সত্য প্রকাশে সর্বদা আপোষহীন ডিসেম্বরের ৯ তারিখ ২০১২,শৈত্যপ্রবাহের কারনে হাড়কাপা শীত,কুয়াশা আর অন্ধকার মিলে ভয়ংকর হয়ে ওঠা সন্ধ্যারাতে বাবা বাড়ির পাশের ব্রিজ থেকে নিচে পড়ে গিয়ে মর্মান্তিকভাবে আহত হল। পাশের দোকানের লোকজন বাবাকে উঠিয়ে বাড়িতে নিয়ে গেল। খবর পেয়ে আমি ছুটে গেলাম বাড়িতে। গিয়ে দেখি বাবার নাক, মুখ এবং কান থেকে অবিরত রক্ত ঝরছে আর অসহ্য যন্ত্রণায় বাবা চিৎকার দিচ্ছে। বাবার এই অবস্থা দেখে আমি একেবারে হতবাক কারন তার শরীর থেকে এত রক্ত ঝরা আমি আর কখনও দেখিনি ।
শীতের তীব্রতা আর অন্ধকার উপেক্ষা করে বাবাকে নিয়ে ছুটে চললাম হাসপাতালের দিকে । বাবাকে জরুরী বিভাগের সেবা শেষে কেবিনে নিয়ে আসলো । মাথায় ব্যান্ডেজ, ডানহাতে স্যালাইনের ক্যানুলা আর ছোপ ছোপ রক্তে ভেজা জামা কাপড় দেখে নিজেকে আর নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারলামনা, দুচোখ দিয়ে অঝোর ধারায় অশ্রু ঝরছে-আর এই প্রথম বারের মত বাবাকে প্রচণ্ডভাবে অনুভব করলাম!!!একে একে মনে পড়তে লাগলো- ছোট বেলায় বাবার হাত ধরে ছুটে বেড়ানো কিংবা আমার বালিশের পাশে বাবার এনে রাখা সিঙ্গারা বা দানাদারের গুরুত্ব অথবা আমাকে নিয়ে তার উচ্চাশা সবকিছুই, সবকিছুই মনে পড়তে লাগলো । কিন্তু ঐ শীতের রাতে আমি ছাড়া বাবার অন্য পাঁচ ছেলের কেউই বাবার সাথে হাসপাতালে গেলনা। উল্লেখ্য-
আমার বাবার দুইটা পক্ষ(দুইটা স্ত্রী),আমার মা ছোট।
আমরা দুই ভাই আর এক বোন অন্যদিকে ওরা পাঁচ ভাই আর এক বোন। সংখ্যাগরিষ্ঠতা নাকি প্রকৃতির নিয়ম জানিনা তবে,ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি আমার সৎভাইয়েরা আমাদের সাথে খুবই জঘন্য ব্যবহার করে আসছে(যদিও একজন একটু ব্যতিক্রম)। বাবার জমিজমা যা ছিল আমাদেরকে তার কিছুই দেয়া হয়নি। তবুও আক্ষেপ ছিলনা কিন্তু বাবা যখন হাসপাতালে, জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তখনও তারা বাবাকে না দেখতে গিয়ে কেমন করে পারে!!বাবার অচল দেহ ছাড়া আমরা তো কিছুই পাইনি তবে আজ কেন তারা সবকিছু পেয়েও সেই জন্মদাতাকে হাসপাতালে রেখে বাড়িতে আরামে দিনাতিপাত করে? যাহোক, এগুলো আর না বললেও হবে। বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করার তিনদিন পরও আমরা কেউই নিশ্চিত ছিলাম না যে, বাবা আমাদের মাঝে আবার ফিরে আসবে, আবার নিজের পায়ে উঠে দাঁড়াবে!।
আমাদের প্রতিটি দিন কেটেছে অনিশ্চয়তায়, এই বুঝি বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেল!!!!ছয়দিন হাসপাতালে থাকার পর ডাক্তারের সবুজ সংকেত পাওয়ার পর বাবাকে আমরা বাড়িতে নিয়ে আসলাম।
বাড়ি থেকে বেশকয়েক দিন হল আমি ঢাকাতে চলে এসেছি। বাবাকে রেখে আসতে খুব খারাপ লাগছিল কিন্তু কি আর করা!, নিজের ক্লাস পড়াশুনার তাগিদে আসতে হল। মায়ের মুখে শুনেছি, বাবা এখন একা একা হাঁটতে পারে, সবকিছু খেতে পারে, অনেকটাই সুস্থ। প্রায়ই বাবাকে স্বপ্নে দেখি আর ঘুম ভেঙ্গে গেলে গুমরে গুমরে কাঁদি! বাবা, তুমি কেমন আছো? কতদিন হল তোমাকে দেখিনা!!!!!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।