যুগের লেখক আমি, চলি সময়ের সাথে ...
মজিদ সাহেব অবসর নিয়েছেন। এখন কাজের মধ্যে প্রতিদিন তিনি খবরের কাগজ মুখস্থ করেন; আর মাঝে মাঝে টিভিতে কার্টুন ছবি বিশেষ করে ‘টম এ্যান্ড জেরি’ দেখেন।
একদিন মিসেস মজিদ তার মনের পুঞ্জীভূত কষ্ট নিয়ে হাজির হলেন স্বামীর কাছে। ‘সারাজীবন তুমি আমায় কী দিলে বলো? ভালো একটা চাইনিজে নিয়ে স্যুপ খাইয়েছো কখনো? চারপাশে এত হোটেল-রেস্টুরেন্ট; অথচ প্রতিবেলা ভাত খেতে খেতে দাঁতে পাথর জমে গেল। যখন প্রেম করতে তখন তো মনে হত যেন রসের ডিব্বা! শুনেছি বুড়ো বয়সে মানুষের নাকি ভীমরতি ধরে; আর তুমি তো দেখি সারাটা দিন ঘরের মধ্যেই পড়ে থাক।
এমন রস-কষহীন মানুষ আমি জীবনেও দেখিনি। আজকেই আমাকে নিয়ে কোথাও বেড়াতে যাবে। ’ বউয়ের হঠাৎ এমন অভিমান আর অভিযোগে আমাদের সাহেব অনুশোচিত।
বিকালে দুইজন মিলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি অত্যাধুনিক রেস্টুরেন্টে গেলেন। মিসেস মজিদ তার মনের খায়েশ মিটিয়ে অর্ডার দিলেন।
তারপর শুরু হল স্মৃতিচারণ পর্ব। ‘মনে পড়ে, ভালোবেসে তুমি আমার নাম দিয়েছিলে টুনি আর আমি তোমাকে ডাকতাম টোনা বলে। তখন তোমার মুখে কত্ত মিষ্টি মিষ্টি কথা; মনে হত তোমার কথার মিষ্টিতেই বুঝি আমার ডায়বেটিস হয়ে যাবে! আর এখন ... ... ...। ’
একদিকে চলতে থাকল ‘স্মৃতি তুমি বেদনা’, অন্যদিকে বিদেশী ফুড গলাধ:করণ। ক্লিয়ার স্যুপের ক্লিয়ার অবস্থা, বার্গারভর্তি মেয়নেজ আর লেটুস পাতা, স্যান্ডউইচে একটি অতি পরিচিত পতঙ্গের মমি, সর্বোপরি জুসে পঁচা আমের ফ্লেভার-এসব দেখে দুজনেই অসন্তুষ্ট।
অত:পর খাবারের বিল এলে তা দেখে টোনাটুনির তো একেবারে মাথায় হাত! বিল না হয় না-ই বললাম, ভ্যাট (ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স)-ই এসেছে ১২৩ টাকা। টুনি ভেবেছিল যে একদিন পরপরই নতুন নতুন জায়গায় খেতে যাবে। কিন্তু ভ্যাটের পরিমাণ দেখে সে ভীষণ আহত হল আর তার পরিকল্পনা নিহত হল। অন্যদিকে টোনার চেহারাতেও এটা স্পষ্ট যে বেচারা অনুরোধে সেগুন কাঠের ঢেঁকি গিলেছে!
পরদিন দেশের মাননীয় অর্থমন্ত্রী পার্লামেন্টে বাজেট পেশ করলেন। জুস, জ্যাম, জেলীসহ আরো অনেক সামগ্রী ভ্যাটের খপ্পরে পড়তে যাচ্ছে।
মজিদ সাহেব স্ত্রীকে ডেকে বললেন, ‘রেস্টুরেন্টের ঐ ভ্যাটের জন্য মন খারাপ করো না। ভাগ্য ভালো যে বাজেট ঘোষণার আগেই আমরা খেয়ে এসেছি; তা না হলে আরো বেশি ভ্যাট দিতে হত!’
টুনির মনে প্রশান্তি এল আর মাথায় একটি আইডিয়া এল। ‘এসব রেস্টুরেন্টে খাওয়ার চেয়ে তুমি একটা রান্নার বই কিনে আনো। প্রতিদিন আমরা বাসাতেই মজার মজার আইটেম করব!’ টোনারও আইডিয়াটি খুব পছন্দ হল।
এখন টোনা প্রতিদিন লিস্টি ধরে বাজার করে; তারপর দুইজন মহা উৎসবের আমেজে নতুন নতুন আইটেম রান্না করে আর মজা করে খায়।
চাইলে টোনাটুনির সংসারে আপনিও এক চক্কর ঘুরে আসতে পারেন। ভয় নেই, খাওয়ার জন্য সেখানে কোন ভ্যাট দিতে হবে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।