আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজনীতির নামে দায়মুক্তি............এই হচ্ছে আমাদের দেশের অবস্থা



রাজনীতির সঙ্গে বিন্দুমাত্র সম্পর্ক না থাকলেও খুন ও ডাকাতির মামলাগুলো রাজনৈতিক রূপ দিয়ে আসামিদের ছেড়ে দেওয়া খুবই দুর্ভাগ্যজনক। কিছুদিন আগে মিরপুরে একটি হত্যা মামলা থেকে চিহ্নিত সন্ত্রাসী শাহাদতকেও বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল রাজনৈতিক বিবেচনায় দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারসংক্রান্ত আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি। কিন্তু প্রথম আলোয় এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন ছাপা হওয়ার পর শাহাদতকে ফের তালিকাভুক্ত করে মামলাটি পুনর্জীবিত করা হলেও বাদ দেওয়া হয়েছে এক নম্বর আসামিকে। এবারের ঘটনাটি আরও গুরুতর। যে মামলার বাদী বা আসামিদের সঙ্গে রাজনীতির বিন্দুবিসর্গ সম্পর্ক নেই, সেই মামলাকেও রাজনৈতিক হয়রানির নামে আসামিদের রক্ষার চেষ্টা চলছে।

ইতিমধ্যে কমিটি মামলাটি প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে। ২০০৫ সালের ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর দক্ষিণখানের আনল এলাকায় প্রকৌশলী আবদুল হামিদ বিশ্বাস খুন হন দুর্বৃত্তদের হাতে। একই সঙ্গে দুর্বৃত্তরা বাড়ির মালামালও নিয়ে যায়। এটি নির্ভেজাল খুন ও ডাকাতির ঘটনা। নিহত হামিদের স্ত্রী সাঈদা হামিদ বাদী হয়ে মামলা করেন প্রতিবেশী জয়নাল মোল্লা, তাঁর দুই ছেলে, ভায়রাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে।

২০০৬ সালে মামলাটি দ্রুত বিচার আদালতে যায় এবং মোট ৩৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৪ জনের সাক্ষ্যও নেওয়া হয়। এ ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। স্থানীয় জমি ও সড়ক নিয়ে বিরোধের জের ধরে খুনের ঘটনাটি ঘটে। প্রশ্ন হলো, কী বিবেচনায় কমিটি খুন ও ডাকাতির মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করল? তারা কীভাবে নিশ্চিত হলো যে আসামিরা নির্দোষ? কমিটি এমন আসামিদের নাম প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে, যাদের ভয়ে বাদিনী বাড়ি বিক্রি করে সপরিবারে বিদেশে চলে গেছেন। উত্তরখান থানা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দাবি করেছেন, আসামি জয়নাল মোল্লা ‘মনেপ্রাণে আওয়ামী লীগের লোক’।

কিন্তু থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে কোনোভাবেই যুক্ত নন। মিরপুরের ঘটনায়ও আসামি সম্পর্কে পরস্পরবিরোধী দাবি এসেছিল। আসলে রাজনৈতিক বিবেচনায় দায়ের করা মামলা নিয়ে সারা দেশে আইনের যে অপব্যবহার ঘটছে, মিরপুর বা দক্ষিণখানের ঘটনা তার দুটি উদাহরণ মাত্র। প্রতিটি ঘটনায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে মোটা অঙ্কের উৎকোচ নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বাদিনী আশঙ্কা করছেন, মামলা প্রত্যাহার করা হলে তাঁদের দেশে আসার পথ চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে।

২০০৭ সালে আসামিদের ভয়ভীতির মুখে বাড়ি বিক্রি করে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। এভাবে তথাকথিত রাজনৈতিক মোড়ক চাপিয়ে একটার পর একটা খুনের মামলা প্রত্যাহার করে নিলে দেশে আইন ও বিচার বলতে কিছু থাকবে না। এতে বিচারপ্রার্থীরা যেমন বঞ্চিত হবেন, তেমনি অপরাধীরা আশকারা পেয়ে যাবে। আশা করি, হামিদ হত্যা মামলার বিচার-প্রক্রিয়া যাতে সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে, সরকার সেই ব্যবস্থাই নেবে। কেননা, রাজনৈতিক বিবেচনার নামে চিহ্নিত অপরাধী ও খুনের মামলার আসামিদের বেকসুর খালাস দেওয়ার অধিকার কমিটির নেই।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.