বুকের ভেতর বহু দূরের পথ...
বেশ আগে থেকেই অস্কারজয়ী মুভিগুলো টানা দেখে ফেলার একটা ইচ্ছে ছিলো। ভেবিছিলাম একদম ১৯২৯ সাল থেকে সিরিয়ালি দেখা শুরু করে নিয়মিত পোস্ট দিবো। কিন্তু প্রতিবারই কয়েকটি মুভি দেখার পর বিরতি পড়ে যেত। আর মুভিগুলোও সিরিয়ালি দেখা হতোনা । তাই পোস্টও দিলাম ইচ্ছেমতো, কোন সিরিয়াল মেইনটেইন না করেই।
এভাবেই দেখি কতদূর যাওয়া যায়...
অস্কারজয়ী ৫টি মুভি নিয়ে আজ থাকছে ১ম পর্ব-
Terms of Endearment (1983)
Directed by James L. Brooks
এ পৃথিবীর সুন্দরতম বিষয়টির নাম সম্পর্ক। একটি সুন্দর সম্পর্ক মানুষের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। অনেক সময় একটি ব্যর্থ জীবনকে পাল্টে দেয়, শুনায় নূতন দিনের গান। জগতের অসাধারন কিছুর সম্পকের্র মধ্যে একটি মা-মেয়ে সম্পর্ক। এ সম্পর্কের গল্প নিয়েই টার্মস অব এনডেয়ারমেন্ট।
আমি এর একটি বাংলা নাম দিয়েছি সোহাগের নানা রং। মা-মেয়ের সম্পর্ক নিয়ে যে এত চমৎকার একটি মুভি হতে পারে না দেখলে বোঝা যাবেনা। মা ’র ভূমিকায় Shirley MacLaine এর অভিনয় ছিলো এক কথায় অনবদ্য। মা -মেয়ের সম্পর্ক ছাড়াও মুভিটিতে আরেকটি চমৎকার সম্পর্কের গল্প রয়েছে। চলচ্চিত্রটিতে ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন দি জ্যাক নিকলসন ।
আর এজন্য সহ অভিনেতার অস্কারটাও বগলদাবা করে নিতে ভুলেননি।
মুভিটি ৫টি অস্কার ও ৪টি গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার জিতে নেয়।
All The King's Man (1949)
Directed by Robert Rossen
একজন সাধারন মানুষের ধীরে ধীরে কুটিল ও ক্ষমতালোভী রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠার গল্পের নাম অল দ্যা কিংস ম্যান। এ মুভিটির প্রাণ শক্তিশালী সংলাপ এবং অভিনয়। মুভিটি দেখে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের কথা মনে পড়ে গেছে।
রাজনীতির নোংরা দিকগুলো মুভিটিতে চৌকসভাবেই ফুটে উঠেছে। যুগে যুগে দেশে-বিদেশে রাজনীতির একই ভাষা। সে ভাষার নাম ক্ষমতা। কৌশলে জনগণকে বোকা বানিয়ে ক্ষমতা দখল করুন তারপর শুরু করুন ক্ষমতার যথেচ্ছা প্রয়োগ। এ খেলার নামই রাজনীতি।
মূল ভূমিকায় Broderick Crawford এর অভিনয় ছিলো চোখ ধাঁধানো। মুভিটি মোট তিনটি অস্কার জিতে নেয়। হলিউডেই শনপেন অভিনীত মুভিটির একটা রিমেক আছে।
Gentleman's Agreement is (1947)
Directed by Elia Kazan
Gentleman's Agreement is (1947)
Directed by Elia Kazan
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে খুবই শক্তিশালি সংলাপনির্ভর মুভি। অন দ্য ওয়াটার ফ্রন্ট আর এ স্ট্রিট কার নেমড ডিজায়ার খ্যাত এলিয়া কাজানের আরেকটি অমর সৃষ্টি।
কেন্দ্রীয় চরিত্রে গ্রেগরি পেক। যারা গ্রেগরি পেকের ‘টু কিল এ মকিং বার্ড ’ (গ্রেগরি পেক এ মুভিটির জন্য অস্কার জেতেন) দেখেছেন এ মুভিটি তাদের কাছে সে ধাঁচেরই মনে হবে। টু কিল এ মকিং বার্ড এর মতই বর্ণবাদ আর ধর্মীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে আরেকটি জোরালো প্রতিবাদ হচ্ছে এ চলচ্চিত্রটি। এ ছবিটিতে তিনি একজন সাংবাদিকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। পত্রিকায় অ্যান্টি- সেমিটিজমের উপর একটি স্টোরি কভার করার জন্য পেক নিজেকে ইহুদি হিসেবে পরিচয় দেয়া শুরু করেন।
আবিষ্কার করেন এই বিংশ শতাব্দীতেও ঘৃণা আর অন্ধবিশ্বাস কীভাবে জাতিগত দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করছে, মানুষে মানুষে তৈরি করছে ভেদাভেদ । মুভিটি মোট তিনটি অস্কার জিতে নেয়। সিনেমাটিতে পার্শ্বচরিত্রে Celeste Holm এর অভিনয় ছিলো দুর্দান্ত। আর এজন্য তার কপালেও অস্কার জুটে যায় ।
The Lost Weekend (1945)
Directed by Billy Wilder
রাইটার’স ব্লক এ ভুগতে থাকা একজন নৈরাশ্যবাদী লেখকের গল্পকথা।
লিখতে না পেরে লেখক দিনকে দিন হয়ে উঠেছেন মারাত্মক মদ্যপায়ী। লেখক নিজের ব্যাপারে সম্পুর্ণ হাল ছেড়ে দিলেও প্রেয়সী আর বড় ভাই তাকে পুরানো জীবনে ফিরিয়ে আনতে চালিয়ে যায় সংগ্রাম। সম্পর্কের খুব চমৎকার কিছু দিক ফুটে উটেছে চলচ্চিত্রটিতে। দুবার অস্কার জয়ী নির্মাতা বিলি ওয়াইল্ডার (Some Like It Hot, Sunset Boulevard, The Apartment) পরিচালিত এ মুভিটি জিতে নেয় ৪টি অস্কার। শুধু অস্করই নয় কান চলচ্চিত্র উৎসবে মুভিটি পাম ডি ওর ও জিতে নেয়।
Chariots of Fire (1981)
Directed by Hugh Hudson
অলিম্পিক গেমস নিয়ে নির্মিত সম্ভবত সবচেয়ে বিখ্যাত চলচ্চিত্র। এ মুভিতে চিত্রায়িত হয়েছে ১৯২৪ সালে ফ্রান্স অলিম্পিকে দু’জন অ্যাথলেটের স্বর্ণজয়ের গৌরবগাঁথা যাদের একজন ইহুদি এবং একজন খ্রিস্টান। আপাততদৃষ্টিতে সাদামাটা কাহিনী মনে হলেও মুভিটিতে রয়েছে দারুন টুইস্ট। একজন অ্যাথলেট খুবই ধার্মিক হওয়ায় নিয়মিত Sabbath পালন করেন (খ্রিস্টধর্ম অনুসারীদের সপ্তাহের একটি দিন সাধারণত রোববার জাগতিক সব বিষয় থেকে নিজেকে দূরে রাখাকে বলে Sabbath)। কিন্তু মূল প্রতিযোগিতায় তার ইভেন্টটি পড়ে রোববার।
বেঁকে বসেন অ্যাথলেট। ইভেন্টে অংশগ্রহণ করবেন না। ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম এতদিনের প্ররিশ্রম। একদিকে দেশ আরেক দিকে তার ধর্ম-বিশ্বাস। সম্পূর্ণ সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত এ মুভিটি জিতে নেয় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের অস্কার সহ মোট ৪টি পুরষ্কার ( চিত্রনাট্য, সঙ্গীত ও পোশাক পরিকল্পনা)।
আর মুভির টাইটেল মিউজিকটা অসাধারন!
আমার মুভিবিষয়ক যত পোস্ট
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।