আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্বসেরার পুরস্কার মেসিরই, কিন্তু...

আমি বিনোদন প্রেমী

বর্ষসেরার নাম ঘোষণার জন্য মঞ্চে এলেন পেপ গার্দিওলা। যেন জীবনের কঠিনতম এক দায়িত্ব চেপেছে তাঁর কাঁধে। কঠিনই তো। গার্দিওলার এই ঘোষণা তাঁর এক প্রিয় শিষ্যের মুখ উজ্জ্বল করবে, তো কষ্ট পাবে বাকি দুজন! খামের ভেতর থাকা নামটি এক পলক দেখে ফিফা ব্যালন ডি’অর বিজয়ীর নাম ঘোষণা করলেন বার্সেলোনা কোচ। চমক! যাঁর নাম ঘোষিত হলো, তিনি নিজেও যেন একটু চমকে গেলেন।

মঞ্চে পৌঁছানোর পরও লিওনেল মেসির চোখেমুখে থাকল বিস্ময়ের আভা। গুরু গার্দিওলার হাত থেকে সোনালি বলের ঝা-চকচকে ট্রফিটা নিয়ে যে প্রতিক্রিয়া জানালেন, বিস্ময় সেখানেও, ‘আমি আসলেই বিস্মিত। ’ পরের বাক্যটায় মিশে থাকল টানা দ্বিতীয়বার এই পুরস্কার পাওয়ার আনন্দ, ‘একই সঙ্গে উচ্ছ্বসিতও। ’ ২০১০ ফিফা ব্যালন ডি’অরের পুরস্কার হাতে নিয়ে মেসি ভাঙলেন একটা অলিখিত রেওয়াজ। বিশ্বকাপে সফল না হয়েও জিতলেন বর্ষসেরার পুরস্কার।

বিশ্বকাপে একটি গোলও পাননি, দল বাদ পড়েছে কোয়ার্টার ফাইনালে। আগের পাঁচ বিশ্বকাপের বছরে এই পুরস্কার গেছে বিশ্বকাপে নজরকাড়াদেরই দখলে। এ কারণে মেসির নির্বাচিত হওয়াটা অনেকের কাছে বিস্ময়। তবে পুরস্কারটা অপাত্রে যায়নি। বর্ষসেরা বলতে যদি পুরো বছরের সেরাকেই বোঝায়, তাহলে মেসিই বরং যোগ্যতম।

২০১০ সালে তিনি গোল করেছেন ৬০টি! শেষ পর্যন্ত জয় শিল্পের, ভিনগ্রহের ফুটবলারেরই। যদিও জুরিখে ঘোষণাটা আসতেই খোদ লিওনেল মেসির চোখেও বিস্ময় খেলা করে গেল। কারণ মেসি নিজেও আশা করেননি যে তিনি জিতবেন, একটু আগেই সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন তাঁর দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর কেউ একজনই জিতবেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো নিজের ক্লাব বার্সেলোনার দুই সতীর্থ জাভি ও ইনিয়েস্তাকে পেছনে ফেলে ২০১০ সালের বিশ্বসেরা ফুটবলারের শিরোপা জেতা ফুটবলারের নাম মেসি। আর তাই ২০০৯ সালে জেতা শ্রেষ্ঠত্ব তাঁরই থাকল।

বিশ্বকাপের বছর ফিফার বিশ্বসেরা ফুটবলারের পুরস্কারটি সাধারণত বিশ্বকাপের দুর্দান্ত কোনো পারফরমারই পেয়ে থাকেন। গত বছরের পুরোটা দারুণ খেলেছেন মেসি। কিন্তু বিশ্বকাপে গিয়ে এ আর্জেন্টাইন একটাও গোলের দেখা পাননি; দল বাদ পড়েছে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই। অন্যদিকে প্রথমবারের মতো স্পেনকে বিশ্বকাপ জেতানোর পথে পুরো আসরে অসাধারণ পারফরম্যান্স ছিল দুই স্প্যানিয়ার্ড জাভি ও ইনিয়েস্তার। মেসির মতো বলতে গেলে সবাই ধরে নিয়েছিল ওই দুজনের মধ্যে কারো হাতে উঠবে দারুণ আরাধ্য এ শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার।

কিন্তু ভোটে অংশ নেওয়া সারা বিশ্বের জাতীয় কোচ, অধিনায়ক ও নির্বাচিত সাংবাদিকদের চোখে মেসিই হলেন সেরা। তিনি পেয়েছেন ২২.৬৫ শতাংশ ভোট, ইনিয়েস্তা ১৭.৩৬ আর জাভি ১৬.৪৮ শতাংশ। অনেককে অবাক করে সেরা তিনে আসতে না পারা ইন্টার মিলানের ডাচ প্লে-মেকার ওয়েসলি স্লাইডার চতুর্থ হয়েছেন ১৪.৪৮ শতাংশ ভোট পেয়ে। পুরস্কারটা হাতে নেওয়ার পরও মেসির চেহারায় ছিল মিশ্র একটা অভিব্যক্তি। বিস্ময়ের ঘোর ও অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তির সুখের আবেশ সঙ্গী করেই জানালেন, ‘এটা আমার জন্য খুবই বিশেষ এক দিন।

এটা জিতব, এমন আশা করিনি। জাভি আর ইনিয়েস্তাও এ পুরস্কারের সমান দাবিদার। দারুণ একটা বছর ও অসাধারণ বিশ্বকাপ কাটিয়েছে ওরা। ’ বার্সা ও স্পেনের মধ্যমাঠের দুই প্রাণ জাভি ও ইনিয়েস্তা। তাঁদের সঙ্গে দারুণ একটা মৌসুম কাটিয়েছেন মেসি।

এ বছরও ধরে রেখেছেন ধারাবাহিকতা। কিন্তু গত মৌসুমে যেন কল্পলোকের ফুটবলই খেলছিলেন মেসি, বিশেষ করে ক্লাবের হয়ে। বার্সাকে লিগ শিরোপা জেতানোর পথে ৫৩ ম্যাচে ৪৭ গোল করেছেন। বানিয়ে দিয়েছেন আরো ১১ গোল। শুধু ২০১০ সাল ধরলে তাঁর বার্সেলোনা গোলের সংখ্যা ৫৪ ম্যাচে ৫৮।

চোখধাঁধানো ফুটবল দিয়ে তো এই বিতর্কটাও তুলে দিয়েছেন। তিনি ফুটবল ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় কিনা। আর্জেন্টিনার পাশাপাশি স্পেনেরও নাগরিক মেসি। কিন্তু ফিফা ও ফ্রেঞ্চ ম্যাগাজিন ব্যালন ডি’অর এবারই এক হয়ে প্রথমবারের মতো দিল বিশ্বের বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। কিন্তু স্প্যানিশ সংবাদপত্রে তাদের এ স্বীকৃতি পড়েছে দারুণ সমালোচনার মুখে।

দৈনিক এএসের প্রধান শিরোনাম, ‘স্পেন ভীষণ রাগান্বিত। ’ কম্বো ছবিতে একপাশে হতাশ হয়ে বসে থাকা জাভি ও ইনেয়েস্তা এবং পাশে গোল্ডেন বল হাতে হাসিমুখের মেসির ছবি ছেপে ওপরে শিরোনাম দিয়েছে, ‘ট্রফি হস্তান্তরের পর ১২ ঘণ্টার ইন্টারনেট জরিপে তিন-চতুর্থাংশ জানিয়েছে, মেসির এ জয় একটা অবিচার। ’ মেসিকে সেরা ফুটবলার ও বিশ্বকাপজয়ী স্প্যানিশ কোচ ভিসেন্তে দেল বস্কের রিয়াল মাদ্রিদের পর্তুগিজ কোচ হোসে মরিনহোকে সেরা কোচের স্বীকৃতি দেওয়াকে কটাক্ষ করে তাদের আরেকটি শিরোনাম, ‘দুই দানব ও এক স্পেনবিরোধী। ’ ফিফার ২০১০ অল স্টার দলে ছয়জন স্প্যানিশ খেলোয়াড় ছিলেন। সেই সূত্র ধরে মার্কা লিখেছে, ‘সন্দেহ নেই, এ রাতে স্প্যানিশ ফুটবলেরই পরাজয় হলো।

(ব্ল্যাটার) স্পেনের বিরুদ্ধে তাঁর অসুস্থ মানসিকতার আরেকটি সুযোগ কাজে লাগালেন। ’ এবিসি সংবাদপত্রে ফিফার প্রতি বিষোদ্গার, ‘ফিফার হাতে বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা লাঞ্ছিত। ’ এ পুরস্কারটা নিয়েই আগ্রহ থাকে বেশি, এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাত্রাটা বেশি থাকায় বাকি পুরস্কারগুলো ম্লান হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেখানেও উল্লেখ করার মতো ব্যাপার আছে। ব্রাজিলিয়ান মহিলা ফুটবলার মার্তা টানা পঞ্চমবারের মতো জিতেছেন শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার।

সেরা বিশ্বকাপজয়ী কোচ ভিসেন্তে দেল বস্ক ও বার্সেলোনা কোচ পেপ গার্দিওলাকে পেছনে ফেলে সেরা কোচের পুরস্কার জিতেছেন ইন্টার মিলানকে ট্রেবল জিতিয়ে এখন রিয়াল মাদ্রিদে আসা হোসে মরিনহো। বছরের সেরা গোলের পুরস্কার, পুসকাস অ্যাওয়ার্ড তুরস্কের হামিট অ্যালটিনটপ, কাজাখস্তানের বিপক্ষে তাঁর করা অসাধারণ গোলটি আর সব কিছু টপকে নির্বাচিত হয়েছে বছরের সেরা গোল। এ নিয়ে মেসির সাক্ষাতকার- আমি আসলে আশাই করিনি প্রশ্ন : লিও, অনুভূতিটা কিভাবে প্রকাশ করবেন? লিওনেল মেসি : আমি আসলে খুবই খুশি। তবে মোটেও আশাবাদী ছিলাম না। কেননা জাভি ও আন্দ্রেসকে (ইনিয়েস্তা) নিয়েই সবচেয়ে বেশি কথা হচ্ছিল।

চমৎকার একটি বছর কাটানোর পর তারা পুরস্কারটা পাওয়ার দাবিদারও হয়ে উঠেছিল। তা ছাড়া তারা বিশ্বকাপও জিতেছে। পুরস্কারটা কে পাচ্ছে, সেটা অনেকটাই ঠিক করে দেয় বিশ্বকাপ। আর স্পেনের বিশ্বকাপ জয়ে তাদের অবদান অনেক। সে কারণেই আমি ধরে নিয়েছিলাম যে তাদের কেউ একজনই পুরস্কারটা পাচ্ছে।

তাই আমার কাছে এটা অনেক বড় এক চমক। প্রশ্ন : তাঁদের অনুভূতিটা কেমন হতে পারে বলে মনে হচ্ছে আপনার? মেসি : মনে হয় না আমি পুরস্কার পাওয়ায় তারা খুব কষ্ট পাচ্ছে। এ পুরস্কারটা আমাদের তিনজনেরই এবং আমাদের ক্লাব বার্সেলোনারও। আমার ধারণা, সবাই এটা উপভোগ করেছে। প্রশ্ন : আপনি বলছেন, পুরস্কারটা পাওয়ার দাবিদার ছিলেন তাঁরা।

কিন্তু পেলেন আপনি। কী কারণে তা আপনার পক্ষে গেল বলে মনে হচ্ছে? মেসি : সত্যি কথা বলতে কি, মানুষ ভোটের মাধ্যমে আমাকেই বেছে নিয়েছে। সে কারণে যারা আমাকে ভোট দিয়েছে, তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এটি আমার দ্বিতীয় বর্ষসেরা পুরস্কার হলেও আমি প্রথমবারের মতোই খুশি। উপভোগও করছি বেশ।

প্রশ্ন : আপনার কি কখনো মনে হয়েছিল যে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স পুরস্কারের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে? মেসি : হ্যাঁ, তবে বিশ্বকাপটা কিন্তু আমাদের খুব বাজে গেছে বলা যাবে না। যদিও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যে লক্ষ্য নিয়ে আমরা দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েছিলাম, সেটা পূরণ করতে পারিনি। গত বছর থেকে এ অনুশোচনাটা আমাকে খুবই পোড়াচ্ছে। প্রশ্ন : এ বছরের কোপা আমেরিকা দিয়ে নিশ্চয়ই দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের দুঃখটা ভুলতে চাইবেন? মেসি : এটা শুধু আমার ব্যক্তিগত লক্ষ্যই নয়, আর্জেন্টনারও। পরবর্তী বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য এটা আমাদের দেশ ও ভক্তদের জন্য অবশ্যই অনেক বড় ব্যাপার হবে।

প্রশ্ন : দেশের হয়ে ভালো করতে পারেন না, এ ধারণাটা ভুল প্রমাণেরও মনে হয় বড় মঞ্চ কোপা আমেরিকা... মেসি : হ্যাঁ, অবশ্যই। আমি আমার দেশের হয়ে অনেক বড় কিছু করতে চাই। এবং আমারও মনে হচ্ছে যে এটাই একটা বড় সুযোগ। প্রশ্ন : পুরস্কারটি আপনি কাকে উৎসর্গ করতে চান? মেসি : আমার সতীর্থ যারা আমাকে এটি পেতে সাহায্য করেছে, আমার পরিবার ও যারা আমাকে সমর্থন করেছে, তাদের প্রত্যেককে। তিনজনের ভোট লিওনেল মেসি ২২.৬৫% আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা ১৭.৩৬% জাভি ১৬.৪৮% ওয়েসলি স্নাইডার ১৪.৪৮ অন্যান্য সেরা ফুটবলার (পুরুষ) : লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা) ফুটবলার (মহিলা) : মার্তা (ব্রাজিল) কোচ (পুরুষ) : হোসে মরিনহো (পর্তুগাল) কোচ (মহিলা) : সিলভিয়া নেইড (জার্মানি) সুন্দর গোল : হামিট অ্যালটিনটপ (তুরস্ক) বিশেষ অবদান সম্মাননা : আর্চ বিশপ ডেসমন্ড টুটু (দক্ষিণ আফ্রিকা) ফিফা ফেয়ার প্লে : হাইতি অনূর্ধ্ব-১৭ ফিফপ্রো একাদশ : ইকার ক্যাসিয়াস (স্পেন), মাইকন (ব্রাজিল), লুসিও (ব্রাজিল), জেরার্ড পিকে (স্পেন), কার্লোস পুয়োল (স্পেন), ওয়েসলি স্লাইডার (নেদারল্যান্ডস), জাভি (স্পেন), আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা (স্পেন), লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা), ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (পর্তুগাল), ডেভিড ভিয়া (স্পেন) আগে লেখা মেসির ব্যালন ডি'অর নিয়ে আকর্ষণীয় বিতর্ক


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।