পুত্রদায়গ্রস্ত এক শিক্ষক পিতা তার ছেলের বিয়ের জন্য সাহায্য চেয়ে একটি দরখাস্ত দিয়েছেন আমাদেরকে ৷কর্মক্ষম ছেলেটি টুকটাক কোনো কাজকর্ম করলে এরকম হবার কথা না৷অবশ্য বিয়ের যা খরচ তা যোগার করাও সহজ নয় ৷যৌতুক হিসেবে মেয়ের বাপকে আর্থিক অনুদান বা সাজের অলংকার টাইপের কিছু দিতে হবে না ৷গ্রামীন সমাজ ব্যবস্থায় ছেলেপক্ষ মেয়েপক্ষকে মাঝামাঝি সাইজের একটা গরু উপহার দিলেই চলে ৷কনের শিক্ষাগত যোগ্যতার উপরও নির্ভর করে কয়টা গরু পাবে ৷অশিক্ষিত হলে এক গরু ,প্রাইমারী স্কুল পাশের জন্য একাধিক এভাবে সংখ্যা হিসেব করলে বিশ্ববিদ্যালয় পাশের জন্য যা পাবে তা দিয়ে মোটামুটি একটা খামার করা যাবে ৷আমাদের স্থানীয় শ্রমিক ওয়েলকাম কিছুটা হতাশ কারণ একটা গরুর অভাবে সে এখনো একা ৷যৌতুক হিসেবে নয় একজন বলল এটা নাকি মেয়ের বাপকে অতীত ভরণপোষণের ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেয়া হয় !
আফ্রিকান বিয়ের অনুষ্ঠানের যে রকম গল্প আমরা বই পুস্তকে পড়েছি তার অনেক কিছু এখন আর নাই ৷ ইউরোপিয়ান সংস্কৃতি আস্তে আস্তে সব দখল করে নিয়েছে৷যেখানে মানুষ বাস করার কথা না সে রকম গভীর অরণ্য আর বিশাল ঝোঁপ ঝাড়ের এলাকাতেও সকল পুরুষ লোকদের পরনে শার্ট প্যান্ট দেখেছি ৷রাজধানী কিনসাসা,লুবুম্বাসি ,কিসান্গানি সহ আরো কিছু শহরের মানুষদের জীবন ধারা দেখে কেউ বুঝবে না এদেশের অনেক মানুষ পোকা মাকড় খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করে ৷পৃথিবীর প্রথম দশটি ডায়মন্ড উত্তোলনকারী দেশের মধ্যে কঙ্গো একটি৷তাই ভালো নেতৃত্ব আর ধনী দেশগুলোর লোভাতুর দৃষ্টি সরে গেলে এ দেশ একদিন হয়ত ভালো অবস্থানে যাবে৷একটি ওয়েবসাইটে দেখলাম বেলজিয়ান শাসকরা বাংলাদেশের আয়তনের চেয়ে প্রায় ১৭ গুন বড় কঙ্গোর সীমানা নির্ধারন করেছে নিজেদের খেয়াল খুশি মত৷মানে স্বর্ণের ডিম পাড়া হাঁসকে অন্য সব হাঁস থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছে ৷ বুদ্ধি পরামর্শ দেয়ার জন্য ইঙ্গ-মার্কিন,আফ্রো আমেরিকান জোটের কিছু দেশ এখানে হাজির তাদের মহান উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে ! শিক্ষিত সচেতন লোকজন আমাদেরকে দেখলেও ডাল মে কুচ কলা হায়(মতলব খারাপ ) টাইপের সন্দেহযুক্ত দৃষ্টি দেয় ৷যাক অনেক জ্ঞানের কথা বলে পেললাম নাকি ? বেশি কঠিন দার্শনিক কিসিমের জ্ঞানগর্ভ কথা বললে অথবা শুনলে আমার আবার মাথা ঘুরায় ৷আরেকদিন বলা যাবে এসব গল্প ৷ চলে আসি আমাদের ক্যাম্পে৷
বিকেল বেলা একটু অন্যমনস্ক হয়ে 'চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙ্গেছে উছলে পড়ে আলো ' মনে মনে গাচ্ছিলাম গানের কথার সাথে সুরের বেশ দুরত্ব রেখে ৷অনেকটা আমাদের ক্যাম্পের আলাউদ্দিনের বেহালার সুর আর গানের অসংগতির মত ৷আমি যখন পেশায় ঝাড়ুদার এই বয়স্ক লোকটির গান শুনি তখন মনের মধ্য ভীষণ নাড়া দেয় ৷গান প্রিয় এই লোক বিশেষ অনুরোধ করে দেশ থেকে আসার সময় সাথে করে বেহালা নিয়ে এসেছে ৷কানে কম শুনাটাই উনার সমস্যা তবু আমাদেরকে গান গেয়ে শুনিয়েছেন কয়েক দিন ৷দেখলাম খুব যত্ন করে গান গাইছে কিন্ত মেয়োজিক(বেহালার সুর বা যন্ত্র সঙ্গীতকে তিনি মেয়োজিক বলেন) চলে যাচ্ছে অন্য দিকে ৷
আমাদের ধুপীর ভুল করে গুল খেয়ে অসুস্থ হবার ঘটনাটা অতি সাধারণ ৷ তবে সেটা বর্ণনা করার তার যে ভঙ্গি তা সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে ৷এই সামান্য ব্যাপারে লোকজনের কানকথা বলাটা তার ভাষায় একটু বেশি বেশিই বটে ৷দেশে কোথাও আমি একজনকে গুলখোর বলতে শুনেছি আসা করি তার ক্ষেত্রে এটা কেউ সাহস করবে না ৷তবে মূল কথাটা স্বীকার করে বলেছে গুল খেয়ে এখন রাগে তার মাথার চুল ছেঁড়ার অবস্থা ৷৪৫ বছরের চির তরুণ ( নাকি কিশোর ?) সালাম মল্লিকের বয়স লুকানোর মত ভয়ে সেও ঘটনা লুকাতে পারত অনায়াসে ৷
জহিরুল কাইয়ুম
ডি আর কঙ্গো
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।