'বস ঈদের কেনাকাটা করার লাগি গুলশান যাইব। আমারেও মনে হয় কিছু কিইন্যা দিব। আগে আমরা ভাসাবীতে যামু। ওইহানে পছন্দ না হইলে সবশেষ শপার্স ওয়াল্ডেও যাইবার পারি। ' মঙ্গলবার রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে মুঠোফোনে স্ত্রী ফাহিমা ইসলাম লোপার এ ধরনের বিভিন্ন প্রশ্নের বিপরীতে এমনই উত্তর দেন মারুফ রেজা সাগর।
যুবলীগ নেতা রিয়াজউদ্দিন খান মিল্কির অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরই তাকে খুন করেন লোপার পরকীয়া প্রেমিক নিহত এস এম জাহিদ সিদ্দিকী তারেক ও তার সহযোগীরা। র্যাবের হেফাজতে থাকা তারেকের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতেই গত শুক্রবার গভীর রাতে ধানমন্ডির ৩ নাম্বার রোডের ৩/এ নাম্বার বাসা থেকে লোপাকে গ্রেফতার করে র্যাব-১-এর একটি দল। এ সময় তার কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়। পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব কর্মকর্তাসহ সাংবাদিকদের কাছে এমনই স্বীকারোক্তি দেন লোপা। লোপা সাংবাদিকদের জানান, গত এক মাসে মিল্কিকে দুই দফা হত্যার চেষ্টা করেন তারেক।
এ কারণে তারা কয়েক দফা মতিঝিলের টিঅ্যান্ডটি কলোনি, ইস্কাটন ও গুলশানে চঞ্চলসহ অন্যদের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেন। সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন তারেক। ১৫ জুলাই গোলাম আযমের রায়ের আগে এবং পরে টানা চার দিন তাকে মিল্কির অবস্থান সম্পর্কে জানাতে তারেক অনবরত চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। তবে তার স্বামী সাগরকে বিষয়টি কখনো জানাননি। হত্যাকাণ্ডের পর দিন ভিডিও ফুটেজ দেখে তিনি নিশ্চিত হন যে তারেকই রিয়াজউদ্দিন খান মিল্কিকে হত্যা করেছেন।
র্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল কিসমত হায়াৎ জানান, প্রথমে সাগরকে সন্দেহ করা হলেও তারেকের স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। মিল্কি হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে লোপাও একজন। বার বার তিনি দাবি করেছেন মিল্কির কারণে তিনি তার স্বামীর সানি্নধ্য থেকে বঞ্চিত ছিলেন। মিল্কি খুন হলে তিনি তার স্বামীকে কাছে পাবেন বলে ধারণা ছিল লোপার। তবে লোপার কাছ থেকে আরও তথ্য পাওয়া যাবে বলে ধারণা তাদের।
তিনি আরও বলেন, খুনি চক্র প্রথমে ভাসাবী শোরুমের সামনে মিল্কিকে খুন করার জন্য প্রস্তুতি নেয়। তবে সুবিধা না করতে পারায় তারা শপার্স শপিং মলের সামনে চলে আসে। তারেক সূক্ষ্ম কৌশলে প্রেমিকা লোপাকে কাজে লাগান। মিল্কি ভাসাবী থেকে সাগরকে ৫০ হাজার টাকা দামের একটি পাঞ্জাবি কিনে দিতে চেয়েছিলেন। তবে দাম বেশি হওয়ায় সাগর তা নিতে চাননি।
র্যাব সূত্র জানায়, মিল্কির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন সাগর। দিন-রাতের বেশির ভাগ সময়ই মিল্কির সঙ্গে ছায়ার মতো লেগে থাকার কারণে স্ত্রী এবং সংসারে সময় দিতে পারতেন না। এ নিয়ে মিল্কির ওপর দারুণ ক্ষিপ্ত ছিলেন লোপা। এ ক্ষোভ থেকে একপর্যায়ে তারেকের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। গত এক বছরের পরকীয়া সম্পর্কে লোপা দুবার অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন।
পরিকল্পনাকারীরা কোথায়? : মিল্কি হত্যার পর থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের অনেক যুবলীগ নেতার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এরই মধ্যে বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা, মামলার এজাহারভুক্ত আসামি সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল, মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু, ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগ নেতা ওয়াহিদুল আলম আরিফ ও চিকিৎসক পাপ্পুকে ঘিরেও চলছে নানা কথা। পলাতক হিসেবে চিহ্নিত এরা এখন কোথায়, সে ব্যাপারে গতকাল পর্যন্ত কোনো তথ্য জানাতে পারছেন না তাদের ঘনিষ্ঠরা। সংশ্লিষ্টদের অনেকের দাবি, এদের সবাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাগালেই আছেন। তবে মহারথীদের নাম প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ভয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে না।
এ অবস্থায় ঘটনার রহস্য কতটা উদঘাটিত হবে, তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে বলে মতপ্রকাশ করেছেন অনেকে। তবে র্যাব দাবি করেছে, তারেক মারা যাওয়ার আগে হাসপাতালে র্যাবের কাছে তার গুরু হিসেবে চঞ্চলের নাম বলে গেছেন। চঞ্চলের গ্রিন সিগন্যালেই মিল্কিকে গুলশান এলাকায় খুন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন তারেক।
র্যাব হেফাজতে নয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদ : সোমবার রাতে মিল্কি হত্যা ঘটনার পরই উত্তরার ফরচুন হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করা হয় মতিঝিল ও মোহাম্মদপুরের যুবলীগ কর্মী এইচ এম জাহিদ সিদ্দিকী তারেক, তুহিনুর রহমান, সৈয়দ মোস্তফা আলী রুমি, মোহাম্মদ রাসেদ মাহামুদ, সাইদুল ইসলাম নুরুজ্জামান, মোহাম্মদ সুজন হাওলাদার ও চঞ্চলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীরকে। এদের মধ্যে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন তারেক।
সাতজনের মধ্যে জাহাঙ্গীর ছাড়া বাকি ছয়জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে মামলা র্যাবের হাতে হস্তান্তর করার সময় রিমান্ডের আসামিদেরও সোপর্দ করে পুলিশ।
সুষ্ঠু তদন্তের দাবি যুবলীগের : যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন খান মিল্কি হত্যা ও যুবলীগ দক্ষিণের যুগ্ম-সম্পাদক আটক জাহিদ সিদ্দিকী তারেকের র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। গতকাল দুপুরে ধানমন্ডিতে ইয়ুথ রিসার্চ সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান।
তিনি বলেন, মিল্কি হত্যা এবং তারেকের ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া দরকার।
এর মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে। তিনি বলেন, মিল্কি ও তারেকের মধ্যে কোনো অন্তঃকোন্দল ছিল বলে সংগঠনের কাছে তথ্য নেই। তারেকের বিরুদ্ধে ২৭টি খুনের মামলা রয়েছে এমন তথ্যও যুবলীগের কাছে নেই। মিল্কি হত্যা ও তারেক নিহতের ঘটনা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক দাবি করে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, এ ঘটনাকে কোনোভাবেই রাজনীতির সঙ্গে জড়ানো যাবে না। এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
রাঘব বোয়ালদের আড়াল করার জন্য তারেককে ক্রসফায়ারে দেওয়া হয়েছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান তিনি। ওমর ফারুক বলেন, সরকারের সাড়ে ৪ বছরে যুবলীগের কোনো কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগকে বিব্রত হতে হয়নি। যুবলীগ এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বিগ্ন নয়। তবে এ রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে যুবলীগ জিরো টলারেন্সে যাবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।