আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তারেককে মিল্কির অবস্থান জানান লোপা

আমি আমার স্বামী সাগরকে সার্বক্ষণিক কাছে পেতাম না। সবসময় রিয়াজ কাকার (রিয়াজুল ইসলাম খান মিল্কি) সঙ্গে থাকতো সে। এ কারণে রিয়াজ কাকার ওপর আমার রাগ হতো। একসময় তারেক আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। রিয়াজ কাকাকে খুন করার পরিকল্পনা করেন তারেক এবং আমার সহযোগিতা চান।

সাগরের মাধ্যমে জেনে আমি রিয়াজ কাকার অবস্থানের কথা জানাতাম তারেককে। সর্বশেষ যেদিন রিয়াজ কাকাকে মার্ডার করা হয়, সেদিন ফোন করে তার অবস্থানের কথা জানাই তারেককে।

মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক চাঞ্চল্যকর রিয়াজুল হক খান মিল্কি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মিল্কির ড্রাইভার মারুফ রেজা সাগরের স্ত্রী ফাহিমা ইসলাম লোপাকে শনিবার আটক করে র্যাব-১। আটকের পর সংবাদ সম্মেলনে র্যাব কার্যালয়ে এভাবেই স্বীকারোক্তি দেন লোপা।

তিনি বলেন, আমার স্বামী সাগরকে রিয়াজ কাকা সন্তানের মতো দেখতেন এবং খুব বিশ্বস্ত ছিলেন।

তারেক ও রিয়াজ কাকা একে অপরের সহযোগী ছিলেন। কিন্তু টেন্ডারসহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে ঝামেলা হলে তারা আলাদা হয়ে যান। এরপর থেকে দু’জন দু’জনের শত্রু হয়ে পড়েন।

লোপা জানান, আমার স্বামী সব সময় রিয়াজ কাকার সঙ্গে থাকতো। বাসায় তাকে পাওয়াই যেত না।

এ কারণে রিয়াজ কাকার ওপর আমার ক্ষোভ ছিল। এর মধ্যে জাহিদ সিদ্দিকি তারেক আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমিও তার সঙ্গে যোগাযোগ করি। আমি সাগরের কাছে ফোন করে তাদের অবস্থানের কথা জানতাম।

লোপা জানান, মাসখানেক আগে রিয়াজ কাকাকে মার্ডার করবেন বলে তারেক জানান।

এর মধ্যে গত জুলাই মাসে হরতালের সময় একবার হত্যার পরিকল্পনা করেন তারেক। কিন্তু রিয়াজ কাকার সঠিক অবস্থান না জানায় সেই পরিকল্পনা সফল হয়নি।

লোপা বলেন, ‘সর্বশেষ গত ২৯ জুলাই রিয়াজ কাকার গুলশানে যাওয়ার কথা জানতে পারি। এরপর তারেককে ফোন করি। আমি দুইবার ফোন করে তাদের অবস্থানের কথা জানাই।

প্রথমে তারা ছিল ভাসাবি শপিং মলে, পরে শপার্স ওয়ার্ল্ড শপিং মলে যাওয়ার কথা জানি। তারেক আমাকে ফোন দিলে তাকে তা জানিয়ে দিই। কিন্তু তারেক নিজে উপস্থিত থেকে রিয়াজ কাকাকে হত্যা করবেন আমি তা জানতাম না। আর এ কথা আমি সাগরকেও জানাইনি। ’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে লোপা জানান, ‘তারেক আমাকে বলেছিলেন, ঈদের পর রিয়াজ কাকা তাকে মেরে ফেলবে।

এ কারণে তিনি ক্ষিপ্ত ছিলেন। ’ 

ফাহিমা ইসলাম লোপা জানান, তারেক আরো দু’জনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তারা হলেন যুবলীগ দক্ষিণের নেতা খালেদ এবং ছাত্রলীগ নেতা সোহেল।  

‘তারেক বলেছিলেন, তাকে কেউ মারতে মারবে না। র‌্যাব ও পুলিশে তার অনেক পরিচিত বন্ধু রয়েছে।

তার কথায় আমি বিশ্বাস করি। এমনকি টিভিতে খবর দেখার পরও আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। এ কারণে তারেক নিহত হওয়ার পরও আমি তার মোবাইলে এসএমএস করি।  

এদিকে, সংবাদ সম্মেলনে কথা বলার সময় বিপর্যস্ত দেখাচ্ছিল লোপাকে। কথাগুলোর বলার সময় কান্না করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল কিসমত হায়াৎসহ র‌্যাবের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।  

লে. কর্নেল কিসমত হায়াৎ সাংবাদিকদের জানান, চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের পর তদন্তের দায়িত্বভার আমাদের দেওয়া হয়। তদন্তে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। সর্বশেষ শনিবার বেলা ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে ধানমন্ডি এলাকার রোড নং ৩/এ বাড়ি নং ৫৪/১ থেকে লোপাকে আটক করা হয়। তাকে আটকের পর আমাদের তদন্তে আরো আরো সহায়ক হবে।

লোপা আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। আমরা সেগুলো তদন্ত করে দেখছি।  

তিনি বলেন, ‘আমরা এ মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে কাজ করে যাচ্ছি। ’ 

এদিকে র‌্যাব কর্মকর্তারা বলেন, সাগরের স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া ছিল তারেকের। তারেক, সাগরের স্ত্রী বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন।

এমনকি যখন তারেক ও মিল্কির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল তখন তারা ভারতে যান। সেখানে পলাতক সন্ত্রাসী আরমানের সঙ্গে তারা দেখা করেন। কর্মকর্তারা জানান, তারেকের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কের কারণে মিল্কিকে হত্যার ব্যাপারে জানতেন লোপা। মিল্কির অবস্থান জানার জন্য লোপাকে ব্যবহার করেন তারেক। প্রসঙ্গত, গত ২৯ জুলাই মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম খান মিল্কিকে গুলি করে হত্যা করেন তারই এক সময়ের সহযোগী যুবলীগ নেতা জাহিদ সিদ্দিক তারেকসহ ভাড়াটে কিলাররা।

এ ঘটনায় মিল্কির ছোট ভাই রাশেদুল হক খান বাদী হয়ে গুলশান থানায় এজাহার নামীয় ১১ জন এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরো ৪/৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলার ১১ আসামির মধ্যে পুলিশ হত্যাকারী তারেকসহ সাতজনকে আটক করে। এর মধ্যে তারেককে উত্তরার ফরচুন হাসপাতাল থেকে থানায় নেওয়ার পথে তার সহযোগীরা র্যাবের গাড়িতে আক্রমণ করে তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের গুলি বিনিময়ে তারেক ও তার সহযোগী শাহআলম নিহত হন। এ ঘটনার দুইদিন পর শনিবার ভোরে র্যাব নিহত মিল্কির ড্রাইভার সাগরের স্ত্রী লোপাকে আটক করে।

মিল্কি হত্যার অভিযোগে এ পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেফতার করা হলো।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.