আমি কারাগারে বন্দি। সংসদের একটা বাড়িকে সাবজেল করা হয়েছে। আমি এপারে কারাগার ভবনে আর ওপারেই গণভবন। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাঁচ বছর ছিলাম, ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত। ছিলাম গণভবনে, এখন আছি কারাগার ভবনে।
ছিলাম ক্ষমতায় প্রধানমন্ত্রী আর এখন আসামি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ? অভিযোগ হলো চাঁদাবাজি।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নাকি চাঁদাবাজি করেছিলাম। ১০ বছর পর আবিষ্কার করা হলো। মাঝখানে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় ছিল।
আমার বিরুদ্ধে অনেক মামলা দিয়েছে; কিন্তু চাঁদাবাজির মামলা দিতে পারেনি। মামলাবাজ জোট সরকার থেকেও বড় আবিষ্কারক তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
আন্দোলন করে দাবি পূরণ করলাম, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্গঠন করলাম। যে-ই দ্রুত নির্বাচনের কথা বললাম, সে-ই আমি চাঁদাবাজ হয়ে গেলাম, দুর্নীতিবাজ হয়ে গেলাম। আমার স্থান হলো কারাগারে।
পাঁচটি বছর চারদলীয় জোট তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে আমার ও আমার পরিবারের দুর্নীতির কোনো কিছু পায় কি না, পায়নি। পেয়েছে ফখরুদ্দীন সরকার।
যারা মামলা করেছে তারা ভালো করেই জানে যে এদের কাছে আমি কোনো দিন চাঁদা চাইনি। এদের চিনিও না। আমি আমার জীবনে কোনো দিন কারো কাছে কোনো টাকা চাইনি।
কারো কাছে কিছু চাওয়া আমার স্বভাববিরুদ্ধ। আমি কোনো দিনই কারো কাছে টাকা-পয়সা চাই না। ব্যক্তিগত জীবনেও কোনো কিছু চাওয়ার অভ্যাস আমার নেই। আমার যেমন আছে, আমি তেমনই চলতে পছন্দ করি।
আমি গণভবনে ছিলাম, এখন কারাভবনে আছি।
যারা আজ ক্ষমতায় তাদেরও ভবিষ্যতে কারাগারে থাকতে হবে না_এই গ্যারান্টি কি পেয়েছে? ক্ষমতার মসনদ ও কারাগার খুব কাছাকাছি।
নিজেই টাকা খরচ করে তোয়ালে, গামছা, ভিম, হারপিক, ব্রাশ, ঝাড়ু ইত্যাদি কিনতে দিলাম। এই পিসির টাকা দিয়ে নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা যায়, তবে সেখানেও কিছু নিয়ন্ত্রণ আছে। যাহোক, আমাকে আমার ফরমায়েশমতো জিনিসগুলো কিনে দিল। একটা খাট, আমি বসার সঙ্গে সঙ্গেই ভেঙে পড়ে গেল।
একখানা সোফা সেট, অত্যন্ত ময়লা, নোংরা। বিছানার চাদর একদিকে ইঁদুরে কাটা, ছেঁড়া তোশকও অত্যন্ত ময়লা। মনে হয় সব যেন গোডাউনে পড়ে ছিল। তবে তিনখানা করে নতুন চাদর ও তোয়ালে দেওয়া হয়েছে। তারই একটা চাদর সোফার ওপর বিছিয়ে রাত কাটালাম।
পরদিন বললাম, ভাঙা খাট বদলে দিতে হবে। অথবা সরিয়ে ফেলতে হবে, আমি মাটিতেই ঘুমাব। যাহোক, এক দিন পর খাটখানা বদলে দেয় এবং তা ঘটা করে পত্রিকায়ও প্রচার করে। আমার খাবার আসত কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে। মাঝে মাঝে খাবার আসতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতো।
আর খাবারের মেন্যু, যাক সে বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। আমাকে তো তিনবেলা খাবার দিচ্ছে; কিন্তু কত মানুষ একবেলাও খাবার পায় না। আল্লাহ যখন যেভাবে যাকে রাখেন, সেটাই মেনে নিতে হয়।
বাংলাদেশের জনগণের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করে উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
তাদের ভালোবাসার প্রতিদান আমাকে দিতেই হবে। জনগণের জন্য একটা সুন্দর, উন্নত জীবন উপহার দেব, এই আমার প্রতিজ্ঞা।
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।