আগামীর স্বপ্নে বিভোর...
স্বপ্ন ভেঙ্গে নিশুত রাতে জাগবে হঠাৎ চমকে
কাহার যেন চেনা ছোঁওয়ায় উঠবে ও বুক ছমকে
জাগবে হঠাৎ চমকে !
ভাববে বুঝি আমিই এসে
ব'সনু বুকের কোলটি ঘেঁষে
ধরতে গিয়ে দেখবে যখন
শূণ্য শয্যা ! মিথ্যা স্বপন
বেদনাতে চোখ মুছবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে।
যারা পাগল তারা অন্যসব সাধারণ মানুষের কাছে উপহাস্য হলেও সেই উপহাসের অন্তরালে কিছুটা হলে করুণা বা মমতা লুকিয়ে থাকে। পাগলটা যখন তার স্বভাবসুলভ আচরণ শেষে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিদেয় হয় তখন ক্ষণিকের জন্য হলেও পাগলের কৃতকর্ম উপভোগ করা আশ পাশের সাধারণ মানুষের মন মমতায় আদ্র হয়ে উঠে, একটা দীর্ঘশ্বাসের পর কেউ কেউ হয়তো চোখের দুটো পাতাকে এক করে বলে উঠেন হায়রে পাগল !! কিন্তু যখন সাধারণ কেউ পাগলের ভূমিকায় অভিনয় করতে নামে তখন সে সাধারণ মানুষের উপহাস যেমন পায়না তেমনি পায়না কোন করুণা। তার জন্য স্বয়ংক্রিয় ভাবে বরাদ্দ থাকে লাঞ্ছনা, ঘৃণা আর অপমান। এমনি করে অসহনীয় লাঞ্ছনা, অগাধ ঘৃণা আর সীমাহীন অপমান নিয়ে যখন হাইওয়ে ধরে হাঁটছিলাম, ভাবছিলাম দ্রুতযানের অবাধ্য চাকা আমাকে আপন করে নেবে।
কিন্তু যার জন্য লাঞ্ছনা বরাদ্দ করা তাকে কি কেউ অত সহজে আপন করে নিতে জানে ? তাকে শুধুই স্বপ্ন দেখায়, স্বপ্ন দেখায় আর স্বপ্ন দেখায় কিন্তু আপন করে নিতে জানেনা কেউ, আর জানেনা বলেই নিজেকে হাইওয়ে থেকে উঠিয়ে আন্তজেলা বাসবন্দি করে দিলাম। যা বাবা, এবার কিছু একটা হবে নিশ্চয়! নাহ! ঘৃণিত ব্যক্তিদের কিছুই হয়না তাইতো আমি বাসে উঠলেই আমার গাড়ীর চাকা আর ঘুরেনা কোন দূর্ঘটনায় পতিত হওয়ার লক্ষ্যে, আমার গাড়ী ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যামে আটকে থাকে। জ্যামের কবল থেকে মুক্তি পেয়ে গাড়ি যখন চলতে থাকে তখন প্রচন্ড ঠান্ডায় হিম হয়ে যাওয়া বাসের ড্রাইভারের হাতও ষ্টিয়ারিং হুইল থেকে সরে যায়না একটি বারের জন্য। কুশায়ার চাদরে মুড়ানো চারপাশ আমার চোখকে বার বার ফাঁকি দিলেও ড্রাইভারের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিকে কোন গোলক ধাঁধাঁয় ফেলতে পারেনা। শত শত গাড়ী কুয়াশার ইন্দ্রজালে জড়িয়ে রাস্তা থেকে ছিটকে পড়লেও আমার গাড়িটা আমাকে আমার অপমানের গন্তব্যে ঠিকই পৌছে দিয়েছে।
মাঝ রাত্রিতে যখন গাড়ী থেকে নেমে জন মানব শূণ্য শহুরে রাস্তায় উদ্দেশ্যহীন ভাবে হাঁটতে শুরু করি তখন কুকুরগুলোও আমাকে দেখে ঘেঁউ ঘেঁউ করে উঠে অপমান করতে। অথচ আমি আমার এই দুটো চোখ দিয়ে কতবার দেখেছি মাঝ রাতে সড়ক বাতির হলদে আলোর বিছানায় শহরে নেড়ী কুকুর আর পাগলের একত্রে বসবাস, যেন দুই সহোদর একান্তে কাটিয়ে দিচ্ছে জীবনের কিছু আনন্দঘন মুহুর্ত। জীবনের সব স্বপ্নগুলো পিছনে ফেলে আমি কাংখিত অপমান নিয়ে অবিরাম হেঁটে চলেছি অথচ আমারতো এমন হবার কথা ছিলো না। আমার চোখে, আমার বুকে তুমিই ত স্বপ্ন ঢেলে দিয়েছিলে মন খুলে, আমি ত স্বপ্ন দেখতে চাইনি। আমিই ত সরে আসতে চেয়েছিলাম অথচ তুমিই আমাকে সেদিন আঁকড়ে ধরে রেখেছিলে তোমার সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে।
তুমি যেমন জানতে তেমনি করে আমি আরোও ভালো করেই জানতাম আমরা দুজন দুই মেরুর বাসিন্দা। আমার সমস্ত অক্ষমতা আমি তোমাকে বুঝানোর অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু তুমি একটুও বুঝতে চেষ্টা না করে আমাকে তোমার গভীর ভালোবাসার ফেলে দিয়েছিলে। আহ! আমাকে সত্যিই তুমি ফেলে দিলে, টেনে নিলে না। নিজেকে কত ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করি, আমি সেই সব মানুষের একজন যাদেরকে শুধু দূরে সরিয়ে দেয়া যায় কিন্তু কাছে টেনে নেয়া যায়না কিন্তু আমার এই অবুঝ মন কখনোই তা বুঝতে চায়না। তোমার উষ্ণ আদর পাবার জন্যই আমি তোমার কাছে ছুটে যাই তুমিও তোমার সর্বাঙ্গে আমার উজাড় করা ভালোবাসা মুদ্রিত করে তার সবটুকু আদরের অদৃশ্য দলিল আমাকে বুঝিয়ে দিয়ে আমাকে ফেরত পাঠালে, একবারও কি ভাবলে না আমি কোথায় কার কাছে ফিরে যাবো ? কে আছে আমার ঠিক তোমার মতো, যে আমাকে সারাটা দিন পরম ভালোবাসায় জড়িয়ে রাখবে ? কার বুকে আমার মাথা আশ্রয় নেবে ? কে আমাকে তোমার মত করে মুখে তুলে খাইয়ে দেবে ? যে ভালোবাসার স্বাদ তুমি আমাকে দিয়েছো সে ভালোবাসা আমি অন্য কারো কাছ থেকে কি কোন দিন পাবো ? তবে কি তোমাকে নিয়ে কখনোই আর নীলগিরিতে যাওয়া হবেনা আমার ? নীলগিরির স্বপ্নটাও ভাসিয়ে দেবো যেমন করে চোখের জলকে ভাসিয়ে দিই ? তোমাকে নিয়ে নৌকায় চড়া হবেনা ? তোমার কোলে মাথা রেখে তোমাকে গান শোনানো হবেনা ? এরকম হাজারো প্রশ্নে আমার হৃদয় ছিন্ন ভিন্ন, বাজারের হাজার রকমের নোট বই গাইড বই পাওয়া যায় অথচ আমার এই প্রশ্ন গুলির কোন সঠিক উত্তর দেবে এমন কোন নোট বা গাইড বই খুঁজে পাইনা।
তোমার কপালে টিপ পরিয়ে দেবো বলে তোমার পরিহিত টিপ খুলতে গিয়েও খুলতে পারছিলাম না, হাত বার বার কেঁপে উঠিছিলো। অনেক চেষ্টায় পুরোনো টিপটা খুলে যখন নতুন একটা পরিয়ে দিলাম মস্তিস্কে ধারন করা সমস্ত জ্যামিতিক হিসেব নিকেশ কষে, কিন্তু আমার অদক্ষ হাত প্রমাণ করে দিলো আমার জ্যামিতিক বিদ্যার দৌড়, পারিনি সঠিক স্থানে টিপটা বসাতে। ঠিক তখনি তুমি উঠে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে টিপটাকে যথা স্থানে বসাতে গিয়ে যখন বার বার চশমার সাহায্য নিচ্ছিলে তখন কি আমার ছলছল করা চোখের দিকে একবারও তাকিয়ে ছিলে ? তখন খুব ইচ্ছে করছিলো নিজের চোখ দুটো তোমাকে দিয়ে দিই, আমি খেয়াল করে দেখেছি আমার চোখ দুটো তোমার চোখের কোটরে বেশ মানাবে। আমার এতো দূরদৃষ্টির দরকার নেই, আমার চোখ শুধু তোমাকে দেখলেই চলবে। তোমাকে নিয়ে পরিণতিহীন ভাবনার কোন শেষ হয়না, তোমাকে নিয়েই ভাবতে ভালো লাগে তাই ভেবে যাই নিত্যদিন প্রতিদিন।
আমি ভালো করেই জানি আমার এ ভাবনার সুর নিষ্ঠুর বাস্তবতার হুংকারে হারিয়ে যায় খোলা আকাশের নীচে খুলে রাখা তরল দাহ্য পদার্থের মতো। খাবার প্লেট সামনে রেখেও আমি তোমাকে ভাবি। তোমাকে ভাবতে ভাবতেই গলাতে মাছের কাঁটা বিঁধে। একটা সময় কাঁটাটাও গলা দিয়ে নেমে যায়। কারণ কাঁটাটাও ততক্ষণে বুঝে ফেলে আমার এই কন্ঠটাকে নষ্ট করা যাবে না।
আমার এই কন্ঠটা নষ্ট হলে তুমি আর আমার কন্ঠ হয়তো শুনতে চাইবেনা, কন্ঠ শুনতে না চাইলে আমাকে আর স্বপ্ন দেখানো যাবেনা। আর আমাকে স্বপ্ন দেখানো না গেলে আমার স্বপ্ন ভাঙ্গা যাবেনা আর আমার স্বপ্ন না ভাংলে আমাকে লাঞ্ছনা, ঘৃণা ও অপমানেরা আপন করে নেবে না। এরকম অসংখ্য ভাবনা মাথার মধ্যে নিয়ে নির্জন রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে আমার কানে যখন পৌছে মসজিদ হতে মুয়াজ্জিনের সুমিষ্ট কন্ঠের আজান ধ্বনি আর তখন ধর্ম প্রাণ মানুষেরা কুৎসিত ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে মসজিদে মাথা ঠুকাবার জন্য ঘর থেকে বের হয় কিংবা মন্দিরের ঘন্টা ধ্বনি যখন বেজে উঠে ভগবানের আরাধনায় আমি তখন উপহাসের হাসি দিই বিধাতা তোমার জন্য, সাধারণ মানুষেরা যতই আমাকে নিয়ে উপহাস করুক আমি উপহাস করি তোমাকে নিয়ে। আমার এই উপহাস তোমার অক্ষমতার জন্য। তুমি শুধুই সৃষ্টি করতে জানো, স্বপ্ন পূরন করতে জানোনা।
হে ঈশ্বর তুমি স্বপ্ন পূরনে অক্ষম !! আমিও উপহাস করতে জানি, আমার এই উপহাস তোমার অক্ষমতার জন্য। অক্ষম ঈশ্বরের প্রতি মাথা ঠুকাতে ইচ্ছে করেনা বলেই এই পবিত্র শুক্রবার দিনেও আমি জুম্মা ছেড়ে টানা ঘুমে নিমজ্জিত হই। হে ঈশ্বর আমি ভালো করেই জেনে গেছি তুমি স্বপ্ন পূরনে অক্ষম তবুও বিশ্বাস করি তুমি আছো। তোমার কিছুটা ক্ষমতা আছে, এবার তোমার ক্ষমতার একটু দাপট দেখাও আমার ঘুমকে দীর্ঘায়িত করে। আমি আর কোন স্বপ্ন চাইনা আমি এবার একটা দীর্ঘ ঘুম চাই যে ঘুম আমাকে চিরদিনের জন্য ভুলিয়ে দিবে যে আমার একটা মানুষ ছিলো যে আমাকে সীমাহীন ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রেখেছিলো।
আমার কিছু কথাঃ যারা আমার এই নোটের আগের পর্ব পড়েননি তাদের কাছে হয়তো এই নোটের বিষয় বস্তু স্বাভাবিক ভাবেই রহস্যময় মনে হতে পারে তাই তাদেরকে অনুরোধ করছি এই নোটের প্রথম পর্ব কন্ঠই যার কলংকের ঢোল পড়ার জন্য। এবার আসি মূল প্রসঙ্গে আসি। আমরা সাধারণত জানি সুখ এবং দুঃখ সমন্তরাল লাইনে চলতে জানেনা। কেউ একজন সামনে অথবা পেছনে পড়ে থাকে। কিন্তু এই প্রেমিকের বেলায় তা প্রযোজ্য বলে মনে হচ্ছেনা।
এটা মতিভ্রম নাকি অন্য কিছু তা আমার কাছে মোটেও স্পষ্ট নয়। শুধু এইটাই নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি সেই প্রেমিক ছিলো পূর্ণ ভালোবাসায় অন্ধ। আর শুদ্ধ ভালোবাসা একটা শক্তি। এই শক্তি দিয়ে যে কোন অসাধ্য সাধন করা যায় বলে আমার বিশ্বাস, শুধু স্থান কাল পাত্র ভেদে ভালাবাসার রূপ পরিবর্তিত করতে হয়। প্রেমিকার অবহেলায় বা অক্ষমতায় প্রেমিক আজ দিশেহারা।
তার পৃথিবী আজ সংকুচিত, সংকুচিত পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোন মানে হয়না। বেঁচে থাকতে হলে বাঁচার মত বেঁচে থাকতে চাই। ষোল কোটি বা তারচে বেশী জনসংখ্যার পদাভারে নিমজ্জিত আমাদের এই সোনার বাংলাদেশ। কে জানে হয়তো এই ষোল কোটি বাঙ্গালীর কেউ একজন এই প্রেমিক। আমি আদৌ জানিনা এই প্রেমিক কোন উর্ধ্ব নিম্ন বা মধ্যম সারির কোন কর্তা ব্যাক্তি কি না।
নাকি আমার মতো অতি সাধারণ কেউ, যার কাছে কেউ কোন কিছু আশা করতে পারে না বা ভরসা করতে পারেনা। ব্যক্তিটি যেই হোক না কেন আমার খুব ইচ্ছে করছে ঐ প্রেমিকের আসনে নিজেকে বসিয়ে তাঁর হয়ে দুটো কথা বলতে। আমাদের এই ষোল কোটি বাংগালীর বত্রিশ কোটি হাত। এই বত্রিশ কোটি হাত যদি এক সাথে সচল হয় তবে আমাদের এই দেশ বিশ্বের দরবারে অতি উন্নত দশটি দেশের যে একটি দেশ হবে তা নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই। এই বত্রিশ কোটি হাতের মধ্যে আমার দুটি হাত যদি নিশ্চল হয়ে পড়ে কিংবা পুরোটা শরীরই যদি মাটি শোষন করে ফেলে তাহলেও এই দেশ তথা কারো কোন ক্ষতি হবে বলে মনে হয়না।
মাথার ভেতর এতো যন্ত্রণা নিয়ে তিলে তিলে দিনকে পার করে দেয়ার কোন প্রয়োজন দেখিনা। বিবেক এবার তুমি জেগে উঠো আর লুকোচুরি নয়, হয় স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে থাকো নয়তো মরে যায় চিরতরে।
সুমন আহমদ
সিলেট।
৭ই জানুয়ারী, ২০১১ ইংরেজী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।