একবার আপনারে চিনতে পারলে রে , যাবে অচেনা রে চেনা
বিএসএমইউ-এর চক্ষু বহির্বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডাঃ সাইফুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেছেন চিকিৎসা নিতে আসা জনৈক রোগী। এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ ২৩ জানুয়ারীর প্রায় সবকটি পত্রিকায় এসেছিল। আমার আগের পোস্টে ছিল সেই সংবাদগুলোর হুবুহু কপি পেস্ট। (চাইলে পড়ে আসতে পারেন)
এই নিউজ গুলিতে কয়েকটি লক্ষণীয় বিষয় আছে। প্রথম আলো এটি ছেপেছে খুবই ছোট করে।
সাথে কোন ছবি ছাপেনি। একবার ও যৌন নিপীড়ন শব্দটি ব্যবহার করেনি। এর কি কারণ হতে পারে? প্রথম আলো হয়তো অভিযোগ প্রমানিত হওয়ার আগে অভিযুক্তকে সামাজিকভাবে হেয় করতে চায় নি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটির স্টাফরা যে আর্রটিভির সাংবাদিককে হেনস্তা করেছে,ভিডিও ফুটেজ আটকে রেখেছিল এই বিষয়টি চেপে গেছে। কেন চেপে গেছে তা বোঝা গেল না।
তবে কালের কন্ঠ সহ অন্য পত্রিকাগুলি বিস্তারিত লিখেছে । সাথে ছবি ও ছেপেছে।
পত্রিকা পড়ে আরো জানতে পারি হাসপাতালের উর্ধতনরা প্রথমে বিষয়টি হালকা করে দেখেন। বরং তারা সাংবাদিকের বিরুদ্ধেই ছিলেন মারমুখী। কিন্তু পরে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে উঠলে তারা অভিযোগকারীকে সাময়িক বরখাস্ত করেন।
তবে কতৃপক্ষ তাদের কথা দিয়ে বারবার বোঝাতে চেয়েছেন ডাক্তার আসলে নির্দোষ। রোগী দেখতে গেলে এরকম একটু আধটু “কাছে আসতেই হয়”। মন্তব্যটি লক্ষ্য করুন-
এদিকে চক্ষু বিভাগের অন্য এক চিকিৎসক বলেন, চোখ পরীক্ষার সময় সঙ্গত কারণেই রোগীর খুব কাছাকাছি যেতে হয়। এতে শরীরে হাত দেওয়ার প্রসঙ্গ উঠলে চিকিৎসাসেবা দেওয়া দুরূহ হয়ে উঠবে।
ভাবটা এমন যেন সেবা দেওয়ার জন্য আমাদের চিকিৎসকেরা মুখিয়ে হয়ে আছেন কিন্তু রোগীদের ত্যাঁদরামির জন্য আর পারা যাচ্ছেনা।
প্রশ্ন হলো শুধু চোখ পরীক্ষা কেন, কমবেশী কাছাকাছি যেতে হয়না কোন ক্ষেত্রে? সব রোগীই তো তাহলে এরকম ঘটনা ঘটাতেন। কতটা কাছাকাছি তাদের যেতে হয় যে চিকিৎসা সেবা নিতে গিয়ে একজন রোগীনি বিব্রত হয়ে চেম্বার থেকে বের হয়ে আসেন!? অতঃপর তাকে আরেকদফা হয়রানির শিকার হতে হবে যেনে ও অভিযোগ করতে হয়!? এটুকু বুঝি, খুব বড় কিছু না ঘটলে একজন নারী কখনো তার বিরুদ্ধে যৌনহয়রানির অভিযোগ তোলে না, অন্তত আমাদের সমাজে। বরং এ সমাজে অধিকাংশ নারীই নিরবে সহ্য করে যান এইসব নীপিড়ন শুধুমাত্র লোকলজ্জা আর সামাজিক হয়রানির ভয়ে।
ডাক্তারদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ কিন্তু নুতন নয় । কিছুদিন আগে প্রথম আলোতে একটা সংবাদ ছাপা হয়েছিল পিজির জনৈক প্রফেসরকে নিয়ে ।
চর্ম ওযৌন বিভাগের এই প্রফেসর সাহেব তার বিভাগের জনৈক নারী চিকিৎসককে কুপ্রস্তাব দিয়েছিলেন। এই নারী চিকিৎসক তার বিভাগের উচ্চতর প্রশিক্ষনার্থী (পিজিটি) ছিলেন। অর্থাৎ তার ছাত্রীতুল্য। নৈতিকতার কি ভয়াবহ বিপর্যয়!আমি ব্যক্তিগতভাবে এই দুইজনকেই চিনি। নারী চিকিৎসকটি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিচার দিয়েছিলেন।
বরাবরের মত তদন্ত কমিটিও হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো আসলে প্রফেসর সাহেবের কিছুই হয়নি। বরং শুনানির দিন অভিযোগকারী নারী চিকিৎসককে পিজি’র কর্তাবাহাদুর (যিনি প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত আস্থাভাজন চিকিৎসক ও বটে) ভর্ৎসনা করেন “তোমরা আজকালকার মেয়েরা এত কেরিয়ারিস্ট কেন,ঘর সংসার বাদ দিয়ে কেরিয়ারের পেছনে ছোট …”
কর্তা বাহাদুর আসলে ঠিকই বলেছেন কেন যে মেয়েরা সংসার ছেড়ে কেরিয়ার গড়তে আসে!!! না আসলে তো আর আমাদের প্রফেসর সাহেবদের এরকম সুড়সুড়ি লাগে না।
প্রথম আলো এই নিউজের ফলো আপ করেনি। কোন পত্রিকাই এসব করে না ।
সবাই আসলে ভুলে যায়। ভুলে আসলে যেতে হয়। নাহলে চলে না। ঠিক যেমন ভুলে যান প্রফেসর সাহেবের স্ত্রীরা। এছাড়া আর উপায় কি?
পাঠকদের বরং ফলোআপ জানানোর দায়িত্ব নিয়েছেন এই ব্লগার ।
সেই প্রশিক্ষনার্থী নারীচিকিৎসক তার প্রশিক্ষন বন্ধ করে দিয়েছেন। আর প্রফেসর বরাবরের মতই ডিপ্লোমা,এমডি,এফসিপিএস এর মত বিভিন্ন কোর্সের ক্লাশ আর ফাইনাল পরীক্ষা নিতে নিতে হয়রান হয়ে যাচ্ছেন। নেবেনইতো। তিনি যে চিকিৎসক গড়ার কারিগর, মহান প্রফেসর । (চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।