অভ্র, যুগান্তকারী বাংলা লেখার সফটওয়ার। জটিল কিবোর্ড লেআউট মুখস্থ করতে না পেরে যারা বাংলা লেখাকে ভুলতে বসেছিলেন, বিদেশী ভাষায় চালিয়ে যাচ্ছিলেন বাংলা লেখা, তাদের জন্য, আমাদের সবার জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে ফ্রি সফটওয়ার অভ্র। অভ্রর সহজবোধ্য লেখার উপায় ও ইউনিকোড ভিত্তিক ফন্টের কারণেই আজকের ব্লগিং জগতে বাংলার এই সদর্প পদচারণা। এই গ্রুপটিতে আমরা অভ্র নিয়ে কথা বলবো, অভ্রর এই সঙ্কট মুহূর্তে প্রিয় সামহয়ারইন ব্লগের ব্লগারদের কণ্ঠে ধ্বনিত হবে - "ভাষা হোক উন্মুক্ত"।
আমাদের চলাফেরার জন্য অত্যাš— প্রয়োজনীয় ও গুর“ত্বপূর্ণ বস্তুটি হলো জুতা বা পাদুকা।
আমাদের পূর্বপুর“ষেরা ভারতবর্ষে কিভাবে এবং কবে থেকে জুতোর ব্যবহার শুর“ করেন তা নিয়ে পৌরাণিক মতে, কিংবদতিতে, লোককথায়, ইতিহাসে আর সাহিত্যে রয়েছে নানা কথা নানা মত, পন্ডিতদের যুক্তি আর পাল্টা যুক্তি। এ জন্য জুতোর আবিষ্কারের রহস্য উদ্ধার করতে গিয়ে জুতা হাতে আটকা পড়তে হয় রহস্যের গোলক ধাঁধায়!
পৌরাণিক মতে, বৈদিক দেবতা সূর্যমুর্তির পদযুগলে ব্যবহৃত পাদুকা ¯^র্গলোক থেকে এসেছে। সুপ্রাচীন কাল থেকে ভারতবর্ষে যে পাদুকা ঐতিহ্য গড়ে উঠেছিলো তার প্রমাণ প্রাচীন সূর্য দেবতার মূর্তি কিংবা কার্তিকের মূর্তির পায়ে পাদুকা পরিধান রীতি। ‘তৈত্তিরীয় সংহিতা’য় ‘কাঞ্চী উপানহা উপমুঞ্চতি’ তে জুতো সম্পৃক্ত সর্বপ্রাচীন তথ্য পাওয়া যায়। পৌরনিক নানা গ্রন্থ রয়েছে জুতোর প্রসঙ্গ।
মহাভারতের অনুশাসন পর্বে জুতো নিয়ে আছে এক চমকপ্রদ কাহিনী। তা হলো, এক রৌদ্রময় দুপুরে জমদগ্নি উপর দিকে তীর নি¶েপ করছিলেন আর তাঁর স্ত্রী রেণুকার তা মাটিতে পড়ার পরে তা নিয়ে আসছিলেন। কিন্তু প্রখর রৌদ্রের কারণে মটি প্রচন্ড গরম থাকায় খালি পায়ে রেনুকার প¶ে পতিদেবের নি¶েপিত তীর নিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছিলো না। অর্ধাঙ্গীনির এ দূরাবস্থা দেখে জমদগ্নি ¶োভে অগ্নিমুর্তি হয়ে সূর্যকে শা¯ি— দেবার জন্য ধনুকে তীর সংযোগ করতে উদ্যত হন। নিশ্চিত বিপদের অতঙ্কিত হয়ে সূর্যদেবতা জমদগ্নির শরণাগত হয়ে তাপ নিবারণের জন্য ছাতা ও জুতো প্রদান করেন।
প্রাচীন কালে রচিত গ্রন্থ হতে পাওয়া যায় যে সেকালে ‘গুর“পাদুকা’ এবং ‘পাদুকা প্রতিমা’ নামের ২ ধারণের জুতো ছিলো। ‘গুর“পাদুকা’র তৈরীর উপকরণ দেখে সহজেই অনুমান করা যায় এটি ছিলো অভিজাত উচ্চশ্রেণীর জন্য কারণ এগুলো তৈরী হতো মূল্যবান চন্দন কিংবা দেবদার“ কাঠ দিয়ে এবং তাতে থাকতো মণি, রতœ, রূপার ধাতব পাত। ‘পাদুকা প্রতিমা’ ছিলো চটি জুতো ও খড়মের মত।
কিছু কিছু শাস্ত্রীয় গ্রন্থে একালের বুটজুতার মতো দেখতে হাঁটু পর্যš— বি¯—ৃত ‘আজুনুপত্রচরণ’ নামে আরেক শ্রেতীর জুতোর উলেখ্য আছে। এর উপকরণ ছিলো চামড়া ও মুঞ্জ নামক একরকম তৃণ ( কেউ কেউ অনুমান করেন, ‘মুঞ্জ’ থেকে ‘মোজা’ শব্দটি এসেছে)।
আধুনিক পন্ডিতদের মতে ‘মুঞ্জ’ মোটেও মোজা নয়. এটিও এক ধরণের জুতোই ছিলো।
সেকালের এক সময় নারকেলের ছোবরা দিয়ে তৈরী পাদুকার প্রচরন শুর“ হয়। খ্রিষ্টপূর্ব ১ম শতক কিংবা খ্রিষ্টীয় ৪র্থ শতকের সর্বাধিক খ্যাতিসম্পন্ন সংস্কৃত কবি ও নাট্যাকার কালিদাসের ‘কাদ¤^রী’র বর্ণনা মতে, সন্ন্যাসীদের বিশেষ প্রিয় ছিলো নারকেলের ছোবরা দিয়ে তৈরী পাদুকা।
প্রাচীন ধ্র“পদী সাহিত্যে ভাষ্য মতে, দেবতারা নয় মানুষেরাই জুতো উদ্ভবন করে ব্যহার শুর“ করে। ‘গোভিল গৃহ্যসূত্র’ (৩য় প্রপাঠক)-এ এমন ঊলেখ আছে যে, খালি পায়ে চলাফেরায় বিভিন্ন রকমের সমস্যা সমাধানের জন্য জুতো বা পাদুকার উদ্ভাব হলেও তা ব্যবহারের ¶েত্রে কিছু কিছু বাধ্যবাধকতা ছিলো।
পন্ডিতগণের কোন কোন অংশের ধারণা, পাদুকা বা জুতোর ব্যবহার এ অঞ্চলে শুর“ হয় গ্রীক দিকবিজয়ী বীর আলেকজান্ডারের মাধ্যমে। গ্রীকদের আগমনের পূর্বে এ অঞ্চলের অধিবাসিরা বুটজুতোর মতো আটসাট জুতো ব্যবহার তো দূরের কথা, এমন কি দেখেনি। গ্রীকদের দেখে এ অঞ্চলের অধিবাসিরা বুটজুতো অনুকরণ করে তা ব্যবহার শুর“ করে। যার প্রভাবে খ্রিস্ট ৪র্থ শতক থেকে সূর্য এবং কার্তিকের মুর্তির পদযুগলে দেখা যেতে থাকে বুটজুতো। এই ধারণার বিপ¶ে যুক্তি আছে তা হলো, সূর্য দেবতার মূর্তি কিংবা কার্তিকের মূর্তির পদযুগলে বুটজুতো পরিধান রীতি সুপ্রচীন।
তা কালে-কালে এই ভারতীয় উপমহাদেশে যে পাদুকা ঐতিহ্য গড়ে উঠেছিলো তারই একটি নমুনা। যা গ্রীক কিংবা অন্য কোন সভ্যতা থেকে ধার করা নয়। এ বিষয়ে পর্যটক এরিয়ান-এর ভ্রমণকাহিনীতে চমৎপ্রদ তথ্য পাওয়া যায়। তিনি লিখেছেনÑ‘যুদ্ধ শেষে গ্রীকসৈন্যরাই ভারতবর্ষের জুতোর নমুনা সংগ্রহ করে নিজ দেশে নিয়ে গিয়েছিলেন। ’
এই সব বিতর্ক কিংবা রহস্যময়তা জন্যই বোধায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘জুতা আবিষ্কার’ নামে কবিতায় লিখে ফেলেন।
যেখানে রাজা হবুচন্দ্রের কৌতুকময় কর্মকান্ডের মাধ্যমে দেবতা নয়, ভীন্ন কোন সভ্যতা থেকে ধার করে নয় জুতো আবিষ্কার করে সাধারণ এক প্রজা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।