আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সঙ্গীতা আমার প্রিয় বন্ধু মহারানী কে খোলা চিঠি.....................নীলাঞ্জনা নীলা

আনন্দবতী মেয়ে আমি হাওয়ায় উড়াই চুল,চোখের ভেতর ছলাৎ ছলাৎ মনের ভেতর নীল ঘাসফুল

মহারানী, আমি তোকে নিয়ে ভাবি,খুব ভাবি। জানিনা কেন কি কারণে ? তুই আমার পারাপারের সেতু না রে আমার মনের শক্তি তুই । কতোদিন থেকে ভাবছি তোকে চিঠি লিখবো । কতো আনন্দে মেতে উঠিস , বেঁচে থাকিস অন্ধকারের ভেতর আলো জ্বালিয়ে । অবাক হই এতো প্রাণশক্তি কি করে ধারণ করিস ? অবশ্য আমি সময় কে পুজো করি রে ।

সময় মানুষ কে বদলে দেয় । অনেক সাহসী একসময় ভীরু আবার অনেক ভীরু সাহসের গান করে । চোখের জল আমরা বইতে জানি বইয়ে দিতে জানি না এটুকুই মিল আছে আমাদের মধ্যে । খোলা চিঠি লিখছি তোকে কারণ আমি গোপন রাখিনা । অন্তত তুই জানিস ।

আর আজ তো জানতে পারলাম আমায় নিয়ে তোর ভাবনাগুলো । যাকে আমি বন্ধু ভেবেছিলাম , যার জন্যে সবাইকে সরিয়ে দিয়েছিলাম এমনকি স্নেহের আঁচলে ঠাঁই দিয়েছিলাম সে যখন আমায় নিয়ে অনেক কথা বলে গেলো আমি অবাক হলাম এ কি করে সম্ভব ! প্রতিদিনকার মতো সুপ্রভাতটুকু এতোটাই মিথ্যে ! বন্ধু মানে প্রেমিক নয় সে তুই আর আমি ভালো করেই জানি । আমি পৃথিবীতে সবচেয়ে দামী সম্পর্ক মনে করি বন্ধুত্ত্ব কে । সেই বন্ধুই যদি কখনো বন্ধু কে নিয়ে এসব মিথ্যে বলে এর চেয়ে কষ্টের আর কি থাকে বল তো ? নাহ এ আমি কি নিয়ে লিখছি ? এখানে কেবল তুই আর তুই , মধ্যে মধ্যে আমি । আচ্ছা বল তো মাইনাস পনেরো তে যখন ঘর থেকে বের হয়ে কাজে যাস তখন কি ওই আকাশের দিকে তাকাস কখনো ? তোর যখন মধ্য রাত , ঘুমহীন চোখ নিঃসঙ্গতার চাদর পড়ে বসে থাকিস তখন আমার ভোর ।

যদিও আমার ভোর আজকাল আর আলো ছড়ায় না । সেই চা' বাগানের ভোর মনে পড়ে তোর ? আমি খুব কম দেখেছি । আমার খুব প্রিয় ঋতু শরত কালের ভোরগুলো দেখেছি আমি । মহালয়াতে বাপির বুকে মাথা রেখে লেপের নীচে শুয়ে আহা ! কি যে আনন্দ লাগতো রে মহারানী । এখন তো গ্রীন হাউস এফেক্টের কারণে সবগুলো ঋতুর চরিত্র পালটে গেছে ।

দেখ সময় কতোটা বদল আনে প্রকৃতি কিংবা জীবনে । আর এই সময় নিয়েই আমি দুটো ভাবনা কে ধারণ করি । সময় নিয়ে আমার দর্শন হলো সময়েই সম্পর্কের বদল হয় । খুব বিশ্বাস করি রে আমি । একেকটি প্রিয় মুখ কতো দূরে চলে যায় আবার কিছু মুখ যাকে কখনো চোখেও দেখিনি কতো আপন হয়ে যায় ! অবাক লাগে ।

তোর লাগে না ? এই দেখ সেই কবে একই আকাশের নীচে , পাশাপাশি শহরে বড়ো হয়েছি , মেতেছি আনন্দে কিন্তু এতোটা কাছাকাছি হইনি । কতোটুকু সময় লাগতো তোর শহরে যেতে ? বাসে গেলে পঁয়তাল্লিশ মিনিট । হায় রে বাস মহিলা লেখা জায়গায় পুরুষের বসে থাকা । এও মেনে নিতে পারতাম না বলেই বাসের মাঝামাঝি গিয়ে বসতাম । কন্ডাক্টার এসে বলতো মহিলা সিটে গিয়ে বসতে ।

মেজাজ গরম হয়ে যেতো । প্রচন্ড জেদ ছিলো তাই জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে থাকতাম । তোর শহরের বই বিপণীতে প্রথম যেতাম তারপর রিক্সা নিয়ে ঘুরতাম পুরোটা শহর । নাহ তোর কাছে যাওয়া হয়নি রে । তোর সাথে ব্যাডমিন্টন খেলা হলো না আমার ।

চ্যাম্পিয়ন কন্যা রে একবার মুখোমুখি হলে দেখে নিতি আমিও কম যাই না । হাসছি রে আমি দেখ । নাহ একটু থেমে নেই তা নইলে লেখা ওলট-পালট হয়ে যাবে । মহারানী সময় কখনো সম্পর্কের গভীরতা মাপতে পারেনা । ভালোবাসার মানুষ পুরোনো হয়না ঠিকই কিন্তু দূরত্ত্ব বাড়ে আর সেখানে কেউ যদি চলে আসে আগের মানুষের স্থানটুকুও নিয়ে নিতে পারে ।

তর্ক - বিতর্ক তো আছেই এই কথা নিয়ে কিন্তু যদি মন দিয়ে ভেবে নেয়া যায় আমি কিন্তু ভুল বলিনি রে । বল তো ভুল বলেছি কি ? কিন্তু আমাদের মন-মানসিকতা এমন এক সমাজের কাছে আটকে রাখা এ থেকে নতূন কিছু যে সৃষ্টি হতে পারে কেউই ভেবে দেখে না । এই যে আমরা বলি ভালো - মন্দ , পাপ - পূণ্য এসবে আমার বিশ্বাস নেই । আমাদের তৈরী এই শব্দগুলো আমাদের সমাজের জন্যে কি এমন পরিবর্তন এনেছে আমি খুঁজে কিছুই পাইনা । এতো নিয়ম বলেই কি আমরা ভালো কিছুই করতে পারিনা যাকে সমাজ ভালো বলে ? অতো কিছু ভাবতে চাইনা শুধু কিছু প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খায় ।

আমাদের দেশে অনেক নারী ধর্ষিতা হয় কেউ কেউ শরীরে আর কেউবা মনে । অতো ভালো নিয়ম থাকা সত্ত্বেও এতো বেশী মাত্রায় হয় কেন বলতে পারিস ? এই যে আমি অনেক রাত করে বাসায় ফিরি তাও পাশ্চাত্য পোষাকে কেউ তো চেয়েও দেখে না ? ছোঁয়া তো দূরের কথা । মহারানী আর ভালোবাসা নিয়ে কিছু ভাবনা আছে আমার । ভালোবাসা খোলা আকাশ । বন্ধনহীন বন্ধন ।

কোনো ব্যাঙ্কে কারুর ফিক্সড ডিপোজিট নয় , যে কেবল একজনের হাতেই তার চাবি থাকবে । যখন ইচ্ছে হয় খুলবে আর বন্ধ করবে । তবে কিছু কিছু ভালোবাসা আছে যেখানে নিজেকে বন্দী করে দেখতে খুব ভালো লাগে । তেমন ভালোবাসা আমি তোর কাছে পেয়েছি রে । তোর জন্যে একটি কবিতা লিখলাম এই এখুনি ।

অস্থির বিপন্ন সময়ে একরাশ প্রশান্তির আলো-হাওয়া আমার ঘরের সবটুকু জুড়ে নেচে বেড়ায় কার দেয়া ? বোকা মেয়ে কিচ্ছু জানিস না তুই একটুকরো আকাশ দেখতাম মাথার ওপরের ছোট্ট শার্সি দিয়ে এখন আমার চোখের ভেতর বিশাল আকাশ চাঁদের আলো তারার মেলা ভোরের সূর্য সব উঁকি দেয় জানিস নাকি কে দিয়েছে চক্ষু মেলে ? বোকা মেয়ে বুঝবি কি করে ? আমার নীল আমার প্রেম অবুঝ ভালোবাসা সবটুকুই তোরই দেয়া এখন আমি বাঁচতে চাই নিঃশ্বাসের গান করি তোর স্পন্দনের স্পন্দনে...... ভালো থাকিস রে তুই । অনেক বাধা-বিপত্তিতেও যেনো এই পথ তোকে তোর সুন্দর আর নিরাপদ গন্তব্যে পৌঁছে দেয় এই প্রার্থনা করছি । এখুনি ছুটতে হবে । কিছু অনুরোধ , আবদার প্রিয়জন কে দূরে ঠেলে দিস না । যে তোকে ভালোবাসে তাকে কাছ থেকে সরিয়ে নিস না রে কখনো ।

ভালোবাসা পাওয়া অনেক কঠিন আমাকে দেখে তো জানিস রে ! আজ পর্যন্ত সেই ভালোবাসা পেলাম না খুঁজে যা আমি খুঁজেই যাচ্ছি । হয়তো পেয়ে যাবো , কি জানি হয়তো পেয়ে গেছি কিন্তু হয়তো সেই ভালোবাসা আমায় বুঝতে পারছে না কিংবা আমি । আরো অনেক লেখার ছিলো রে কিন্তু সময়ের ঘড়িটা আমার থেকে দৌঁড়ে দৌঁড়ে ছুটছে । তোকে দেবার কিছুই নেই আমার । কেবল পেয়েই যাচ্ছি ।

ভালোবাসাটুকু দিলাম সেও তোর মতো না । অনেক অনেক আদর আর আদর...... নীলা

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।