আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কালেমার প্রকৃত রহস্য ও ব্যাখ্যা



ইসলামের পাচটি মূলনীতি বা স্তম্ভের মধ্য সর্বাগ্রে ঈমাণ ও কালেমার স্থান। কুসংস্কার ও পাপাচারে লিপ্ত মানুষ 'কালেমায়ে তৈয়্যবা' অর্থাৎ 'পবিত্র বাক্য' পাঠ করে নিজেকে বিশ্বনবী (স) এর অনুসারী বা মুসলমানদের দলভুক্ত করেছে। এ কালেমার সারকথা দুটি। প্রথমটি হলো- আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই। অর্থাৎ- এ কথার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালের একত্ববাদ ও তার পুর্ণ আনুগত্য স্বীকার করা হয়।

কিন্তু যার পরিচয় জানা নেই কিংবা যার সাথে যোগাযোগের কোন মাধ্যম আয়ত্বে নেই, সঠিকভাবে তার তার আনুগত্য কিভাবে করা যাবে? এর সমাধান হিসেবে এসেছে কালেমার দ্বিতীয় সার কথা- হযরত মুহাম্মদ (স) আল্লাহর প্রেরিত মহামানব তথা রাসূল। অর্থাৎ- ১৫ বছর হেরা গুহায় ধ্যান সাধনা করে প্রিয় নবী (স) আল্লাহর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে প্রভূর পরিচয় লাভ করেছেন এবং প্রভূর পক্ষ থেকে নবী হিসেবে মানুষকে হেদায়েত করার জন্য দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়েছেন। তাকে আল্লাহর নবী হিসেবে মেনে নিয়ে, তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে যে নির্দেশপ্রাপ্ত হন সে নির্দেশ অনুসারে নিজেদের পরিচালিত করে, তার আনুগত্য করার মাধ্যমে উম্মতের অন্তরের পাপ-কালীমা দূরীভূত ও ঈমাণের নূর বিকশিত হয়ে মানুষের চরিত্রে আূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। মানুষ আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসূল (স) এর গভীর প্রেম অর্জন করে হযরত রাসূল (স) এর আনুগত্যর মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর পরিচয় পর্যন্ত লাভ করে নিজেকে পরিপূর্ণ মূমেনে পরিণত করতে পেরেছেন। আর এভাবেই তৎকালীন আরবের বর্বর মানুষ ইসলামের শান্তিময় সরল পথে পরিচালিত হয়ে আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জনে সক্ষম হয়েছেন।

বস্তুত রাসূল (স) কে বিশ্বাস না করে আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী হওয়া যায়না এবং হযরত রাসূল (স) এর আনূগত্য ব্যতীত আল্লাহর আনুগত্য করা সম্ভব নয়। তাই যারা হযরত রাসূল (স) কে অস্বীকার করেছে তারাই হয়েছে অবীশ্বাসীদের অন্তর্ভূক্ত। পবিত্র কোরআনে সুস্পষ্ট ঘোষিত হয়েছে- "( হে রাসূল !) আপনি বলে দিন, হে মানব মন্ডলী! আমি তোমাদের সবার জন্য আল্লাহর রাসূল। আকাশ ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব যার, তিনি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই-তিনিই বাচান, তিনিই মারেন। সুতরাং আল্লাহর প্রতি ও যিনি আল্লাহর বাণীতে বিশ্বাস করেন এমন একজন উম্মী নবীর উপর বিশ্বাস স্থাপন কর ও তাকে অনুসরণ কর যেন তোমরা সুপথ পাও" [ সূরা আরাফ,আয়াত ১৫৮] বিশ্বাসীদের জন্য আল্লাহর পেয়ারা হাবিব (স) এর আনুগত্য করা ও তাকে অনুসরণ করা অত্যাবশ্যক।

যে এর অন্যথা করবে সে অবিশ্বাসীদের দলভুক্ত হবে। তাই আল্লাহ রাব্বূল আলামীন ফরমান, "( হে রাসূল ! ) আপনি বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহ কে ভালবাস তবে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ সমূহ ক্ষমা করে দিবেন কেননা আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু। আরো বলে দিন, আল্লাহ ও রাসূলের অনুগত হও , কিন্তু তোমরা যদি মুখ ফিরিয়ে নাও তবে জেনে রাখ নিশ্চই আল্লাহ অবিশ্বাসীদের ভালবাসেন না" [ আল-ইমরান- আয়াত ৩১-৩২ ] কিন্তু একজন মুসলমান আল্লাহর আনয়গত্য করবে কিভাবে? " যে রাসূলের আনুগত্য করে সে তো আল্লাহর ই আনূগত্য করে" [ সূরা নিসা- আয়াত ৮০] আমাদের প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় দেখা যায়, জন গণের ভোটে নির্বাচিত হওয়া সত্বেও সরকারীভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির কাছে গিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে শপথ বাক্য পাঠ না করা পর্যন্ত নির্বাচিত পদে ভাল হওয়া যায়না। তেমনিভাবে কোন রাজনৈতিক দল কিংবা সামাজিক সংগঠনে যোগদানের ইচ্ছা মনে মনে পোষণ করলেই একজন ব্যক্তিকে ঐ দলভুক্ত বলে গণ্য করা হয়না- তাকে ঐ দলের বিধি মোতাবেক আনুষ্ঠানিক ভাবে শপথ করতে হয়। তাই বাস্তব জীবলের নিয়মের সাথে সংগতিপূর্ণ এ বিধান যে, মুসলমান হতে হলে আল্লাহর পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত নবীকে মেনে নিয়ে কালেমা পাঠের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে আনুগত্যর ঘোষণা দিতে হয়।

মৌখিক কালেমা পাঠের পর রাসূল (স) এর আনুগত্য এবং অনুসরণের মাধ্যমে মানুষ কিভাবে ঈমাণদার হয়, এর এক সুন্দর উপমা দিয়েছেন মহান প্রভূ আল্লাহ তায়ালা - " (হে রাসূল !) আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, আল্লাহ কিরূপে কালেমায়ে তৈয়েবার উপমা বর্ণনা করেন- যেমন একটি পবিত্র গাছ, যার শিকড় সুপ্রতিষ্ঠিত ও যার শাখাসমূহ গগনস্পর্শী? স্বীয় প্রতিপালকের আদেশে যা সবসময় ফল দান করে থাকে মানবমন্ডলীর জন্য আল্লাহ উপমা বর্ণনা করেন-যেন তারা উপদেশ গ্রহণ করে" [ সূরা ইব্রাহীম, আয়াত ২৪-২৫ ] কালেমা সর্ম্পকে বিস্তারিত আলোচনা করতে হলে এর বাক্য ও অর্থের প্রতি আমাদের গভীরভাবে লক্ষ্য করতে হবে। তাহলে এ সম্পর্কে আমাদের ধারণা আরো পরিস্কার হবে। প্রতিটি কালেমা আত্মার উন্নতি বা ঈমাণের পূর্ণতা লাভের পথে এক একটি স্তর নির্দেশ করে। যেমন এম এ পাশ করতে হলে ক্লাশ ওয়ান, ক্লাশ টু এমনিভাবে ধাপে ধাপে স্কূল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় স্তরসমূহ অতিক্রম করতে হয়। তেমনি ঈমাণের পুর্ণতা লাভের জন্য আধ্যাত্বিক বিদ্যা শিক্ষা কার সাধনায় কলেমাগুলো হছ্বে উন্নতি লাভের এক একটি স্তর বিশেষ।

আর একটি বিষ্য় লক্ষণীয় যে কালেমায় আল্লাহর নামের সাথে রাসূলের নাম সংযুক্ত রয়েছে। মুসলমান হওয়ার জন্য কলেমা পাঠ করাকে অংগীকার করা বা ঘোষণা দেয়া যাই বলিনা কেন, আল্লাহর বান্দা হওয়া সত্বেও তার একত্ববাদ স্বীকার করার সাথে সাথে তার প্রতিনিধিকে স্বীকৃতি দিতে হবে- এ কথার অর্থ কি? আল্লাহর সাথে প্রতিনিধির কি এমন সর্ম্পক যে, তাকে মেনে নেওয়াও এত বেশী গুরুত্বপূর্ণ? এ বিষ্য়টি নিয়ে গবেষণা করলে যা দেখা যায় - প্রতিনিধি হলেন যিনি পরিশুদ্ধ অন্তরে আল্লাহ কে ধারণ করেন। আল্লাহ যেহেতু সূক্ষাতিসূক্ষ জগতের এক পবিত্র সত্বা, যিনি সরাসরি স্থুল জগতে প্রকাশিত হওয়ার বিধান রাখেন নি। প্রতিনিধির মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করার বিধান দিয়েছেন বলেই তিনি আদমকে সৃষ্টি করেছেন। প্রতিনিধির মাধ্যম ছাড়া আল্লাহর কোন খোজ খবর পাওয়া সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব হবেনা বলেই প্রত্যক যুগে যুগে নবী প্রেরণ করা হয়েছে।

প্রত্যক মানুষের ভিতর আল্লাহতায়ালা তার রূহ থেকে রূহ ফূূকে দিলেও কুরিপুর তাড়নায় পরে আমাদের নফসের স্বেচ্ছাচারিতা তাকে সূপ্ত ও নিস্তেজ করে রেখেছে যেমন কাঠের ভেতর আগুনের তাপ সুপ্তাবস্থায় থাকে, আগুনের স্পর্শ পেলেই কেবল সে কাঠ থেকে তাপ নির্গত বা প্রকাশ হয়। একটি জ্বলন্ত কাঠ বা কয়লা থেকে আগুন অন্য কোন দাহ্য পদার্থে স্থানান্তরিত হওয়া সম্ভব। দোয়া দরুদ ওয়াজিফা -কালাম বা বই পড়ে আগুন সৃষ্টি করা যায়না। আগুনের সংস্পর্শে গিয়ে আগুন জ্বালিয়ে নেওয়ার জন্য কোন বিদ্বান হওয়াও শর্ত নয়। তেমনি ঈমাণদার হওয়ার জন্য যিনি ঈমাণ রূদয়ে ধারণ করেছেন এমন একজন ব্যক্তির সংস্পর্শে যাওয়া যে অপরিহার্য, কলেমার দ্বিতীয় প্রতিনিধির নাম সংযোগ হওয়া সে কথাই প্রমাণ করে।

প্রথম কালেমা হলো- [ লা ইলাহা ইল্লালাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ] " আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নাই এবং মুহাম্মদ (স) আল্লাহর রাসূল " এ কলেমার কথা খুবই সংক্ষিপ্ত হলেও ঈমাণদার হওয়ার জন্য ঈমাণের মূলমন্ত্র কিন্তু এ কালেমাতেই নিহিত আছে। যেমন, আপনি কি এক আল্লাহর আনুগত্য করতে চান? তাহলে হযরত মুহাম্মদ (স) এর কাছে যান। তিনিই হলেন আল্লাহর রাসূল বা বৈধ প্রতিনিধি। আর লক্ষ্যস্থলে পৌছার জন্য আপনাকে হযরত মুহামদ (স) ছাড়া অন্য কিছু চিনতে না বুঝতে হবেনা, কেননা আল্লাহ পর্যন্ত পৌছানর জন্য রাসুল (স) যথেষ্ঠ। তাই অন্য আকীদা ও ধ্যন ধারণা ত্যগ করে সমস্ত দ্বিধা ফেলে একমাত্র হযরত মুহাম্মদ (স) এর প্রতি আপনার মনযোগ নিবিষ্ট করে রাখুন।

আপনি কলেমার এই কথাগুলো শুনে বিশ্বাস করলেন তারপর হযরত মুহাম্মদ (স) এর কাছে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আনুগত্য প্রকাশ করলেন। এরপর আমাদের কর্ব্য হলো রাসূল (স) আপনাকে যা করতে নির্দেশ করেন বিনা প্রতিবাদে, পূর্ণ ভক্তি বিশ্বাসের সাথে তা পালন করা অবশ্য কর্তব্য। তাহলে 'কলেমায়ে তৈয়্যবা' হলো আমি প্রথমে শোনা কথায় বিশ্বাস করলাম, এটাকে অন্ধ বিশ্বাস ও বলা যায় তারপর বাস্তব প্রমাণ পাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে থাকলাম। আমার মনে বিশ্বাসের মধ্য যদি কোন ত্রুটি না থাকে এবং আল্লাহর প্রতিনিধির নির্দেশ মোতাবেক আমল করার মধ্য যদি কোন গাফিলতি না থাকে তাহলে অবশ্যই আমি কিছু না কিছু বাস্তব প্রমাণ পাবো। 'কালেমায়ে শাহদাত' হলো বাস্তবে কিছু পাওয়ার প্রমাণ।

যে 'কালেমায়ে তৈয়্যবা' থেকে আমাদের ঈমাণের যাত্রা শুরু হয়েছে সেখান থেকে খুব স্পস্টভাবে একটা জিনিষ শিখলাম আর তা হলো প্রতিনিধি বাদ দিয়ে আল্লাহর কাছে পৌছার কোন সুযোগ নেই। 'কালেমায়ে শাহদৎ' [ আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু] " আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নাই, তিনি একক তার কোন শরীক নাই। আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি হযরত মুহাম্মদ তার আজ্ঞাবাহী রাসূল " এ কলেমার লক্ষ্যণীয় বিষয় এবং 'কলেমা তৈয়্যবা" এর সাথে এর পার্থক্য হলো সাক্ষ্য দান। সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য নিজে প্রত্যক্ষভাবে দেখা ও জানার বিষয় অবশ্যই জড়িত থাকে। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে 'কলেমায়ে তৈয়্যবা' হলো প্রথমা জানা ও পরে মানার ব্যপার।

আল্লাহ ও তার মনোনীত প্রতিনিধি সম্পর্কে প্রথমে জানলাম জানার পর চুপচাপ বসে থাকলে চলবেনা, এর পরবর্তী ধাপ হলো তার সংস্পর্শে গিয়ে বাস্তব অনুসরণ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায়- আমি জানলাম অমুক স্কুল খুব ভালো এ কথা জানার পর প্রতিদিন সকাল বিকাল এ তথ্যটিকে স্বরণ করেলা আমার সন্তানেরা শিক্ষিত হবেনা। ঐ স্কুলে গিয়ে সেখানকার ভর্তি প্রক্রিয়া যেনে ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং স্কুলের নিয়ম মোতাবেক তাদের পড়াশোনার সুযোগ করে দিতে হবে। এটা হলো প্রথমে জানা ও পরে তা অনুসরণ করার ব্যাখ্যা। অনুসরণের পর আমার সন্তানেরা সত্যি সত্যি যদি ভালো ফলাফল করে তারপর আমি জোর দিয়ে এ কথা বলতে পারব যে অমুক স্কুলে ভালো পড়াশুনা হয় এতে কোন সন্দেহ নেই।

আমি বাস্তবে এর প্রমাণ পেয়েছি আমিই এর সাক্ষী। তাহলে বাস্তবে প্রমান পাওয়ার পর সাক্ষী দেয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত হলো। তাই 'কলেমা তৈয়্যবা' অনুসারে আমল করে বাস্তব ফল পাওয়ার পর 'কলেমায়ে শাহদৎ' এর ঘোষণা দেয়ার প্রশ্ন আসতে পারে এ কথা সম্পুর্ণ যুক্তিযুক্ত। আমরা বাস্তবে কোন ফল পাইনা। কেউ পেয়েছে এমন ঘটনাও শুনিনা, তাই এরুপ উক্তি যথার্থ সত্য হলেও তা বিশ্বাস করা আমাদের জন্য কঠিন।

যিনি আল্লাহ সম্পর্কে কোন না কোন নমুনা বাস্তবে প্রত্যক্ষ করেন নি, তিনি এরূপ কোন সাক্ষী দিলে তা মিথ্যা সাক্ষী দেয়া হয়ে যাবে। 'কলেমা তৈয়্যবা' হলো না দেখে বা আল্লাহ সম্পর্কে কোন প্রমাণ না পেয়ে প্রতিনিধিকে অনুসরণের মাধ্যমে তাকে অনুসরণ করা। আর 'কলেমায়ে শাহদৎ' হলো তাকে দেখে , তার সম্পর্কে প্রত্যক্ষ প্রমাণ লাভ করে আল্লাহর নির্দেশের অনুসরণ করা। 'কালেমা তাওহীদ' [ লা ইলাহা ইল্লা আনতা ওয়াহিদাল্লা সানিয়া লাকা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহি ইমামুল মুত্তাকীনা রাসূলু রাব্বিল আলামীন] ' (হে আল্লাহ) আপনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই, আপনি এক এবং অদ্বিতীয়। মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ হলেন ধর্মভীরূগণের নেতা ও বিশ্ব প্রতিপালকের রাসূল " এ কালেমার লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে আল্লাহ কে সম্বোধন করে সরাসরি তার সাথে কথা বলা।

অর্থাৎ সাধক আল্লাহর দর্শন লাভ করার পর তার সাথে কথোপকথনের মত নৈকট্য সৃষ্টি হয়েছে, তার প্রতি প্রেম সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর সাথে বান্দার দুরত্ত এখনো সম্পূর্ণ ঘোচেনি। তাই কথা বার্তা অনেকটা আনুষ্ঠানিক বলা হচ্ছে। মোটকথা এ কলেমা হলো আল্লাহকে সামনে হাজির পেয়ে তার কাছে আ্ত্মসমর্পণের ঘোষণা। এর পূর্ববর্তী অবস্থা হলো সাধক আল্লাহ কে দেখেছেন কিন্তু তার সাথে কথা বলার মতো সুযোগ তৈরী হয়নি।

ঈমাণের উন্নতি লাভ করে সাধক যখন আল্লাহর উদ্দেশ্য কথা বলার মত অবস্থা সৃষ্টি হ্য় তখন 'কলেমা তাওহীদ' তার জন্য বাস্তব হয়ে দাড়ায় 'কলেমায়ে তামজীদ' [ লা ইলাহা ইল্লা আনতা নূরাই ইয়াহদিয়াল্লাহূ লিনূরিহি মাইয়্যাশাউ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহি ইমামুল মুরসালিনা খাতামুন্নাবিয়িন] অর্থ- ( হে আল্লাহ) তুমি ছাড়া আর কোন উপাস্য নাই। তুমি জোর্তিময়। যাকে ইচ্ছা নিজ জোতি দ্বারা তোমার দিকে টেনে নাও। মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ হলেন রাসূলগণের নেতা ও শেষ নবী" সাধক যখন আল্লাহকে সামনে হাজির পান, তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তার প্রেমে মুগ্ধ হয়ে ও তিনি আল্লাহর প্রেমিক হিসেবে তার কাছে আত্মনিবেদন করেন। তার এরূপ আত্মিক অবস্থা 'কলেমায়ে তাওহীদ' এর সময় থেকে অর্জিত হত থাকে।

প্রেম একতরফা হয়না। সাধকের আত্মনিবেদনে মুগ্ধ হয়ে এক সময় মহান আল্লাহ তায়ালা তার প্রেমের প্রতিদান প্রদান করেন সেই প্রতিদান হলো প্রেমার জোতি বা নূর। প্রেমের প্রতিদান পেয়ে আল্লাহর প্রেমমু্গ্ধ সাধক আল্লাহর প্রশংসা কীর্তনে রত হয়ে পড়েন। তার রূদয় থেকে তখন উচ্চারিত হয় 'কলেমায়ে তামজীদ'। এ কলেমা হলো আল্লাহকে ভালোবাসলে তিনি যে ভালোবাশার ডাকে সাড়া দেন তার প্রেমিক কে তিনি যে প্রতিদান দিয়ে থাকেন এর প্রমাণ।

'কলেমায়ে র্দ্দে কুফর' বা কুফর রদকারী কলেমা [ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আন উশরিকা বিকা শাইয়াও ওয়া আনা আলমু বিহী ওয়া আসতাগফিরুকা লিমা আলামু বিহি ওয়ামা লা আলামুবিহি তুবতু আনহু ওয়া তাবারতু মিনাল কুফরিওয়াশশিরকি ওয়াল মাআছি কুল্লিহা ওয়া আসলামতু ওয়া আমানতু ওয়া আকুলু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ] অর্থ- হে আল্লাহ! আমি যেন কাউকে তোমার সাথে অংশীদার না করি এ ইচ্ছা পোষণ করে তোমার আশ্র‌য় কামনা করছি। আমার জানা,অজানা, সব গুনাহ থেকে তওবা করছি এবং তোমার কাছে ক্ষমা চাই। কুফর,শির্ক এবং সব পাপ থেকে মুক্ত হয়ে আত্মসমর্পণ করলাম ও ঈমাণ আনলাম। আর দ্বিধাহীন চিত্তে ঘোষণা করছি আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নাই এবং হযরত মুহাম্মদ(স) হলেন আল্লাহর রাসূল ' এই কলেমাতে নিজেকে কুফর ও শির্ক থেকে নিজেকে মুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। ঈমাণের পূর্ণতা প্রাপ্ত হলেই সাধক এইরূপ অবস্থায় উপনীত হন।

তার দ্বারা শির্ক ও কুফরী সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা। এটাই ঈমাণের পূর্ণতা অর্জনের শেষ স্তর। আর নিজেকে এইরুপ স্বীকৃতি দেয়া যায়না যে আমি এম এ পাশ- এ স্বীকৃতি দেয়ার জন্য যথাযথ বিশ্ববিদ্যাল্য কতৃপক্ষ রয়েছে। ঈমাণের ব্যাপারেও পূর্ণতার স্বীকৃতি সাধক মহান আল্লাহতায়ালা পক্ষ হতে লাভ করেন। আর তখনই ৫ম বা শেষ কলেমার মাধ্যমে এর শুকরিয়া আদায় করতে পারেন।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।