My Name is Md E Mahmud, live in Dhaka, Work at Home
প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক পদত্যাগ না করার ঘোষণা দেয়ায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে মিসরের আন্দোলনকারী জনতা। জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে মোবারক ক্ষমতা ছাড়ছেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন তবে কিছু ক্ষমতা ভাইস প্রেসিডেন্ট ওমর সুলেইমানের হাতে দিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন। শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনে নামায় অগ্নি পরীক্ষার মুখে পড়েছে সরকার। মিসরের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সৌদি আরব ওয়াশিংটনকে হুশিয়ার করে দিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব শান্তিপূর্ণ পন্থায় ক্ষমতা হস্তান্তরের আহবান জানিয়েছেন।
এএফপি/রয়টার্স।
সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার কথা বললেন মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক। টানা ১৭ দিন গণবিক্ষোভের পর বৃহস্পতিবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এ কথা জানান তিনি। এর আগে প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন বলে দেশটির ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) মহাসচিব হাসাম বাদরাবি জানান। তবে মোবারকের পদত্যাগ গুজবই রয়ে গেল।
তিনি পদত্যাগ করলেন না। শুধুমাত্র কিছু বিষয়ে ক্ষমতা ভাইস প্রেসিডেন্ট ওমর সোলাইমানকে ছেড়ে দেয়ার কথা বললেন তিনি। তবে ভাষণে সে বিষয়গুলো স্পষ্ট করেননি মোবারক।
মোবারকের পদত্যাগের কথা শুনে তাহরির প্রাঙ্গণে মানুষের যে ঢল নেমেছিল ক্ষমতায় থেকে যাবার কথাতে তা বিস্ফোরণে পরিণত হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের বড় একটি অংশ প্রেসিডেন্ট ভবনের কাছে গিয়ে মোবারককে উদ্দেশ্য করে 'ছাড়, গদি ছাড়' বলে শ্লোগান দিচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বিশ্বের সংবাদ মাধমে গুজব ওঠে গণবিক্ষোভে অবরুদ্ধতার পর বিশ্বে সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট ওমর সুলেইমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন তিনি। কিন্তু হোসনি মোবারক জনগণের দাবি দাওয়া মেনে নিলেন। তবে পদত্যাগ করলেন না। বাংলাদেশ সময় রাত ২টা ৫০ মিনিটে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক বলেন, বিক্ষোভের সময় সহিংস ঘটনার জন্য নিহতের পরিবার ও জাতির কাছে আমি ক্ষমা চাই।
তিনি বলেন, এসব হত্যাকান্ডের ঘটনায় যারা দায়ী তাদের বিচার করা হবে।
তাহরির প্রাঙ্গণে বিক্ষোভকারী যুবকদের উদ্দেশ্য করে ৮২ বছর বয়সী মোবারক বলেন, আমি অন্তর থেকে বলছি, তোমাদের দাবি মানতে আমি কখনই বিব্রতবোধ করবো না। তিনি বলেন, সংবিধান রক্ষার্থে আমি সংকল্পবদ্ধ। যা করি না কেন তা অবশ্যই সাংবিধানিকভাবেই করা হবে। আগামী সেপ্টেম্বরে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে স্বচ্ছভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।
তবে আমি আর নির্বাচনে দাঁড়াবো না। মোবারক বলেন, সারাজীবন আমি দেশ রক্ষার জন্য কাজ করে গেছি। বহিঃবিশ্বের কাছে আমি কখনো মাথা নোয়ায়নি।
দীর্ঘ ৩০ বছর বীরদর্পে ক্ষমতায় থাকা মোবারক শেষ রক্ষা করতে মিসরের সংবিধানের ৭৬, ৭৭, ৮৮, ৯৩ এবং ১৮১ নং ৫টি অনুচ্ছেদ সংশোধন এবং বিতর্কিত ১৭৯ নং অনুচ্ছেদটি যখন সময় আসবে তখন অবলুপ্ত করা হবে বলে জানান। ১৭৯ নং অনুচ্ছেদে কয়েকটি ধারা রয়েছে যা জরুরি অবস্থার সময় আরোপিত হয়ে থাকে।
এটা ছিল বিক্ষোভকারীদের একটি প্রধানতম ইস্যু। যা বাতিলের জন্য তারা দাবি করে আসছিল।
আলোচনার মাধ্যমে বিক্ষোভকারীদের দাবি মানা হচ্ছে- এটা প্রমাণে ভাইস প্রেসিডেন্ট ওমর সুলেয়মানকে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন বলেন মোবারক। তিনি জানান, মিসর দিনদিন শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের দিকে এগুচ্ছে। বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে প্রাথমিক ঐকমত্য হয়েছে বলে ভাষণে দাবি করেন মোবারক।
তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে যেই জয়ী হোক, তার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত সংবিধান রক্ষায় আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তার এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে কায়রোর তাহরির চত্বরে জড়ো হওয়া লাখো জনতা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। মিসরের প্রধানমন্ত্রী আহমেদ শফিকের বরাত দিয়ে রয়টার্সের খবরে জানানো হয়, প্রেসিডেন্ট মোবারক পদত্যাগ করতে পারেন এবং দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে শিগগিরিই স্পষ্টভাবে জানানো হবে। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা মেনা জানায়, মিলিটারি কাউন্সিল দেশের সুরক্ষায় অবিরাম অধিবেশন চালিয়ে যাচ্ছে। সামরিক বাহিনীর এক বার্তায় বলা হয়, তারা জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন দেখাতে চায়।
ভাষণের মাঝখানেই তাহরির চত্বরে জড়ো হওয়া প্রায় তিন লাখ মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। হতাহতের ঘটনা ছাড়াও আন্দোলনে বিপর্যস্ত হয়েছে দেশটির অর্থনীতি। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩১ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে বলে হিসাব দিয়েছেন মিশরের ক্রেডিট এগ্রিকোল ব্যাংকের বিশ্লেষকরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২৯ জানুয়ারি মন্ত্রিসভা ভেঙে দেন মোবারক। সাবেক গোয়েন্দা প্রধান ওমর সুলোইমানকে সেদিনই ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেন তিনি।
নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় সাবেক বেসামরিক বিমান চলাচলমন্ত্রী আহমেদ শফিককে। শফিকের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা ৩১ জানুয়ারি শপথ নেয়।
১ ফেব্রুয়ারি জাতির উদ্দেশে ভাষণে মোবারক এই আন্দোলনের জন্য মুসলিম ব্রাদারহুডকে দায়ী করে বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে তিনি লড়বেন না। তবে জনগণের কাঙ্ক্ষিত সংস্কারের জন্য ওই সময় পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার কথা বলেন তিনি। বিক্ষোভ শুরুর পরপরই দেশটিতে রাজনৈতিক সংস্কার ও অর্থবহ পরিবর্তনের আহবান জানায় যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন।
এরপর জনতার আন্দোলন আরো তীব্র হয়ে ওঠে। এর সঙ্গে ঘরে-বাইরে নানামুখী চাপ বাড়তে থাকায় ৫ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল ডেমোক্রাটিক পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বে রদবদল করা হয়। মোবারকের ছেলে গামালসহ দলটির শীর্ষ নেতারা পদত্যাগ করেন।
জনগণকে শান্ত করতে ৭ ফেব্রুয়ারি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ১৫ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেয় মিসরের মন্ত্রিপরিষদ। বিরোধী রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুডসহ বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরকারের আলোচনাও শুরু হয়।
কিন্তু মোবারকের পদত্যাগের দাবিতে অনড় থাকে আন্দোলনকারীরা।
মিসরে চলমান বিক্ষোভের মধ্যে বেতন বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিক ধর্মঘটে নতুন করে অগ্নিপরীক্ষার মুখে পড়েছেন মোবারক। দেশজুড়ে সর্বস্তরের হাজার হাজার শ্রমিক, অফিস কর্মী, সরকারি কর্মচারী এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরাও ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন বেতন বাড়ানো আর কাজের পরিবেশ উন্নয়নের দাবিতে।
কায়রোর তাহরির স্কোয়ারে সাদা পোশাকে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সামিল হয়েছে ডাক্তাররা। কায়রোর হাসপাতালে ৩ হাজার শ্রমিক ধর্মঘট শুরু করায় বন্ধ হয়ে গেছে হাসপাতাল।
ধর্মঘট হয়েছে সুয়েজ এবং ইসমাইলিয়াতেও। মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশে দ্রুত রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটানো এবং জরুরি অবস্থা তুলে নেয়ার যুক্তরাষ্ট্রের আহবান প্রত্যাখ্যান করার পর নতুন করে এ অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। তবে মিসরের শ্রমিক সংগঠনগুলো খন্ড-খন্ড ও ছড়ানো ছিটানো হওয়ায় তারা তিউনিসিয়ার মতো একজোট হতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
কিন্তু আন্দোলন-ধর্মঘট যে হারে জোরদার হচ্ছে তাতে সেনাবাহিনী শেষমেশ অর্থনৈতিক অচলাবস্থা সহ্য করবে না বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সরকার অবশ্য চাপের মুখে ইতোমধ্যেই ক্ষেত্রবিশেষে ১৫ শতাংশ বেতন বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
কিন্তু মিশরে শুরু হওয়া বিপ্লবে সমাজের বিভিন্ন স্তরে মানুষের প্রত্যাশা বাড়ছে। যারা এতাদিন তাদের দাবি নিয়ে মাঠে নামার সুযোগ পায়নি তারাও এখন অধিকার আদায়ের দাবিতে রাস্তায় নামছে। এমন কথাই জানিয়েছেন বিশ্লেষক গামাল সোলতান। তিনি বলেন, দাবি আদায় না হলে বিক্ষোভ প্রতিবাদ আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
যুক্তরাষ্ট্রকে সৌদিআরবের হুঁশিয়ারি
যুক্তরাষ্ট্র মিশরে সাহায্য কর্মসূচি বন্ধ করলে সৌদি আরব প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের পাশে দাঁড়াবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে এ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সৌদি আরবের বাদশাহ আবদুল্লাহ। মিসরে আন্দোলনের জোয়ারে অবিলম্বে পদত্যাগের চাপের মুখে থাকা হোসনি মোবারককে যেনো অপদস্ত করা না হয়। ২৯ জানুয়ারিতে ওবামাকে টেলিফোনে একথা বলেছেন আবদুল্লাহ। রিয়াদের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ‘দ্য টাইমস' পত্রিকা বৃহস্পতিবার এ খবর জানায়। ২৯ জানুয়ারির ওই টেলিসংলাপের আগের দিনই হোয়াইট হাউস বলেছিলো, তারা মিশরে এক শতাধিক কোটি ডলারের সাহায্য দেয়ার বিষয়টি নতুন করে ভেবে দেখবে।
এর পরিপ্রেক্ষিতেই মিসরকে প্রয়োজনে তহবিল যোগানোর ওই ইঙ্গিত দেয় সৌদি আরব। যদিও পরে মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, মিসরে সাহায্য কর্মসূচির বিষয়টি ভেবে দেখা দেখির কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই। উল্লেখ্য, মিশরে সরকার এবং আন্দোলনকারী দুপক্ষকে সমর্থন করা না করা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে যুক্তরাষ্ট্র। মিসর সরকারকে সমর্থন না দিলে দেশটিতে মুসলিম ব্রাদারহুডের মতো কট্টরপন্থি দল উঠে আসার আশঙ্কা, আর অন্যদিকে গণতন্ত্রের দাবি সমর্থন-- দুইই দ্বিধায় ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্রকে।
মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র তার প্রভাব অক্ষুণ্ণ রাখার স্বার্থে দীর্ঘদিন থেকেই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দিয়ে মিশরের সঙ্গে সখ্যতা জিইয়ে রেখেছে।
মিশরে গণআন্দেলনের মুখে যুক্তরাষ্ট্র অবিলম্বে ক্ষমতার পরিবর্তনের আহবান জানালেও এ মুহূর্তেই মোবারকের পদত্যাগের দাবিকে তেমনভাবে সমর্থন জানায়নি।
এদিকে জাতিসংঘ থেকে এএফপি জানায়, জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত অবশ্যই মিসরীয়দের নির্ধারণ করতে হবে বলে উল্লেখ করে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য আবারও আহবান জানিয়েছে।
হোসনি মোবারক ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকছেন বলে ঘোষণা দেয়ার পর মিসরীয়রা বিক্ষোভে ফেটে পড়ার পর তিনি একথা বলেন। তার অফিস থেকে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলা হয়, মহাসচিব মিসরের ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণ করছেন।
Genuine Online earning education program,
http://www.bdcareer.tk
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।