গত ৪ আগস্ট, ২০১৩ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকা-ের মতো শেখ হাসিনার মৃত্যু হবে বলে হুমকি দিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয়কে টুইট বার্তা প্রেরণ করেছে প্রবাসী বাংলাদেশী উইলিয়াম গোমেজ। গত বছর ৬ জুন (২০১২) এই গোমেজ তার ইমেল বার্তায় বিশ্বের অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তির মন্তব্যসহ বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে একটি অপপ্রচারের দীর্ঘ লিফলেট আপলোড করে আমার কাছে পাঠিয়েছিল। আমার মনে হয় এভাবে ‘আই অ্যাম এন্টি স্টেট’ কবিতার লেখক উইলিয়াম নিকোলাস গোমেজ কেবল আমাকে নয়, বিশ্বের অনেক জায়গায় বার্তা পাঠিয়ে মহাজোট সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে অনেকদিন থেকে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ সম্পর্কে সেখানে একটি অংশ ছিল এ রকমThis is a place stained in human rights abuse with a brutal, violent nature toward those in its government’s grasp. Torture, intimidation; all sorts of daily violations of human rights color the air here with indifference. A strong-willed expatriate from this imprisoning place, is refusing to be silent. যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যুতে উন্মাদ জামায়াত-বিএনপির মতো নিকোলাসও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এভাবে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে অনেক আগে থেকে। কয়েক বছর আগে ‘শ্রীলঙ্কা অবজারভার’ নামে একটি নিউজব্লগের বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়ে সিরিজ মনগড়া কাহিনী প্রচার করেছে সে, কিছুদিন আগে ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ প্রসঙ্গে একটি ব্লগপোস্টে আজগুবি গল্প ছেড়েছিল।
এসব মনে রাখলে আমাদের প্রজন্মের নেতা সজীব ওয়াজেদ জয়কে ঐ হত্যার বার্তা প্রেরণ অস্বাভাবিক কিছু নয়। পাগলা কুকুরের মতো ক্ষিপ্ত এ ধরনের গোমেজরা জামায়াত-বিএনপির পৃষ্ঠপোষকতায় বেড়ে উঠেছে। অর্থের বিনিময়ে তারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। তাদের এ ধরনের কাজের সমুচিত জবাব দেয়া এখন আমাদের কর্তব্য।
সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইতোমধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন।
তাঁর প্রাণবন্ত উপস্থিতি আমাদের তরুণদের সামনে এগিয়ে যাবার প্রত্যাশায় উজ্জীবিত করেছে। ৩ আগস্ট গুলশানে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘লেটস টক’ শিরোনামে এক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ক্ষমতাসীন সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে অর্ধেক এগিয়েছে। আবার ৩১ জুলাই রংপুরের পীরগঞ্জে এক জনসমাবেশে সজীব ওয়াজেদ জয় দেশের মানুষের প্রতি যে আন্তরিক আকুতি জানিয়েছেন তা সকলকে আলোড়িত করেছে। এতদিন তাঁকে তৃণমূল জনগণ সরাসরি রাজনৈতিক মঞ্চে দেখেনি, কেবল তাঁর কথা শুনে এসেছে। তাঁকে দেখা গেল রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে।
মানুষের দুঃখকে অনুভব করতে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং পিতা-মাতা ড. ওয়াজেদ ও শেখ হাসিনার মতো আন্তরিক হৃদ্যতায় সাধারণ মানুষকে কাছে টানার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে তাঁর। এর আগে তিনি দেশের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। গত ২৩ জুলাই ঢাকায় যুবলীগের এক ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘সামনে নির্বাচন, অনেকে ভয়ে আছে, আমাদের সরকার কি আবার ক্ষমতায় আসবে? আমার কাছে তথ্য আছে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে। সুতরাং আগামী ছয় মাস আমাদের মানুষের কাছে গিয়ে বিএনপির অপপ্রচারের জবাব এবং সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের কথা তুলে ধরতে হবে।
বিএনপির অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আমাদেরও প্রচারণায় নামতে হবে। এখন থেকে আগামী ছয় মাস বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরতে হবে। মানুষ যদি আওয়ামী লীগের দুর্নীতির কথা বলে, তাহলে তখন বলবেন, আসুন আমরা বিএনপির আমলের দুর্নীতির সঙ্গে এ আমলের দুর্নীতির তুলনা করি। তাহলেই মানুষ সহজে বুঝবে। কারণ তাদের কোন সফলতা নেই।
তাদের সময় বাংলাদেশ পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল দুর্নীতি নিয়ে গবেষণা করে। তাদের গবেষণায় আমরা এখন দুর্নীতিতে ৪০তম কোটায় আছি। আর বিএনপি পাঁচ বছরে এক নম্বরে ছিল। . . . বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।
’
তাঁর এই বক্তব্য আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে উদ্দীপনার সঞ্চার করেছে। জয়ের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিরোধী দল থেকে আগামী নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রের কথা বলা হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জয়কে সমর্থন করে বলেছেন, ‘ষড়যন্ত্র নয়, জরিপ ও তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতেই জয় ঐ কথা বলেছে। ’ অর্থাৎ জয়ের মতো নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব আমাদের রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা ঘটাচ্ছে। রাজনীতিতে নতুন প্রজন্মের পদচারণা আমাদের এগিয়ে চলার পথে বাড়তি প্রাপ্তি। নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে প্রতিবছর ভোটার তালিকায় তরুণ ভোটার আসছে প্রায় ২৩ লাখ।
৯ কোটি ২১ লাখ ভোটারের মধ্যে ৪ কোটি ভোটারের বয়স ৪০ বছরের নিচে। মোট ভোটারের প্রায় ৪০ শতাংশ নতুন প্রজন্মের। তাদের জন্য নতুন প্রজন্মের নেতা অনিবার্য। সজীব ওয়াজেদ জয় এসব নতুন ভোটারের প্রত্যাশার ভাষাকে ঠিকই বুঝতে পারবেন। আগামী সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসন থেকে তিনি প্রার্থী হবেন বলে ২৯ জুলাই রংপুর জেলা আওয়ামী লীগ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
বলা হয়েছে, আগামীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না এলে পাতাকা ওড়ানো গাড়িতে শুধু রাজাকার দেখা যাবে। আওয়ামী লীগ এদেশের যে উন্নয়ন করেছে, বিগত জামায়াত-বিএনপি চারদলীয় জোট সরকার তা করেনি। বিএনপির মিথ্যা প্রচার মোকাবেলা করতেই হবে। আগামী ছয় মাস তরুণ ভোটারদের কাছে বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসন, দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরতে হবে। জয়ের এই বক্তব্যকে বাংলা একাডেমির ডিজি শামসুজ্জামান খান ‘পার্টির মরাল বুস্ট আপ করার জন্য দেয়া নির্বাচনী কৌশল’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন (বিডিনিউজ ২৪, ২৯ জুলাই)।
২৯ জুলাই বিবিসি মন্তব্য করেছে, জয় প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে আসছেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফও বলেছেন, রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে জয় রাজনীতিতে আসবেন, এটাই স্বাভাবিক। তিনি রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মকা-ে যোগ দিচ্ছেন, এতে বোঝা যাচ্ছে রাজনীতিতে তাঁর আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। সজীব ওয়াজেদ জয় ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে কিছু কিছু প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন। প্রকাশ্য রাজনীতিতে না থাকলেও তিনি ২০০৯ সালে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সদস্য পদ গ্রহণ করেন।
মূলত বাংলাদেশে যে গণতান্ত্রিক ধারা বহমান তা বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁরই যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে সজীব ওয়াজেদ জয় এই তৃতীয় প্রজন্মের নতুন নেতৃত্বের প্রতি আমাদের সকল আকর্ষণ এখন কেন্দ্রীভূত। বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার পর বাংলাদেশে নেতৃত্বের বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছিল। উপমহাদেশের রাজনীতিতে পারিবারিক ঐতিহ্য একটি ব্যাপক বিস্তারি প্রসঙ্গ। ভারতের দিকে তাকালে বর্তমান রাজনীতির পারিবারিক ধারা সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায়।
জওহরলাল নেহরু গান্ধীর কন্যা ইন্দিরা গান্ধী তাঁর পিতার যোগ্য উত্তরসূরি ছিলেন। ইন্দিরা গান্ধীর সময় মোরারজি দেশাইয়ের মতো অনেক যোগ্য নেতা থাকলেও ইন্দিরা গান্ধীই হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। জুলফিকার আলী ভুট্টো, তাঁর কন্যা বেনজীর ভুট্টো, বেনজীরের স্বামী ও ছেলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা যেমন সত্য তেমনি শ্রীলঙ্কার বন্দরনায়েক পরিবারের রাজনৈতিক পরিচয় লক্ষণীয়। ঠিক একইভাবে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতারা ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনাকেই রাজনৈতিক মঞ্চে নিয়ে এসেছিলেন। পঁচাত্তর পরবর্তী তোফায়েল আহমেদ, প্রয়াত আবদুল জলিল, আবদুর রাজ্জাক, কামাল হোসেন প্রমুখ বড় বড় নেতা দেশ পরিচালনায় শেখ হাসিনাকেই জনগণের সামনে দাঁড় করান।
খালেদা জিয়া যেভাবে তারেক জিয়াকে রাজনীতিতে এনে দলের পদে সমাসীন করেছেন জয়ের জীবনে তেমনটি ঘটেনি। বরং জয় রাজনীতিতে নামতে পারেন ধরে নিয়ে ২০০৪ সালে ‘হাওয়া ভবনে’র মালিক তারেক জিয়াকে বিএনপি লুফে নিয়েছিল। জয় বাংলাদেশের মৃত্তিকার সন্তান। তাঁর রাজনীতিতে আসাটা আকস্মিক হলেও দলকে সংগঠিত করা, দলের কোন্দল মেটানো, দলকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ রাখা প্রধান কাজ হিসেবে গণ্য হচ্ছে। পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে পরাজয়ের পর আওয়ামী লীগের সামনে নতুন নেতৃত্বের দরকার ছিল।
তাই তাঁর মতো কোন যোগ্য ব্যক্তিকে সামনে আনা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক। ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই ঢাকায় জন্মগ্রহণ করা জয় ভারত থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারে বিএসসি ডিগ্রী এবং যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোক-প্রশাসনে এমএ ডিগ্রী অর্জন করেন। ২০০৭ সালে তিনি ২৫০ তরুণ বিশ্ব নেতার মধ্যে একজন হিসেবে সম্মানিত হন। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার উপদেষ্টা হিসেবে তিনি অনেক আগে থেকেই রাজনীতি সচেতন। ২০০৮ সালের জুন মাসে শেখ হাসিনাকে সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কারাগার থেকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
জয়ের ভেতর রয়েছে বঙ্গবন্ধুর মতো প্রচ-তা। রয়েছে পরিশ্রমী ও তারুণ্যের প্রাণময়তা। এজন্য আমেরিকা থেকে তাঁর ফিরে আসা, রাজনীতিতে যোগ দেয়া আমাদের জন্য শুভ সূচনা। দেশের মধ্যে যারা একসময় দুর্নীতি ও নাশকতার পৃষ্ঠপোষকতা করেছে তাদের মসনদ কেঁপে উঠেছে ঐ একটি বক্তৃতায়। তিনি সেদিন মূলত বঙ্গবন্ধুর মতোই মানুষকে আশাবাদী করে জাগিয়ে তোলার জন্য ভাষণ দিয়েছেন।
তিনি বলতে চেয়েছেন একসময় তাঁর মতো বয়সে বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষকে জাগিয়েছিলেন; জয়ও তেমনি নির্বাচনে পরাজিত এবং ভিন্ন কারণে আপাত বিশৃঙ্খল আওয়ামী লীগকে গড়ে তুলতে চান। তাঁর ভেতর থেকে বঙ্গবন্ধুর মতোই সম্মোহনী চেতনা স্ফুরিত হচ্ছে। তিনি আসলেন এবং ভাষণ দিয়ে মানুষকে উজ্জীবিত করলেন। বিএনপি-জামায়াতের গাত্রদাহের কারণ এজন্য যে জয় উচ্চশিক্ষিত এবং যে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তার পুরোভাগে তিনি আছেন। শেখ হাসিনা যেমন নির্লোভী, মানুষকে ভালবাসেন নিজের অন্তর থেকে জয়কেও তেমনিভাবে এগিয়ে যেতে হবে।
বিরুদ্ধ মানুষের মন জয় করতে হবে। এজন্য ছাত্রলীগ-যুবলীগকে কাজে লাগাতে হবে। সাধারণ মানুষকে মহাজোট সরকারের কর্মসূচী, সাফল্য বর্ণনা করতে হবে। অনেকে ভাবতে পারেন তিনি আমেরিকান সিটিজেন। এটা মনে করার কোন কারণ নেই যে শেখ হাসিনাও যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাবেন।
যেহেতু জয়ের মা নিজে এই মাটি, মানুষের নিকটজন সেহেতু তিনিও তারই ধারাবাহিকতায় মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করবেন।
বঙ্গবন্ধুর নাতি এবং শেখ হাসিনা ও ড. ওয়াজেদ মিয়ার পুত্র হিসেবে পারিবারিক সূত্র গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু তিনি যে মানুষের জন্য আত্মত্যাগ করতে এসেছেন তা বোঝার ক্ষমতা নেই বিরোধী দলের নেতাদের। তারা জয়ের বক্তব্যের মধ্যে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় হলে নীরব ভূমিকা পালন করে যারা তাদের কাছ থেকে আমরা কি প্রত্যাশা করতে পারি? প্রকৃত দেশপ্রেমিকের পক্ষে দেশ ও জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতককে মেনে নেয়া কি সম্ভব? আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, তাদেরই আবার ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করা হয়। প্রচার করা হয় আওয়ামী লীগ ইসলামবিরোধী দল।
এজন্য আওয়ামী লীগ যে ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য কার্যক্রম পরিচালনা করেছে তার প্রচার করতে হবে। কারণ বিরোধী পক্ষ বার বার ইসলামের সঙ্গে আওয়ামী লীগকে শত্রু বানিয়ে সাধারণ মানুষকে বিপথগামী করছে।
এটা ঠিক যে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ এখনও রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী দল। এখানে অন্য কোন দলের এত শক্তি নেই যে, তারা রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের সমান হতে পারে। তাছাড়া আওয়ামী লীগের যে গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্য রয়েছে তা অন্য কোন দলের নেই।
সজীব ওয়াজেদ জয় সেই গৌরবকে কাজে লাগিয়ে সামনে এগিয়ে যাবেন। মধ্যবিত্তের সন্তান বঙ্গবন্ধু মানুষের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন। পাকিস্তানী শাসকদের ফাঁসির ভয়কে উপেক্ষা করেছেন। জেল খেটেছেন মাসের পর মাস। সেই ত্যাগী নেতার নাতি হিসেবে জয়কে মনে রাখতে হবে, এই সব মূঢ়, মূক মানুষের মুখে দিতে হবে ভাষা।
তাদের কাছে পৌঁছতে হবে বঙ্গবন্ধুর পরিচয় নিয়েই।
রাজনৈতিক নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এগিয়ে এসেছেন মানুষের আকর্ষণে। মায়ের সান্নিধ্য তাঁকে রাজনীতির শিক্ষায় শিক্ষিত করেছে। তাঁর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলে আওয়ামী সমর্থক সকলেই খুশি হবেন। কারণ তিনি মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে পারেন।
আওয়ামী লীগকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে নেতৃত্ব ও উন্নয়নকে একইসঙ্গে আলিঙ্গন করতে হবে। জয় হঠাৎ আবির্ভূত নেতা নন। তিনি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তাঁর আছে দৃঢ়চেতা অভিভাবক। যিনি সকল বিষয়ে সুপরামর্শ দিতে পারঙ্গম।
কখন পথ চলতে ছিটকে পড়লে শেখ হাসিনা পরামর্শ দিয়ে ঠিক পথে আনতে পারবেন তাঁকে। কারণ জয় একান্তই মাতৃ-অনুগত। জয় আওয়ামী লীগের একজন সাধারণ সদস্য। এর বাইরে তিনি প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা। এই অর্থে তিনি দলের নীতি-নির্ধারক না হলেও বিভিন্নভাবে দল ও দলের নেতৃত্বকে অনেক রকম সহযোগিতা দিয়ে এসেছেন।
এখন এগিয়ে যাচ্ছেন বিচক্ষণতার সঙ্গে।
নতুন প্রজন্মের কাছে দলের আবেদন বাড়াতে জয়কে অনেককিছু করতে হবে। প্রথমেই দলের কোন্দল, গ্রুপিং মিটাতে হবে। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে তা মোকাবেলা করতে হবে। ছাত্রলীগ-যুবলীগকে গঠনমূলক কর্মকা-ে উৎসাহী করতে হবে।
ক্ষমতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে তিন শত সংসদীয় আসনের যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে পরিকল্পনা নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজে নামতে হবে। যোগ্য ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকে আগে থেকেই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলতে হবে। দেশ-বিদেশের রাজনীতিকে পর্যবেক্ষণ করে নিজেদের কৌশলপত্র প্রণয়ন ও সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধিতে নিয়োজিত হতে হবে। আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীকে বাধ্যতামূলক প্রযুক্তিমুখী হতে হবে। মূল সংগঠন ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর দেশব্যাপী শক্ত নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার জন্য এর কোন বিকল্প নেই।
সংগঠনের দুর্বলতা কাটানোর জন্য নেতাকর্মীদের নিয়ে সঙ্কট উত্তরণের পথ আবিষ্কার করা খুবই জরুরী। মহাজোট সরকার পরিচালনায় সজীব ওয়াজেদ জয় যেমন তৎপর তেমনি নিজের নতুন নতুন ভাবনা-চিন্তা নিয়ে জনসমক্ষে হাজির হওয়া প্রয়োজন। আওয়ামী লীগের নতুন কা-ারী সজীব ওয়াজেদ জয়কে অভিবাদন। তাঁর বিজয়ী অভিযাত্রা উইলিয়াম গোমেজদের মতো হত্যার হুমকিদাতা ও অপপ্রচারকারীদের নর্দমায় নিক্ষেপ করবে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।