাঁড়িয়ে ছেলের জন্য আকুল ভাবে দোয়া করতে থাকেন আর নিজে থেকে ইনসুলিন বন্ধ করে দিয়ে ছেলেকে যে কি বিপদের মুখে ফেলে দিলেন... ঠিক এখানে তার চিন্তাটা আটকে যায়, আর ভাবতে পারেননা...” উপরে বর্ণিত ঘটনা এবং চরিত্র গুলো কাল্পনিক হলেও এমন ঘটনা ডায়াবেটিস রোগীদের জীবনে অনেকবারই ঘটে থাকে, অথচ সাধারন কিছু সচেতনতাই এমন সব অবস্থা থেকে তাদের রক্ষা করতে পারে!!! ~ ~ ~ ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যে রোগ চিকিৎসার মাধ্যমে মুক্ত করা যায় না, বরং যা একটি নির্দিষ্ট সীমার ভেতর রেখে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে হয়। ডায়াবেটিস এর সমস্যা ২ ভাবে হয় – ১ম হঠাৎ করে কিছু সমস্যা হয়, যার ব্যপারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হয়, ২য়, ধীরে ধীরে শরীরে কিছু সমস্যা তৈরি হয়। যদিও দুই ধরনের সমস্যাই সমান ভাবে গুরুত্ব দিতে হয়, তবুও হঠাৎ যেই অসুস্থতা তৈরি হয়, তার সমাধান দ্রুতই করতে হয়!! # প্রধানত কি কি ধরনের অসুস্থতা হঠাৎ করে দেখা দেয়?? হাইপোগ্লাইসেমিয়া ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস হাইপার ওসমোলার নন কিটোটিক কোমা # ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস - ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস ডায়াবেটিস রোগীদের দ্রুত হওয়া কমপ্লিকেশান গুলোর মধ্যে অন্যতম। সাধারনত টাইপ 1 ডায়াবেটিস এ এটা বেশি হয়!! ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস বলতে বুঝায় তিনটি অবস্থার সমন্বয় হাইপারগ্লাইসেমিয়া - রক্তে গ্লুকোজ এর পরিমান অনেক বেড়ে যাওয়া কিটোনেমিয়া - রক্তে কিটোন বডি পাওয়া মেটাবলিক এসিডোসিস – শরীরের pH স্বাভাবিকের থেকে কমে যাওয়া সাথে বাইকার্বোনেট কমে যাওয়া # উপসর্গ - প্রস্রাব স্বাভাবিকের থেকে বেড়ে যাওয়া তৃষ্ণা বেড়ে যাওয়া বমি হওয়া শারীরিক দূর্বলতা দেখা দেয়া চোখে ঠিক মতো দেখতে না পাওয়া পায়ে বা পেটে খুব ব্যথা হওয়া হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া লম্বা লম্বা করে শ্বাস নেয়া জ্ঞান হারিয়ে ফেলা সকল ক্ষেত্রে সব উপসর্গ নাও দেখা দিতে পারে, তবে সাধারনত কোনো একটা মাত্র উপসর্গ নিয়ে কেউ আসেনা, কিছু উপসর্গ নিয়ে একসাথে আসে। আরেকটা বড় ব্যপার হচ্ছে বেশীর ভাগ সময় টাইপ ১ ডায়াবেটিস এর রোগীরা প্রথমেই এই সমস্যা নিয়ে আসে আর তারপর তারা ডায়াবেটিস এর রোগি হিসেবে চিহ্নিত হয়! # কারন - প্রত্যহ ইনসুলিন না নেয়া না বুঝে ইনসুলিনের ডোস কমিয়ে দেয়া সঠিক ভাবে ইনসুলিন না দেয়া জ্বর/ইনফেকশান হলে বা যে কোনো স্ট্রেস এর সময় ইনসুলিন কমিয়ে দেয়া বা বন্ধ করে দেয়া টাইপ ১ ডায়াবেটিস এর রোগী যে আগে থেকে তার এই রোগ সম্বন্ধে জানে না # চিকিৎসা - ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস-এর চিকিৎসা খুব সহজ নয় – যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে! সেখানে তার শারীরিক অবস্থা বিচার সাপেক্ষে শিরাতে স্যালাইন ও পটাশিয়াম দিয়ে সাথে ইনসুলিন – মাংসপেশীতে বা ইনসুলিন পাম্পের সাহায্যে এবং জ্বর বা ইনফেকশান থাকলে সেই অনুযায়ী শিরাতে এন্টিবায়োটিক দিয়ে এর চিকিৎসা করা হয়! *** সচেতন হতে হবে *** ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস থেকে বাচতে হলে নিয়মিত পরিমানমতো সঠিক ভাবে ইনসুলিন নিতে হবে। জ্বর বা কোনো ইনফেকশান বা কোনো স্ট্রেস এর সময় ইনসুলিন বন্ধ না করে দেয়া এবং কতটুকু ইনসুলিন বাড়াতে হবে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা। টাইপ ১ ডায়াবেটিস হলে চিরজীবন ইনসুলিন নিতে হবে এবং এর আর কোনো চিকিৎসা নেই – এটা মেনে চলা! ডায়াবেটিস এর চিকিৎসার জন্য শৃক্ষলা মাফিক জীবন যাপনই যথেষ্ট! আর ডায়াবেটিস এর কমন সমস্যা - হডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস-এর চিকিৎসার জন্য সঠিক জ্ঞান আর সচেতনতাই যথেষ্ট!! ফেসবুক আপডেট @ Dr.N.H.Sarja

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।