স্বামী সন্তান সংসার নিয়ে পরিপূর্ণ একজন নারী ফরিদা পারভীন। ফরিদার সুখের কথা শুনে খুশি হয় তার সহকর্মী আয়েশা। আবার বুকের ভেতরে এক ধরনের হাহাকারও অনুভব করে । স্বামী সন্তান সংসার নিয়ে আয়েশাও তো সুখী হতে পারতো। কিন্তু সুখ যেন তার কপালে নেই।
বিয়ের অল্প কিছুদিন পরে একটি দুর্ঘটনায় মারা গেল ওর স্বামী। আয়েশার ভবিষ্যতের কথা ভেবে দুই পরিবারের ইচ্ছেতে ওর বিয়ে ঠিক করা হলো দেবর নজরুলের সাথে। পরিবারের ইচ্ছেতে বিয়ে করলেও একসময়ের ভাবী আয়েশাকে যেন ঠিক স্ত্রী হিসেবে নজরুল মেনে নিতে পারে না। তবুও আয়েশার কোলে এসে পড়ে নজরুলের ঔরসজাত সন্তান। কিন্তু সংসারের প্রতি উদাসীন হয়ে যাওয়া নজরুল স্বামী বা বাবা, কোন দায়িত্ব পালন করে না।
আবারও একা হয়ে পড়ে আয়েশা। নজরুল কোথায়, কেমন আছে কোন খবর সে পায় না। সন্তান নিয়ে কঠিন এক সংসার যুদ্ধে আয়েশাকে নেমে পড়তে হয় আবার। যারা আয়েশাকে এই বিয়ে দিয়ে মহান এক দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তারা এবার আর ওর কষ্টের ভাগীদার হবার প্রয়োজন মনে করলেন না। এই জীবনে দুঃখ ছাড়া আয়েশা আর কী পেল?
‘’কেন? আয়েশা তো একজন সফল মা! কত বড় অর্জন এটি!’’—ফরিদা পারভীন ও এই সমাজ আয়েশার উপর এই অর্জন চাপিয়ে দিয়ে সাধুবাদ জানায়।
কিন্তু কেউ তার কষ্টের অংশীদার হয় না। কেউ তার বঞ্চনার প্রতিবাদ করে না। যেন এই আয়েশার সুখী স্ত্রী হয়ে সফল মা হবার অধিকার নেই। স্বামী যতই অযোগ্য হোক, যত বড় নির্যাতনকারীই (শারীরিক বা মানসিক, যেভাবেই হোক), হোক, নির্বিচারে পরকীয়া করে বেড়াক তাকে তালাক দেবার অধিকার এই সমাজের আয়েশাদের নেই। ফরিদা পারভীন ও তার সমাজ আয়েশাদের কষ্ট সহ্য করার, সব কিছু মানিয়ে নেবার পরামর্শ দেবেন।
কিন্তু গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়ানো নজরুলদের কোন দোষ নেই, তাদের কিছু বলবেন না। সহ্যের সীমা অতিক্রম হবার পরে কোন আয়েশা যদি তার স্বামীকে তালাক দিতে চায় বা দেয় তবে এই ফরিদা পারভীন ও তার সমাজ আয়েশাদের গায়ে ‘’খারাপ’’ সাইনবোর্ড লাগিয়ে নিজেরা ‘’ভাল’’ সাজার ভণ্ডামী করে বেড়াবেন। এই ফরিদা পারভীন ও তার সমাজ নিজেরা সব সুবিধা ভোগ করবে, অথচ অন্যের বঞ্চনা নিয়ে টু শব্দটি করবেন না। এও যেন পুঁজিবাদী মনোভাব প্রকাশের একটি ধরন।
সহনশীলতা, ধৈর্যশীলতা অবশ্যই মহৎ গুণ।
কিন্তু কোন অন্যায় মেনে নেবার জন্য যদি এসব গুণের চর্চা করার পরামর্শ দেবার কথা বলা হয়, তবে এগুলোকে আর গুণ বলা যাবে না। এ সমাজের ফরিদা পারভীনেরা এসব বুঝেও অবশ্য না বোঝার ভান করে থাকেন। পুঁজিবাদী বলেই তারা অন্যায়ের প্রতিকার চান না। সব কিছু মেনে নিয়ে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবার পরামর্শ দিয়ে থাকেন আয়েশাদের। এভাবেই ফরিদা পারভীনদের চক্রে পড়ে মার খেয়ে যায় আয়েশারা।
তারা উঠে দাঁড়াতে পারে না। ‘’সফল মা’’ এই একটা তকমা পেয়েই তাকে সুখী থাকার অভিনয় করে যেতে হয়। অনেক আয়েশাকে এটা জানতেও দেওয়া হয় না, ‘’সফল মা’’ ছাড়াও তার আরো অনেক কিছু হবার কথা ছিল। ‘’সফল মা’’ হবার পাশাপাশি সেও হতে পারতো অন্যদের মত সুখী স্ত্রী, তারও হতে পারতো উজ্জ্বল ক্যারিয়ার, সর্বোপরি ‘’সুখী মানুষ’’। অথচ তাকে এখন একটি মাত্র পরিচয় নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে বাধ্য করছে ফরিদা পারভীন ও তার মান্ধাতার আমলের সমাজ।
আয়েশারা এসব পুঁজিবাদী ফরিদা পারভীন ও তার ইন্ধনদাতা সমাজের চাপিয়ে দেওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে জেগে উঠে নিজেদের জয় করে নেবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।