আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিলবোর্ডের রাজনৈতিক ব্যবহার নতুন কী ?

এটুকু সময় তাই কেটে যাক রূপ আর কামনার গানে

বিলবোর্ডগুলোতে রাজনীতি হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। আর টিভি টকশো তে বিলবোর্ড আছড়ে পড়ছে। আওয়ামী লীগ তার এই প্রচার পদ্ধতির জন্য ব্যাপক সমলোচনার মুখোমুখি। একটি অনলাইন পত্রিকা (অর্থসূত্র ডট কম) এতে ১৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে মর্মে খবর ছেপেছে। এই ক্ষতির মধ্যে আওয়ামী লীগের সুনামের ক্ষতিও যুক্ত আছে।

এটাকে কীভাবে হিসেব করা হল তা অবশ্য জানা যায় না। বিলবোর্ডের রাজনৈতিক ব্যাবহার বাংলাদেশে নতুন না হলেও এবার তা সবাইকে চমকিত করেছে শাসক দলের পরিকল্পিত প্রয়োগের কারণে। হঠাৎ করেই রাতারাতি ঢাকার প্রায় ১০০০ বিলবোর্ডে সরকারের উন্নয়নের প্রচার রীতিমত ভোজবাজির মত ঘটনা। অভিনবও বটে। এতে অনৈতিকতার কথা বিরোধী মহল থেকে এমনকি অন্যান্য সচেতন-পদস্থ-অগ্রগণ্য-বিবেচক মহল থেকে তোলা হচ্ছে।

অনৈতিকতার প্রশ্ন উঠেছে ভাড়া করা বিলবোর্ডগুলো দখল করে নেয়ায় অথবা যথাযথ অনুমোদন না নিয়েই এগুলো ব্যাবহার করায়। বিডি নিউজ২৪ এর কর্ণধার খালিদী সাহেব আরো একটি মাত্রা যোগ করেছেন বিজ্ঞাপনগুলোকে অরুচিকর বা নিম্নমানের আখ্যা দিয়ে (৭১ টিভির সাক্ষাৎকারে)। তিনি অবশ্য চিরচেনা ঢাকা শহরের চেহারা বদলে দেয়ার অদ্ভুত আপত্তিও তুলেছেন। এটি ঠিক আপত্তি নাকি প্রশংসা তা প্রশ্নসাপেক্ষ কারণ চিরচেনা ঢাকার রূপটি কতখানি প্রশান্তিকর তা ঢাকাবাসী ভালভাবেই জানে আর তাতে বিলবোর্ড কতখানি সহায়ক বা স্বস্তিদায়ক তা না বললেও চলে। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে অনেকে বলছেন, প্রেমিকা-সন্দর্শনও নাকি ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে কারণ 'মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে'।

বিএনপি অবশ্য বিলবোর্ডের তথ্যবিভ্রাটের কথা তুলে বিপদে পড়ে গেছে কারণ ইতোমধ্যেই এর পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়া হয়েছে। এখন চলছে তার পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের পর্ব। বিএনপি বিলবোর্ডের দখল বা নৈতিকতা নিয়ে খুব একটা চিন্তিত বলে মনে হয় না। কারণ সম্ভবত তাদের নেতাকর্মীরাও একই ভাবে বহু বিলবোর্ড দখল করে প্রচারণা চালিয়েছে এবং চালাচ্ছে। এইতো কিছুদিন আগেই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এরকম অনৈতিক প্রচারণার অভিযোগ তাদের দলের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে উঠেছে , দৈনিক প্রথম আলো প্রথম পাতায় ছবিসহ সেই রিপোর্ট ছেপেছে।

তা ছাড়া ঢাকা শহরের কোন ওভার ব্রিজের রেলিংই রাজনৈতিক দখলদারিত্বের বাইরে নেই। এগুলোতে একসময় সুন্দর নিয়নসাইন শোভা পেত। কিন্তু সারাবছর কোন না কোন রাজনৈতিক কর্মসূচির উছিলায় এগুলো দখল করে রাখে সরকারি বা বিরোধী রাজনৈতিক দল। তাই এখন আর এগুলোতে কোন বিজ্ঞাপন দেখা যায় না। অতীতের সব প্রচারণার ধারণাকে ম্লান করে দিয়ে এবার আওয়ামী লীগ দলীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিলবোর্ডে প্রচারণার যে মহাযজ্ঞ পালন করছে তা ইতিবাচক কয়েকটি দিকে।

এক. আগামি নির্বাচনে প্রচারণার পদ্ধতিগত এবং কৌশলগত পরিবর্তন আসছে। দুই. একটা বিলবোর্ড অসংখ্য পোস্টারের কাজ করে, সেদিক থেকে পোস্টার ও দেয়াল লিখনের অত্যাচার থেকে নগরবাসী কিছুটা হলেও রেহাই পাবে। তিন. বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো এসূত্রে বেশ বড় অংকের ব্যবসা পেতে পারে। তাতে খালিদী সাহেবের মত যারা বিজ্ঞাপনের শিল্পমান নিয়ে চিন্তিত তাদেরও রসগ্রহণ সম্পন্ন হতে পারে। আমরা জানি ইউরোপ বা আমেরিকার মত উন্নত বিশ্বে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানাদি বা নির্বাচনী প্রচারে বিলবোর্ডের ব্যবহার অত্যন্ত প্রচলিত।

ইলেক্ট্রনিক সাইন বা ডিসপ্লেও সমানভাবে ব্যবহৃত হয় সেখানে। সুতরাং বিলবোর্ডকে নিজের সাফল্যের প্রচারে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ কোন বাজে সংস্কৃতি চালু করেছে বলে মনে করার কোন যুক্তিসংগত কারণ নেই। কিন্তু পাশাপাশি একটা বিষয় মনে রাখা উচিত যে বাংলাদেশের মানুষ বিলবোর্ডে ব্যবহৃত তথ্য বা প্রমাণের চেয়ে টক-ঝাল মেশানো সুস্বাদু গুজবের উপর বেশি আস্থা রাখে। সাইদির চাঁদে ভ্রমণ বা কাবা শরীফের গিলাফে গোআযমের ছবি তার কাছে বিশ্বাসের সার্টিফিকেট পায় তাড়াতাড়ি, ফটোশপের জারিজুরি সে বুঝতে চায় না। গুজবের মুখরোচক হজমি স্বাদ তাকে চক্ষুকর্ণের বিবাদ মেটাতেও বাধা দেয়।

এই যখন অবস্থা তখন বিলবোর্ডের তথ্য-উপাত্ত কতসংখ্যক মানুষের টনক নাড়াতে পারবে তা আওয়ামী লীগের গবেষণা সেল ভেবে দেখতে পারে। উন্নত বিশ্বে এসব কাজে পেশাদার গবেষণা ও জরীপ সংস্থা নিয়োগ করা হয়। বারবার হয় এমন জরীপ। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা একাজটি করেছেন বা করবেন বলে মনে হয়নি এখনও । তবুও ভালোর দিকে এক পা এগুনোর সাহসতো অন্তত আওয়ামী লীগ দেখিয়েছে ! অবশ্যই এই বিলবোর্ড কালচারের ভেতরে যতটুকু জোরজবরদস্তি বা অনৈতিকতা আছে সেটা সমর্থন না করেই এই নতুনত্বকে অভিনন্দন জানাই।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।