আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আড়িয়াল বিল সংরক্ষনে পরিবেশবাদীদের ফ্রন্টলাইনে আসতে হবে

নো ওয়ান ক্যান মেক মি ফিল ইনফেরিওর উইদআউট মাই কনসেন্ট!

আড়িয়াল বিলে বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর ও বঙ্গবন্ধু নগরী নির্মানের ব্যাপারে দু'টি প্রশ্নঃ ১। আমাদের আদৌ কি নতুন বিমানবন্দর নির্মানের প্রয়োজন আছে? বা নতুন একটি উপশহর? ২। যদি প্রয়োজন থাকেও, সেগুলো নির্মানের জন্য আড়িয়াল বিলকে বেছে নেওয়াটা কতটা যুক্তিযুক্ত? প্রথম প্রশ্নের ব্যাপারে আমি মনে করছি, বর্তমানে আমাদের নতুন একটি বিমানবন্দরের প্রয়োজন নেই, এমনকি ভবিষ্যতে নতুন বিমানবন্দরের জন্য আগেভাগে স্থান নির্বাচন করে রাখার সময়ও এখনো আসে নি। আর উপশহর? হ্যাঁ, এর প্রয়োজন আছে বৈকি। নগরায়ন একটা কন্টিনিউয়াস প্রসেস, এটা চলতে থাকবে।

তাই বঙ্গবন্ধু সিটি নির্মানের উদ্যোগকে আমি সমর্থন করি। দ্বিতীয় প্রশ্নটাকেই আমি বেশী গুরুত্বপূর্ন হিসেবে মনে করছি। বিমানবন্দরই হোক আর উপশহরই হোক, আড়িয়াল বিলকেই কেন বেছে নিতে হলো? শুধু অর্থনৈ্তিক আর অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা চিন্তা করলেই কি হবে? পরিবেশের ব্যাপারটা কি চিন্তা করতে হবে না? ধরা যাক, এ প্রকল্পের ফলে এলাকার মানুষজনের আয় বাড়বে, তারা আরো স্বাবলম্বী হবে; কিন্তু পরিবেশের যে ক্ষতি হবে, তা কিন্তু কোনভাবেই পুরন করা যাবে না। বর্তমানে যেকোন ডেভেলপমেন্টেই পরিবেশের কম-বেশী ক্ষতি হয়, কিন্তু পরিবেশের ভারসাম্য যেন পুরোপুরিভাবে বিনষ্ট না হয় সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা হয়। আড়িয়াল বিল পরিবেশগত দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন একটি স্থান, এখানে যেকোন প্রকার ডেভেলপমেন্ট এই এলাকার প্রাকৃ্তিক ভারসাম্যকে তীব্রভাবে ক্ষুন্ন করবে বলেই বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

বর্তমান সরকারের পানিসম্পদ-পরিবেশ-জলাধার ইত্যাদি বিষয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য আছে। তাদের আগের আমলে জাতীয় পানি নীতি, জলাধার সংরক্ষন আইন ইত্যাদি পরিবেশগত জাতীয় জনগুরুত্বসম্পন্ন আইন-নীতিমালা প্রনয়ন করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ পানি আইনও বর্তমান সরকার খুব শীঘ্রিই পাশ করবে। এহেন সরকার যখন আড়িয়াল বিলে স্থাপনার নামে পরিবেশ বিপর্যয়ের কাজে হাত দেয়, তখন কথা বলার ভাষাই হারিয়ে যায়! আড়িয়াল বিলে বিমানবন্দর-নগরী নির্মান উপরোক্ত আইন ও নীতিমালার সরাসরি লংঘন। যে হাতে নীতিমালা-আইনে সিগনেচার দিচ্ছেন, সেই হাতে কিভাবে তার বরখেলাপ করছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী? আড়িয়াল বিলসহ দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ন জলাধারকে সংরক্ষন করার প্রশ্নে পরিবেশবাদী-পানি বিশেষজ্ঞদেরদের আরো ফ্রন্টলাইনে আসা উচিত।

পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এগুলো সংরক্ষনে ব্যাপক আন্দোলন করছেন পরিবেশবাদীরা। উন্নত বিশ্বে তারা অনেকাংশেই সফল, উন্নয়নশীল রাষ্ট্রসমূহেও এধারা অব্যাহত আছে। আমি উদাহরন হিসেবে ব্রিটেনকে টানছি যদিও ওদের সাথে তুলনা করার মত অবস্থায় আমরা নেই! কিন্তু তারপরও এক্ষেত্রে ব্রিটেন যা করেছে, তার ২ ভাগও যদি আমরা করতে পারি, তাহলেও আমি সন্তুষ্ট থাকবো। পরিবেশগত দিক দিয়ে বিশ্বের যেসব সাইটের আন্তর্জাতিক গুরুত্ব আছে, সেগুলোকে 'রামসার সাইট' হিসেবে গন্য করে সংরক্ষন করার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়ে থাকে। ব্রিটেনেও এভাবে অসংখ্য সাইট সংরক্ষিত হচ্ছে।

তবে ব্রিটেন শুধু এভাবেই বসে নেই; লোকাল ও জাতীয় স্বার্থে যেসব জলাধার ও হ্যাবিটেট গুরুত্বপূর্ন, সেগুলো সংরক্ষন করার জন্য বিশেষ কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করেছে, করছে! প্রকৃতিগত দিক দিয়ে সেনসিটিভ এরকম অসংখ্য সাইটকে তারা 'স্পেশাল সাইট' হিসেবে চিহ্নিত করে সংরক্ষন করছে। এরকম বিভিন্ন ক্যাটাগরী আছে, যেমনঃ 'স্পেশাল সাইট ফর সায়েন্টিফিক ইন্টারেস্ট', 'স্পেশাল এরিয়া অফ কনজারভেশন', 'স্পেশাল প্রোটেকশন এরিয়া' ইত্যাদি ইত্যাদি! এতে করে ওদের গুরুত্বপূর্ন অনেক জলাভুমি, হ্যাবিটেট (ফর ওয়াইল্ড অ্যানিমাল এন্ড বার্ডস), সমুদ্র সৈ্কত, বনভূমিকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ফেলে বিশেষভাবে সংরক্ষন করছে। আমি মনে করছি, আমাদের পরিবেশবিদরাও এরকমভাবে জলাধারগুলোকে রক্ষা করার সংগ্রামে নামতে পারে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন বিল, হাওড়, বাওড়কে যদি 'স্পেশাল এরিয়া অফ কনজারভেশন' হিসেবে চিহ্নিত করা যায়, তাহলে এগুলোকে ধ্বংস করা তো দুরের কথা, উলটা আরো বিশেষভাবে সংরক্ষন করতে হবে! এসব চিহ্নিত সাইটে ভবিষ্যতে কোন সরকারই আর তাহলে বিমানবন্দর-নগরী নির্মানের মত উদ্ভট কার্যক্রম চালাতে পারবে না। আড়িয়াল বিলকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য এরকম পদক্ষেপ গ্রহন ভবিষ্যতে অন্যান্য জলাধারগুলোকেও রক্ষা করবে বলেই বিশ্বাস করি।

সকল সচেতন পরিবেশ বিজ্ঞানী, পানি সম্পদ বিশেষজ্ঞদের এই প্রস্তাবটি ভেবে দেখার আহবান জানাচ্ছি!

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.