বুকের ভেতর বহু দূরের পথ...
(গত বইমেলায় (২০১০) ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত রুদ্র আরিফ ও বিজয় আহমেদ সম্পাদিত ফিল্মমেকারের ভাষা বইটিতে একটি অধ্যায় অনুবাদ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। বইটি দশজন বিখ্যাত ল্যাটিন আমেরিকান চলচ্চিত্রকারের জীবনী ও বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারের সংকলন। আমার অনূদিত অধ্যায়টি ছিলো মেক্সিকান ফিল্মমেকার কার্লোস রেগাদাস কে নিয়ে। সামু ব্লগাদের জন্য কিস্তি আকারে অনুবাদটা প্রকাশ করলাম। আজ শেষ পর্বে থাকছে কার্লোসের সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ফিচার ফিল্ম 'সাইলেন্ট লাইট' 'সম্পর্কে তার বক্তব্য)
কিস্তি ১
কিস্তি ২
কিস্তি ৩
কিস্তি ৪
কিস্তি ৫
কিস্তি ৬
সাক্ষাৎকারক : ‘সাইলেন্ট লাইট’-এর আইডিয়া পেলেন কীভাবে?
কার্লোস রেগাদাস : এই ফিল্মের আইডিয়া আমার মাথায় প্রায় এক বছর ধরেই ছিল।
আমি বিষয়টি নিয়ে বসি এবং কীভাবে কী ঘটবে তার একটা ধারণা দুই তিনদিনের মধ্যে ঠিক করে স্ক্রিপ্ট লিখি। এটা কোনো গতানুগতিক স্ক্রিপ্ট না। তবে পর্দায় আপনি যা দেখবেন ও শুনবেন, তার সম্পূর্ণ খুঁটিনাটি বর্ণনা এতে আছে। তিনদিন ধরে আমি এক সমুদ্রতীরে অপেক্ষা করছিলাম। শুরু ও শেষদৃশ্য ছাড়া আমার কাছে সবই ছিল।
ঘুমোনোর আগে ‘সিগার রোজ’ (আইসল্যান্ডিক পোস্ট-রক ব্যান্ড। প্রতিষ্ঠা ১৯৯৪) শুনছিলাম। কম্পিউটার খোলা ছিল। স্ক্রিনসেভার হঠাৎ চালু হলো। একটি মহাজাগতিক স্ক্রিনসেভার দেখলাম আমি।
কয়েকটা তারা কিছুক্ষণ পরপর খুব ধীরে ধীরে ফ্রেম থেকে মিলিয়ে যাচ্ছিল। সিগার রোজের সুরের সাথে এই অসাধারণ দৃশ্যটি উপভোগ করতে করতে আমি ভাবলাম, আমার ফিল্মের শুরুটাও এরকম আকর্ষণীয় হতে হবে।
সাক্ষাৎকারক : আপনার এক লেখা থেকে জেনেছিলাম, আপনি হল্যান্ডের পল্লী এলাকায় অভিনেতা খুঁজে বেরাচ্ছেন। এটা জেনে খুব চমকে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, করছে কী এই লোকটা! পরে ‘সাইলেন্ট লাইট’ দেখার পর তার জবাব আমি পেয়ে গেছি।
কিন্তু একটা বিষয় আমাকে এখনো অবাক করে, আর তা হলো, আপনি কেন চিহুয়াহুয়ার (একটি মেক্সিকান রাজ্য) মেন্নোনিতে (একটি খৃষ্টান সম্প্রদায়) অভিনেতাদের নির্বাচন করেননি, যেখানে এই ফিল্মের গল্পটা ঐ অঞ্চলকেই কেন্দ্র করে?
কার্লোস রেগাদাস : আসলে দুজন মহিলা ছাড়া অন্য অভিনেতারা কিন্তু চিহুয়াহুয়ারই। এর কারণ হচ্ছে, মেক্সিকোর শিল্পীরা অভিনয় করতে আগ্রহী হলেও চরিত্রগুলোর জন্য উপযুক্ত ছিল না। মেন্নোনিতে সম্প্রদায়ে মাত্র ১০ লাখ মানুষ। তবে বিশ্বাস করুন, ১০ লাখ মানুষকে না দেখালেও আমি তাদের অনেককেই দেখিয়েছি। কিন্তু তাদের মধ্যে এ ফিল্মে অভিনয়ের জন্য উপযুক্ত লোকের সংখ্যা ছিল খুবই কম।
ফিল্মটির জন্য নির্দিষ্ট বয়স বা চেহারার পাশাপাশি নির্দিষ্ট শক্তিরও প্রয়োজন ছিল।
এই স¤প্রদায়ের অনেকেই তা করতে চাইলেও তারা মাসের পর মাস এ কাজ থেকে অব্যাহতি চাইবে। ঐ বয়সের বেশিরভাগ মেন্নোনিতে মেয়েরই কোলে বাচ্চা আছে। তাদের পক্ষে এক নাগাড়ে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার দেওয়া খুবই কঠিন হবে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আমাকে অন্য মেন্নোনিতে গোষ্ঠী নির্বাচন করতে হবে।
সেজন্য আমি কানাডায় আসি এবং মাত্র একটি খুঁজে পাই।
তারপর আমি হল্যান্ড এবং শেষে জার্মানিত যাই, এবং অন্যদের নির্বাচন করতে সমর্থ হই।
সাক্ষাৎকারক : ফিল্মটির জন্য উপযুক্ত অভিনেত্রী খুঁজে পাওয়ার বিষয়টা কখন বুঝতে পারলেন? এজন্য কি কোনো অডিশন নেওয়ার দরকার পড়েছিল?
কার্লোস রেগাদাস : মোটেও না। আমি আসলে তাদের দেখেছি, মানে তাদেরকে অনুব করার চেষ্টা করেছি এবং অল্পস্বল্প কথাবার্তাও হয়েছে। এটা অনেকটা অন্তর্জ্ঞান দিয়ে অনুভব করার মতো ব্যাপার।
আমি যা অনুভব করেছি, তা-ই বিশ্বাস করেছি। আমার কোনো গতানুগতিক নিয়ম ছিল না। যখনই সঠিক মানুষটার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে, আমি ঠিকই তার উপস্থিতি বুঝে গেছি।
সাক্ষাৎকারক : একজন বহিরাগত হিসেবে মেন্নোনিতে সম্প্রদায়ে প্রবেশ করা কঠিন হয়নি?
কার্লোস রেগাদাস : হ্যাঁ। তারা খুবই অন্তর্মুখী এবং কয়েক শতাব্দি ধরে তারা এমনই।
এছাড়াও তাদের ধর্ম মানুষের গ্রাফিক্যঅল রিপ্রোডাকশনকে অনুমতি দেয় না। ছবি আঁকা সেখানে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এবার ভাবুন তো, ফটোগ্রাফি বা ফিল্ম সম্পর্কে তাদের প্রতিক্রিয়া কেমন? এসবকে তারা পৈশাচিক বা আসুরিক বিবেচনা করে। তাই কাজটা খুব কঠিন ছিল আমার জন্য। পাঁচ বছর ধরে অনেকবার সেখানে গিয়ে ধীরে ধীরে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে ফিল্মটি নিয়ে কথা বলতে হয়েছে।
অনেকেই আমার পরিকল্পনাকে বাতিল করে দিলেও কিছু মানুষের জন্য আমি কাজটি শুরু করতে পেরেছিলাম। এর মধ্যে প্রধান চরিত্র কনেলিও ওয়ালের ভূমিকা অন্যতম। তিনি আসলেই একজন অসাধারণ মানুষ। প্রতি শনিবার রাতে তিনি কান্ট্রি মিউজিকের উপর রেডিওতে একটা অনুষ্ঠান করতেন। আমি প্রায়ই রেডিও স্টেশনে যেতাম এবং তার সঙ্গে গল্প বেশ ভালোই জমে উঠতো।
তিনি আমার সমর্থক হয়ে ওঠেন। তিনি আমাকে সাহস যোগাতেন।
আর তিনি বিশ্বাস করতেন বলে অন্যরাও বিশ্বাস করতো আমাকে।
সাক্ষাৎকারক : ‘সাইলেন্ট লাইট’-এর আইডিয়া পেলেন কোথায়?
কার্লোস রেগাদাস : ফিল্মটি জুড়ে শুধু ভালোবাসার কথা বলাই আমার মূল ভাবনায় ছিল। কাউকে প্রচণ্ডভাবে ভালোবাসা কী অকৃত্রিম, যথার্থ, সাহসী কিংবা ন্যায়সঙ্গত, এবং কে আপনাকে এখনো ভালোবাসে এসব অনুভূতির মুখোমুখি হলে আপনি তখন কী করবেন এটাই এ ফিল্মের মর্মবস্তু।
আর মেন্নোনিতে সংস্কৃতিতে ফিল্মটি বানানোর কারণ, পর্দার জন্য মেন্নোনিতেই সবচেয়ে উপযোগী, যেহেতু এতে শ্রেণী বৈষম্য কিংবা সৌন্দর্যবিষয়ক কল্পিত ধারণকেন্দ্রিক কোনো ধরনের বিভ্রান্তিকর বিষয় ছিল না। পুরো সেটিংটা আমাকে বাচ্চাদের গল্প শোনানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি করে দিয়েছিল।
সাক্ষাৎকারক : ‘সাইলেন্ট লাইট’ দেখার আগে এ সম্পর্কে কোনো পাঠ থেকে বিরত ছিলাম। ‘অর্ডেট’ (একটি ডেনিস ফিল্ম- নির্মাতা:কার্ল থিয়েডোর ড্রেয়ার। )-এর সঙ্গে এ ফিল্মটির সম্পর্ক নিয়ে কাউকে কিছু বলতে শুনিনি।
যে বিষয়টি আমাকে ব্যাপক নাড়া দিয়েছে, তা হলো, আমি ফিল্মটির শেষে নয়, একেবারে শুরু থেকেই ‘অর্ডেট’-এর কথা ভাবছিলাম। প্রথম দৃশ্যেই এমন কিছু ছিল, যা ‘অর্ডেট’-এর স্মৃতিকে ডেকে আনে। এই যেমন, ঘড়ির কাঁটার শব্দ এবং প্রাতঃকালের প্রথাগত আচার আচরন। ফিল্ম দু’টির মধ্যে নিগূঢ় এবং দুর্বোধ্য এক সম্পর্ক রয়েছে। তবে আমার আগ্রহ, আপনি কি বেশিমাত্রায় ‘অর্ডেট’ নিয়ে ভেবেছিলেন, নাকি ভাবেননি একদমই?
কার্লোস রেগাদাস : ভেবেছিলাম।
আমি পল্লী এলাকার প্রোটেস্টটেন্টদের নিয়ে একটি ফিল্ম বানাতে চেয়েছিলাম, যারা জার্মান ভাষায় কথা বলে। তাই আমি জানতাম, দু’টি একেবারে আলাদা ফিল্ম হওয়া সত্ত্বেও এদের মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে। ‘অর্ডেট’ ছিল অলৌকিক ঘটনা নিয়ে, আর ‘সাইলেন্ট লাইট’ মূলত ভালোবাসাকেন্দ্রিক; যদিও এর অনেকটাই ঘুমকুমারী থেকে চলে আসে। আমি আস্থার সঙ্গে অনুভব করি, ফিল্ম দু’টি পরস্পরের চেয়ে যথেষ্ট আলাদা; আর আমি সরাসরি এ কথা বলতে ভীত নই, বরং শ্রদ্ধার সঙ্গেই বলছি, ‘অর্ডেট’ এমন এক ফিল্ম যা আমি ভালোবাসি; এবং ড্রেয়ার (কার্ল থিয়েডোর ড্রেয়ার। ডেনিস ফিল্মমেকার) এমন এক ফিল্মমেকার, যাকে আমি শ্রদ্ধা ও ভক্তি করি।
আসলে ফিল্ম দু’টি দুই ভাইয়ের মতো, যদিও তাদের নির্যাস আলাদা।
সাক্ষাৎকারক : আমার মতে আপনার ফিল্মটির একত্রীভূত উপাদান হিসেবে ঐশ্বরিক মুহূর্ত আলাদা করে সাজানোয় পূর্ন মনোযোগ দিয়েছেন। এ ফিল্মে বেশ কিছু খুবই গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য আছে, যা দেখে মনে হয়েছে আপনি পরম যত্ন নিয়ে ডিজাইন করেছেন রূপান্তর প্রক্রিয়াকে সহজাত করার জন্য। আর এসব অলৌকিক সংশ্লিষ্টতাকে ধারণ করেছে। যেমন আপনি দেখিয়েছেন, একটি লোক একটি পরিবারের সঙ্গে গোসল করছে, কারণ, সে চলে যাচ্ছে; কিংবা কেউ আত্মহত্যা করছে যাচ্ছে, বা যৌনতার দ্বিতীয় পর্যায়ে কেউ, অথবা সূর্যোদয়ের দৃশ্যের কথাই যদি বলি।
এক নজরে দেখলে এ ফিল্মে ইঙ্গিতপূর্ণ ইচ্ছে লক্ষ করা যায়, যেখানে আপনি পুরোপুরি নিজেকে অতিক্রম করেছেন।
কার্লোস রেগাদাস : আমি এটি আনুষ্ঠানিকভাবে করিনি। আমি আসলে ব্যাপারগুলো নিয়ে সেভাবে ভাবিওনি। কিন্তু আপনি যা বললেন, তা সব সত্য। শেষতক আমি জানি, আমি আসলে করার চেষ্টা করেছি, এটা অবশ্যই নিজেকে অতিক্রম করে, আমাদেরকে অতিক্রম করে।
আর এটাকেই আমি গুরুত্ব দিই। এটাই পাওয়ার চেষ্টা করি। আমি সবসময় বিশ্বাস করি, আপনি যখন ফিল্ম বানাবেন, তখন শুধু সেটি নিয়েই ভাববেন। আর ফিল্ম নির্মাণ সেভাবে কোনো ক্যারিয়ার নয়। কিন্তু প্রতি ক্ষেত্রেই আপনি দায়িত্ব পালন করছেন এবং প্রতিটি পৃথক ফিল্মের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
তবে সত্য হলো, একজন ব্যক্তি যখন দুইবার এই নির্মাণ কাজটা করে ফেলবে, সে তার কাজগুলোকে পুঞ্জীভূত করতে থাকবে বিশাল আকারে; আর তখনই কাজটি অই মানুষের করতে চাওয়া বিষয়ের অন্তর্জ্ঞান প্রদান করবে।
সাক্ষাৎকারক : এই দায়িত্ব পালন কিংবা সহযোগিতার ব্যাপার ধরেই দেখা যায়, আপনার ফিল্মে লং-শটের উপস্থিতি দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে; এবং এটা যে একটা স্বচ্ছ উদ্দেশ্যমূলকভাবে করছেন, তা ধরা পড়ছে। এটা একটা ঘটনাকে তার নিজস্ব উপায়ে বা পথে হতে দিচ্ছে।
কার্লোস রেগাদাস : এটি এ ধারণা থেকে আসতে পারে যে, আমি একজন পেশাদার বিনোদনকারীর চেয়ে নিজেকে ভৃত্য অনুভব করি যে কী করছে, সে ব্যাপারে সম্পূর্ণ পটু। আমি শুধু নিজেকে একজন ভৃত্য হিসেবে দেখি, যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় একত্রিত করে, যার ফলে আমরা গভীর চিন্তার ভেতর দিয়ে অনুভূতির একটি বিশেষ জায়গায় পৌঁছুতে পারি।
মাঝেমধ্যে আমি যখন বিনোদন কিংবা কোনো কাহিনী বা চরিত্রকে সমালোচনা করেছি, অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করতো, এসব বিষয়ে কেন আমি এতো বিপরীত মত প্রকাশ করি? এটা যদি সঠিক পথ না হয়, তাহলে কোনটা? আমার মনে হয় হয় এটি গভীর চিন্তার ফসল।
আমি যে গভীর পরিকল্পনার কথা প্রস্তাব করেছি, তা প্রথমত বিনোদনের গভীরতর মাধ্যম এবং দ্বিতীয়ত জ্ঞানের মাধ্যম হতে পারে।
সাক্ষাৎকারক : এখন আপনার ভিন্নধর্মী এই তিনটি কাজের (জাপান, ব্যাটেল ইন হ্যাভেন, সাইলেন্ট লাইট) ধারার দিকে তাকিয়ে বলুন, আপনি ফিল্ম নির্মাণে কোন পদ্ধতি অবলম্বন করেন বা কী ধরনের ফিল্ম বানাতে চান?
কার্লোস রেগাদাস : আপনি যখন পেছন ফিরে তাকাবেন, সবকিছু যুক্ত করে সম্পূর্ণ একটা কাঠামো দেখতে পাবেন। আমার কাজের একটি ধারা আছে; কিন্তু এই পদ্ধতি যে পৃথিবীজুড়ে সবার জন্য প্রযোজ্য তা আমি বিশ্বাস করি না। এমনকি আমার নিজের জন্যও না।
আমার মনে হয়, প্রতিবার কাজ করার সময় নতুন উপায়ে কিছু করার চিন্তা থাকা প্রয়োজন।
আর অভিনেতাদের ব্যাপারে বলবো আমি সবসময়ই অভিনেতাদের সঙ্গে একটা নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করি।
সাইলেন্ট লাইট মুভি ট্রেইলার
সমাপ্ত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।