প্রায় প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললে , টিভি চ্যানেল এ দেখা যায় যে কোথাও না কোথাও RAB অথবা পুলিশ এর সাথে ক্রস ফায়ার ফায়ার এ কেউ মারা যাচ্ছে. তারপর সেই একই সাজানো গল্প . কোথাও কোনো সন্ত্রাসী অপরাধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল , তারপর RAB অথবা পুলিশ এর উপস্থিথি টের পেয়ে তারা পুলিশ কে গুলি বর্ষণ করে. পুলিশ পাল্টা গুলি বর্ষণ করলে ক্রস ফায়ার এ পড়ে সন্ত্রাসী মারা যায় .তারপর সেখানে কিছু অস্র পাওয়া যায়. বাকি সন্ত্রাসী রা পালিয়ে যায়. এই গল্পের লেখক যে কে তা মনে হয় কেউ জানে না. তবে গল্পের লেখক কে অবশ্যই পুরুস্কৃত করা উচিত. কারণ এই গল্পটা বহুল পঠিত এবং প্রচারিত গল্প. যেহেতু লেখক এর নাম অজানা, তাই আপাতত পুরুস্কার দেয়ার কোনো সুযোগ নাই.
যখন কোনো একটা ক্রস ফায়ার ঘটে, তখন মিডিয়া সরব হয়ে উঠে. বিভিন্ন টক শো তে এর বিপক্ষে আলোচনা হয়.মানবাধিকার সংস্থা গুলো সরব হয়ে উঠে. আমাদের দাদা রা ( কারো মনে হয় বুজতে অসুবিধা হবে না এরা করা) সরকার এর উপর চাপ প্রয়োগ করে. কখনো পুলিশ কে , কখনো সরকার কে দোষারোপ করা হয়. সরকার ও তার পক্ষে সাফাই গাইবার চেষ্টা করে. আমরা সাধারণ জনগণ শুধু বোকার মত তাদের কথা শুনি.
মিডিয়া তে যখন ক্রস ফায়ার কে চরম মানবাধিকার লঙ্গন বলে বিভিন্ন মহল চিৎকার শুরু করে, তখন হয়ত অন্য হাজারো লোকের মত আমিও বোকার মত জানতে চেষ্টা করি মানবাধিকার কাকে বলে ? সাধারণ লোক যখন বিভিন্ন সন্ত্রাসীর হাতে মারা যায় তখন কাউকে (মিডিয়া বলেন, মানবাধিকার সংস্থা বলেন, আমাদের দাদা বলেন ) মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে বলে চিত্কার করতে শোনা যায় না. কিংবা মানবাধিকার সংস্থা গুলো আক্রান্ত পরিবার গুলোকে সহানুভুতি ও জানাতে যায় না. যখন ওই একই সন্ত্রাসী ক্রস ফায়ার এ মারা যায় , তখন মানবাধিকার সংস্থা গুলো মানবাধিকার নিয়ে গলা ফাটায়. হায়রে আজব দেশ.
এখন প্রশ্ন হলো ক্রস ফায়ার কে কেন সাধারণ জনগণ সমর্থন করে (অবশ্যই সেটা অপরাধীদের ক্ষেত্রে, যখন সাধারণ জনগণ কে হয়রানি করা হবে বা নিরপরাধ লোকদের কে ক্রস ফায়ার করা হবে তখন তাদেরকে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে ) ? ক্রস ফায়ার কে যে জনগণ সমর্থন করে তার অনেক প্রমান আমরা দেখতে পাই. যার প্রমান হিসেবে দেখা যায় যে যখন কোনো সন্ত্রাসী মারা গেছে মানুষ আনন্দ করেছে, মিষ্টি বিতরণ করেছে. মানুষ কেন আনন্দ করে? যখন সবাই দেখে যে ১৫/২০ টা খুনের আসামী জামিনে বের হয়ে আরো খুন করতেছে. ১০/১৫ টা ডাকাতির আসামী জামিনের বের হয়ে আসতেছে. তখন সাধারণ মানুষ হতাশ হচ্ছে, মানুষ রাগান্নিত হচ্ছে .আর আমাদের দেশ এ সাধারণ জনগনের কথা শোনে কে ? ৫ বছর পরে শুধু একবার শুনে.
বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে হয়ত সাধারণ জনগনের মনে একটা বিরূপ ধারণা আছে. তারা হয়ত পুলিশ কে জনগনের বন্ধু ভাবতে পারছে না. কিন্তু একথা সত্যি যে সব পুলিশ সদস্য কিন্তু দুর্নীতিপরায়ন নয় ( পুলিশের যে বেতন, যে সুযোগ সুবিধা তাতে বর্তমান সমাজে সাধু থাকাটা প্রায় অসম্ভব) . সাধারণ জনগনের মত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীরা ও মনে হয় হতাশ. তাই তারা ও ক্রস ফায়ার উদ্বুদ্ধ হচ্ছে. তারা তাদের জীবন বাজি রেখে সন্ত্রাসীদের দরতেছে. আর সন্ত্রাসীরা টাকার জোরে, ক্ষমতার জোরে ( আরো কি কি জোর আসে জানি না ) বের হয়ে আসতেছে. তারা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নাকের ডগায় ঘুরে (সবাই যে ছাড়া পাচ্ছে তা নয়, তবে বেশিরবাগ ). তখন হয়ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ভাবে " সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠবেনা ".
আমরা বলতে চাই, বিশ্বাস করতে চাই - আমরা সভ্য সমাজে বসবাস করি. আর সভ্য সমাজে ক্রস ফায়ার এর কোনো স্থান নেই. ক্রস ফায়ার নিয়ে বিতর্ক না করে সরকার কে ভাবতে হবে কেন ক্রস ফায়ার হচ্ছে. কোন জায়গায় শুদরানো উচিত. সরকার যদি জেনো ও না জানার ভান করে তা হলে ভিন্ন কথা. তাহলে ক্রস ফায়ার তো বন্ধ হবেই না , বরং দেখা যাবে সাধারণ জনগণ আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে. কারণ মানুষের যখন আর করার কিছু থাকেনা তখন মানুষ ভালো মন্দ নিয়ে ভাবেনা . আমরা দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই, অযথা বিতর্কে জড়িয়ে থমকে থাকতে চাই না .
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।