আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফ্লাড লাইটের ঝলমলে আলোয় 'কৃষকের বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১১' চ্যানেল আইয়ের প্রতীকি ক্রিকেটে বাংলাদেশ বনাম অষ্ট্রেলিয়া খেলায় বাংলাদেশ জয়ী...



বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া নামের দুই দলে ভাগ করা ১৮ জন খেলোয়াড়েরই বয়স ষাটের কোটায়। সবার পরণেই লুঙ্গি। কারো গায়ে পাঞ্জাবি, কারো গায়ে গেঞ্জি, সোয়েটার। সাদা লম্বা দাড়ি ও টুপি মাথায় খেলোয়াড়ও রয়েছেন বেশ কয়েকজন। বিরতিতে খেলোয়াড়দের পানীয় হিসেবে দেওয়া হয় ডাবের পানি ও ঘোল।

যিনি ম্যান অব দি ম্যাচ হয়েছেন তাকে পুরস্কার হিসাবে দেওয়া হয় ছাগল। স্টেডিয়াম বলতে আমন ধান কাটার পর রোলার দিয়ে সমান করা কৃষিজমি। আর এ জমিতেই ফ্লাড লাইটের ঝলমলে আলোয় 'কৃষকের বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১১' দেখতে জড়ো হয়েছিলেন শিশু ও নারীসহ কয়েক হাজার মানুষ। তারা এসেছিলেন আশপাশের গ্রামগুলো থেকে। রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় ব্যতিক্রমী এ খেলা অনুষ্ঠিত হয় ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জের চর পুলিয়ামারি গ্রামে।

খেলার আয়োজন করে দেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আই। 'হৃদয়ে মাটি ও মানুষ' অনুষ্ঠানের জন্য ধারণ করা এ খেলাটি বিশ্বকাপ ক্রিকেট শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ আগে ১১ ফেব্র"য়ারি স¤প্রচার করা হবে। ১৭ ফেব্র"য়ারি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধন হবে। ১৯ ফেব্র"য়ারি অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। চর পুলিয়ামারি গ্রামের মাঠে খেলা শুরু হওয়ার আগে চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ সাংবাদিকদের বলেন, "এটি একটি প্রতীকি খেলা।

বাংলাদেশ এবার বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আয়োজক দেশের একটি। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আনন্দের সঙ্গে কৃষকদের সম্পৃক্ত করা এবং তাদের উচ্ছ্বাসকে তুলে ধরার জন্য এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। " কৃষকের বিশ্বকাপ ক্রিকেট উপলক্ষ্যে রোববার বিকেল থেকেই উৎসবে মেতে ওঠে চর পুলিয়ামারি গ্রাম। আশপাশের গ্রামগুলো থেকে দর্শক আসতে শুরু করে। সন্ধ্যা নামার আগেই শীতের কুয়াশা ঢাকা মাঠের চারদিক কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে।

দর্শকরাও ছিলেন নানা সাজে সজ্জিত। হাতে ৪ ও ৬ লেখা প্ল্যাকার্ড। হাতে প্লাস্টিকের বাশি। দর্শকদের উচ্ছ্বাস বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য মাঠে ছিলো ব্যান্ডপার্টির দল। বাহারি রংয়ের 'ব্যাঙ্গাত্মক বিজ্ঞাপন' দিয়ে সাজানো হয় মাঠ।

দর্শকরা যাতে মূল মাঠে ঢুকে না পড়তে পারে সেজন্য চারদিক ঘেরা হয় বাঁশ দিয়ে। প্রজেক্টরের মাধ্যমে বড় পর্দায় মাঠে দর্শকদের সরাসরি খেলা দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। খেলার ভিডিও ধারণের জন্য মাঠের চারদিকে বসানো হয় চ্যানেল আইয়ের দশটি ক্যামেরা। বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে ছবি তোলার জন্য বসানো হয় ক্রেন। শুধু খেলা নয়, খেলা ধারণ করার কলাকৌশল দেখেও মুগ্ধ হয়েছেন গ্রামের মানুষ।

পাশের লক্ষ্মীপাড়া থেকে খেলা দেখতে আসা আব্দুস কুদ্দস নামের একজন বৃদ্ধ বললেন, "আমরা আশপাশের গ্রামের মাঠে খেলা দেখেছি। কিন্তু রাতের বেলায় আলোতে কখনো খেলা দেখিনি। এতো ক্যামেরাও দেখিনি কখনো। " সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে খেলা শুরু হয়। তার আগে নানা রংয়ের আতশবাজি ফুটিয়ে খেলার উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়।

সোয়া ৬টার দিকে বড় মাথাল মাথায় দিয়ে লুঙ্গি পড়া আম্পায়ার দুই দলের অধিনায়ককে নিয়ে মাঠে প্রবেশ করেন। টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ দল। খেলাটির ধারাভাষ্য দিতে ঢাকা থেকে যান আব্দুল হামিদ ও মঞ্জুর হাসান মিন্টু। প্রবীণ কৃষকদের নিয়ে দল গঠনের সিদ্ধান্ত নিলেন কেন, জানতে চাওয়া হলে শাইখ সিরাজ সাংবাদিকদের বলেন, "খেলাটি পরবর্তীতে টিভিতে প্রচার করা হবে। এজন্য টিভি দর্শকদের কথা মাথায় রেখে তারা যাতে মজা পান সেজন্যই প্রবীণদের নেওয়া হয়েছে।

" খেলা দেখতে এসে অত্যন্ত আনন্দ পেয়েছেন দর্শকরা। দলকে সমর্থন করার চেয়ে প্রবীণদের খেলা উপভোগ করেছেন তারা। তাই মাঠ জুড়েই ছিল হাসির বন্যা। অষ্ট্রেলিয়া দলের ৮ নম্বর জার্সিধারী গফুর প্রথম ওভারেই বোল্ড আউট হয়ে যান। সারা মাঠ জুড়ে শুরু হয় আনন্দধ্বনি।

প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রাও মেতে ওঠেন উচ্ছ্বাসে। কিন্তু গফুর ক্রিজে ব্যাট হাতে দাঁড়িয়েই রয়েছেন। তিনি বুঝতে পারছেন না আসলে কি হয়েছে। তখন মাঠের বাইরে থেকে থার্ড আম্পায়ার এসে গফুরকে বাইরে নিয়ে যেতে চাইলেও তিনি যাবেন না। ধারাভাষ্যকার মাইকে বারবার বলছিলেন, আপনি আউট হয়ে গেছেন।

এরপর একরকম বাধ্য হয়েই মাঠ ছাড়েন গফুর। " ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ দল নির্ধারিত দশ ওভারে এক উইকেটে ১২২ রান করে। অষ্ট্রেলিয়া দল দশ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ৭৫ রান করে। ৮০ রান সংগ্রহ করে ম্যান অব দি মাচ হন বাংলাদেশ দলের নুরুল আমীন। খেলা কেমন উপভোগ করলেন, জানতে চাওয়া হলে স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "খুব ভালো হয়েছে।

এমন খেলা আমরা আগে কখনও দেখিনি। " দারুন উদ্যোগ এর জন্য চ্যানেল আইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনেক মজা লাগলো বিষয়টা পড়ে। অবশ্যই খেলাটি দেখতে হবে। বরাবরই চ্যানেল আই কৃষকদেরকে নিয়ে ঈদ আনন্দ করে থাকে এইবার ক্রিকেট।

এতে বিশ্বকাপের আমেজ কৃষকদের মধ্যেও পুরো দমে লক্ষ্য করা যাবে। ধন্যবাদ চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ সাহেবকে এমন একটি উদ্যোগ নেয়ার জন্য। [আর অনেক কৃতজ্ঞতা মিঃ রিয়াজুল বাশার সাংবাদিক বিডিনিউজ২৪.কম শম্ভুগঞ্জ, ময়মনসিংহ। ]

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।