আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্বকাপ টিকিট কেলেংকারী

চাই রাজনৈতিক শোষনমুক্ত বাংলাদেশ

বিশ্বকাপ টিকিট নিয়ে গোঁজামিল, কেলেঙ্কারির আশঙ্কা! ম্যাচপ্রতি সৌজন্য টিকিটের সারসংক্ষেপ * প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ১২২টি * অর্থমন্ত্রীর কার্যালয় পাচ্ছে ৬৫টি * ২৫টি মন্ত্রণালয়, এমপিরাও পাচ্ছেন * ‘স্যার’রা আছেন ‘ফাও’ তালিকায় এম. এম. কায়সার টিকিট কেটে মাঠে বসে বিশ্বকাপের খেলা দেখার জন্য যারা খুব বেশি আয়োজন করছেন বা বড় স্বপ্ন দেখছেন—তারা এখনই যেন জেগে উঠুন! বেশি আশা নিয়ে স্বপ্ন দেখলে ঠকতে হবে যে! মাঠে বসে খেলা দেখার জন্য খুব বেশি টিকিট আপামর জনতার জন্য বরাদ্দ করছে না বিসিবি। —বিশ্বকাপে প্রতি ম্যাচে ঠিক কত টিকিট বিক্রির জন্য ছাড়ছে বিসিবি? এই প্রশ্নের উত্তরে গত তিনদিনে তিনরকম জবাব এসেছে বিসিবির কাছ থেকে! ২৬-১২-১০, প্রথম দিনের কথা : বিশ্বকাপের স্থানীয় আয়োজক কমিটির (এলওসি) সদস্য জিএম তামিম হাসান (যিনি বিশ্বকাপ টিকিটের দায়িত্বে) বললেন, ‘মিরপুরের প্রতি ম্যাচে বিশ্বকাপের ১৫ হাজার টিকিট দর্শকদের কাছে বিক্রি করা হবে। বাকি ১০ হাজার টিকিট আইসিসির জন্য সংরক্ষিত রাখা হচ্ছে। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ স্টেডিয়াম ভেন্যুরও ১০ হাজার টিকিট শুধু দর্শকদের জন্য ছাড়া হবে। বাকি সাত হাজার টিকিট সংরক্ষিত থাকছে আইসিসির জন্য।

’ অর্থাত্ প্রতি ম্যাচের চল্লিশ শতাংশ টিকিট আইসিসি নিয়ে যাচ্ছে! ২৭-১২-১০, দ্বিতীয় দিনের কথা : বিসিবি সভাপতি মোস্তফা কামাল মিরপুর মাঠে বিকালে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘বিশ্বকাপ টিকিট বিক্রি নিয়ে কোনো ভুলচুক কিছু হবে না। আপনারা টিকিট বিক্রির পুরো বিবরণী পেয়ে যাবেন আজই। ’ বিসিবি সভাপতির প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সেদিন রাতেই বিসিবির মিডিয়া কমিটি থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাল, ‘মিরপুরে প্রতি ম্যাচে আইসিসির জন্য মাত্র ১২৭০টি টিকিট সংরক্ষিত রাখা হবে। এই মাঠের প্রতি ম্যাচের জন্য বাকি ২৪,২৩৯টি টিকিট বিক্রি করা হবে। চট্টগ্রামের প্রতি ম্যাচে আইসিসির জন্য সংরক্ষিত রাখা হবে ১২৭০টি টিকিট।

প্রতি ম্যাচের জন্য বাকি ১৬,৫৭৯টি টিকিট দর্শকদের কাছে বিক্রি করা হবে। ফতুল্লা স্টেডিয়ামেও আইসিসির জন্য সংরক্ষিত টিকিটের পরিমাণ একই—১২৭০টি। বাকি ১৬,৪৭২টি টিকিট দর্শকদের কাছে বিক্রি করা হবে। ’ উল্লেখ্য, মিরপুর, চট্টগ্রাম এবং ফতুল্লার দর্শক ধারণক্ষমতা হলো যথাক্রমে ২৫,৫০৯ ও ১৭,৮৩৯ এবং ১৭,৭৪২। ২৮-১২-১০, তৃতীয়দিনের কথা : আগের দুদিনের জোগান দেয়া তথ্য থেকে খানিকটা সরে এসে বিসিবির টিকিট অ্যান্ড সিটিং কমিটির চেয়ারম্যান জিএস হাসান তামিম কাল বিকালে সাংবাদিকদের জানালেন, ‘মিরপুরে প্রতি ম্যাচের জন্য ১৫ হাজার টিকিট সাধারণ দর্শকদের বিক্রির জন্য রাখা হবে।

আইসিসির জন্য বরাদ্দ থাকবে ম্যাচপ্রতি ১২৭০টি টিকিট। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, এমপিদের দেয়া হবে ২৫১১টি সৌজন্য টিকিট। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলা, বিভাগ এবং ক্লাবগুলোর জন্যও বরাদ্দ থাকছে ম্যাচপ্রতি ৩৬৬০টি টিকিট। ’ তামিম তার বিস্তারিত ব্যাখ্যায় বিশ্বকাপ টিকিট বিক্রির যে হিসাব জানালেন সেই সমীকরণ জানাচ্ছে, মিরপুরে বিশ্বকাপের প্রতি ম্যাচের জন্য মাত্র ১৫ হাজার এবং চট্টগ্রামের প্রতি ম্যাচের জন্য মাত্র ১০ হাজার টিকিট সাধারণ দর্শকদের জন্য রাখা হবে বিক্রির জন্য। বিশ্বকাপ টিকিটের একটা বড় অংশই চলে যাচ্ছে সৌজন্য টিকিটের কাতারে।

—কারা পাচ্ছেন প্রতি ম্যাচের ২৫১১টি সৌজন্য টিকিট? নামগুলো জেনে নিন :- সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ থাকছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জন্য। ম্যাচপ্রতি সংখ্যাটা ১২২। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দের তালিকায় থাকছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এনারা পাচ্ছেন ম্যাচপ্রতি ৬৫টি করে টিকিট। এ ছাড়া মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়, শ্রম মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, নৌ-মন্ত্রণালয়, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রাইমারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়, দেশের সাবেক প্রেসিডেন্টরা, ৩০০ এমপি, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারা, নির্বাচন কমিশন, হাইকমিশন, জাতীয় রাজস্ব বিভাগ, সম্পাদকরা, শুটিং, বক্সিং, অ্যাথলেটিক্স, ফুটবল, কাবাডি, ভারত্তোলন, হ্যান্ডবল, কারাতে, বিসিবির কাউন্সিলররা, বিওএ, বিসিবির অডিটররা, বিসিবি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা, বিসিবির বিভিন্ন কাউন্সিলররা, সাবেক খেলোয়াড়, মহিলা ক্রিকেটার এবং অফিসাররা।

—এই অফিসার ‘স্যার’রা আবার কোন জায়গার? তামিম কাল বিকালে সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাননি। শুধু তাই নয়, বিক্রির জন্য বরাদ্দ থাকা টিকিট, সৌজন্য টিকিট, ক্লাব ও জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার জন্য বরাদ্দ, অনলাইনে বিক্রি হওয়া টিকিট, হসপিটালিটি বক্স, আইসসির জন্যে সংরক্ষিত টিকিট—সব মিলিয়ে এক ম্যাচের মোট টিকিটের যে হিসাব মিলল তামিমের কাছ থেকে সেটা যোগ করলেও প্রতি ম্যাচের জন্য ১৩১১টি টিকিট বাকি থেকে যাচ্ছে। এই ১৩১১টি টিকিট কই যাবে, কে পাবে—তামিমের কাছে সেই ব্যাখ্যাও মিলল না! বিসিবি সভাপতি তার সিএ ডিগ্রির জন্য খ্যাতি কুড়িয়েছেন। কিন্তু যোগ-বিয়োগের সাধারণ হিসাবেই তার সঙ্গীরা যে ভীষণ কাঁচা! মিরপুরে প্রতি ম্যাচের টিকিটের হিসাবসাধারণের কাছে বিক্রির জন্য ১৫,০০০ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার ১৯২০ ক্লাবগুলোর জন্য ১৭৪০ অনলাইনে বিক্রি ১২৭৫ হসপিটালিটি বক্স ৪৮২ সৌজন্য টিকিট ২৫১১ আইসিসির জন্য সংরক্ষিত ১২৭০ মোট ২৪১৯৮ প্রতি ম্যাচের মোট টিকিট ২৫৫০৯ বিক্রিসহ মোট বরাদ্দ (-) ২৪১৯৮ বাকি রইল ১৩১১ * এই বাকি থাকা ১৩১১ টিকিটের কোনো হদিস মেলেনি এ কোন দেশে বাস করি আমরা। চারে দিকে শুধু সব মেরে খাওয়ার দল।

এসব প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রি, এম. পি দের কি টাকার এতই অভাব, সামান্য একটা টিকিট কেনার তাদের সার্মথ্য নাই? নাকি মন মানিষকতাই শুধু মেরে খাওয়ার। তারা যদি আমাদের সামনে কোনো উদাহরন সৃষ্টি করতে না পারেন তাহলে আমরা তাদের কাছ থেকে কি শিখতে পারি?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.