আমি চাষার ছেলে, আমার গা দিয়ে কয় মাটির গন্ধ....
লিবিয়ায় কর্মরত ৮৯ হাজার বাংলাদেশি কর্মীর মধ্যে মাত্র ৬৭৪ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে, আরা পাশ্ববর্তি দেশ তিউনিশিয়া এবং মিশরে আশ্রয় নিয়েছে মাত্র ৬ হাজার কর্মী। লিবিয়ার সীমান্ত এলাকায় জিম্মি দশায় আটকে আছে ২০ হাজারের অধিক বাংলাদেশী কর্মী। জিম্মি দশায় আটকে থাকা অনেককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ক্ষত বিক্ষত করেছে। এমনকি তাদেরকে সীমান্ত এলাকায় খোলা আকাশের নিচে মাঠের মধ্যে রেখে দেযা হয়েছে। লিবিয়ার তরুনরা বলছে, বিদেশীদের আটকে রাখতে পারলে আর্ন্তজাতিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে তাদের দেশে শান্তি ফিরে আসবে।
লিবিয়া থেকে পালিয়ে তিউরিশিয়ায় আশ্রয় নেয়া বাংলাদেশী শ্রমিক আরিফ, মাহবুবব, মুনির, মিজানসহ অন্তত ৫০ জন এ তথ্য জানিয়েছে। গতকাল বুধবার তিউনিশিয়া থেকে দেশে ফিরে আসার পর সাংবাদিককের এ তথ্য জানায়।
তারা আরো অভিযোগ করে বলেন, লিবিয়ায় সংঘাত শুরুর পর থেকে চরম অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছে সেখানে কর্মরত বাংলাদেশীরা। তারা লিবিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দুতাবাসে খবর পাঠিয়েও কোনো সাড়া পচ্ছেনা। দুতাবাস থেকে বলা হচ্ছে তাদের কিছু করার নেই।
এদিকে সংঘাত শুরুর পর থেকে সেখানে বাংলাদেশিসহ অন্য দেশের কর্মীরা পালানোর পথ খুঁজছেন। তবে অন্য দেশের পক্ষ থেকে নিজ দেশের কর্মীদের ফিরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিলেও বাংলাদেশ থেকে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এ পরিস্থিতিতে আরো বেশী নিরাপত্তা হীনতার মধ্যে পড়েছে লিবিয়ায় অবস্থিত অন্য বাংলাদেশীরা।
প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, লিবিয়ায় ৬০ হাজার বাংলাদেশী রয়েছেন। এদের মধ্যে প্রায় ৬ হাজার বাংলাদেশী তিউনিশিয়া এবং মিশর সীমান্ত দিয়ে লিবিয়ার বাইরে বের হতে পেরেছেন।
শ্রমিকরা যে কোম্পানীর মাধ্যমে লিবিয়ায় কাজ করছে সে সব কোম্পনীর সহযোগীতায় তারা দেশে ফিরতে পারছে। গত মঙ্গলবার থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ৬৭৪ জন বাংলাদেশে ফিরেছে। তিনি আরো বলেন, লিবিয়া থেকে প্রবাসীদের ফেরত আনার প্রস্তুতি থাকলেও সবাইকে এখনি ফিরিয়ে আনার পক্ষপাতি নয় সরকার। লিবিয়ায় সব স্থানে পরিস্থিতি সংঘাতময় নয় বলেও দাবি করেন তিনি।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, লিবিয়ায় বর্তমানে প্রায় ৬০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন।
তবে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) হিসাবে, লিবিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৮৯ হাজার।
এদিকে পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েস বলেন, বর্তমানে সরকারি ভাবে লিবিয়া থেকে কোন ব্যক্তিকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেই। যারা লিবিয়া সীমান্ত অতিক্রম করে পাশ্ববর্তি দেশ গুলোতে অবস্থান করছে তাদেরকে মানবাধিকার সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট কোম্পনীর মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। তবে লিবিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশীদের অবস্থান নিশ্চিত করা এবং তাদের তালিকা তৈরীর কাজ করে চলছে বর্তমান সরকার।
তিনি আরো বলেন, লিবিয়ায় সরকারবিরোধী আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সেখানকার বাংলাদেশি দূতাবাসে একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে।
সেখানে গতকাল বুধবার আশ্রয় নিয়েছে ৭৭ জন। বাংলাদেশ সরকার মনে করে নিরাপদ অবস্থান থেকে পালানোয় বেশী অনিরাপদ। সেকারনে দেশটির পরিস্থিতি বিবেচনা করে শ্রমীকদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হবে। তবে বর্তমানে এধরনের কোন উদ্যোগ নেই।
বেসরকারী বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী জি এম কাদের বলেন, লিবিয়া থেকে থেকে যে সব শ্রমিক দেশে ফিরছে তাদের অনেকের পাসপোর্ট নেই।
এমনকি তাদের অনেক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এসব বিবেচনা করে বিমান বন্দরে আলাদা ডেস্ক খোলা হয়েছে। ওই ডেস্কের মাধ্যমে তাদেরকে সহযোগীতা করা হচ্ছে। ফেরত আসা প্রত্যেককে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে এক প্যাকেট মিষ্টি ও এক বোতল পানি এবং বাড়ি পর্যন্ত যাওয়ার জন্য ১ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া একটি গাড়িতে করে বিমানবন্দর থেকে আন্তঃজেলা বাস ও রেল টার্মিনাল এলাকা মহাখালী, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, গাবতলী পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) এদক্ষিণ এশিয়া প্রতিনিধ রাবাব ফাতেমা বলেন, লিবিয়ার মধ্যে আইওএম এর আপাতত কোন কার্যক্রম নেই। বিভিন্ন দেশের মানুষ সেখানে আটকে পড়ায় লিবিয়ার রাজনৈতিক সঙ্কট বর্তমানে আন্তর্জাতিক সঙ্কটে পরিণত হয়েছে। আমরা সবাই মিলে এ সঙ্কট মোকাবেলা করার চেষ্টা করছি। তবে সংস্থাটি বর্তমানে শুধু লিবিযার পাশ্ববর্তি দেশ গুলোতে আশ্রয় নেয়াদর সহযোগীতা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বুধবার তিনটি ভাড়া করা বিমানে লিবিয়া থেকে মিসর ও তিউনিসিয়ায় আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশিদের মধ্যে ৫৫৮ জনকে দেশে ফিরিয়ে এনেছে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের কর্মকর্তারা জানান, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সহায়তায় মিশরের কায়রো থেকে বাহরাইন হয়ে গালফ এয়ারের একটি ফ্লাইটে গতকাল ভোর ৪টায় ৩৬ জন, দুুপুর সোয়া ২টা থেকে পৌঁনে তিনটার মধ্যে তিনটি ভাড়া করা বিমানে আরো ৫২২ জন বিমানবন্দরে পৌঁছান। এই নিয়ে গতকাল মোট ৫৫৮ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এর আগে গত সোমবার ১০১ জন বাংলাদেশি লিবিয়া থেকে দেশে ফেরেন।
লিবিয়া থেকে দেশে ফিরে আসা শ্রমিকরা সেখানকার পরিস্থিতি বর্ননা দিয়ে জানিয়েছে, লিবিয়ায়র গাদ্দাফির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হলেও এখন গাদ্দাফিবিরোধীদের চেয়ে ছিনতাই ও লুটপাটকারীদের সংখ্যা অনেক বেশি। তারা রড, ধারালো অস্ত্র এবং আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দল বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং বিদেশিদের দেখলেই তাদের ওপর আক্রমণ করছে।
তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছে সবকিছু। চারদিকে লুটপাট, সন্ত্রাসী হামলা দেখে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আন্ত ১২০ জন বাংলাদেশি একটি খোলা ট্রাকে করে বেনগাজী থেকে মিশরের সীমান্তে চলে যায়। সেখানে ছয় দিন আমরা খোলা মাঠে ছিলাম। কোনো ধরনের খাবার বা পানীয় পাইনি। সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম।
এদিকে ওই সময়গুলোতে বৃষ্টি হওয়ায় প্রচন্ড ঠান্ডায় ৫ জন মারা গেছে। এমনকি সীমান্ত পার হতে গিয়ে পদপৃষ্ট হয়ে আরো তিন জন মারা গেছে। নিহতদের রাস্তার পাশে ফেলে রেখে চলে আসতে হয়েছে।
##
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।