[ এই কাহিনির সকল চরিত্র ... ... ... ... তা একান্তই অনভিপ্রেত ও কাকতালীয় ]
পূর্ব কথাঃ ২০০৭ এর পর ২০১১ তে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপ ক্রিকেট । এবার ভেন্যু এশিয়াতে ... এশিয়ার ৪টি দেশ অংশগ্রহন করছে বলে তারা সকলেই হচ্ছে এর আয়োজক । বাংলাদেশ , ভারত , পাকিস্তান ও শ্রীলংকাতে হওয়ার কথা ম্যাচগুলো । এর পর থেকে ঘটতে থাকে একের পর এক বিস্ময়কর ঘটনা ।
বিশ্বকাপ ২০১১ পূর্ব ঘটনা : ৩রা মার্চ , ২০০৯ ।
লাহোর, পাকিস্তান ।
লাহোরে ঘটে গেল ‘অপ্রত্যাশিত’ এক ঘটনা । লাহোর টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলা শুরু হওয়ার আগে লংকান ক্রিকেটাররা যাচ্ছিলেন গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে । তখন শ্রীলংকান ক্রিকেটারদের বাস লক্ষ্য করে হামলা চালানো হল অটোমেটিক রাইফেল ও হ্যান্ড গ্রেনেড দিয়ে । সফর বাতিল করে দুবাই-এ গিয়ে গা বাঁচালেন লংকানরা... ৬ জন ক্রিকেটার আহতও হলেন এই হামলায় ...
পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বিশ্বকাপ ২০১১ এর আয়োজকদের নাম থেকে নিরাপত্তাজনিত কারণে কাটা পড়বে পাকিস্তানের নাম ।
বিশ্বকাপ ২০১১ :
১৭-ই ফেব্রুয়ারী , ২০১১ ।
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে হয়ে গেল বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান । তারপর থেকেই একদল ‘সঙ্গীতঅজ্ঞ’ ব্যক্তি মনক্ষুন্ন হলেন ওয়ার্ল্ড কাপ থিম সং শুনে ... এটা নাকি ‘এশিয়ান কাপ থিম সং’ হয়েছে , ইংরেজী ছাড়া ওয়ার্ল্ড কাপ থিম সং হয়না বলে ভ্রূ কুচকালেন কেউ কেউ । ভ্রূ থাকলে সেটা মাঝে মাঝে কুচকাবেই , এই ধ্রুব সত্য মেনে নিয়েই বোধহয় বেশির ভাগ ক্রিকেট পাগল এশিয়ান সেটাকে গুরুত্ব দিলেন না ।
শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হল বিশ্বকাপ ২০১১ ।
১৯শে ফেব্রুয়ারী থেকে । এরপর - মার্চের প্রথম দিকের ঘটনা ।
মিরপুর-১ এর ডেসকোর একটি শাখা উড়ে গেল বোমা বিস্ফোরনে । ১০ নম্বরের ওভারব্রীজের গোড়া থেকে উদ্ধার করা হল ৬ টি গ্রেনেড । আইসিসি এবং ইন্টারপোলের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যবিশিষ্ট গোয়েন্দা বাহিনী ঢাকায় এসে পৌঁছলেন তদন্ত করার জন্য ।
এর ঠিক ২ দিনের মাথায় স্টেডিয়ামের ভেতরের একটি স্থাপনা উড়ে গেল বোমার আঘাতে । ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর সময় গায়েব হয়ে গেল সম্মানিত বিদেশী ডিটেকটিভ বাহিনীর গাড়িটি , ভেতরের যাত্রীদের নিয়েই । অজ্ঞাত এক অপরাধ সংস্থা ১৫ মিলিয়ন ডলার দাবী করে বসল প্রত্যেকের মুক্তিপণ স্বরূপ ।
বাংলাদেশ সরকারে মাথা খারাপ হওয়ার মত অবস্থা , আইসিসি বিনা দ্বিধায় ঘোষনা করল বাংলাদেশেও নিরাপত্তার প্রবল ঘাটতি । ৮ টি ম্যাচের ২ টি হয়েই গেছিল , বাকি ৬ টি ম্যাচ ভারতেই হবে বলে জানালেন আইসিসির প্রেসিডেন্ট ।
শ্রীলংকার কলম্বো , যেখানে হওয়ার কথা ছিল ৫ টি গ্রুপ ম্যাচ , ১টি কোয়ার্টার ফাইনাল এবং ১টি সেমি ফাইনাল , সমুদ্র বন্দরে ব্যাপক গন্ডগোল হল , সেখান থেকে ব্যাপারটা ছড়িয়ে গেল তুমুল গোলাগুলির মধ্যে , ৩ জন পথচারী ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হলেন । শ্রীলংকান পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার ছাড়া আর কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি । আর. প্রেমদাশ স্টেডিয়ামে পরদিন বোমা হামলা চালান হয় । উড়ে গেল ভিআইপি প্রবেশদ্বার । সৌভাগ্যক্রমে এবার কোন ইন্টারপোল এর কেউ শ্রীলংকায় তদন্ত করতে আসেন নি , সুতরাং কোন কিডন্যপিং এর ঘটনার সাক্ষি হতে হল না শ্রীলংকাকে ।
মাথায় উঠল আয়োজন , মাথায় উঠল বিশ্বকাপ । আইসিসি হয়ত ২০১১ এর বিশ্বকাপ এর সমাপ্তি-ই ঘোষনা করবে , ভাবলেন ক্রিকেটবোদ্ধারা । শারদ পাওয়ার সবাইকে শান্ত থাকতে বললেন , ঘোষনা দিলেন , “সন্ত্রাসবাদকে ক্রিকেট ভয় পায় না , শ্রীলংকান ম্যাচগুলো ভারতেই হবে, তবুও হবে । বিশ্বকাপ শেষ করে ঘরে ফিরবে দলগুলো” । সবাইকে অভয়ও দিলেন এর পর নিরাপত্তার প্রচন্ড কড়াকড়ি করার ।
ক্রিকেটাররাও দুর্দান্ত মনোবলের পরিচয় দিলেন , ‘জান গেলে ক্রিকেটের জন্য-ই যাবে’ টাইপ ঘোষনা দিয়ে থেকে গেলেন তাঁরাও ।
তামিল টাইগার হুমকি দিল , শ্রীলংকায় হামলার পেছনে ভারতে হাত আছে , তারা সব খেলা নিজেদের মাটিতে আয়োজন করার জন্যি এই ষড়যন্ত্র করেছে ইত্যাদি ইত্যাদি । কে শোনে বাজে লোকের কুমন্ত্রনা ? তাদের কথা গুরুত্ব পেল না , আরও ৩ টি ম্যাচ হয়ে গেল ভারতেই । এখন সব ক্রিকেট টীম-ই নিরাপদে ভারতে অবস্থান করছেন বিভিন্ন হোটেলে ।
পুনরায় হুমকি আসল তামিল টাইগারের কাছ থেকে ... এই ‘সাব কন্টিনেন্টাল’ ওয়ার্ল্ড কাপকে ইন্ডিয়া যদি নিজের মাটিতেই শেষ করতে চায় তো তামিল টাইগারও দেখে নেবে কিভাবে সেটা শেষ হয় ।
হাজার হোক তারাও ‘দেশপ্রেমিক’ ! গুজব বলে উড়িয়ে দেওয়া হল এই সংবাদ ।
বৃহষ্পতিবার , ২৯শে মার্চ , ২০১১ ।
প্রথম সেমি ফাইনাল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ইডেন গার্ডেন্সে । যদিও এটা হওয়ার কথা ছিল কলম্বে । তবুও কলম্বের আভা কিছুটা উঠে এসেছে এখানেও , কারন ম্যাচটি শ্রীলংকা আর ভারতের মধ্যেই কি না ! কিন্তু ২৬শে মার্চ রাতেই যে ঘটে গেছে এক ন্যাক্কারজনক ঘটনা , সেটা কিন্তু পৃথিবী জানতেই পারল না ।
‘ডী ইম্প্রেসা’ হোটেলে ‘কড়া নিরাপত্তার’ ভেতর থেকেও অপহৃত হয়ে গেলেন শ্রীলংকান অধিনায়ক মাহেলা জয়বর্ধনে এবং দলের অন্যতম ক্রিকেটার সাঙ্গাকারা ।
ভারত কিন্তু নিজেদের ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন রাখতে বদ্ধ পরিকর । ভারত আবারও প্রমান করে দিল , ‘এভরিথিং ইজ অলরাইট’ । ২ জন প্রবাসী শ্রীলংকানকে ধরে এনে একরাতেই নিঁখুতভাবে প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে রেডিমেড জয়বর্ধনে এবং সাঙ্গাকারা তৈরী করে দিল সেরা সার্জনগণ । ভারতমাতার ইজ্জত রক্ষা বলে কথা ! ২৮ তারিখ-ই প্র্যাক্টিসে মাঠে নামলেন জয়বর্ধনে এবং সাঙ্গাকারা ।
বিশ্বকাপের সময়সূচি যথারীতি সামনে এগিয়েই চলল , ভারতেই , ‘নির্বিঘ্নেই’ । সেমি ফাইনালে জয়বর্ধনের গোল্ডেন ডাক এবং সাঙ্গাকারার ৩৪ বলে ২ রান করে আউট হওয়ার দৃশ্য শ্রীলংকানদের বুকে যতটা আঘাত হানল তার চেয়ে বেশি আঘাত হেনেছিল তাদের মাঠে নামাটাই , তামিল টাইগারদের বুকে । ফাইনালে নির্বিঘ্নে পুনরায় ভারত ।
এতদিনে রিওপেন হল কেসগুলো , ২৩শে এপ্রিল , ২০১১ সালে । পাকিস্তানে ২০০৯ সালে সেই হামলার দায়বদ্ধতা যারাই নিয়ে থাকুক , সেটা ‘হয়ত’ ভারতের ষড়যন্ত্র-ই ছিল ।
ডেসকো উড়ে গেল ভারতের কলকাঠি নাড়ানোতেই , ‘হয়ত’। শ্রীলংকার মাটিতে সেই ‘অপ্রত্যাশিত’ গন্ডগোলের মূল ‘হয়ত’ ভারতেই ছিল । থিম সং এ প্রাধান্য পেয়েছে ভারত , বিশ্বকাপ জিতেছে ভারত , সম্পূর্ণ (প্রায়) আয়োজন করতে ‘বাধ্য’ হয়েছে ভারত । দশদিকে ভারতের-ই জয়জয়কার ! এইতো , হয়ে গেল বিশ্বকাপ ক্রিকেট , উপমহাদেশে ।
সব আয়োজকরা খুশি তো ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।