আমি তোমাদেরই একজন, খুবই সাধারণ !!!
ছবি:- ভাষা শহীদ আবুল বরকত(১৯২৭-১৯৫২)
ভাষা শহীদ আবুল বরকত ১৬ই জুন ১৯২৭ সালে ভারতের পশ্চিম বঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি মহকুমার ভরতপুর থানার বাবলা নামক একটি ছোট গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতার নাম শামসুউদ্দিন। ১৯৪৫ সালে পার্শ্ববর্তী গ্রামের তালিবপুর ইংলিশ হাই স্কুল থেকে প্রবেশিকা পাশ করেন। ১৯৪৭ সালে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। পরে ১৯৪৮ সালে তিনি পূর্ব বাংলায় চলে আসেন।
ঢাকার পুরানা পল্টনে বিষ্ণু প্রিয়া ভবনে তার মামা আব্দুল মালেকের বাড়ীতে উঠেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই বাড়িতেই ছিলেন। ঢাকায় এসে ১৯৪৮ সালেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স কোর্সে ভর্তি হন। ছাত্র হিসাবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত মনোযোগী, নম্র, ভদ্র ও চরিত্রবান। ১৯৫১ সালে তিনি অনার্স পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেনীতে চতুর্থ স্থান লাভ করেন এবং এম.এ. শেষ পর্বে ভর্তি হন।
১৯৫২ সাল ২১ ফেব্রুয়ারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের সামনে আমতলায় সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মী পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত সমাবেশে যোগদান করেন।
ঢাকাসহ সারাদেশে "রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই" এই দাবীতে তখন আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠে। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্রজনতার শ্লোগানে শ্লোগানে কেঁপে উঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। পুলিশের সঙ্গে ছাত্র জনতার সংঘর্ষ শুরু হয় বিক্ষিপ্তভাবে। বাঙালি জনতার চোখে সেদিন ছিল ভয়ের পরিবর্তে ঘৃনার আগুন । পুলিশ চেষ্টা করছিল ছাত্রদের ব্যারিকেড ভেঙ্গে হোস্টেল চত্বরে ঢুকতে।
কিন্তু, ছাত্রদের শক্ত প্রতিরোধের কারনে তারা ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছিল । বেলা ৩টার দিকে হোস্টেল চত্বরে ঢুকে নির্মমভাবে গুলি চালাতে থাকে পুলিশ। সেই সময় আবুল বরকত অন্য এক বন্ধুর দিকে এগিয়ে এসেছিলেন। হঠাৎ তিনি বুলেটের আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। প্রথমে কেউ বুঝে উঠতে পারেনি, ততক্ষনে রক্তধারা ছুটে মাটি ভিজে যাচ্ছে।
তলপেটে গুলি লেগেছিল তার । পরনের নীল হাফ শার্ট, খাকি প্যান্ট ও কাবুলী স্যান্ডেল রক্তে ভিজে যাচ্ছে। দুই তিন জন ছুটে এসে সুঠামদেহী বরকতকে কাঁধে তুলে জরুরী বিভাগের দিকে দৌড়াতে থাকেন। বরকত তখন বলেছিলেন "আমার খুব কষ্ট হচ্ছে হয়ত আর আমি বাঁচবনা, পুরানা পল্টনে বিষ্ণু প্রিয়া ভবনে এ খবর পৌঁছে দিবেন। ডাক্তাররা তাকে বাঁচানো জন্য আপ্রান চেষ্টা করেছিলেন।
কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরনের জন্য সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারী রাত ৮টার সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরী ওয়ার্ডে মহান এই দেশ প্রেমিক শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারী মোট কতজন শহীদ হন তার সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। কারন অনেক শহীদের লাশ মর্গ হতে মিলিটারী ও পুলিশ গুম করে ফেলে। পরের দিন তাদের জানাজা হবে ছাত্ররা মাইকে এই ঘোষনা দিলে পুলিশ সে রাতেই মর্গ থেকে লাশ সরিয়ে ফেলে।
আবুল বরকতের মামা আব্দুল মালেক ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ্যাসিস্ট্যান্ট একাউন্টস অফিসার এবং তার এক আত্মীয় আবুল কাসেম এস.এম.জি. বিভাগের ডেপুটি সেক্রেটারী ছিলেন। তারা দুজনে তদবীর করে পুলিশের কাছ থেকে আবুল বরকতের লাশ উদ্ধার করেন। ২১ ফেব্রুয়ারী রাত ১০টার দিকে পুলিশের কড়া পাহাড়ায় আজিমপুর পুরাতন গোরস্থানে আবুল বরকতের লাশ দাফন করা হয়। শহীদ আবুল বরকতকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০০০ সালে মরনোত্তর ২১শে পদক দিয়ে সম্মানিত করেন।
ঢfকার আজিমপুর পুরানো কবরস্থানের এই কবরে মহান ভাষা শহীদ আবুল বরকত চিরনিদ্রায় শুয়ে আছেন।
সংক্ষিপ্ত জীবনী
নাম : আবুল বরকত ।
জন্ম : ১৬ই জুন, ১৯২৭ ইং ৷
জন্মস্থান : রতের পশ্চিম বঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি মহাকুমার ভরতপুর থানার বাবলা গ্রামে ৷
পিতা : শামসুউদ্দিন ৷
শিক্ষাজীবন : রাষ্ট্রবিজ্ঞান (এম.এ শেষ বর্ষ) অধ্যায়নরত ছাত্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৷
মৃত্যু : ২১ ফেব্রুয়ারী, ১৯৫২ সাল ৷
সমাধি স্থল : ঢাকার আজিমপুর পুরানো কবরস্থানে ৷
ছবি ও তথ্য সূত্র:- উইকিপিডিয়া , ইন্টারনেট, ভাষা সৈনিক আমানুল হক, বিশ্ব তোরনে বাংলা ও বিভিন্ন পত্রিকা থেকে নেওয়া।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।