আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আড়িয়াল বিলের কান্না

মহাজাগতিক সংস্কৃতির পথে .. ..

আড়িয়াল বিলে নতুন করে একটি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর তৈরি নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে শুরুতেই গত ৩১ জানুয়ারি [২০১১] তারিখের দৈনিক প্রথম আলোয় প্রকাশিত তথ্যবহুল সংবাদটি্ই আবার তুলে ধরলাম। ".............. বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ব্যস্ত সময়ে ঘণ্টায় গড়ে ৬০টির মতো বিমান ওঠানামা করলে সেটি স্বাভাবিক ক্ষমতাসম্পন্ন বলা যায়। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বর্তমানে ব্যস্ত সময়ে প্রতি ঘণ্টায় (পিক আওয়ারে) সর্বোচ্চ ১০টি বিমান ওঠানামা করে। এর মধ্যে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানের ওঠানামাও যুক্ত। এ অবস্থায় সরকার আরেকটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।

ফলে এ বিমানবন্দর করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে, তেমনি তার জন্য আড়িয়ল বিলের মতো স্থানকে নির্বাচন করা নিয়েও সমালোচনা আছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারেও এমন কোনো অগ্রাধিকার প্রকল্পের অঙ্গীকার ছিল না। অবশ্য বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী জি এম কাদের প্রথম আলোকে বলেন, নতুন বিমানবন্দরটিকে সিঙ্গাপুর বা দুবাইয়ের মতো দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ায় বিমান চলাচলের পথে কেন্দ্রস্থলে (হাব) পরিণত করার চিন্তা আছে। এতে এ খাত থেকে দেশে প্রচুর রাজস্ব আসবে। সরকারি নথিপত্র অনুযায়ী, প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কোনো ধরনের সম্ভাব্যতা যাচাই-সমীক্ষা করা হয়নি।

এর সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। একই সঙ্গে সেখানে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সিটি’ নামের একটি উপশহর গড়ারও সিদ্ধান্ত রয়েছে সরকারের। প্রস্তাবিত এই বিমানবন্দর ও সিটির জন্য আড়িয়ল বিলের ২৫ হাজার একর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই অধিগ্রহণের ফলে ঢাকা ও মুন্সিগঞ্জ জেলার তিন উপজেলায় বিস্তৃত মধ্যাঞ্চলের সবচেয়ে বড় জলাধারটির প্রায় পুরোটা শেষ হয়ে যাবে। এর ফলে পরিবেশ ও প্রতিবেশগত কী ক্ষতি হবে, তা নিয়েও কোনো সমীক্ষা হয়নি।

পরিবেশবিদদের মতে, মিঠাপানি ও জীববৈচিত্র্যের বড় আধার এই বিল ধ্বংস করা হলে পরিবেশগত ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ঢাকার আশপাশে বন্যার প্রকোপও বাড়বে। জানা গেছে, কুর্মিটোলায় বর্তমান বিমানবন্দরটির জমির পরিমাণ দুই হাজার একর এবং রানওয়ের দৈর্ঘ্য ১০ হাজার ৫০০ ফুট। রয়েছে পরিমিত প্রয়োজনীয় সুবিধাদি। সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের করা এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঢাকার সঙ্গে আন্তর্জাতিক গন্তব্যে বিমান চলাচল বৃদ্ধির যে প্রবণতা, তাতে ২০২৫ সালে এখানে মোট ৫৭ হাজার ফ্লাইট পরিচালিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার। ২০১৫ সালে এটা ৩২ হাজার এবং ২০২০ সালে ৪২ হাজার হতে পারে। সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১৫ সালে ব্যস্ত সময়ে ঘণ্টায় ঢাকায় বিমান ওঠানামা করবে ১৪টি। ২০২০ সালে তা ২০ ও ২০২৫ সালে ২৯টিতে উন্নীত হতে পারে। এই সমীক্ষা অনুযায়ী আগামী ২০ বছরে যাত্রীসংখ্যা তিন গুণ হতে পারে।

বর্তমান সুবিধাদি ও রানওয়ে দিয়ে ২০৩০ সাল পর্যন্ত চলবে। তবে কিছু আধুনিকায়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধির দরকার হবে এবং তা বর্তমান বিমানবন্দরেই করা সম্ভব। বিমানসচিবের যুক্তি: আরেকটি বিমানবন্দর নির্মাণ কেন দরকার, এ প্রশ্নের জবাবে বিমান মন্ত্রণালয়ের সচিব শফিক আলম মেহেদী প্রথম আলোকে বলেন, ‘শাহজালালে একটিমাত্র রানওয়ে, যদি কোনো কারণে কোনো প্লেন দুর্ঘটনায় পড়ে রানওয়েতে বসে পড়ে, সেটা সরানো না যায়, তখন তো পুরো বিমানবন্দর অচল হয়ে পড়বে। আর এখানে আগামী ১০ বছরে বিমান চলাচল ও কার্গো বহন দ্বিগুণ হয়ে পড়বে। তা ছাড়া আধুনিক নিরাপত্তাব্যবস্থাসহ অনেক সুযোগ-সুবিধা এখানে নেই।

দেশে-বিদেশে বিমান পরিবহন-বাণিজ্যে জড়িত একজন পরামর্শক একটি রানওয়ের কারণে নতুন বিমানবন্দর করার যৌক্তিকতার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি জানান, যুক্তরাজ্যের গেটউইক বিমানবন্দরে একটি রানওয়ে ছিল। সম্প্রতি তারা দুটি করেছে। কিন্তু একটি রানওয়ে থাকা অবস্থায় সেখানে বছরে সাড়ে তিন কোটি যাত্রী পরিচালন করা হতো। আর ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরের এখন পরিচালনক্ষমতা ৮০ লাখ, গত বছর প্রায় ৪০ লাখ যাত্রী এখানে আসা-যাওয়া করেছে।

তাঁর মতে, এখানে ক্রমবর্ধমান যাত্রীর চাহিদা মেটাতে আরেকটি বিমানবন্দর বা রানওয়ে নির্মাণ সমাধান নয়। এখানে জরুরি এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল এবং এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট উন্নত করা দরকার। পাশাপাশি পরিকল্পিতভাবে টারমাক ও টার্মিনাল ভবন সম্প্রসারণ করতে হবে। এ জন্য পর্যাপ্ত জমি শাহজালালেই আছে। সিভিল এভিয়েশনের একজন কর্মকর্তা জানান, শাহজালালে বর্তমান রানওয়ের ব্যবহারযোগ্য ক্ষমতার ৪০ শতাংশ ব্যবহূত হয়।

জাপানের নারিতা বিমানবন্দরও একটি রানওয়ে দিয়ে চলছে। সেখানে ঢাকার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি বিমান ওঠানামা করে। সিভিল এভিয়েশনের সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ বাতাসের বিপরীতে করতে হয়। বাংলাদেশে বছরের ৭০ শতাংশ সময়কালে বায়ুপ্রবাহ দক্ষিণ থেকে উত্তরে বয়ে যায়। বাকি ৩০ শতাংশ সময়কালে উত্তর থেকে দক্ষিণে বয়ে থাকে।

ফলে প্রায় ৭০ শতাংশ উড্ডয়ন ও অবতরণ হয় উত্তর-দক্ষিণ দিকনির্দেশনায়। বাকি সময় ৩০ শতাংশ দক্ষিণ-উত্তর দিকনির্দেশনায়। হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের রানওয়েও উত্তর-দক্ষিণমুখী। কিন্তু আড়িয়ল বিলটি পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত। পশ্চিমে শেষ প্রান্তে পৌঁছে পশ্চিম-উত্তরে বেঁকে গেছে।

তাই প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে পূর্ব-পশ্চিম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যদি তা হয়, তাহলে সারা বছর আড়াআড়ি বাতাসের (ক্রস-উইন্ডের) মধ্যে উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে হবে। এটা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলে জটিলতা বাড়াবে, খরচও বাড়বে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, আড়িয়ল বিলের মাটি মূলত পিটজাতীয় জৈব মাটি (গাছপালা পচে তৈরি হওয়া নরম মাটি)। .................." এখন আমরা কি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইতে পারি যে আসলে কি কারণে তারা এমন হঠকারি সিদ্ধান্ত নিতে চান? আমরা পূর্ববর্তী নানা সরকারের নানা হঠকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং তার ফলাফল [দুর্ভোগ] হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি বা দেখেছি।

এই সরকারও কি পূর্ববর্তী সরকারগুলোর অপকর্মের ধারাবাহিকতায় শামিল হতে চান? দেশটা মনে হয় প্রতি পাঁচ বছরের জন্য আমরা এদের কাছে ইজারা দিয়ে থাকি, আর তারাও তাদের খেয়াল খুশি মতো ব্যাটিং করে চলেন [অপকর্মের চার-ছক্কা হাঁকিয়ে]। একটি সমৃদ্ধ দেশ গঠনে যে সুদুরপ্রসারি পরিকল্পনার প্রয়োজন হয় তবে আমরা তা কাদের কাছ থেকে পাব? দেশ পরিচালনায় আমরা সাধারণ জনগণ বরাবরই পক্ষপাতমূলক সুবিবেচনা প্রত্যাশা করি, কিন্তু আড়িয়াল বিলের কান্নার মতো এই প্রত্যাশাও চাপা পড়ে থাকবে দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর একে অন্যের প্রতি ছোঁড়া কাঁদার নিচে। ...........

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.