সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ বলে রায় দিয়েছে আদালত।
এই রায় প্রত্যাখ্যান করে ১৮ দলীয় জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল জামায়াত হরতালসহ বিক্ষোভের কর্মসূচি দিলেও জোটের সবচেয়ে বড় দলের নেতারা এনিয়ে মুখ খুলতে চাননি।
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সাতজন সদস্যকে টেলিফোন করা হলেও তাদের একজনও কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে রাজি হননি।
স্থায়ী কমিটির দুজন সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া ‘বিচারাধীন’ বিষয় বলে এড়িয়ে গেলেও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ‘ব্যক্তিগত’ মতে বলেছেন, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে ইসি, আদালত নয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি।
বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর হাতিরপুলে একটি রেস্তোরাঁয় ঠাকুরগাঁও জেলা সমিতির ইফতার অনুষ্ঠানে তার যাওয়ার কথা থাকলেও সেখানে যাননি তিনি।
জামায়াতের বিষয়ে বিএনপির মুখপাত্রের প্রতিক্রিয়া জানতে বিকাল থেকে ওই রেস্তোরাঁয় সাংবাদিকরা ভিড় জমান, কিন্তু তাদের বিমুখ হয়ে ফিরতে হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বর্তমান ওমরাহ পালনে সৌদি আরব রয়েছেন। তার সঙ্গে আলোচনা না করে কেউ মুখ খুলতে চাচ্ছেন না বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখনি কোনো মন্তব্য না করতে দলের হাইকমান্ড থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
”
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানের গড়া দল বিএনপির সঙ্গে জোট বাঁধে জামায়াত, যে দলটি একাত্তরে স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল।
এর আগে ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপিকে সরকার গঠনে সমর্থন দিয়েছিল সংসদে ১৮টি আসনধারী জামায়াত। তবে এরপর তত্ত্বাবধায়কের আন্দোলনে বিএনপির বিরুদ্ধে নামে দলটি।
১৯৯৬ সালে এককভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনটি আসনে জেতা জামায়াত ২০০১ সালে বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে ১৭টি আসন পায় এবং এবার বিএনপির সঙ্গে সরকারেও যোগ দেয়।
২০০১ সালে খালেদা জিয়ার সরকারে জামায়াতের শীর্ষ দুই নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মো. মুজাহিদ মন্ত্রী হন।
এর মধ্যে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির রায় হয়েছে মুজাহিদের, নিজামীর বিচার চলছে।
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয় জামায়াত, তবে তাদের আসন দুটিতে নেমে আসে।
এরপর একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে চাপে থাকা জামায়াত চারদলীয় জোটে সক্রিয় হলেও সেই বিচারের রায় নিয়েও সরাসরি কোনো কথা বলেনি বিএনপি, যদিও বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন তুলে আসছে তারা।
যুদ্ধাপরাধের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াত হরতালসহ সহিংস কর্মসূচি দিলেও তা তাদের ‘নিজস্ব’ কর্মসূচি বলে দায় এড়িয়ে গেছেন বিএনপি নেতারা।
এবার নিবন্ধন বাতিলের রায়ের ক্ষেত্রেও তারা একই পথ অনুসরণ করেছেন।
ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শুধু বলেছেন, “হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল হয়েছে। তাই এখন বিষয়টি বিচারাধীন পর্যায় আছে। এই পর্যায়ে কিছু বলাটা ঠিক হবে না। ”
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ‘ব্যক্তিগত’ মত জানিয়ে বলেন, “রাজনৈতিক বিষয়ের মীমাংসা আদালতের এখতিয়ারভুক্ত নয়। জামায়াতে ইসলামকে নিবন্ধন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এক্ষেত্রে তারা যদি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের কোনো ধারা লঙ্ঘন করে থাকে, তাহলে এর ব্যবস্থা তারাই নেয়ার একমাত্র প্রতিষ্ঠান। আদালত নয়। ”
“আদালতের মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণায় আমি মনে করি, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। ”
গয়েশ্বরের শঙ্কা, একটি রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক পথ রুদ্ধ করা হলে তারা উগ্রপন্থী হয়ে যেতে পারে।
আইন অনুযায়ী, নিবন্ধন না থাকলে রাজনৈতিক দল হিসেবে তৎপরতা চালানো গেলেও নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না।
হাই কোর্টের রায়ের পর নির্বাচন কমিশনের কৌঁসুলি শাহদীন মালিক বলেছেন, এর ফলে জামায়াত আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
তবে রায়ের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে আপিল করে ইসির কৌঁসুলির বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন জামায়াতের কৌঁসুলি ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।