ধর্ম যার যার , বাংলাদেশ সবার
কলকাতা: সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর মতো যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির চেয়েও কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করেন বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী।
ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবের মহানায়ক মাস্টারদা সূর্য সেনের সতীর্থ আজীবন বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী নাগরিক সংবর্ধনা নেওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আমন্ত্রণে কলকাতায় এসেছিলেন। সোমবার তিনি ১০১তম বছরে পা দিয়েছেন।
এখানে বাংলানিউজের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট রক্তিম দাসের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন তার মনের কথা। উল্লেখ্য, বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী বিবি চৌধুরী নামেও সমধিক পরিচিত।
বাংলানিউজের পক্ষ থেকে ১০১তম জন্মদিনের অভিনন্দন জানাতেই বিপ্লবী নায়ক বলে ওঠেন, ‘আপনাদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে। ’
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতি নিয়ে জানাতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমি রাজনীতি করি না। আমাদের বাংলাদেশে অনেক পার্টি আছে। তাদের কারও সঙ্গে আমি নেই। ’
রাজনীতি না করলেও চট্টগ্রামের সব রাজনৈতিক দল তো ভোট এলে প্রথমে আপনার কাছে আসে?
উত্তরে তিনি বলেন, ‘তারা আমাকে ভালোবাসে।
তারা মনে করে, মানুষ আমার কথা শোনে, সেই জন্যই তারা আসে। কিন্তু আমি সত্য কথা বলি, যাতে মানুষের কল্যাণ হবে তাই বলি। ’
- এতো বছর পরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, কীভাবে দেখছেন?
বিপ্লবী বিনোদ বিহারী বলেন, ‘বিচার হওয়া উচিত। এ বিচারের কথা আমি আরও ১০ বছর আগে বলেছি। ’
- আর সাকা চৌধুরী?
এ নাম উচ্চারণ করতেই বিবি চৌধুরী বলে ওঠেন, ‘বঙ্গবন্ধু দেশপ্রেমিক ছিলেন।
তিনি রাষ্ট্রের স্থপতি। কিন্তু তিনি ওদের ক্ষমা করে ঠিক করেননি। যারা সাকা চৌধুরী স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে, পাকিস্তানের দালালি করেছে, আর তাকে ছেড়ে দিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ওর মতো পাঁচ-সাতটা মানুষকে যদি মেরে ফেলা হতো তাহলে বাংলাদেশের অবস্থা এরকম হতো না। বিশ্বের কোনো দেশে হয়নি।
স্বাধীনতাবিরোধীরা যদি দেশে থাকে তাহলে তারা দেশকে খারাপ করে দেবেই। আর সাকার মতো যুদ্ধপরাধী আর যে কটা আছে তাদের ফাঁসির চেয়েও কঠিন শাস্তি দাবি করে জাতি। ’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার করে হাসিনা বুকের সাহস দেখিয়েছে। যারা একটা লোককে নয়, বঙ্গবন্ধুর স্ত্রীকে, সাত বছরের ছেলেকে, পুত্রবধূ, এমন কী বাসার কুকুরটাকে পর্যন্ত মেরেছে, এগুলোর কোনো বিচার দরকার নেই। এমনিই মেরে ফেলা উচিত ছিল।
’
‘চট্টগ্রামের বর্তমান মেয়র তো আপনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন’- প্রসঙ্গ তুলতেই বিবি চৌধুরী হেসে উঠে পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘আপনি শুনেছেন?’
তিনি কেমন চালাচ্ছেন?- জানতে চাওয়া হলে জবাবে বিবি চৌধুরী বলেন, ‘ভালো মানুষ। ’
‘আর আগের মেয়র মহিউদ্দিন সাহেব?’ এ প্রশ্নের উত্তরে বিবি চৌধুরী আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমার সঙ্গে সর্ম্পক ভালো নয়। ব্যক্তিগত বিষয় নয়, কোনো লোক কারো অনিষ্ট করলে সে ভালো হয় না। ’
- আপনি রাজনীতি ছেড়ে দিলেন, আবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন এই কারণে?
- না, আমি তো কোনো পার্টির হয়ে দাঁড়াইনি। আমি চেয়েছিলাম যাতে মহিউদ্দিন চৌধুরী ওই আসনে নির্বাচিত হতে না পারেন।
মহিউদ্দিন চৌধুরী সম্পর্কে বিবি চৌধুরী আরও বলেন, ‘এবার নির্বাচনের আগে মহিউদ্দিন চৌধুরী তার দলের লোকদের কাছ থেকে বিরোধিতা পেয়েছে। হাসিনাও তাই মনে করে। আমি বিএনপিকে ভোট দেবো কেন? ওরা তো এসবের বিরোধী। ’
- ১০১ বছরে এসে কী করতে পারলেন না বলে মনে হয়?
এর উত্তরে শতায়ু বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী বলেন, ‘মাস্টারদার নামে আমি দু’লাখ টাকা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়েছিলাম স্মৃতি বৃত্তি ও স্মারক বক্তৃতা চালু করার জন্য। তা আজও হল না।
বহুবার বললাম। সরকার যদি না করে আমি কী করবো। হাসিনা আমাকে যে স্বাধীনতা পুরস্কার দিয়েছে তার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমি তো টাকা নিজে নিইনি। ওই টাকা মাস্টারদার নামে দেশের কাজেই লাগতে চেয়েছিলাম, এখনও তা হলো না।
’
- বাংলাদেশে মাস্টারদা সূর্য সেন ও চট্টগ্রামের অভ্যুত্থানের স্মৃতি কতোটা রক্ষা করা হচ্ছে বলে মনে করেন?
এ প্রসঙ্গে বিবি চৌধুরী বলেন, ‘সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টারদার নামে একটি হল হয়েছে। তখন আমাকে ভাইসচ্যান্সেলর বলেছিলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে মাস্টারদার নামে স্মৃতি বৃত্তি চালু করে দেবো। আমি কী আওয়ামী লীগবিরোধী। দেশের স্বাধীনতা বিরোধীদের পক্ষে আমি কখনও থাকতে পারি?’
- মাস্টারদা সূর্য সেনকে নিয়ে মুম্বাইয়ে যে সিনেমাটা হয়েছে ‘খেলে হাম জী জান সে’ দেখেছেন?
উত্তরে বিপ্লবী বিনোদ বিহারী বলেন, ‘না, আমি দেখিনি। তবে ওই ছেলেটার কী নাম যেন? অভিষেক বচ্চন।
আমি ওর সাক্ষৎকার শুনে বাসায় বসে গালি দিয়েছি। সে বলছে সূর্যদা, সূর্যদা। মাস্টার দা না। কতো বড় সাহস! সে পড়েনি, জানেনি, আমরা কোনো দিন মাস্টারদাকে সূর্য দা বলতাম না। মাস্টারদাকে নিয়ে বই করে ব্যবসা করছে।
তাই আমি দেখতে চাই না। আর নয়, আপনারা সবাই ভালো থাকুন। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৩৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১১
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।