মেঘের আড়ালে সূর্য হাসে
কেউ খেলে মজা পায় আর কেউ খেলা দেখে মজা পায়। আমি অবশ্য ২য় দলে। ছোটবেলা থেকেই এই খেলা দেখার প্রতি আকর্ষন টা আমার অস্বাভাবিক রকমের বেশি। বিশেষ করে ক্রিকেট, এবং অবশ্যই বাংলাদেশের খেলা। এই খেলা দেখতে গিয়ে কত যে মার খেয়েছি আব্বু-আম্মুর, তা মনে পড়লে আজও হাসি পায়।
আর পড়াশোনা নষ্ট হওয়ার কথা না হয় বাদ ই দিলাম, কারণ যে দিন বাংলাদেশের খেলা থাকত সে দিন সকাল থেকেই শুরু হয়ে যেত অংক কশা- বাংলাদেশের কত করা উচিত, কতটুকু সতর্কতার সাথে খেলা উচিত, আজ দূর্জয়ের ভাল বল করতেই হবে নতুবা... আরো কত কি, আর খেলা শেষের অনুভূতির কথা আর কি বলব-সেই শোক মনে হয় পরের দিন পর্যন্ত থাকত।
ছোটবেলায় বাংলাদেশের খেলা গুলো কেন জানি সব পরীক্ষার সময় পড়ত, আর আমার বিচক্ষন পিতা সেটা আন্দাজ করতে পেরে টিভিটা বাক্স বন্দি করে রেখে দিত আমার হাতের নাগালের বাইরে। আমি তখন ৭/৮ এ পড়ি, যথারীতি টিভি লাপাত্তা এবং অনেক দিন খোঁজাখুজি করে ও টিভির হদিস মিল্ল না। সেদিন ছিল বাংলাদেশের খেলা, খুব সম্ভবত স্কটল্যান্ডের সাথে, সকাল থেকে মনটা খুবই খারাপ তাই ভাবলাম একটা শেষ সার্চ করে দেখি। অবশেষে সফল হলাম, তবে টিভিটা এমনই এক জায়গায় ছিল, যেটা ছিল আব্বু-আম্মুর রুমে এবং যেখান থেকে টিভি নামাতে গেলে আমাকে প্রথমে একটা টেবিল, তার উপর একটা চেয়ার এবং তার উপর আরও একটা চেয়ার দিয়ে নামাতে হবে, তাও আবার কেউ যাতে টের না পায় এমন ভাবে নামাতে হবে।
তাই সারাদিন পড়াশোনার ভান করে প্ল্যান করতে থাকলাম এবং অবশেষে কোন "প্ল্যান বি" ছাড়াই "মিশন ইম্পসিবল ৭" শুরু করলাম। রাতে আব্বু-আম্মু ঘুমানোর পর আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে উনাদের রুমে ঢুকলাম। ধীরে ধীরে টেবিল, চেয়ার দিয়ে পাহাড় টা বানালাম, যতই সময় যাচ্ছে ততই ঘড়ির কাটার শব্দটা পাল্লা দিয়ে জোরাল হচ্ছে, সাথে আছে আমার হৃদপিন্ডে বয়ে যাওয়া ম্যাগনেটিক ট্রেন আর আব্বুর গগনবিদারী নিঃশ্বাসের শব্দ। অঘটন টা ঘটল তখনই, টিভিটা নিয়ে নামতে গিয়েই একটা পা ফসকে গেল, তবে ভাগ্যটা ভাল বলতে হবে কারন এক হাত দিয়ে টিভিটা ধরে অন্য হাত দিয়ে পাশের দেয়াল ধরে ফেল্লাম। হৃদপিন্ড টা তখন মনে হ্য় আমি চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছিলাম।
ওভাবেই থাকলাম কিছুক্ষন যাতে খট্ খট্ শব্দটা মিলিয়ে যায়। যাই হোক খেলা দেখে ভোর হওয়ার আগেই আবার টিভিটা যথাস্হানে রেখে দিলাম। -শান্তি...
বলে রাখি, আমি বাংলাদেশের অন্ধ ভক্ত। অন্ধ মানে একেবারেই অন্ধ। আমি আজ পর্যন্ত আই.পি.এল. একটা খেলাও দেখিনি কিন্তু বাংলাদেশের টেস্ট (বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ) খেলা পুরোটা ভোর পাচঁটা পর্যন্ত ও দেখেছি, যে আমি কখনই ১/২ টার বেশি জাগিনা।
জীবনে আমি একটাই পরীক্ষা দেই নি এই খেলা দেখতে গিয়ে, অবশ্য সে খেলায় বাংলাদেশ জিতেছিল। হলে মাঝে মাঝে খেলা দেখতে গিয়ে এমন হত যে, পুরো টিভি রুমে আমি হয়ত একাই বসে আছি-সাত উইকেট পড়ে গেছে তাও মনের মধ্যে প্রবল এক বিঃশ্বাস কাজ করত যে, না এখনো সম্ভব। পিছনে তাকালে ক্যান্টিনের পরিশ্রান্ত ছেলেটির চরম আরামের ঘুম অথবা কারও জন্য অপেক্ষারত কোন বহিরাগত ছাড়া আর কাউকে চোখে পড়ত না। হ্য়ত ততক্ষণে আরও একটি উইকেট পড়ে গেছে, তবুও আমার আশা ক্ষীন হত না।
বোধ করি, বাংলাদেশের খেলাটা আমার একটু বেশিই ভাল লাগে।
কখনও তামিমের ছয়, কখনও সাকিবের সেই মনোমুগ্ধকর বোল্ড, কখনও মুশফিকের আপিল, কখনো বা আফতাবের ডিরেক্ট থ্রো, বা ভীষন টেনশনের মাঝে ওভারের শেষ বলে রুবেলের বোল্ড-সব, সব কিছুই ভাল লাগে, আর বার বারই অনুপ্রানিত হই এসব দেখে-দেখে চিৎকার করতে ভাল লাগে।
সবাই বলছে, এবার বাংলাদেশ কোন না কোন অঘটন ঘটাবে। কিন্তু আমি অন্তর থেকে এইটুকু বিঃশ্বাস করি যে, অঘটন নয়, বাংলাদেশ বিশ্বকাপ নেয়ার পুরোপুরি যোগ্য এবং বাংলাদেশ এবার জিতবে। আমি প্রার্থনা করবো বাংলাদেশের জন্য-ঠিক যেমনটি ছোটবেলায় করতাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।