ধুর
মাত্র কিছুক্ষণ আগে শেষ হয়ে গেল ভাষার মাস ফেব্রুয়ারী। এই মাস জুড়ে আমাদের কত রকমই না কর্মকান্ড। অনেকে দেখা যায় এই মাসে যথাসম্ভব বাংলাভাষায় কথা বলার চেষ্টা চালান। অনেকে হিন্দি গান শোনা ছেড়ে দেন। রেডিও চ্যানেল গুলাও একই কাজ করে থাকে।
কেউ কেউ তো আবার চেয়ারকে কেদারাই বলা শুরু করে দেন।
কিন্তু এখন? মার্চ মাস এসে গেছে, একটু আগেই আমার পরিচিত একজন খুব আনন্দ করে বলল, "বাচঁলাম, শ্যাষ হইছে, এহনি হিন্দি গান হুনমু!" বুঝেন অবস্থা। এই যদি হয় আমাদের ভাষার প্রতি আমাদের ভালোবাসা। শুনতে হয় যে একজন বাংলাভাষার কালজয়ী সব গানের পরিবর্তে অন্য একটি ভাষার গানকেই বেশি পছন্দ করেন।
এই যদি হয় আমাদের ভাষার প্রতি ভালোবাসা, তাহলে মনে হয় না যে এটি খুব বেশি কোন গর্বের বিষয় যে ১৯৫২ সালে ভাষা সৈনিক (অনেকর আবার এই কথায় এলার্জি আছে)/ ভাষা শহীদের জন্য যারা লড়াই করেছেন, তারা এই বাংলা ভাষার জন্যই লড়াই করেছেন।
অনেককেই আবার দেখাযায় ২১ ফেব্রুয়ারী রাত ১২:০০ টা থেকেই এক অসুস্থ "ফ্যাশান শো"তে নামেন। অবাক লাগে, ভাষা শহীদদের আমরা আমাদের ভালোবাসার এবং শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশের জন্যই শহীদ মিনারে যাই। ফ্যান্সি ড্রেস পরে ঘুরে বেড়ানোর জন্য নয়। এখানে প্রসঙ্গতই বলা যায় আমার একজন আত্মীয়ার কথা, যিনি ঢাকায় একটি ছোট মাপের ফ্যাশান হাউজ চালান। তিনি বলেলন যে গত ১০ বছর আগেও ২১ ফেব্রুয়ারীর জন্য আলাদা করে কোন পোষাক তার ফ্যাশান হাউজে তুলতে হত না।
কিন্তু এখন আলাদা কলেকশন তুলতে হয়, আর মানুষ আসে সেই পোষাকটাই কিনতে যেটাতে তাকে "২১ ফেব্রুয়ারী"র দিন সুন্দর লাগবে। কেউই এই পোষাক কিন্তে আসে না যা তার ভাষার প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ সঠিক ভাবে তুলে ধরবে।
আমার একজন ক্লাসমেট আছে যে খুব গর্ব করেই বলে, "আমি হিন্দিতে কথা বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করি। " দুঃখ হয় এই ধরণের মানুষগুলোর জন্য। এরা কি আসলেই বাংলাদেশি? এরা কি আসলেই বাঙ্গালী? নাকি এরা কোন তৃতীয় সোর্স (আশাকরি তৃতীয় সোর্স বলতে যে একটা গালাগালি দিয়েছি যা 'জ' দিয়ে শুরু হয়ে 'র' দিয়ে শেষ হয় এবং মাত্র তিন অক্ষরের গালি।
) থেকে আসা মানুষ?
আমি আমার মায়ের ভাষাকে ভালবাসি, আমি আমার দেশের ভাষাকে ভালোবাসি, আমি আমার নিজের প্রথম শেখা ভাষাকে ভালবাসি। আর এই ভালবাসা কোন কিছুতে কোন ভাবেই পরিবর্তন করতে পারবেনা (ইনশাআল্লাহ)।
আসেন না, যেই ভালবাসা থেকে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলোনে শহীদেরা তাদের জীবন দিয়েছেলন, সেই ভালোবাসা দিয়ে নিজের মায়ের, নিজের দেশের, নিজের ভাষাকে ভালবাসি। এতে মান ইজ্জত তো কোন ভাবে ডুববে না, বরং আমরা আমাদের "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস" নামে পাওয়া স্বীকৃতিটাকে আরো অনেক অনেক উচুতে নিয়ে যেতে পারব।
নিজের ভাষাকে ভালো না বাসা একটি অপরাধ, কিন্তু নিজের ভাষাকে ভালোবাসা একটি পূণ্য।
শেষ কথাঃ দয়া করে কেউই ভাবেন না যে আমি হিন্দি বিরোধি বা বাংলা ছাড়া অন্য কোন ভাষা ব্যবহারে বাধা দিতে চাই। পৃথিবীর যেই ভাষাই হোক না কেন, সেটা তাদের নিজেদের মায়ের ভাষা। আর কোন মায়ের ভাষাকেই ঘৃণা করা যায় না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।