তোমাকে ছাড়া বাচতে পারবো না.....
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের মহান সৈনিক, চট্টগ্রাম বিদ্রোহের নায়ক ও উপমহাদেশের এক সাহসী বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেন। মহান দেশপ্রেমিক এই বিপ্লবী ছিলেন অসাধারণ অসম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ। তাঁর নেতৃত্বে চট্টগ্রামের বিপ্লবীরাই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে শাসকগোষ্ঠীর ভিত কাঁপিয়েছেন। তাঁদের সাহসী ভূমিকা ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামকে প্রবল শাণিত করেছে। মানুষের মধ্যে জাগ্রত করেছে সংগ্রামী চেতনা।
মাস্টারদা সূর্যসেন ১৮৯৩ সালের ১৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা রাজমনি সেন এবং মাতা শশীবালা সেন। জন্মের ৬ বছরের মাথায় মা-বাবাকে হারান তিনি। পিতা-মাতা হারানো মাস্টারদাকে লালন পালন করেন কাকা। মাস্টারদা গ্রামের দয়াময়ী উচ্চ প্রাইমারী বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন।
এরপর তিনি নোয়াপাড়া উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। এরপর তিনি নোয়াপাড়া উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। সেখান থেকে তিনি চট্টগ্রাম শহরের ন্যাশনাল হাই স্কুলে ভর্তি হন। ১৯১২ সালে তিনি এ স্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করেন। মেট্রিক পাশ করার পর মাস্টারদা চট্টগ্রাম কলেজে আই-এ-তে ভর্তি হন।
১৯১৪ সালে তিনি এ কলেজ থেকে আই.এ. পাশ করেন। মাস্টারদা বি.এ পড়ার উদ্দেশ্যে ভর্তি হন পশ্চিম বাংলার বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে। গণিত শাস্ত্রে মাস্টারদার অসাধারণ পান্ডিত্য ছিল। ১৯১৮ সালে মাস্টারদা কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন।
বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে অধ্যায়নকালে তাঁর শিক্ষক অধ্যাপক সতীশ চক্রবর্তীর মাধ্যমে মাস্টারদা গোপন বিপ্লবী সংগঠনের সাথে পরিচিত হন।
এতে তিনি ভারত মুক্তির জন্য বিপ্লবী সংগ্রামে যোগদানের প্রেরণা লাভ করেন। কোলকাতায় শিক্ষাজীবন শেষ করে চট্টগ্রাম চলে আসেন মাস্টারদা সূর্যসেন। এখানে তিনি শুরু করেন শিক্ষকতা। প্রথমে শিক্ষকতা করেন আশ্চার্য্য হরিশ দত্তের জাতীয় স্কুলে। অসহযোগ আন্দোলনের সময় এ স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে তিনি দেওয়ানবাজার এলাকার উমাতারা স্কুলে গণিত শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
সাধারণভাবে তিনি এ সময়ে ‘মাস্টারদা’ নামে সর্বমহলে পরিচিতি লাভ করেন।
শিক্ষকতার পাশাপাশি মাস্টারদা সূর্যসেন চট্টগ্রামের বিপ্লবীকর্মী অনুরূপ সেন, চারু বিকাশ দত্ত, অম্বিকা চক্রবর্তী, নগেন্দ্র নাথ সেন প্রমুখের সঙ্গে গোপন বিপ্লবী দল গঠনের কাজ শুরু করেন। তাঁর অসাধারণ সাহস, মেধা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞাবলে স্বল্প সময়ের মধ্যে দলের নেতা হিসেবে তিনি স্বীকৃত হন। ১৯২১ সালে মহাত্মাগান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সূর্যসেন যুবকদের বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেন। ১৯২৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর দুপুর বেলা তাঁর নির্দেশে বিপ্লবী অনন্ত সিংহ, দেবেন দে এবং নির্মল সেন চট্টগ্রাম শহরের পাহাড়তলীতে অবস্থিত আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানির কারখানার কর্মচারীদের বেতন ভাতার ১৭ হাজার টাকা লুট করেন।
এ ঘটনার কিছুদিন পর পুলিশ গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সূর্যসেনের আস্তানায় হানা দেয়। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে শুরু হয় খন্ড যুদ্ধ। ইতিহাসে এ যুদ্ধ নগরখানা পাহাড় খন্ড যুদ্ধ নামে পরিচিত।
১৯২৬ সালের ৮ অক্টোবর মাস্টারদা কোলকাতার আর্মহাস্ট এর বাড়ি হতে গ্রেপ্তার হন। দীর্ঘ কারাবরণের পর ১৯২৮ সালের শেষ দিকে তিনি মুক্তি লাভ করেন।
এরপর দুর্বার আন্দোলন গড়ে ওঠে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন। শুরু হয় বিদ্রোহের প্রস্তুতি। বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের জন্য প্রয়োজনীয় ফান্ড সংগ্রহের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এ যুদ্ধ জালালাবাদ যুদ্ধ নামে খ্যাত। এ যুদ্ধে জালালাবাদ পাহাড় ইংরেজরা দখল করে নেয়।
যুদ্ধে অনেক বিপ্লবী শহীদ হন। ১৯৩৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পটিয়ার গৈড়লা গ্রামের শ্রীমতি ক্ষিরোদ প্রভা বিশ্বাসের বাড়িতে আত্মগোপন করেন মাস্টারদা। এ বাড়িতে গোপন বৈঠক চলাকালে তাঁর নিকট আত্মীয়ের বিশ্বাসঘাতকতায় পুলিশের হাতে ধরা পড়েন মাস্টারদা। গ্রেপ্তারের পর শুরু হয় বিচার পর্ব। বিচারের সময় তাঁর বিরুদ্ধে ইংরেজ সরকার কোন প্রত্যক্ষ স্বাক্ষ্য-প্রমাণ করতে পারেনি।
তারপরও প্রহসনের বিচারে ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি রাতে চট্টগ্রাম জেলে ফাঁসির কাস্টে ঝুলিয়ে হত্যা করে মাস্টারদা সূর্যসেন এবং বিপ্লবী তারেকশ্বর দস্তিদারকে।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের পুরোধাব্যক্তিত্ব মাস্টারদা সূর্যসেন এ দেশের মানুষের মধ্যে বুনে দিয়েছেন স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনা। তাঁর দুর্বার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বাঙালি জাতি দীর্ঘ সময় পাড়ি দিয়ে ১৯৭১ সালে লাভ করেছে মহান স্বাধীনতা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।