গণতন্ত্র হল এমন এক অস্তিত্বহীন মদ, যাতে সবাই মাতাল, কিন্তু কেউ কখনো পান করে নি।
গল্পের শুরু যখন গত রোববার ডিগবাজি দিলাম, যাবার কথা ছিল বিমানবন্দরে, ছোটমামা যাওয়াতে আমি আর গেলাম না। মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম এমন একটা যায়গার উদ্দেশ্য যেদিকে আগে কখনো যাই নি। ঢাকা জেলার নবাবগন্জ উপজেলার বান্দুরা বৃজ পেরিয়ে নয়নশ্রী ঢুকলাম, উদ্দেশ্য গোল্লা।
যেদিকে গোল্লা সেপথে দীর্ঘক্ষণ যাবার পরও যখন গোল্লার কোন লক্ষণ দেখলাম না, তখন সন্দেহ হল, মোবাইলে জিপিএস পাজিশন দেখলাম উল্টোপথে বহুদুর চলে গিয়েছি।
এখান থেকেই মোটরসাইকেল ঘুরালাম, গোল্লা কোথায়!
ফেরার সময়ও গোল্লার পথ পাচ্ছিলাম না। এক বয়স্ক লোকের কাছে থেকে জেনে নিলাম গোল্লার পথ। এর পর যেপথে নামলাম তাকে রাস্তা বলে বলে ‘হালট’ (পরে এর বর্ণনা দিচ্ছি)। আবারও ভুল পথে চলে গেলাম ইছামতির পাড়ে। সেখানে কয়কেটি ছেলের কাছে জিজ্ঞেস করে জানলাম গ্রামের নাম ‘দেওতলা’।
ছবিতে সেই ছেলেদর দেখা যাচ্ছে। পরবর্তীতে এই পথে বান্দুরা ফিরেছি।
দেওতলা গ্রামের শহীদমিনার।
এই বৃজটার হেতু বোঝা গেল না, তবে আগে হয়তো এখানে খাল ছিল। ।
এটা কোন পথের সাথে কোন পথকে যুক্ত করেছে আর কোন জলপথের উপর এর অবস্থান তা গবেষণার বিষয়!
এরা আমাকে বলছে মোটরসাইকেলে করে তাদের গ্রামে দিয়ে আসতে।
সেই ছেলে তিনজনকে তুলে নিয়েছিলাম, তাদের গ্রামের যতটুকো কাছাকাছি দিয়ে আসতে পারি। তাদের গ্রামের নাম ‘খুলশী’, এদের দুজন পাল বংশের লোক। কারো পুরো নাম মনে রাখতে না পারলে অন্তত সারনেমটা মনে রাখার চেষ্টা করি। গোল্লা গীর্জা ছাড়িয়ে বেশ কিছুটা দূর যাবার পরও যখন তাদের গ্রামের নাগাল পাচ্ছিলাম না, আর সামনে বিরন মাঠ দেখে বুঝলাম এখনো অনেক পথ।
আমার হাতে সময় কম, তাই তাদের সেখানে নামিয়ে দিতে হল। এদের মধ্য একজন একটু লাজুক, ছবি তুলতে চাইলে দুরে সরে গেল। কষ্ট লাগল তারা এতদুর থেকে গোল্লায় আসে পড়ালেখা করতে। তাদের গ্রামে ভাল স্কুল নেই।
গোল্লায় নিয়ে যাচ্ছে আমায় হাওয়াই জলের গাড়ী......
মাঠ পেরিয়ে ইট ও মাটির আঁকাবাকা পথ ধরে একটা পরিচিত যায়গায় চলে এলাম।
এখানে মেলায় বহুবার এসেছি, গোবিন্দপুর। গতবছরও এসেছিলাম, তখন আসতাম ইছামতি পেরিয়ে। ছবিতে মন্দির দেখা যাচ্ছে। এখান থেকে আবার গোল্লার পথে মোটরসাইকেল ঘুরালাম। এখানে কয়েকটি ছেলে অনুরোধ করল তাদের গীর্জার মাঠে নামিয়ে দিতে।
সেখানে তারা যাচ্ছে কৃকেট খেলতে, দেড়শত টাকা বাজি খেলায়। আমার সাথে চলল মণ্ডল, হালদার ও শেখ বংশীয় তিন কৃকেটার, শেখ সাহেবের পুরো নাম শেখ রবিন। আবার ভুল করলাম, রাস্তা দেখে বুঝার উপায় নেই যে রাস্তা। কিছুদূর গিয়ে বুঝতে পারলাম যে ভুল পথে এসেছি, কৃকেটাররাও বলছিল যে এ পথে যাওয়া যায়। কিন্তু রাস্তা প্রায় ভাঙ্গা।
তাদের সহায়তায় গোল্লার পথ পেলাম। গীর্জার সামনে তাদের নামিয়ে দিলাম, তাদের ছবি তোলার কথা মনে ছিল না।
গীর্জার সামনে এই লোকের দেখা পেলাম, এই যাত্রা পথে এক তিনবার দেখলাম তিন যায়গায়। নাম বলল প্রদিপ গোমেজ। গীর্জার গেট বন্ধ।
বাইরে থেকে গীর্জার বিভিন্ন অংশের নাম জিজ্ঞেস করায় না উত্তর দিতে না পেরে আসল পরিচয় প্রকাশ করল, তার নাম তানজিল আহমেদ, আর প্রদীপ গোমেজ তার বন্ধুর নাম। সে সকাল থেকে পথে পথে ঘুরছে, কারন তাকে তার বাবা তাকে উত্তম মধ্যম দিয়েছে, সকালে তাকে ভাত খেতে ডাকলে সে খায় নি। আমার পরিচয় দিয়ে জানলাম হলিক্রশে তার সেকশনের নাম ‘রবিন’, পাখির নামে নাম। তার ফেসবুকেও একাউন্ট আছে। গীর্জার ঢুকার আর চেষ্টা না করে বাইরে থেকে কিছু ছবি তুললাম।
এবং বান্দুরা পর্যন্ত সে আমার যাত্রসঙ্গী ছিল।
সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স চার্চ। গীর্জা প্রাঙ্গন।
গীর্জা সংলগ্ন কবরস্থান।
এই ছবিটা তুলেছি ‘হালট’ সম্পর্কে বণনা দেবার জন্য।
নবাবগন্জের বেশির ভাগ এলাকা নিচু হওয়াতে সবাই বাড়ী তৈরী করে মাটি তুলে বেশ কিছুটা উপড়ে। আর পথগুলো হয় নিচু, এরই নাম হালট। আর এই নিচু পথগুলোই বর্ষাকালে পরিণত হয় নৌকা চলার খালে, অনেকটা ভেনিসের খালের মত যাতায়াতের একমাত্র পথ। এমনটা আমি দেখেছি ইছামতির এপাড় ওপর দুই পাড়েই। আর গোল্লা এলাকার বেশির ভাগ পথ এমন, আর কিছু কিছু যায়গা বেশ দুর্গম।
গোল্লা খুব দূরের যায়গা না কিন্তু এখানকার রাস্তা খুবই অনুন্নত!
চলন্ত অবস্থায় ঘাড়ের পেছন দিয়ে শার্টের ভেতর একটা মৌমাছি ঢুকে গিয়েছিল! এবং মোটর সাইকেল থামাতে হল, তানজিল একটা বাড়ীতে ঢুকে একটা কচু নিয়ে এল তার রস লাগানোর জন্য। ব্যাথাটা সহনীয় ছিল, সমস্যা হয় নি। ইছামতির পাড়ে দেওতলার পথ ধরে বান্দুরা এলাম। তানজিলকে নামিয়ে দিলাম হলিক্রশ স্কুলে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।