মেয়েটি ঢাকার একটি মহিলা মাদ্রাসায় পড়ে। কামিল পরীক্ষা দিবে সে বছরই। পড়ালেখার চাপ অনেক। মাদ্রাসার হোস্টেলে থেকেই পড়ালেখা করে। ভাইয়াদের সাথে মাঝে মাঝে বাড়ীতে যায় সময় কাটাতে।
তবুও গত কয়েক মাসে যেতে পারে নি।
ধরেন, মেয়েটির নাম কাজল। হঠাৎ মামাতো বোনের কাছ থেকে কাজল শুনলো মামীরা সব বেড়াতে যাচ্ছে তাদের বাড়ীতে। মামা ভাগ্য বেশ ভালো কাজলের। নয় নয়টি মামা তার।
তার মধ্যে প্রায় সব মামা আর বেশীর ভাগ মামীই যাচ্ছে বাড়ীতে। শুনে মন খারাপ হয়ে যায় মেয়েটির। সবাই যাচ্ছে তাদের বাড়ীতে- কতই না মজা হবে। অথচ তাকে কেউই কিছু জানায় নি। সাথে সাথে ফোন দেয় বড় ভাইয়াকে।
বড় ভাইয়া জানতে চায় পড়ালেখার ক্ষতি হবে কিনা। মনটা আরও খারাপ হয়ে যায় কাজলের। পড়ালেখার জন্যে কি এরকম একটা মজা মিস করবে সে!
বড় ভাইয়ার সাথে কথা বলে অনেকটা জোর করেই এক ভাইয়া ও মামা-মামীদের সাথে বাড়ী আসে সে। বিশাল আয়োজন বাড়ীতে। আরও নাকি মেহমান আসবে বাড়ীতে।
রান্না-বান্না হচ্ছে বাইরে। ঘরে সবাই গল্প-গুজবে মত্ত।
এমন সময় কানের কাছে বোমা ফাটালো এক মামাতো বোন। যারা বাইরের মেহমান আসছে তারা আসবে কাজলের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে! তবে এটা শুধু প্রাথমিক আলাপ। পাকা কথা এখনই হবে না।
সব শুনে কান লাল হয়ে যায় সদ্য টিনএজ পেরুনো মেয়েটার। বুঝতে পারে কেন তাকে না জানিয়ে মামাদের এই প্রোগ্রাম। কেন ভাইয়া ঘুরিয়ে বলেছিলো বাড়ীতে না আসার কথা। আর সে নিজেই কিনা নাচতে নাচতে এ প্রোগামে হাজির! সবাই কি ভাবছে এটা ভেবেই সাটির সাথে মিশে যেতে চাইছে কাজল। সেই যে গিয়ে নিজের ঘরে ঢুকলো সারাদিনে আর বেরুলো না সেখান থেকে।
কাজলের মনে পড়লো মাসখানেক আগে তার বয়সী এক এক মেয়ে গিয়েছিলো মাদ্রাসায়। মেয়েটার সাবেক এক ক্লাশমেট এখন কাজলের সাথে পড়ে। আফসারী নামের মেয়েটা তার সাথে অনেকক্ষন গল্প করেছে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করেছে। পরে হোস্টেল সুপার ও ক্লাশমেটের কাছে শুনেছিলো কাজলকে দেখতেই নাকি আফসারী এসেছিলো।
আফসারীর বড় ভাইয়া হচ্ছে পাত্র যার জন্যে মেয়ে খোঁজা হচ্ছে। একটু রাগই হয়েছিলো কাজলের। একটু না অনেকখানি! না বলে এভাবে কন্যা দেখতে আসাটা কেমন যেন!
সেই তারাই কি আবার এখানে উৎপাত করতে আসছে! মেজাজটা আবার খারাপ হতে থাকে কাজলের। বিব্রতকর একটা পরিস্থিতিতে পড়ে ঘরের কোনায় বসে সে ক্ষুদ্ধ হতে থাকে অজানা অচেনা সেই পুরুষটার প্রতি যার জন্যে এভাবে তাকে পদে পদে বিব্রত হতে হচ্ছে। দেশে কি আর কোন মেয়ে নাই!
দিন গড়িয়ে বিকেল হয়।
বাইরের মেহমানরা বিদেয় হয়। মামা-মামীরাও একে একে বেড়িয়ে পড়েন। সন্ধ্যার পরপরই বাড়ী আবার ফাঁকা হয়ে যায়। কাজল থেকে যায় বাড়ীতে। এশার নামাজের পরে বড় ভাইয়া আসে রুমে।
হাতে একটা ফটোযুক্ত বায়োডাটা। বলেন, এটা দেখো ভালো করে। পাত্র হিসেবে পছন্দ হয় কিনা দেখো। কাজল কিছু বলতে পারে না। চুপ করে থাকে।
পরে বড় ভাবীর কাছে বায়োডাটা ফেরত দিয়ে বলে, পাত্র বুদ্ধিমান আর আরেকজনকে বুঝার যোগ্যতা থাকলেই চলবে।
এটা জানুয়ারী ২০০৬ এর কথা। পরের সপ্তাহে কাজল ভাইয়ার সাথে চলে যায় মাদ্রাসায়। সময় গড়িয়ে চলে। ভাসা ভাসা কানে আসে কিছু কথা।
ছেলে দেখতে আসবে অমুক তারিখে। তাকে বাড়ী যেতে হবে সে জন্যে। আবার মেজাজ খারাপ হয় তার। একটু ভয় ভয়ও লাগে। এক সময় শুনে ছেলে আসবে না কনে দেখতে।
ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি কাজল খবর পায় বিয়ের তারিখ ঠিক হয়েছে মার্চ এর ১৭ তারিখে। পরীক্ষার ২ মাস আগে। তবে এখন শুধু বিয়ে হবে। উঠিয়ে নেওয়ার প্রোগ্রাম হবে আরও পরে। পরীক্ষার লেখাপড়া মাথায় তুলে কাজল আকাশ-পাতাল ভাবে ভবিষ্যৎ নিয়ে।
কি আছে সেখানে- আলো না অন্ধকার?
***********************************************
এটা কাজলের স্মৃতিকথা। এক দুর্বল মূহুর্তে সে শেয়ার করেছিলো আমার সাথে। উল্লেখ্য, নির্ধারিত ১৭ মার্চ ২০০৬ তারিখেই কাজলের বিয়ে হয়ে যায়। সে এখন দুই সন্তানের মা। ছেলের বয়স ৩ বছর ৪ মাস আর মেয়ের বয়স ৫ মাস ১৬ দিন।
আর দুইদিন পরেই ভ্যালেন্টাইন ডে! ভালোবাসা দিবস। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে আগেই আমি জানিয়ে রাখতে চাই, আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি কাজল! আজীবন আমার সবটুকু ভালোবাসা তোমার জন্যে, এবং আমাদের অর্জন বাবুদের জন্যে......
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।