আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শহীদ তাজুল : তুমি ফিরে এসো। বড় অসহায় আমরা! শ্রমিকরা।

মানুষ আর প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য হলো-চেতনাগত ও সংস্কৃতিগত।

১ মার্চ স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও মানবমুক্তির সংগ্রামে নিবেদিতপ্রাণ শহীদ কমরেড তাজুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৮৪ সালের এই দিনে এরশাদের সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের ৫ দফা দাবিতে ১৫-দল, ৭-দল ও ১১টি শ্রমিক ফেডারেশনের ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলনের মুখে সরকারের লেলিয়ে দেয়া গুণ্ডাবাহিনীর হাতে তাজুল নিহত হন। তাজুল ছিলেন ‘আদমজী মজদুর ট্রেড ইউনিয়ন’-এর নেতা। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির আদমজী শাখার সম্পাদক।

শহীদ তাজুল : তুমি ফিরে এসো। বড় অসহায় আমরা! শ্রমিকরা। জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আজ আমরা বেঁচে থাকার স্বপ্নও ভুলে গেছি। প্রতিবাদহীন হয়ে পড়েছি। কারও প্রতি আমাদের বিশ্বাস, আস্থা ও ভালোবাসা জন্মে না।

কেউই আমাদের জীবন বাঁচানোর জন্য পাশে এসে দাঁড়ায় না। আমাদের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেয়ার কেউ নেই। আমরা বড় অসহায়! তাই বলছি তুমি ফিরে এসো। আমরা, তোমার নেতৃত্বে আবার আমাদের অধিকার ফিরে পাবো। আমাদের সন্তানদের মুখে দু-বেলা দু-মুঠো ডাল-ভাত তুলে দিতে পারবো।

ফিরে পাবো প্রতিবাদের ভাষা, বেঁচে থাকার অধিকার ও তোমাকে। তুমি ছাড়া আমাদের আর কেউ নেই। তুমি আমাদের ছেড়ে যেতে চাওনি। ওরা (স্বৈরাচার এরশাদের গুণ্ডাবাহিনী) নিঃশেষ করার জন্য, শ্রমিকের প্রতিবাদের ও অধিকারের আলোকবর্তিকাকে নিবিয়ে দেয়ার জন্য তোমাকে হত্যা করেছিল। কিন্তু ওরা জানে না যে, তাজুলকে হত্যা করে নিঃশেষ করা যায় না।

কারণ তাজুলরা যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকে। বেঁচে থাকে শ্রমিকদের আদর্শে-চেতনায়, মানুষের মুক্তির মন্ত্রে। যেখানেই শোষণ-বৈষম্য, সেখানেই তাজুল। তাজুল প্রতিবাদের ভাষা। প্রতিরোধের চেতনা।

মুক্ত মানবের মুক্ত সমাজ নির্মাণের অনুপ্রেরণা। হয়তো আজ আমরা নানা কারণে তাজুলকে ভুলে গেছি। কিন্তু যখন মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রশ্ন করি_আমার কি করছি এবং কি করা উচিত ছিল? তখন নিজেকে অপরাধী মনে হয়। আর মনে হয়, আমিও তো ইচ্ছে করলে তাজুলের স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতাম। কেন নিচ্ছি না? এখানেই আমার পরিচয়।

অতঃপর আমি বা আমরা মরণজয়ী জীবন্ত তাজুলকে হারায়। মেরে ফেলি তাজুলকে। তাই তো তাজুলরা মরে যায়। একজন মানুষ কখনো কোনো অসঙ্গতি, অসাম্য, শোষণ-বৈষম্য মেনে নিতে পারে না। সে প্রতিনিয়ত লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মানুষের সমাজ, মানুষের পৃথিবী গড়ার তোলার জন্য জীবনপণ সংগ্রাম করে যায়।

এমন একজন মানুষের নাম ছিল ‘তাজুল’। তাঁর পুরো নাম ছিল মোঃ তাজুল ইসলাম। তিনি একদিন শ্রমিক-মেহনতি মানুষের কাছে প্রাণপ্রিয় কমরেড তাজুল হয়ে উঠেছিলেন। ১৯৮৪ সাল। ২৮ ফেব্রুয়ারি।

স্বৈরাচার এরশাদ তখন ক্ষমতায়। শ্রমিক-কর্মচারীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য ৫ দফা দাবিতে আন্দোলন চলছিল। এ আন্দোলনে ১৫-দল, ৭-দল ও ১১টি শ্রমিক ফেডারেশন ঐক্যবদ্ধভাবে যুক্ত হয়। ফলে শ্রমিক আন্দলোলন গণআন্দোলনে রূপ নেয়। স্বৈরাচার এরশাদ তার গুণ্ডাবাহিনীকে লেলিয়ে দিয়ে আন্দোলনকে দমন করার প্রচেষ্ঠা চালায়।

তখন তাজুল ছিলেন ‘আদমজী মজদুর ট্রেড ইউনিয়ন’-এর নেতা। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির আদমজী শাখার সম্পাদক। ওই দিন তাজুলের নেতৃত্ব সমস্ত শ্রমিকরা তাদের অধিকার আয়ের জন্য নারায়নগঞ্জ অচল করে দিয়েছিল। সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল-মিটিং শেষে যখন রাতে ৭/৮জন সহযোদ্ধাদের যাচ্ছিল তখন আকস্মাৎ তাজুলকে এলোপাথারিভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। সহযোদ্ধারা তাজুলকে বাঁচাতে মরণপণ চেষ্ঠাও করেছিল।

কিন্তু রাষ্ট্র যে তাজুলের বিপক্ষে ছিল। তাই তাজুলকে বাঁচানো সম্ভব হয়ে ঊঠেনি। আর অন্যদেরকে মেরে ফেলার হুকুম ছিলনা, তাই তাঁরা আহত হয়েছিল। শহীদ তাজুলের রক্ত বৃথা যেতে দেব না_মনজুরুল আহসান খান

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.