আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এমনিতেই

নিঃস্বার্থ মন্তব্যকে ধন্যবাদ, সাময়িক ভাবে আমি মন্তব্যে নেই

ধরে নাও অল্প কিছুক্ষণ বাদে খাতা টেনে নিতে আসবে শিক্ষক। উপরে সিলিং ফ্যান ঘুরছে। বেরিয়ে যাবার পরও তা প্রশান্তিকর বাতাস ছড়াবে। এডিসন ল্যাম্প লাল ফিলামেন্টে জ্বলবে। ওরা থেকে যাবে।

কিন্তু তোমার থাকার উপায় নেই। আর এও জেনে গেছ পরীক্ষাহলটা অনেক বছর ঘর্মাক্ত ছাত্রদের আশ্রয় হবে। ট্রেন ছাড়তে অল্প কিছুক্ষণ বাকি। হুইসেলটা মেলার বাঁশির আওয়াজের মতো দীর্ঘ। এর মধ্যে স্টেশনের সিমেন্টের বেদীতে বসে গ্রামের দৃশ্যগুলো দেখে নিতে হচ্ছে।

খেত পেরিয়ে দুরে নয়িতাপুর গ্রাম, নতুন ধানের চারা, বক উড়ে যাচ্ছে। ছনের বাড়ির উপর রেন্ডি কড়ই গাছ। ধানের পূণ্জী। শুকনো লাল গরু। আর আকাশে তোমার মতই বিদায়ী মেঘেরা মা মেঘের কোলে মাথা গুঁজে দিচ্ছে।

মাটির শেকড়ে তুমি বহুদিন পর বাড়ি ফের। তোমার বাবা ব্যস্ত ছিলেন। আজ ট্রেনে তুলে দিতে এসে প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকছেন কিছুক্ষণ। তিনিও বাবার কবর ছেড়ে শহরে যাবেন না। চোখে একটা ভারী চশমা পাঠিয়েছ শহর থেকে।

ছানির চোখের দৃষ্টিতে তার আগ্রহ। তুমি তো জেনেছ এখানে তোমার আসা হবে অনেক পর। শেকড়ের রমনীরা কলাগাছের ওপাশে পথের সীমায় দাঁড়িয়ে বিদায় দিচ্ছে। হয়তো স্বপ্নের মতো অন্যদিন, কোথাও বেড়াতে গিয়েছ। সপ্তাহের ছুটিতে অফিসের তাড়া নেই।

মনে হচ্ছে থেকেই যাবে বুনো ঝোপে বেগুনী ফুল দেখে। রডডেনড্রন বৃক্ষের ছায়ায় জিরিয়ে ঘুরে বেড়াতে। হেমলকের লতা। পশ্চিম পর্বতে গাড়ি নিয়ে উঠে হ্রদে সূর্যোদয়ের প্রতিফলন দেখে নিতে। তুমি ভুলেই গেছে কাল থেকে গাছের কাণ্ডে বসে থাকা হবে না।

সর্পিল পথের বাঁকে উপজাতীয় দোকানে আসা যাওয়ার শেষ দিন আজ। গরম পানীয় জুড়িয়ে ঠোঁটে নিচ্ছ। পাহাড়ী শিশুদের গোসল দেখছ ঝরণার পানিতে । এভাবে দিনগুলো যখন উড়ে যায় আগুনের ফুলকির ডানায়, যদিই বা সুটকেস গোছাতে হয় বহুতলার লিফটে ফেরত আসতে কি কি উপকরণে বাকিটুকুতে শ্রেষ্ঠ সময় করে নেবে? শেষ মুহূর্তগুলো উপভোগ করে নিতে হয়? যদিই বা জেনে যাও সুসময়ের গোনা দিনে মিনিট মিনিট খরচ হয়ে যায়। দরিদ্র কৃষককে হাতে আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যাওয়ার মতো এই সুসময়, আনন্দের সময়।

মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য অভাবী মানুষের মতো যদি হতভম্ব হতে হবে - যে মহাবিশ্বের সমস্ত ভাত গুড় দিয়ে খেয়ে নিচে চায় ! সময় কম জেনে নিলে কি উঠতি তরুণ তরুণীরা হৈহুল্লোড় করবে? উচ্চগ্রামের শব্দে সতীর্থদের নিয়ে মেতে উঠবে? নাকি বিদায়ের বেদনায় স্তব্ধ হবে, অবশ্য শিশুরা খেলনা আর চকলেটেই তৃপ্ত, আর বুড়ো বয়সের মানুষেরা স্মৃতি রোমন্থনে বন্ধুদের নিয়ে বসবে সেগুনের টেবিলে। যদি ধরে নেই ফেরার জন্য তার চেয়ে অল্প সময় বাকি। কী কী বাকি রয়ে গেল? কী পড়া হবে কি হবে না? কি শোনা হলে কান তৃপ্ত রয়ে যাবে। লক্ষ কোটি অসাধারণ তৈলচিত্র, স্কেচ, চলচ্চিত্র পড়ে আছে, সাহিত্যের ভাণ্ডারে একা রবীন্দ্রনাথ পড়তেই জীবন চলে যাবে, বিটোফেন শুনতে চাইলে হয় না, সুগন্ধীর ফুলগুলো থেকে বঞ্চিত কত বছর। এখন লালনের ডেরায় বা বস্তির বিস্ময় লিলুয়া পাগলার দোতরা শুনতে সময় কোথায়? কবে লেখা হবে হৃদয় জুড়ানো কবিতা বা একটা সহজ গল্প? বাড়িওয়ালা কড়া নাড়ছে।

সময় বিক্রি না করে বেতন না নিলে চলবে কি করে? তবে কি অর্থ পেতে দলিল বা থিসিস পড়ে পড়েই কেটে যাবে সময়? দ্রুত বর্ধনশীল শিশুটি বসে আছে অপেক্ষায়। কত কাজে সময় বয়ে গেল। স্ত্রী বা ভাইবোনদের জন্য দৈনিক সময়ের খন্ডগুলো সীমিত হয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ বহুদিনের, সামনে আরও বাড়বে। এই যে কামড়ে বাকি সময়কে খেয়ে ফেলা - সেই কেকের কতটুকু কার জন্য? যেন একটা করে সময় বোমার মোড়ায় বসে আছি সবাই।

গোনা দিন আছে বাকি অথবা দিন গোনার আগেই দিন ফুরিয়ে যাবে। প্রজাপতির ওড়াওড়ি, বন্ধুর কড়া নাড়া, দুরালাপনীর কণ্ঠ, জানলার বৃষ্টি, পুরনো বন্ধুর দেখা হবার আহ্বান অথবা প্রশান্তির নিদ্রা - চারদিকে কত কিছু প্রতীক্ষায় - কাকে নেই আগে, কেই বা থাকবে তালিকার বাইরে? --- ড্রাফট ১.০

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.