আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্বকাপ ক্রিকেটঃ আমাদের সেরা একাদশ বাছাইয়ে মধুর 'বিভ্রান্তি'!

নো ওয়ান ক্যান মেক মি ফিল ইনফেরিওর উইদআউট মাই কনসেন্ট!

আমাদের ১৫ জনের স্কোয়াডটি নিয়ে আমি বেশ সন্তুষ্ট; অপুর্নতা একটাই – মাশরাফি নাই! কিন্তু এখন আর পেছনে চেয়ে থাকার সময় নাই, যারা আছে এদের নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। তবে সমস্যা হচ্ছে অন্য জায়গায় – আমাদের সেরা একাদশটা কি হবে? আমাদের নির্বাচক, কোচ ও অধিনায়কের নিশ্চিতভাবেই ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে এই একাদশ নির্বাচন করতে গিয়ে। আমি নিজেও একটু চেষ্টা করছিলাম আমাদের সেরা একাদশ বাছাই করার, কিন্তু যুক্তিসঙ্গত অনেক কারনে নিজেই এখন বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছি! দেখি আপনাদেরকে একটু বিভ্রান্ত করতে পারি কি না? মূলত প্রথমে যে ব্যাপারটা আলোচনা করতে চাচ্ছি সেটা হচ্ছে দলের ফরমেশন চুড়ান্ত করা নিয়ে। নিজের মাটিতে গত সাতটি ম্যাচের (নিউজিল্যান্ডের সাথে প্রথম ম্যাচটা বাদে) ফরমেশন ছিল হুবুহু একরকমঃ প্রথমে চারজন সলিড ব্যাটসম্যন, এরপরে যথাক্রমে সাকিব আল হাসান, উইকেট কিপার, একজন স্পিনিং অলরাউন্ডার, দুইজন জেনুইন স্পিনার এবং দুইজন ফাস্ট বোলার। তাহলে মোটামুটি ধরে নেওয়া যাচ্ছে যে, এই একই ফরমেশনে খেলানোতেই কোচের আগ্রহ বেশী; এবং যেহেতু এটা আমাদের উইনিং ফরমেশনে দাঁড়িয়ে গেছে, এটা পরিবর্তন করার আপাতদৃষ্টিতে কোন কারন আমি অন্ততঃ পাচ্ছি না।

তাহলে এবার এই ফরমেশন অনুযায়ী সেরা একাদশ দাঁড় করাই। ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে আসছে তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। এখানে কারো কোন দ্বিমত থাকা উচিত নয়। প্রথম বিভ্রান্তিটা আসছে ওয়ান-ডাউন পজিশনে। কাকে খেলানো উচিত – শাহরিয়ার নাফিস নাকি জুনায়েদ সিদ্দিক? ইন্টারন্যাশনাল লেভেলে শাহরিয়ারের ওয়ানডাউন পজিশনে খেলার অভিজ্ঞতা বলতে গেলে নাই (কেবলমাত্র একটি); অপরদিকে জুনায়েদ এই পজিশনে নিজেকে অনেকটাই প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে।

তারপরও ট্যালেন্ট ও ক্যাপাবিলিটি বিবেচনা করলে শাহরিয়ারকেই নেওয়া উচিত হবে, কিন্তু এতে করে কি জুনায়েদের প্রতি অবিচার করা হবে না? দ্বিতীয় এবং অন্যতম প্রধান বিভ্রান্তিটা আসছে টু-ডাউন পজিশন নিয়ে! ক্যান্ডিডেট মূলত আশরাফুল, রাকিবুল এবং জুনায়েদ (যদি শাহরিয়ার নাফিসকেই তিন নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে চুড়ান্ত করা হয়ে থাকে)। জুনায়েদকে আমি প্রথমেই বাদ দিয়ে দিবো - তার চার নম্বর পজিশনে খেলার অনভিজ্ঞতার কারনে নয়, বরং সে একজন লেফট হ্যান্ডেড ব্যাটসম্যান তা-ই! চার নম্বর পজিশনে অতি অবশ্যই একজন রাইট হ্যান্ডেড ব্যাটসম্যান খেলাতেই হবে, কোন বিকল্প নাই! তাহলে কাকে চয়েস করা উচিত? আমি রাকিবুলকেও অত পছন্দ করি না, আশরাফুলকেও না; যদিও আশরাফুলের আশরাফুলীয় ইনিংস পছন্দ করি। যাই হোক ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করছি, প্রথম দুটা ম্যাচে রাকিবুলকেই সুযোগ দেওয়া হোক! সে যদি আশানুরুপ পারফরম্যান্স না করে, তাহলেই বিগ টুর্নামেন্টে আলো ছড়ানোর শেষ সুযোগটা আশরাফুলকে দেওয়া যেতে পারে! এছাড়া অনেকেই বলছেন চার নম্বর পজিশনে মুশফিককে খেলানোর কথা! আমার মতে এটা একটা রাবিশ আইডিয়া! মুশফিক কিপিংটাই আরেকটু ভালো মত করুক, কিপিং-এই মূলত কনসেনট্রেট করুক, চার নম্বর পজিশনের গুরুদায়িত্বের ভার তার উপর আমরা আর না দেই! পাঁচ ও ছয় নম্বর পজিশন নিয়ে আমাদের কোন দুশ্চিন্তা নেই। যথাক্রমে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও উইকেট কিপার মুশফিক রহিম। তৃতীয় বিভ্রান্তিটা হচ্ছে সাত নম্বর পজিশন তথা একজন অলরাউন্ডার নিয়ে।

মাত্র দুজন ক্যান্ডিডেটঃ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আর নাইম ইসলাম! টেকনিক্যালি মাহমুদুল্লাহ নাইমের চেয়ে ভালো ব্যাটসম্যান, এবং বড় ইনিংস খেলার ধৈর্যও বেশী আছে তার। কিন্তু আমি তুলনাটা করছি অন্যভাবেঃ নিউজিল্যান্ড সিরিজে মাহমুদুল্লাহ আহামরি কোন পারফরম্যান্স করে নাই, বোলিং করলেও সেটা দুই-চার ওভারের বেশী নয়। অপরদিকে জিম্বাবে সিরিজে মাহমুদুল্লাহকে সরিয়ে নাইম একাদশে ঢুকেই বেশ ভালো কন্ট্রিবিউট করেছে, প্রতি ম্যাচেই আট-দশ ওভার ভাল বোলিংও করেছে! এছাড়া পাওয়ার প্লের সময় নাইমের ব্যাটিংটা বেশী কার্যকরী হবে বিবেচনা করে নাইমকেই একাদশে স্থান দেওয়াটা যুক্তিযুক্ত হবে বলে মনে করি। ফাইনালি, উপরের উল্লেখিত ফরমেশন অনুযায়ী শেষে চারজন জেনুইন বোলার নিতে হবে। কোন বিভ্রান্তি ছাড়াই নামগুলো বলে যাচ্ছিঃ আবদুর রাজ্জাক, সোহরোয়ার্দি শুভ, শফিউল ইসলাম ও রুবেল হোসেন।

তাহলে আমাদের সেরা একাদশটা দাঁড়ালো নিম্নরুপঃ তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, শাহরিয়ার নাফিস, রাকিবুল হাসান, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, নাইম ইসলাম, আবদুর রাজ্জাক, সোহরোয়ার্দি শুভ, শফিউল ইসলাম ও রুবেল হোসেন। এখন আসি চুড়ান্ত বিভ্রান্তিটি নিয়ে। দুঃখজনকভাবে বিভ্রান্তিটা উপরোল্লিখিত ফরমেশনটা নিয়েই যার উপর ভিত্তি করে আমার এই একাদশ বানালাম! ব্যক্তিগতভাবে আমি অবশ্যই মনে করি ইংল্যান্ড, ওঃ ইন্ডিজ ও সাউথ আফ্রিকার বিরুদ্ধে উপরের ফরমেশনটাই বেস্ট পসিবল ফরমেশন! আয়ারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডের বিরুদ্ধেও তাই। তিনজন লেফটি স্পিনার (রাজ্জাক, সাকিব, শুভ) দিয়ে বিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের বধ করার বর্তমানে সফল ও বেশ কার্যকরী একটা স্ট্র্যাটেজি, যাকে বলা যায় ‘বাংলা স্টাইল’! কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে কি এই বাংলা স্টাইল সফল হবে? উত্তরটা নেতিবাচক হবার সম্ভাবনাই বেশী! তাহলে ভারতের বিরুদ্ধে আমাদের স্ট্র্যাটেজি কি হওয়া উচিত? আমি মনে করি বেস্ট অপশন হচ্ছেঃ স্পিনার সোহরোয়ার্দি শুভকে বাদ দিতে হবে এক্ষেত্রে; বদলে হয় আরো একজন অলরাউন্ডার (মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ) অথবা একজন ব্যাটসম্যান (ধরা যাক আশরাফুল)কে নিতে হবে। যাকেই নেওয়া হোক, সে যেন অন্ততঃ চার-পাঁচ ওভার বোলিং করতে পারে! ভারতের বিরুদ্ধে এই পরিবর্তিত একাদশকে কিন্তু আমার ভালই লাগছে! তবে সমস্যাটা হবে যদি আমরা ভারতের সাথে জিতে যাই তাহলেই!!! আমার সর্বশেষ বিভ্রান্তিটা হচ্ছে, যদি আমরা ভারতের সাথে জিতে যাই, তাহলে কি পরের ম্যাচগুলোতে উইনিং ফরমেশনটাই বহাল রাখবো, নাকি আবার আমাদের সেই চিরাচরিত ‘বাংলা স্টাইলে’ ফেরত যাবো? বাংলা স্টাইল পরের সবগুলো অপনেন্টের জন্যই কার্যকরী স্ট্র্যাটেজি এতে কোন সন্দেহ নাই, কিন্তু আবার ভারত-বধ করা উইনিং কম্বিনেশন ভাঙ্গাটাও কিন্তু টিম স্পিরিটকে ক্ষুন্ন করে দিতে বাধ্য! তাই বলছি, সবকিছুতেই অনেক বিভ্রান্তি! তবে এসব বিভ্রান্তিগুলাই প্রমান করে, যে একাদশই গঠন করা হোক না কেন, তাতে কারো না কারো প্রতি খানিকটা হলেও অবিচার করা হবেই! অনেকেই নিজের পছন্দের খেলোয়াড়কে একাদশে না দেখে রাগ করবেন হয়তো, কিন্তু সবার এটা বুঝতে হবে যে সবাইকে সন্তুষ্ট করার মতন একটা একাদশ বানানো এবার একদমই অসম্ভব! তারপরও আমি আশাবাদী যে আমাদের কোচ ও অধিনায়ক সবকিছু বিবেচনা করে সফল ফরমেশন ও স্ট্র্যাটেজি নির্ধারন করবে এবং সে অনুযায়ী সঠিক প্লেয়ার সিলেকশন করবে! আগামী ১২ ও ১৫ তারিখে দুটি প্র্যাকটিস ম্যাচ আছে আমাদের, সেখান থেকে আশা করি টিম ম্যানেজমেন্ট পরিষ্কার ধারনা পাবে কি হওয়া উচিত আমাদের সেরা একাদশ! আমরা সমর্থকরাও অন্ততঃ একটা ধারনা পাবো কোন পথে এগুচ্ছে আমাদের একাদশ বাছাইয়ের প্রক্রিয়া!


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.