I love walking in the rain because no one can see me crying
এক ছিল টোনা আর এক টুনি। এই গল্পটা অনেকের জানা, রিমিক্সের যুগে এটা আবার নতুন করে শুনি। টুনি গল্প বানায় আর টোনা লেখে। টোনার শখ টাকা গোনা আর টুনি নানাগুণে গুণী। দু’জনের পেশায় মিল আছে আবার অমিলও চোখে পড়ে এটা একটা ‘প্যারাডক্স’ দু’ভাবেই যায়।
টোনা কম্পিউটারের ডাক্তার আর টুনি পদার্থ বিজ্ঞানের ইঞ্জিনিয়ার। এরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান ঠিক আছে কিন্তু যেখানে চুক্তি বা যুক্তি করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চর্চা করা যায় সে দিকেই এদের ঝোঁকটা বেশি। এই চর্চার বাইরেও ওনারা অনেক কিছু করেন। অনেক কিছু বলতে এই যেমন রান্নার অনুষ্ঠান, টক শো, বিশেষজ্ঞ মত প্রদান, দান-সম্প্রদান ইত্যাদি ইত্যাদি। টোনা ওনার অতি সামাজিক কাজের জন্য একবার ‘বেনামি ফাউন্ডেশন’ আর একবার ‘কানকথা একাডেমি’র পুরস্কার পেয়ে গেলেন।
ব্যস, আর যায় কোথায়। আগে থেকেই এই জুটির একটু নাকউঁচু ভাব ছিল। এবার আর মাটিতে পা পড়ে না। মাটিতে না পড়লেও এদের পা পত্রিকার পাতায়, টিভি পর্দায় ঠিকই পড়তো। আর এতে ধন্য হয়ে যেত মিডিয়াপাড়া।
‘এক টুনি টুনটুনালো তিন ভিসি’র কান কাটালো’
এটা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ওনারা থাকেন সেখানে প্রচলিত একটা ছড়া, যা লোকসাহিত্যের মতো দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ। মূল গল্পের মতো ক্যাম্পাসেও টুনি-টুনটুনায় আর টোনা গান গায়। বিভিন্ন ধরনের গান- ঘুমপাড়ানি, ভুলভুলানি, সাদাসিধে সঙ্গীত আর সবচেয়ে জনপ্রিয় ফিকশনী ফিউশন। লিখতে লিখতে আর গাইতে গাইতে টোনার এতই নামডাক হলো যে উনি তো বটেই ওনার সাগরেদরাও বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ‘পৈতৃক সম্পত্তি’ ভাবতে শুরু করল। আর এ দিকে টুনি হলো নেপথ্যের নায়িকা/গায়িকা।
সে যা করে তা-ই হয়ে যায় ‘আবহ সঙ্গীত’। এতে টুনির মন খানিকটা খারাপ ওয়ারিশী না হলেও বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ‘স্বামীক সম্পত্তি’ ভাবতে ভালোই লাগে। যখন কেউ এভাবে বলে, ‘ও! এই বিশ্ববিদ্যালয় তো আপনাদেরই। আপনারাই তো এর মা-বাপ!’ তখন শরীরে অন্য রকম এক শিহরণ অনুভূত হয়। এই অনুভবই এক সময় তাকে অধ্যাপক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর করে তোলে।
অধ্যাপক হতে হলে যে গণ্ডারের মতো হয়ে যেতে হয় সে যোগ্যতা অবশ্য ওনার রয়েছে। টুনির নামের মাথায়ও একটা ‘ডক্টরেট শিং’ আছে। কিন্তু তাতেই সব হয় না! ভিসি’র কুঞ্জ তখন ছিল নিতাইগঞ্জ। ওই সময়ে তাই ‘কোন বা পথে নিতাইগঞ্জ যাই’ এই গানটি ফাটাফাটি হিট করে। শেষে গঞ্জে পৌঁছলেও স্বপ্নে পৌঁছানো যায়নি।
স্বপ্ন চুরি করে নিয়ে গেল একজন ভালো মানুষ। এরপর যমুনাপাড়ের লোকদের মতো ‘গঞ্জে যখন এয়েছি চাচার নামে একটা কেস ঠুকে দি’ বলে দেয়া হলো কেস, যেমন তেমন জায়গায় নয়, একেবারে হাইকোর্টে। সেই হাইকোর্টের ঘটনা হাইপ্রোফাইল লোপ্রোফাইল সব মানুষই জানলেন। ‘পথ ছাড়ব না, ত্যাগও করব না’ এই ছিল টুনির পণ। সেই পণে মনে মনে কলিমুদ্দি-সলিমুদ্দি অনেকেই খুশি, হলো সালিশি- ‘বিচার মানি, কিন্তু তালগাছটা আমার’ এই করে করে অ-নে-ক দিন।
এক সময় মরা গাঙে জোয়ার এলো। চুপসানো গাল ফুললো, গালের সাথে পাল ফুললো। অনুকূল হাওয়া- গভর্মেন্ট চেঞ্জ, ভিসি চেঞ্জ। উন্নতির নাও, রকেট হইয়া উইড়া যাও! আহ্ কপাল! কপালের নাম গোপাল...
আগের প্রশাসনের সাথে টোনাটুনির দূরত্ব ছিল, এবার তা পুষিয়ে দিয়ে দূরত্বটা দৌরাত্ম্যে রূপ পেলো। প্রথম ঠেলায়ই অধ্যাপক, দ্বিতীয় ঠেলায় প্রভোস্ট, শোনা যাচ্ছিল তৃতীয় ঠেলায় প্রোভিসি।
এই ঠেলা দেয়ার আগেই মেলা গ্যাঞ্জাম। ‘ডোন্ট মাইন্ড ফ্যামিলির’ ভিসি সাহেব গড়িমসি করলেন। কেউ কাতুকুতু না দিলেও সদাহাস্য এই মানুষটির ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় হয়তো সতর্ক করে দিলো
‘এই টুনিতে টুনটুনাবে এবং আমার নাক কাটাবে!’
যা হোক, টোনার আরেকটা গুণের কথা ইদানীং ইথারে ইথারে শোনা যাচ্ছে। সে দিন ছাত্রী হলে (টুনি যেই হলের প্রভোস্ট) টোনা না কি ‘ডিসকো ড্যান্স’ করেছিল। শুরুতে ‘হালকার ওপর ঝাপসা’ হলেও পরে রাত যতই গড়িয়েছে হিপহপ, হ্যামার, ব্যালে, কথক, ক্লাসিক, ঝুমুর, বানোয়া কিছুই বাদ যায়নি।
তরুণ বয়সের মিঠুন চক্রবর্তীও এতটা পারতেন কি না সন্দেহ! হলের বাইরে কর্তব্যরত গার্ডরা মৃদু ভূকম্পন টের পেলেও পাশের আবাসিক শিক্ষকদের ঘুমে তেমন ব্যাঘাত ঘটেনি। অবশ্য পর দিন অনেক ইয়াং টিচারকে (যারা আগেভাগে জলসা থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন) আফসোস করতে শোনা গেছে, ‘এত জমেছিল, আহা মিস করলাম!’ সাংবাদিকদের ঢুকতে না দেয়া হলেও ঢাকার ‘তেলেসমাতি বিরিয়ানি’ রান্নার জন্য বাবুর্চিদের ঢুকতে দেয়া হয়েছিল আগেভাগেই। টোনাটুনির সুপ্ত প্রতিভা দেখে কেউ কেউ মুগ্ধ, অনেকেই ক্ষুব্ধ। ক্ষুব্ধরাই খেয়াল করে দেখল শহীদ বুদ্ধিজীবী এবং বিজয় দিবসের পুষ্পস্তবকে ছাত্রী হলের নামকরণ করা হয়েছে। এই নামকরণ নিয়ে যদি আবার খেলা শুরু হয়, তাহলে টোনাটুনির গাছেও পিঠা তলায়ও পিঠা অতীত কিন্তু বলে ‘এই পিঠা বড়ই মিঠা’।
মূল গল্পের মতো টোনা বাজারে যাবে ঠিকই কিন্তু ময়দা আনবে বড় ভাইয়ের কাছ থেকে, তেল আনবে ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে, আর মায়ের কাছ থেকে গুড়। তাওয়া গরম, চুলা গরম, পিঠা হবে গরমাগরম। আগত অভ্যাগতরা কেউ খাবে, কেউ বাসায় নেবে; আর পিঠ চাপড়ে বলবে, ‘সাবাস!’ টোনাটুনি সাবাস পেলেও বাঁশ খেয়ে যাবে নিরপরাধ শিক্ষার্থীরা, বাঁশ খাবে এই সবুজ বিশ্ববিদ্যালয়। কে জানে আবারো নয় মাস, না কি আরো বেশি
গল্পটা শেষ হলো না। তাতে কি! টোনাটুনি যদ্দিন থাকছে এ গল্প তদ্দিন মুখে মুখে থাকবে।
এরপর হয়তো মাটি আর ঘাস একটা দীর্ঘশ্বাস!
লেখক :
সুমন আখন্দ
সহকারী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, শাবিপ্রবি, সিলেট
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।