আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফেলানীর মৃত্যু ।।। সরকারের কি আসে যায়?



আমাদের সাথে তো ভারতের কোন শুত্রুতা বা যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছেনা। তেমন বড় কোন বিবাদও নেই। নেই কোন বড় ধরনের সংঘাত সংঘর্ষ। বরং আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের সেই বন্ধুপ্রতিম সাহায্য তাদেরকে আমাদের সবসময় শ্রদ্ধার সুযোগ করে দিয়েছে। ভারত আমাদের থেকে প্রতিনিয়ত বাণিজ্যিকভাবে লাভবান এবং প্রতিবেশী হিসেবে যথেষ্ট সহযোগীতাই পাচ্ছে এটা বলতেই হবে।

আমরাও যে মন্দভালো উপকৃত হচ্ছিনা সেটাও অস্বীকার করবোনা। অতি সম্প্রতি আমাদের সরকার ভারতকে তাদের বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর এবং সড়ক ব্যবহারের মত বিশাল সুযোগও প্রদানও করেছে। এতসব সুবিধা-ছাড় আর বন্ধুত্বের প্রয়াস ব্যর্থ করতে ভারত এবং তার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ যেন উঠেপড়ে লেগেছে। ইসরাইলী বর্বর বাহিনীর সরাসরি প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী, বিএসএফ তাদের প্রশিক্ষণদাতা ইসরাইলী বাহিনীর বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। দিনকে দিন তারা একেরপর এক নিরীহ-নিরস্ত্র বাংলাদেশীর লাশ উপহার দিয়ে চলছে ।

যদিও প্রতিবারই ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বলা হয়, এরপর আর গুলির ঘটনা ঘটবে না। কিন্তু সময়ের ধারাবাহিকতায় এরা আরো হিংস্র থেকে হিংস্রতর হচ্ছে, প্রতিদিনই গুলি ছুড়ছে বাংলাদেশীদের বুকে। তাদের হাত থেকে নিস্তার পাচ্ছেনা অবলা বাংলাদেশী পশু গুলিও। এরই ধারাবাহিকতায় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী- বিএসএফ নতুন বছরের শুরুতেই শুক্রবার কুড়িগ্রাম সীমান্তে এক নিষ্ঠুর-নির্মম-পৈশাচিক আর মানব সভ্যতার জন্য চরম কলংকজনক হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। আর এর নির্মম শিকার আমার বাংলাদেশের নিষ্পাপ কিশোরী ফেলানী।

যার বয়স মাত্র ১৫ বছর। ৭ জানুয়ারী ফেলানীর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। অভাবের তাড়নায় ফেলানীর বাবা তার বিয়ের কথা পাকাপাকি করার পর গত শুক্রবার ভারতীয় সীমান্ত অতিক্রম করে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী অনন্তপুর সীমান্তপথ দিয়ে বাংলাদেশে ফিরছিলো। আসার পথে পেছনে থাকা ফেলানীর জামা আটকে যায় কাঁটাতারের বেঁড়ায়। বাবা সামনে চলে যাওয়ায় কাঁটাতারের বেঁড়ায় আঁটকে যাওয়া কিশোরী ফেলানী ভয়ে কেঁদে উঠে।

আর ফেলানীর কান্নার শব্দে গর্জে উঠে হায়েনা বিএসএফ এর অত্যাধুনিক মরনাস্ত্র। মুহুর্তেই ঝাঝরা করে দেয় কিশোরী ফেলানীর নিষ্পাপ শরীরটি। কাঁটাতারে ঝুলতে থাকে ফেলানীর নিথর দেহ। পিছনে ফিরে মেয়ের লাশ দেখেও কিছুই করতে পারেননি অসহায় বাবা নুরুল ইসলাম নুরু। কারণ ফেলানীর লাশটাও নিয়ে গিয়েছে বিএসএফ।

অথচ অসংখ্য ভারতীয় সাধারণ জনগন এবং সন্ত্রাসী প্রতিদিন বাংলাদেশের সীমান্তেই নয় একেবারে অভ্যন্তরে আটক হচ্ছে। তাদেরকে আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলােদশ বর্ডার গার্ড আর্ন্তজাতিক আইন অনুযায়ী বন্দী করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু বিএসএফ মাঠপর্যায়ের নিয়মনীতি (গ্রাউন্ড রুল) বারবার ভঙ্গ করছে। গ্রাউন্ড রুলে এ জাতীয় অনুপ্রবেশের ঘটনায় কোনো অবস্থায় গুলি ছোড়া যাবে না। তথাপি বিএসএফ বারবার গুলি ছুড়ে আমাদেরকে হত্যা করেই যাচ্ছে।

বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন অধিকার'র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১০ সালে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। এ বছর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ৭৪ জন বাংলাদেশীকে হত্যা করে। এঁদের মধ্যে ২৪ জনকে নির্যাতন এবং ৫০ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই সময়ে ৭২ জন বিএসএফএর হাতে আহত হয়েছেন। বিএসএফ’র হাতে আহত ৭২ জনের মধ্যে ৩২ জন নির্যাতিত ও ৪০ জন গুলিবিদ্ধ হয়।

একই সময়ে ৪৩ জন বাংলাদেশী বিএসএফ’র হাতে অপহৃত হয়েছেন। অথচ এতসব হত্যাকান্ডের পরেও আমাদের রাষ্টযন্ত্রের সবোর্চ্চ পর্যায়ের কোন মাথাব্যথা বা হত্যাকান্ড বন্ধের কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছেনা। মাঝে মাঝে গভীর হতাশায় মুষড়ে পড়ি এসব দেখে। এরা এতটাই অথর্ব যে সামান্য একটা কড়া বিবৃতিও দিতে পারেনা। বিরোধী দলও ভোট পাওয়ার জন্য কথায় কথায় সিমান্তে হত্যাকান্ডে বন্ধের বিবৃতি দেন, যদিও ক্ষমতায় গিয়ে তারা এসব নিয়ে ভাববার আর সময় পাননা।

যতসব নষ্টের মুলে ঐ ক্ষমতালোভী- মেরুদন্ডহীন রাজনীতি আর তাদের অনুগত রাজনীতিবিদরাই। এরা ক্ষমতার লোভে দেশকে পরাধিন করতেও এক পায়ে দাঁড়িয়ে। যার প্রমাণ দেখি যখন তখন এদের বিদেশিপাড়ায় আনাগোনা এবং বিদেশী হস্তক্ষেপ কামনার আকাংখা থেকে। আমার নিজেকে মনে হচ্ছে একজন লজ্জিত ও পরাধীন মানুষ। সমগ্র রাষ্ট্রযন্ত্রে প্রতিবাদ কিংবা প্রতিকার চাওয়ার মত একজনও যোগ্য মানুষ কি নেই ? আছে।

কেউ না থাকলেও আমি আছি। আমি অবিরাম লিখে যাবো এসব বর্বর হত্যাকান্ড নিয়ে। আমার স্বপ্ন আমার লেখায় অনুপ্রানিত হবে আমার প্রজন্ম। আমিও থাকবো সেই প্রেরনার মিছিলে। ফিলিস্তিনিরে ছোট্ট ঐ শিশুদের মত আমরাও ভারতীয় বাহিনির এই আগ্রাসন সামান্য পাথর দিয়ে হলেও মোকাবেলা করবো।

আর ফেলানীর মত অসংখ্য নিষ্পাপ প্রানের রক্তের বিনিময়ে গড়ে উঠবে ৭১ এর চেতনাধারী আরেকটি নতুন প্রজন্মের। যারা আমাদের রাজনীতিবীদদের মত হবেনা কাপুরুষ, করবেনা মাথানত কোন অন্যায় আর জুলুমের সামনে। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব আর স্বাধীনতা রক্ষার ব্যাপারে করবেনা কোন আপোষ হোকনা সে মহাশক্তিধর কোন শক্তি। লেখার শেষ করছি মহা শক্তিধর, পরাক্রমশালী মহান রাব্বুল আলামীনের মহাগ্রন্থ আল কোরআনের একটি আয়াত দিয়ে, (তোমরা) হতাশ হয়ো না! দু:খ করো না! তোমরাই জয়ী হবে যদি বিশ্বাসী হও! - আল ইমরান: 139 . এই জুলুম এবং নির্যাতন অবশ্যই শেষ হবে, এ বর্বরতার ঘটবে অবসান এবং আগামী প্রভাতের সূর্য উদিত হবেই হবে। আর সেদিন সেই সুর্যের প্রখরতায় ছাড়খাড় হয়ে যাবে সকল বর্বর আর আগ্রাসী শক্তির।

ঈনশাআল্লাহ। আমরা জানি না আমাদের প্রধাণমন্ত্রী কি এই খুদ্রো বিষয়ে লক্ষ করবেন কী? কারণ তার তো আর বংশের কেঊ না এই মেয়েটা। ...। ... Akber Rabby

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.