সভাপতি- বিক্রমপুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ, সম্পাদক ঢেউ, সভাপতি- জাতীয় সাহিত্য পরিষদ মুন্সীগঞ্জ শাখা
বিক্রমপুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদের ত্রৈমাসিক প্রকাশনা ঢেউ এর ২৩তম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে চলতি মাসে। এই উপলক্ষে গত ১০ আগস্ট শনিবার ঈদের পরদিন বেশ কয়েকজন লেখক আড্ডা দেন শ্রীনগরের হাসাড়া গ্রামে। হাসাড়া গ্রামটি বিখ্যাত হয়ে আছে পশ্চিম বঙ্গের সাবেক মূখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শংকর রায়ের পৈত্রিক বাড়ি হিসাবে। এই গ্রামেরই মেয়ে প্রখ্যাত লেখিকা ও গায়িকা প্রতিভা বসু (রানু সোম)। তিনি ত্রিশের অন্যতম প্রধান কবি বুদ্ধদেব বসুর স্ত্রী।
অধ্যাপক শাহজাহান মিয়াকে নিয়ে আমরা এই দুজনের বাড়িও দেখেছি। এই গ্রামেই থাকেন লেখক সুমন্ত রায়। আড্ডাটি তার বাড়িতেই হয়।
শুরুতেই ঢেউ এর প্রচ্ছদের ব্যাখ্যা চাইলে নির্বাহী সম্পাদক ও ডিজাইনার সান্দ্র মোহন্ত বলেন, উপরের বাম কর্ণারে রয়েছে সূর্যের অংশ। এটির উপর দিয়ে একপাশ থেকে অন্য পাশে চলে গেছে ১০টি ঢেউ।
দশ সংখ্যাটি দশম বর্ষ বুঝানো হয়েছে। এই ঢেউয়ের আঘাতে সূর্য থেকে বের হয়েছে চারটি কচিকলাপাতা রঙের পাতাকৃতির আলো। চারটি পাতা হল ৪টি বিষয়বস্তু- প্রবন্ধ, ছড়া-কবিতা, গল্প-উপন্যাস ও ইতিহাস-ঐতিহ্য। পাতার রঙটি শিশু-কিশোর ও তারুণ্যের প্রতীক। নীচের ৪৬টি গুচ্ছ দাগে ৪৬জন লেখককে বুঝানো হয়েছে যারা সম্মিলিতভাবে রয়েছে একটি তীর চিহ্নের মতো যা সংগঠনের লোগোর দিকে ধাববান।
সম্পাদক মুজিব রহমান জানান ১১ আগস্ট ড. হুমায়ূন আজাদের মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৩ সালের দৈনিক ইত্তেফাকের ঊদ সংখ্যায় ছাপা হয় তার পাকসার জমিন সাদবাদ উপন্যাসটি। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৪ বইমেলা থেকে ফেরার পথে তিনি চাপাতির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হন। ৭ আগস্ট জার্মানি যান এবং ১১ আগস্ট ওখানেই মৃত্যুবরন করেন। আমরা তার মৃত্যুতে শোকাহত হই; বাংলাদেশের পতাকা অর্ধনমিত না থাকলেও আমাদের হৃদয়ের পতাকা অর্ধনমিত থাকে এই দিন।
আমাদের সংগঠনটি গড়ে তোলা হয় তাঁকে আক্রান্ত করার প্রেক্ষাপটে। ফলে আমাদের চেতনা জুড়ে রয়েছেন ডক্টর আজাদ। আজ আমরা তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। এরপরে মুজিব রহমান ঢেউয়ের বিষয়বস্তুর প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন। প্রথম লেখাটি সরকার মাসুদের- কবিযশোপ্রার্থী নবীনদের উদ্দেশে।
এখানে কিশোর লেখকরা একটি নির্দেশনা পাবেন। এরপর বিক্রমপুরের ১৮জন কবির কবিতা ছাপা হয়েছে, এর মধ্যে যাকির সাইদ, মাসুদ অর্ণব, সুমন ইসলাম, গোলাম আশরাফ খান উজ্জ্বল, অনু ইসলাম, শ্বাশত স্বপন, সান্দ্র মোহন্ত, মুজিব রহমান, মুনমুন মোনায়েম, উজ্জ্বল দত্ত, শাহজাহান শিকদারসহ সবার কবিতাই ভাল লাগবে। ঢেউ-এ বিক্রমপুরের বাইরের কারো লেখা ছাপা হয় না। শ্রীনগরে বিতর্কিত লেখক সালাম আজাদকে নিয়ে তুলকালাম কা- ঘটে। এই বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তির অবসান ঘটানোর প্রয়োজনের জন্য লিখেছেন অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া।
কলকাতার কবিতা বিভাগে ছাপা হয়েছে স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর বংশধর রুনা চৌধুরী (রায়) এর কবিতা। একমাত্র গল্পটি লিখেছেন মুজিব রহমান। এরপরেই ষোল পাতায় ৫টি উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৫জন শিক্ষার্থীর লেখা ছাপা হয়েছে। এবার প্রায় ৩শতটি লেখা জমা পড়েছিল। এর থেকে বাছাই করতে গিয়ে আমতরা অভভূত হয়েছি।
এদের লেখার মান এই অঞ্চলের অনেক সিনিয়র কবিদের লেখাকেও হার মানাবে। একদা কয়েকজন লেখক শিশু কিশোরদের লেখা ছাপিয় পত্রিকা দুর্বল না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এবারের লেখা পড়ে তারাও মুগ্ধ হবেন। শ্রীনগরের জমিদারদের ইতিহাস অধিকাংশ মানুষই জানেন না। এই জন্য মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুরের ইতিহাস-ঐতিহ্য প্রকাশের অংশ হিসাবে ছাপা হয়েছে শ্রীনগরে লালা বংশের ইতিহাস।
লিখেছেন লালা বংশের শেষ জমিদার লালা রাজেন্দ্র কুমার বসু। তিনি তার পরিবারের ইতিবাচক দিকগুলোই তুলে ধরেছিলেন। সেজন্য তার লেখার শেষে মন্তব্য দেয়া হয়েছে। গত সংখ্যায় সুমন্ত রায়ের উপন্যাসের প্রথম পর্ব ছাপা হয়েছিল, এবার শেষ পর্ব ছাপা হয়েছে।
লেখক শ্বাশত স্বপন বলেন, একটি পত্রিকার ২৩তম সংখ্যা প্রকাশের সময় ভুলত্রুটির অজুহাত থাকা উচিত নয়।
এখানে সম্পাদকীয়তে হুমায়ূন আজাদের সবচেয়ে আলোচিত উপন্যাসের নাম পাকসার জমিন সাদবাদ না লিখে ভুল লেখা হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি ভুল বানান রয়েছে। তিনি সালাম আজাদ এবং লালা বংশ নিয়ে লেখার ভূয়শী প্রশংসা করেন। সালাম আজাদের চরিত্র এতে উন্মোচিত হয়েছে। তাকে আগে চিনতাম না।
তবে তার কার্যক্রমের তীব্র নিন্দা জানাই, তার বিচার হওয়া উচিত। অন্তত দুজন কবির কবিতা অত্যন্ত দুর্বল। দুজন কবির কবিতায় ব্যক্তিগত আক্রোশ ফুটে উঠেছে। তিনি সান্দ্র মোহন্তর কবিতার প্রশংসা করেন। তিনি টানা গদ্য কবিতার সমালোচনা করে বলেন, এতে মুক্তগদ্য ও কবিতার মধ্যেকার পার্থক্য নির্ণয় করা যাচ্ছে না।
সুমন্ত রায়ের উপন্যাসটি তার ভাল লেগেছে।
সুমন্ত রায় বলেন, ভুলত্রুটি কারোই কাম্য নয়। গত সংখ্যাটি নির্ভুল ছিল। কয়েকটি ভুল এই সংখ্যাটিকে দুর্বল করেছে। তবে প্রচ্ছদ ও অলংকরণ খুব ভাল হয়েছে।
তিনি সরকার মাসুদের লেখাটিকে অত্যন্ত মূল্যবান বলে মনে করেন। তিনি জানান শিক্ষার্থীরা অধীর আগ্রহে ঢেউ এর অপেক্ষায় রয়েছে। তবে অনেকের কবিতা ছাপা হয়নি। বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে, আরো বেশি তাদের লেখা ছাপাতে হবে। তারা চমৎকার সব কবিতা লিখেছেন।
আমরা আশাবাদি তারা লেখালেখিতে ভাল করবে। তিনি জানান টানা গদ্য কবিতা স্বাধীনতার আগে থেকেই লেখা শুরু হয়েছে। এটাকে পাঠকরা পরিত্যাগ করেনি, ঢেউ-এ প্রকাশ স্বাভাবিক।
শুভ্র সরকার শিক্ষার্থীদের লেখা প্রকাশকে একটি বড় পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বড়দের দুর্বল কবিতা প্রকাশ না করে শিক্ষার্থীদের লেখা বেশি প্রকাশের পক্ষে অভিমত দেন।
তিনি শিক্ষার্থীদের কয়েকটি কবিতা আবৃত্তি করেন। এরপর মুজিব রহমান, সুমন্ত রায়, সান্দ্র মোহন্তও শিক্ষার্থীদের কবিতার আবৃত্তিত করেন। প্রকাশিত স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন মুজিব রহমান, সান্দ্র মোহন্ত ও শ্বাশত স্বপন। শ্বাশত স্বপন নিজের লেখা বর্ষা বিষয়ক মুক্তগদ্যও পাঠ করেন।
সারাদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানে মুন্সীগঞ্জের লেখকদের সাহিত্য, জাতীয় সাহিত্য, হুমায়ূন আজাদ, হুমায়ূন আহমেদ, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, সৈয়দ শামসুল হকসহ বিভিন্ন বিষয় ও লেখকদের নিয়ে আলোচনা হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।